কেন আপনি পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের পক্ষ নিবেন ?
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
এটা খুব পরিষ্কার যে পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প থাকবে কি থাকবে না তা সম্পূর্ণই রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। কিন্তু তারপরও জনগন এই বিষয়সহ নানা বিষয়ে তাদের মত গঠন করে এবং জনতার যে কোন মতামতের ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকে। ফলে পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের পক্ষ বিপক্ষ মতামত রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের সাথে বিরোধাত্মক না হয়ে উঠতে পারলেও এই সংক্রান্ত মতভেদ এবং পক্ষ বিপক্ষ রাষ্ট্র যন্ত্রের জন্য সুবিধাজনক। তাই পাহাড়ে সংঘাত সংঘর্ষ ধ্বংসযজ্ঞ এ সমস্তের সমাধান গিয়ে ঠেকছে যে বিন্দুতে তা হলো পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প থাকা না থাকার বিষয়ে। এটা কৌশল এবং রাষ্ট্র অথবা কোন না কোন স্বার্থপক্ষীয় রাজনীতি। এর বেড়াজাল থেকে বের হয়েই সমাধান খুঁজতে হবে।
আজ থেকে কয়েক দশক আগে অসংখ্য বাঙালি সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। আশ্রয় মানেই কেবলমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই বা অন্ন সংস্থান নয়। এর সাথে স্থানচ্যূত মানুষের আচার-সংস্কৃতি-বিশ্বাস এবং জীবনদর্শনও থাকে। আমাদের রাষ্ট্র কখনোই মানুষকে এই সকল প্রপঞ্চ দিয়ে বিচার করেনি। ফলে সমতলের মানুষদের পাহাড়ে তুলে দেবার আহাম্মকি সিদ্ধান্ত নিতে তাদের সমস্যা হয়নি। পাহাড়ে বাঙালি এবং সেনাবাহিনীর উপস্থিতি জোরদার করবার পেছনের কারণ সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার এবং পার্বত্য চট্রগ্রামও যে বাংলাদেশের তা প্রমাণ করা। এই সমস্ত যুক্তি হাস্যকর মনে হয় যখন আমাদের বাজার-অর্থনীতি-রাজনীতি-সরকার গঠন-সরকারী সিদ্ধান্ত-সমুদ্রসীমা-আকাশ পথ-পণ্য-পাট-মানব সম্পদ সবকিছুই আসলে শোষিত এবং বর্হিদেশ নিয়ন্ত্রিত ও তাদেরই চক্রান্তে ধ্বংসপ্রায়। সীমান্ত বাহিনী দিয়ে রক্ষা হয় না, রক্ষা করতে লোকাল পিপলদের প্রয়োজন হয়। সাদ্দাম তার বাথ পার্টিকে নিয়ে ইরান-কুয়েতের মতো দেশগুলোকে মোকাবেলা করে গেছে কারণ ইরাকের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর জনগণের সশস্ত্র অবস্থান। এবং ইরানের অনেক ষড়যন্ত্র সীমান্ত এলাকাতেই মার খেয়ে যায়। আমাদের দেশেও ওই লোকাল পিপলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ছাড়া কেবলমাত্র সেনাবাহিনী সীমান্ত রক্ষা করতে পারবে না।
যে বিষয়টি সাধারণ, সীমান্ত নিয়ে কোন বিরোধ তৈরি হয়নি। বিরোধ হয়েছে ভূমি নিয়ে। দুইমাস আগে থেকেই বাঙালি কিছু পরিবার পাহড়িদের আবাসস্থলের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। এই নিয়েই বিরোধের শুরু। সেই বিরোধ এতোটা রক্তক্ষয়ী হয়ে উঠলো কেন। বাঘাইহাটিতে বাঙালি হোক পাহাড়ি হোক তাদের হাতে অস্ত্র আসলো কিভাবে। কেন এই ক্রোধ বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংস করলো। আগুন জ্বললো কেন? তার মানে কি জনতা বিশৃঙ্খল-এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন সেনাবাহিনী। এটাই রাষ্ট্রের কৌশল। সেনাবাহিনী কেন সমাধান হবে-ইতিহাস কি বলে। তারাই অশান্তির কারণ হয়ে উঠেছে পাহাড়ে বারবার। যে বিরোধের শুরু হয়তো কোন পাহাড়ি বা বাঙালিকে মারধরের মধ্য দিয়ে সেই বিরোধে রক্ত গড়ায় কেন। কিভাবে। আভ্যন্তরীন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যারা ব্যার্থ তারা কিভাবে সীমান্ত রক্ষা করবে।
