অনেক দিন পর ৪র্থ পর্ব প্রকাশ করলাম। ব্যাস্ততার কারনে মাঝে মাঝে লিখে সেভ করে রাখতাম। তাই আজকে প্রকাশ
সিংগাপুর ডায়েরি-৪
সকাল ৭ টায় ঘুম ভাংলো। ভাবলাম ছুটিতে এসেও সকাল ৭ টায় উঠলাম। ধুত্তোরি। তাই অলসতা করে আর একটু শুয়ে থাকলাম। উঠে দেখি সাড়ে ৮ টা বেজে গেছে। এদিকে আজকের প্ল্যান ব্যাপক। সিংগাপুর চিরিয়াখানা, মেরিনা বে স্যান্ডস সহ অনেক যায়গায় যাওয়ার আছে। তারাতারি না বের হলে কাভার করা যাবেনা। উঠে ফ্রেশ হয়ে নেমে এলাম নিচে। কাউন্টার থেকে ব্রেকফাস্টের টোকেন নিয়ে চলে গেলাম সেই রাজকীয় ব্রেকফাস্ট খেতে

আমার এখন গন্তব্য সিংগাপুর চিড়িয়াখানা। সিংগাপুর চিড়িয়াখানা লিটল ইন্ডিয়া থেকে সরাসরি যাওয়া যায়না। ভেংগে যেতে হয়। ট্যাক্সি নিয়ে সরাসরি যাওয়া যায়, কিন্ত খরচ পরবে ২৫ সিং ডলার। কি দরকার আমার ডলারের শ্রাদ্ধ করার। আমি ভেঙ্গেই যাব। মেট্রো ম্যাপ বের করলাম। কিভাবে ভেঙ্গে যেতে হবে তা অবশ্য আমি আসার আগেই রিসার্চ করে এসেছিলাম তাই সমস্যা হল না। ফেরার পার্ক থেকে আমাকে যেতে হবে অং মো কিও স্টেশনে। সেখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে চিড়িয়াখানা। উঠে পড়লাম ট্রেনে। নিউটন স্টেশনে নেমে গেলাম জুরং ইস্ট লাইন ধরার জন্যে। জুরং ইস্ট লাইন সরাসরি অং মো কিও স্টেশনে নিয়ে যাবে। চলেও এলাম তারাতারি। খরচ পড়ল ১.৫৭ সিং ডলার

স্টেশন থেকে বের হয়ে এসে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে দাড়ালাম। এখান থেকে ১৩৮ নাম্বার বাসেও চিড়িয়াখানা যাওয়া যায়। তবে আমি চিন্তা করলাম, কোন বাসে উঠে কোন দিকে বা যাই, শেষে হারিয়ে না যাই। তাই ট্যাক্সি নিলাম। এখানকার ট্যাক্সি সিস্টেম খুব ই চমৎকার। স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে হাত বারালেই ট্যাক্সি থামে এবং সিংগাপুরের যে কোনো যায়গায় যেতে তারা বাধ্য। আমিও হাত বাড়িয়ে ট্যাক্সি নিয়ে নিলাম। ড্রাইভারের সাথে কিছুক্ষন আলাপ করলাম। কোথা থেকে এসেছি, কি করতে এসেছি এসব। তাদের ট্যাক্সি ড্রাইভার আমাদের দেশের মামা টাইপের না কিন্তু

২০ মিনিট লাগলো সিংগাপুর চিড়িয়াখানা পৌছাতে। ট্যাক্সি বিল আসলো ১২ সিং ডলার। আমার সর্বমোট খরচ দাড়ালো ১২+১.৫৭ = ১৩.৫৭ ডলার। আর যদি সরাসরি ট্যাক্সি নিয়ে আসতাম লিটল ইন্ডিয়া থেকে, খরচ হতো ২৫ ডলার। ভালই সাশ্রয় করলাম

