ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ল পাহার আমাকে খুব টানে। আর কই যাই, ভাবলাম এইবার দুনিয়ার সবচেয়ে বড় পাহার দেখে আসি। নেপাল
সেইদিন রাতেই খোজ নিলাম কোন কোন এয়ার নেপাল যায়। দেখলাম ইউনাইটেড আর বিমান ছাড়া কিছুই নাই। ইউনাইটেডের চিত কাইত প্লেন না ঠিক করে বিমান এ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। যেই কথা সেই কাজ, অনলাইনে রিসার্ভেশন করে ফেললাম। পরের দিন সকালে পেপার নিয়ে সোনারগা হোটেলের বিমান অফিসে গেলাম। বিমান অফিসে যেয়ে এতো ভাল সেবা পাব তা ভাবিনি। আমার রিসার্ভেশন পেপার দেখে কর্মকর্তা বললেন যে তিনি আমাকে আরো কমে দিতে পারবেন। লে বাবা, মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি, বলে কি !। তিনি বললেন ওপেন টিকেট নিতে, যার মেয়াদ ৩ মাস, এর ভেতরে যেকোনো দিন যাওয়া যাবে। দিন ক্ষন ২৪ ঘন্টা আগে পরিবর্তন করতে পারবো কিন্তু টিকেটের টাকা ফেরত পাবনা। আমি ভাবলাম ভালই তো, ১০০০ টাকা কমে ১৬৫০০ টাকায় আপডাউন টিকেট পেয়ে গেলাম। এর মধ্যে যাওয়ার কয়েকদিন আগে নেপাল এম্বেসি থেকে ভিসা নিয়ে নিলাম। ১ দিন সময় নিয়ে ভিসা দিয়ে দিল, থাই এম্বেসি কাচকলা দেখাইলাম তখন । আগের দিন বুকিং.কম এ হোটেল বুকিং দিলাম কাঠমান্ডুর থামেল এলাকায়। কিচ্ছুক্ষন পরে হোটেল ম্যানেজার রিপ্লাই দিল মেইল এ। বললাম এয়ারপোর্টে গাড়ি পাঠাতে। পোখারা তেও বুকিং দিয়ে রাখলাম একই উপায়ে।
৫ তারিখ, ২০১৪। প্লেন ছারার কথা দুপুর ২ টায়, আমি এয়ারপোর্টে এসে পৌছালাম ১২ টার মধ্যে। ভাবছিলাম বিমান কবে ছারবে, আদৌ আজকে ছারবে কিনা তবে আমাকে অবাক করে দিয়ে দেখি ১২ টায় ই বিমানের বোর্ডিং দিচ্ছে। মারহাবা। যথারিতি আমি বোর্ডিং নিয়ে ইমিগ্রেশন বিনা ঝামেলায় পার হলাম (এটা আরেকটা সারপ্রাইজ ছিল) । কিছুক্ষন ডিউটিফ্রি শপে ঘোরাফেরা করলাম। ফ্লাইটের সময় হয়ে এল, সিকিউরিটি চেক করে উঠে পরলাম বিমানে।
সময় মত উড়ল আমাদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কিচ্ছুক্ষন পরেই দেখলাম হিমালয় পর্বতমালা। মনটা জুরিয়ে গেল। বিমানের ভেতরে এর মধ্যে আমাদের অতি উৎসাহি বাঙ্গালিরা বোঝাতে শুরু করলেন এটা তাদের প্রথম প্লেন জার্নি নয় ।
১ ঘন্টা ১৫ মিনিট পর বিমান অবতরন করল ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে। লাগেজ নিয়ে ইমিগ্রেশন পার হলাম। বের হতেই দালাল, টেক্সি ওয়ালাদের হাকডাক। আমারে তো চিনেনা, তাকালাম ই না। বের হয়ে দেখি আমার নাম নিয়ে একজন দাঁড়িয়ে আছে, বুঝলাম হোটেলের গাড়ি। বেচারা ২ ঘন্টা ধরে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে মাত্র ১৩০০ টাকা রুম ভারার জন্যে।
হোটেল এ পৌছে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ৩০ মিনিট পরে বের হয়ে পড়লাম পশুপতিনাথ মন্দির দেখার জন্যে। ট্যাক্সি ঠিক করলাম ৩০০ রুপি।
দেখা শেষ করে ট্যাক্সি নিয়ে আবার হোটেল এ ছুটলাম। সন্ধায় থামেল দেখতে বের হলাম। পুরা এলাকা টাই ট্যুরিস্ট দের জন্যে বানানো। নানা রকম পসরার দোকান রয়েছে এখানে। মোবাইল এর সিম আর পোখারা যাওয়ার বাস টিকেট কেনার জন্যে ঘুরতে লাগলাম। হঠাৎ একজন বাংলায় বলে উঠল "আপনি কি বাংলাদেশি"। শুনে মুহুর্তের জন্যে থেমে গেলাম, অজানা দেশে বাংলায় কথা শুনে। তিনি বললেন তিনি ছোট বেলা থেকে নেপালে থাকেন, জম্ন বাংলাদেশে। নেপালের রাজা তার বাবাকে এখানে নিয়ে এসেছিল শেফ হিসেবে। নাম বিজয়, এখানে বাংলাদেশ থেকে আসা ট্যুরিস্ট দের থাকা ঘোরার ব্যাবস্থা করেন। আমাকে মোবাইল সিম এবং পোখারার টিকেট কেটে তো দিলেন ই, ভোর ৫ টায় আবার আমাকে গাড়িতে তুলে দিতে এলেন। যাব্বাবা, মানুষ এতো পরোপোকারি হয় নাকি। আমিও অবশ্য বাঙ্গালী, ভালভাবেই জানি অতিভক্তি চোরের লক্ষন। তবে তার ভেতরে চোরের কোনো লক্ষন পেলাম না, মানে ধান্দাবাজির কিছু পেলাম না, সে স্ব ইচ্ছায় আমার এই সাহাজ্যটুকু করল। তার ফোন নাম্বার রেখে দিলাম, তার সাথে পরে আবারো যোগাযোগ হয়েছে সেটা পরে আরেকদিন বলবো। সকাল সারে ৭ টায় পোখারার বাস ছেরে দিল।
চলবে
পরের পর্বে - পোখারা