জরুরী সমাধান কোনটা। ভূমির সমস্যা নিরসন করা। সেটা কে করবে? কিভাবে করবে? ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘর-মন্দির এসবরে ক্ষতিপূরণ কি হবে। বাঙালিরা কি আসলেই পাহাড়ে থাকতে চায়? যারা চায় না তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা কি। বাঙালিদের যে সামাজিক বিপর্যয় মোকাবেলা করতে হল তার দায়িত্ব কে নিবে। কয়েকমাস আগেই ম্রোদের ওপর সেনাদের নিপীড়ণ আমরা দেখেছি। পাহাড়ে পাহাড়ে এমনই অনেক নিপীড়ণ আর নির্যাতনের ইতিহাস জমা হয়ে আছে। পাহাড়ে জীব বৈচিত্র-সংস্কৃতি-জীবনাচার ধ্বংসের জন্য দায়ী কে ? এসবের বিচার না করতে পারলে কি পাহাড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে? সাম্প্রতিক সময়ের হত্যা ধ্বংসের বিচার কি হবে? দোষীরা কি শাস্তি পাবে? ইতিহাসে কি এমন কোন নজির আছে? ভারত আজ পর্যন্ত আমাদের যে সকল পাহাড়-নদী-ভূমি দখল করে আছে সেসব বিষয়ে কোন আওয়াজ না তুলে কেবলমাত্র মানুষ মেরে হলেও পার্বত্যচট্রগ্রামের সীমানা রক্ষার কথা বলার উদ্দেশ্য কি? ভারত কি চাইলেই আমাদের দেশের কোন অঞ্চল দখল করে নিতে পারবে। বারে বারে এই জুজুর ভয় দেখিয়ে ফায়াদা লুটছে কারা। কেন পার্বত্যচট্রগ্রাম রক্তপাত হলেই কেবল খবর হয়ে ওঠে।
পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প না থাকলে কি হবে? ভারত ধীরে ধীরে আমাদের ভূমি দখল করে নিবে? এমন কোন প্রয়োজন ভারতের থাকতেই পারে। কিন্তু সমস্তরকমভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে থাকা ভারতকে মোকাবেলা করতে পারে না যে রাষ্ট্র, পাহাড়ে নিজ দেশের সীমানা রক্ষায় তার এতো তোড়জোড় কেন ? আমাদের দেশের সরকারগুলো কি সেনাবাহিনীর ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। তাহলে সেই বাহিনীই কেন তাদের ভরসাস্থল হয়ে উঠবে। আর পাহাড়িরা বাঙালি নয় বলে মুসলমান নয় বলে তাদের বিশ্বাস করতে নেই, তাদের রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত ভাবতে নেই? তারা কেবলই প্রাণী হিসেবেই বেঁচে থাকবে। পাহাড়ে অবস্থিত বাঙালিরাও তাই। তারাও আসলে প্রাণী। রাষ্ট্রের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাতিয়ার। পাহাড়ি-বাঙালি বিরোধ যে অমানবিকতার এই বোধ যে রাষ্ট্রের নাই তার কাছে প্রত্যাশা কি থাকতে পারে।
সীমানা নয়-সীমানার অভ্যন্তরে বসবাসরত মানুষই প্রধাণ। তাদের জান মালের নিরাপত্তা দেয়াই রাষ্ট্র এবং সেনাবাহিনীর কাজ। মানবতা আর মনুষ্যবিহীন সীমানার পাহারাদার হয়ে উঠতে চায় আমাদের রাষ্ট্র এবং সহযোগী সেনাবাহিনী। পাহাড়ি বাঙালি কথা নয় তারা ঘটনা তৈরি করে অথবা ঘটনার ফলাফর নিজেদের পক্ষে টেনে নেয়। এটাই ইতিহাস। সেই ইতিহাস থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
২৮টি মন্তব্য ২০টি উত্তর


আলোচিত ব্লগ
ব্রিটেনকে জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করল রাশিয়া
রাশিয়াকে প্রথমবারের মতো ব্রিটেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার নিরাপত্তামন্ত্রী ড্যান জার্ভিস ঘোষণা করেছেন যে ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারের পক্ষে কাজ করা রাশিয়ান এজেন্টদের তাদের কার্যকলাপ নিবন্ধন করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার ছোট কালের ঈদ।
ঈদ মানেই ছিল নতুন জামা, নতুন টাকা আর আনন্দের ঝলক। ছোটবেলার সেই ঈদগুলো এখনো স্মৃতির মণিকোঠায় জ্বলজ্বল করে।
আমার নানা সোনালী ব্যাংকে চাকরি করতেন। আমি তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন
পিটার প্যান সিনড্রোম !
প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও দায়িত্ব নিতে না চাওয়া, বাস্তবতা এড়িয়ে চলা এবং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেকের মাঝেই দেখা যায়। তারা শৈশবের মতো স্বাধীন, নিরুদ্বেগ জীবন... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিএনপি কি ক্ষমতা কুক্ষিগত করবে না?
ক্ষমতায় আসার পরে বিএনপির আচরণ কেমন হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিত ভাবে দেওয়া সম্ভব না। তবে আমরা কারো আচরণ কেমন হতে পারে সেটা তার অতীত থেকে খানিকটা আন্দান করতে পারি।... ...বাকিটুকু পড়ুন
নারী
"নারী "
এ. কে . এম. রেদওয়ানূল হক নাসিফ
মন খারাপ কেন বসে আছো কেন হতাশ
ওহে আজ নারী তুমি ,
কি হয়েছে তোমার এতো , সবসময় ভাবছো কি এতো... ...বাকিটুকু পড়ুন