ঢুকে পড়লাম চিড়িয়াখানায়। ঢুকেই ম্যাপ পেলাম চিড়িয়াখানার। বিশাল এলাকা জুড়ে সিংগাপুর চিড়িয়াখানা। কোথায় কি আছে, কোন রাস্তা দিয়ে গেলে দেখা যাবে তা ম্যাপে দেয়া আছে।
আমিও শুরু করলাম যাত্রা। প্রথমে দেখলাম এলিগেটর, সাদা বাঘ, ক্যাঙ্গারু। সব ছেরে দেয়া আছে একটা প্রাকৃতিক পরিবেশ টাইপের যায়গায়। আমার দেখার ইচ্ছে ছিল পোলার বেয়ার। সিংগাপুর চিড়িয়াখানা বিশ্বে্র একমাত্র চিড়িয়াখানা যেখানে পোলার বেয়ার আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় পোলার বেয়ার ইনুকা গত বছর মারা যায়। তাই তারা ইনুকা যে খাচায় ছিল, সেটা তার স্মৃতি স্বরনিকা বানিয়েছে। পোলার বেয়ার এশিয়া মহাদেশের মত একটি দেশে রাখা মুখের কথা নয়। একটি বিশেষায়ীত খাচায় রাখা হত যার তাপমাত্রা সবসময় মাইনাস ডিগ্রিতে রাখতে হয়।
এদিকে দেখতে দেখতে প্রায় ২ টা বেজে গেছে। অথচ পুরোপুরি দেখা হয়নি। আবার বিকালে যেতে হবে সিংগাপুরের প্রধান আকর্ষন মেরিনা বে স্যান্ডস। তাই ভাবলাম চিড়িয়াখানাতে বেশি সময় নষ্ট না করে ওইদিকেই যাই। বের হয়ে এলাম চিড়িয়াখানা থেকে। ট্যাক্সি নিলাম অং ম কিও এমআরটি স্টেশন পর্যন্ত। ট্রেনে উঠে ভাবলাম টুকটাক শপিং তো করতে হয়। এদিকে গিন্নী রিকুইজিশন দিয়ে রেখেছে ম্যাক লিপস্টিপ এর ওটা তো কিনতেই হবে, আর তাছারা শপিং এর জন্য সিংগাপুর বিখ্যাত। কিন্তু আমার কি আর সিংগাপুরে শপিং করার সেই ক্ষমতা আছে

বুগিস স্ট্রিট সিংগাপুরে আমাদের মত শপার দের হ্যাভেন। অবশ্য বাজেট শপিং বলতে অন্যান্য বড় শপিং সেন্টার গুলোর থেকে সামান্য কম এই আর কি। সিংগাপুর অনেক ব্যায়বহুল। যেই চিন্তা সেই কাজ, হোটেলে না ফিরে চলে গেলাম বুগিস। একবার ট্রেন চেঞ্জ করতে হল। বুগিস স্টেশন টি বুগিস জংসন নামক শপিং সেন্টারের সাথে মাস্ক করা। তাই স্টেশন থেকে বের হতে হল শপিং সেন্টারের মধ্যে দিয়েই। বুগিস জংশন থেকে বের হয়েই সামনে বুগিস স্ট্রিট। ঢুকে পড়লাম
বুগিস স্ট্রিটে মুলত স্যুভেনির আইটেম গুলো পাওয়া যায় যেমন চাবির রিং, ব্যাগ, ওয়ালেট, কানের দুল, শো পিস ইত্যাদি। তবে ড্রেস,জুতা সহ অন্যান্য জিনিস ও পাওয়া যায় তুলনামূলক কম দামে। আমি কিছু স্যুভেনির আইটেম নিলাম। এখানে গেঞ্জি পাওয়া যায় ১০ ডলারে ৪ টা। সেগুলাও নিলাম কিছু। খুব বেশি বড় এলাকাজুরে এই মার্কেট নয়। আমাদের ঢাকা কলেজের মার্কেট থেকেও ছোট পরিসর। ঘুরতে ঘুরতে খিদা লেগে গেল, মনে পরে গেল আমি সেই সকালের পর থেকে কিছু খাইনি। হকার সেন্টার খুজে পেলাম এক কোনায়। সিংগাপুরের চিকেন রাইস নাকি বিখ্যাত। আমারো খাওয়ার ইচ্ছে ছিল এই চিকেন রাইস। তাই অর্ডার ও দিলাম তাই। খরচ পড়ল ৫.৫ সিং ডলার।
খেয়ে খুব একটা আহামরি লাগেনি আমার কাছে। সম্ভবত স্মোকড চিকেন দিয়েছে, সাথে স্যুপ, পালং শাকের একটা আইটেম আর ঠিক ১ চামচ রাইস। খেলাম তাই, শখ পুরন বলে কথা


