২৪-০২-২০১২
যখন ছোট ছিলাম তখন বড় বড় মুসলিম বীরদের বীর গাঁথা কাহিনী গুলো শুনতাম আর রোমাঞ্চিত হতাম। শুনতাম সালাহুদ্দিন আয়ুবী, মুসা বিন নুসাইর, তারেক বিন যিয়াদের সাহসিকতার গল্প। বড় শখ জাগতো আহা নিজ চোখে আমি যদি দেখতে পারতাম এমন কাউকে!!! সেই সময় অনেক আগের কথা আজ অনেক বছর পেরিয়েছে এর মাঝে এরই মাঝে হয়েছে গেছে বহু দিন বহু বছর। মাঝে জিবনে বসন্ত এসেছে আর পার করেছি অনেক গুলো বসন্তও কিন্তু সে আশা মনেই পুঞ্জিবিত ছিল। গতকাল আযহারে এমফিল রত ইব্রাহীম ভাই বললেন যে ২৫-০২-২০১২ তে ফিলিস্তিনের ইসলামপন্থী দল হামাসের প্রেসিডেন্ট অবিসাংবাদিত নেতা ড.ইসমাইল হানিয়া আযহার মসজিদে নামাজ পড়াবেন। শুনে বাঁধ ভাঙ্গা আবেগ চেপে গেলাম আর মনে মনে তৈরি হলাম যাওয়ার জন্য। সকালে উঠেই চলে গেলাম জামে আল আযহারে (আল আযহার মসজিদ) অনেক দূর থেকেই জামে আল আযহারের দিকে মানুষের ঢল চলছিল। প্রচণ্ড ভীরের কারনে অনেকে রাস্তায় বসে পড়লো আমি সাহস করে ভিতরে গিয়ে কোন মতে বসলাম। নামাজের আগে খুতবা দিলেন ড.ইসমাইল হানিয়া। তারপর জুমার নামাজ আদায় করলাম। নামাজের পর আস্তে আস্তে আগাতে শুরু করলাম। এত ভিড় ছিল যে পা রাখা দায় এমন। যে কোন জায়গায় সামনে পৌঁছনোর আমার একটা আলাদা পদ্ধতি আছে সেটা ব্যবহার করলাম ১০০% সফল হলাম। অবশেষে পৌঁছলাম কিন্তু চারিদিক থেকে পুলিশ ঘিরে রেখেছে সেখানেও প্রবেশ করলাম। নির্ধারিত সেই এলাকাতে অবস্থান করছিলেন মিসরের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী সহ আরো অনেক মন্ত্রী পরিষদের আরো অনেকে এবং ইখওয়ানুল মুসলিমিন এর আরো প্রেসেডিয়াম সদস্যদের অনেকে এদের মধ্যে ড.বালতাজি অন্যতম। অন্য দেশের মধ্যে জর্ডানের ইখওয়ানুল মুসলিমিন এর দায়িত্বশীলদের কয়েকজন এবং সব চেয়ে বেশি ছিল ফিলিস্তিনের মন্ত্রীপরিষদ এর বড় বড় বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। তাদের সাথে পরিচিত হলাম। বাংলাদেশের ছেলে পরিচয় দেয়ার এবং আযহারে পড়ি শুনে তারা আমায় জড়িয়ে ধরলো। এই সুন্দর আচরনের কথা আমি কখনো ভুলব না। প্রথমে ইসমাইল হানিয়া একটি জানাজার নামাজ পড়ালেন তারপর হল কোরানুল কারিমের সুমধুর তিলাওয়াত। প্রথম দিকে উনি সমতল ভুমিতে দাড়িয়ে বক্তৃতা দিতে চাইলেও পরে যুবকদের পক্ষ থেকে জোর অনুরোধের কারনে ড.ইসমাইল হানিয়া মিম্বরে উঠেন। এইদিকে আল্লাহু আকবারে হুসাইনিয়ার আকাস বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছিল। অন্যদিকে স্লোগান হচ্ছিল যে আশ সা'ব ইয়উরিদ তাহরিরু ফিলিস্তিন অর্থাৎ জনগণ ফিলিস্তিনের মুক্তি চায়। একটু পরে আবার আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে সবাই বলে উঠলো ই'হদা ই'হদা ইয়া ইসরাইল আশ সা'ব ইয়উরিদ তাহরিরু ফিলিস্তিন। অর্থাৎ হে ইসরাইল তুমি সতর্ক হয়ে যাও জনগণ ফিলিস্তিনের মুক্তি চায়। যুবকদের মাঝে আমি সেই আলোড়ন দেখেছি আর অনুভব করেছি যে আলোড়নের মাধ্যমে মুসলমানরা বিশ্ব জয় করেছে তারই প্রতিচ্ছবি। আমি দৃঢ় বিশ্বাসী যে সালাহুদ্দিনের মত যদি একজনকে পাওয়া যেত তাহলে ইমানের বলে বলিয়ান হয়ে বিশ্বে ইসলামের বিজয় সামান্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর ড. ইসমাইল হানিয়া তো হলেন সালাহুদ্দিন আয়ুবীর যোগ্য অনুসারীদের একজন। অতঃপর সুমধুর কণ্ঠে জ্বালাময়ী বক্তৃতায় উপস্থিত যুবকদের মনে এক অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করলো। সাথে সাথে স্লোগান তুলল ইহনা আওলাদুল বান্না অর্থাৎ আমরা হাসানুল বান্নার সন্তান......স্লোগানে স্লোগানে আকাশ বাতাস কেঁপে উঠলো মন থেকে ঝরে গেলে সমস্ত কুটিলতা আর সেই জায়গায় এসে জায়গা করে নিল ঈমানে বলিয়ান এক সাহসী হৃদয়। ড.ইসমাইল হানিয়া সিরিয়ায় চলমান সমস্যার নিরসনে হামাস এর সহযোগিতার কথা বললেন। সেই সাথে কুদস পুনরুদ্ধার ও কুদস যে মুসলমানদের সেটা আবার স্মরণ করিয়ে দিলেন। এবং গাজা সমস্যা সহ সব মুসলমানদের সমস্যার সমাধান এই জামে আল আযহার থেকে শুরু হবে বলে ঘোষনা দেন এই বলে যে ইতিপূর্বে ইতিহাসে যত আন্দোলনের সুত্রপাত হয়েছে সব কিছু এই জামে আল আযহার থেকে শুরু হয়েছে তাই এবার কুদস এর আন্দোলন এখান থেকেই শুরু হবে। এক পর্যায়ে তিনি মঞ্চ থেকে নেমে চলে যান আর তার সাথে পিছু নেয় জনতার ঢল। এভাবেই আজ অনেক দিন পর পুরন হল আমার মনের অপূরণীয় এক ইচ্ছা। এভাবেই আজ হয়ে গেলাম ইসলামি আন্দোলন এর এক নতুন সাক্ষী।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:০৪