বুগিস স্ট্রিট থেকে এমআরটি তে চলে এলাম ফেরার পার্ক। হোটেলে ঢুকে বিশ্রাম নিলাম কিছুক্ষন। সারাদিন হেটে পা চরম ব্যাথা।
শুয়ে থাকতে থাকতে মনে পড়ল যে দেরি তো করা যাবেনা, দেরি করলে মেরিনা বে স্যান্ডস , গার্ডেন্স বাই দ্যা বে দেখা হবেনা। এদিকে পায়ের ব্যাথায় উঠতেও পারছি না। কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে বেরিয়ে পরলাম। ফেরার পার্ক মেট্রো স্টেশন থেকে চলে গেলাম বেফ্রন্ট মেট্রো স্টেশনে। বেফ্রন্ট স্টেশন নেমেই গার্ডেন্স বাই দা বে তে যাওয়া যায়। স্টেশন থেকে বের হয়েই দেখি মেরিনা বে স্যান্ডস হোটেল। এত দিন ছবিতে দেখেছি, এখন নিজের চোখে দেখছি। সত্যিই অনেক সুন্দর। বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। ছাতা তো আনি নি, আনার কথাও না। তাই অগত্যা বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করতে হল। আমার সাথে অবশ্য অনেকেই অপেক্ষা করছে।
বৃষ্টি কিছুটা কমে এলে আমি রওনা দিলাম। টিকেট দেখালাম গেটে, টিকেট আমি আগেই ট্রাভেল এজেন্সি থেকে অনলাইনে কেটে এসেছিলাম। গার্ডেন্স বাই দা বে টা আসলে কৃত্তিম একটা বাগান। আমি হাটছি তো হাটছি ই। অবশ্য পুরো বে ঘুরে দেখার জন্য ট্যুরিস্ট বাস টাইপের যানবহন রয়েছে কিন্তু সেটায় উঠতে হলে ডলার গুনতে হবে। আমি ভাবলাম ঘুরতে এসেছি, ঘুরেই দেখি। অযথা ডলার খরচের মধ্যে আমি নেই। ১ ডলার সমান ৬৩ টাকা

ব্রিজ দিয়ে ঢুকে পড়লাম মেরিনে বে স্যান্ডস এ। আমাকে যেতে হবে হোটেলের স্কাইপার্কে মানে ছাদে। ব্রিজ দিয়ে ঢুকে নিচে নামার লিফট আছে। ঢুকে পড়লাম লিফটে। এই হোটেল টি ৩ টা বিল্ডিং নিয়ে। যারা ছবিতে দেখেছেন বুঝতে পারবেন। স্কাইপার্কের গেট টা ৩ নাম্বার বিল্ডিং এর সাথে। গেট দিয়ে ঢুকে আবারো সেই বিরক্তিকর লাইন। সিংগাপুরের কোথাও আমি ১ ঘন্টা লাইনে দারানো ছাড়া ঢুকতে পারিনি। এত মানুষ কই থেকে আসে





স্কাইপার্কে ঢুকে পুরা সিংগাপুরের এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখলাম। রাতের লাইটিং আর লাইট শো সত্যিই অনেক অনেক সুন্দর। পকাফক কিছু ছবি তুল্লাম। স্কাইপার্কে মেঝেতে বসে সিংগাপুরের রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম।
দেখতে দেখতে প্রায় ৮ টা বেজে গেছে। যাওয়া উচিত এখন, নাহলে পরে খাবার দোকান খোলা পাবোনা। নেমে এলাম নিচে। ব্রিজ পার হয়ে বেফ্রন্ট স্টেশনে চলে এলাম। পৌছে গেলাম আমার গন্তব্য ফেরার পার্ক। খিদে লেগেছে। ঢুকে পড়লাম ঢাকা রেস্টুরেন্টে। আইটেম আজকে অনেক কিছুই আছে কিন্তু খিচুরী খেতে মন চাইছিল। তাই অর্ডার দিলাম খিচুরী। এদিকে মনে পড়ল কালকে তো চলে যাব তাই আজকে রাতেই শপিং সব সারতে হবে। শপিং করবো মুস্তফা সেন্টার থেকে। সব ই আছে এখানে। আর এটা ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে বিধায় বন্ধ হওয়ার ভয় নেই। খেয়ে দেয়ে ঢুকে পড়লাম মুস্তফা সেন্টারে। প্রচুর বাংলাদেশি দেখি শপিং করছে। অনেক বাংলাদেশি এখানে কাজও করছে।
১২ টা পর্যন্ত শপিং শেষ করে হোটেলে ফিরে গেলাম। সারাদিনে প্রচন্ড ক্লান্ত। আর পায়ের কথা নাই বললাম। ওটাকে রেস্ট না দিলেই নয়। ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরবর্তি পর্বে সমাপ্য
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫৬