somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাহাড়ের বুকে শ্রাবনের ডাক১

২০ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের পাশ থেকে গাড় মেঘ এসে বৃষ্টি হয়ে ঝরছে নিচের গ্রাম সুংসাং পাড়ার দিকে। হাত বাড়ালে মেঘ এবং বৃষ্টি ছোয় যাবে


চুড়ির তালে নুড়ির মালা
রিনিঝিনি বাজে লো
খোঁপায় দোলে বনফুলের কুড়ি

মহুয়া তালে বাজে মাদল
নাচে কালো ছোড়া লো
পাগল করে নাচে মাতাল ছুড়ি
খোঁপায় দোলে বনফুলের কুড়ি


পাহাড়ের আকর্ষন অন্যরকম। মাউন্টেনিয়ার বা এডভেঞ্চারারেরা হয়তো উচু উচু পাহাড় বাইবার নেশাতে বুঁদ কিন্তু আমার ভালো লাগে পাহাড়ের কঠোর জীবনে সরল মানুষগুলোর হাসিখুশি মুখ। এবারে ভ্রমন বাংলাদেশের কেওকারাডং এর চুড়ায় বর্ষাযাপনের প্ল্যানে প্রথম থেকেই দলের বাইরে ছিলাম। একদম শেষমুহুর্তে লোভ সামলাতে না পেরে ঢুকে গেলাম।
টোটাল ২৫জনের দল। মনে মনে ভাবলাম বাঁচাও আমারে। ২৩জন ঢাকা থেকে আর চন্দন ভাই আর সৌরভ ভাই চিটাগাং থেকে জয়েন করবে।
১৩,১৪,১৫ ছুটির ফাঁদ। মানুষজন আজান দিয়ে ঢাকা ছেড়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় অকল্পনীয় জ্যাম। কিন্তু এই বাসের ২৩টা সীটেই আমাদের। টুটু ভাই বাসওয়ালাদের ঝারি ঝুরি দিয়ে চিপা গলি দিয়ে হাইওয়ে বাস ঢুকায় দিলেন। পথে ফয়সাল (ব্লগে নাম ক্যাকটাস) ভাইয়ের হ্যাপি বার্থ ডে ছিল। বাসটাকে আমরা মোটামুটি পৈত্রিক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছি। মনা ভাই বাস থামিয়ে এক দোকানে ঢুকলো আইসক্রিম কেক কিনতে।
গলি দিয়ে ঢোকার ফলেই আমরা অতি দ্রুত ঢাকার সীমা পেড়িয়ে এলাম। পড়ে দেখেছি আমাদের সময় রওনা দেওয়া আরেকটা গ্রুপ, আমরা যখন কেরানীর হাট পার হচ্ছি তখন ওরা চৌদ্দগ্রাম পৌছায়নি।
বান্দারবানে বাস থেকে নেমে আমরা চান্দের গাড়ি ভাড়া নিয়ে নিলেম একটা। ২৫জন লোক। সবাই ছাঁদে বসতে চায়। মারা মারি কাটা কাটিতে চান্স না পেয়ে বিরস মুখে ভিতরে বসে ঝিমাতে লাগলাম। বর্ষাকালে পাহাড় যেন যৌবন ফিরে পায়। যেদিকে তাকাই চোখ ঝলসানো সবুজ। হাতের নাগালে ভেসে বেড়ানো মেঘের গায়ে সাদা, কালো ধুসর ... কতো রকমের আলাদা আলাদা শেড গুনে দেখা ভার।
কাইক্ষ্যাং ঝিরিতে চান্দের গাড়ি থামলো। আমরা সবাই বোচকা বুচকি নিয়ে একটা ট্রলারে উঠে পড়লাম। উজান থেকে সাঙ্গু নেমে আসছে। বর্ষাকালে সাঙ্গুর মাতাল করা বন্যরুপের কথা শুধু শুনেছি এবার চোখে দেখলাম। আগে যতোবার এসেছি লাজুক কিশোরীর মতো উদ্দাম সাঙ্গু। এবারে সে যেন মত্ত পাগলা হাতি। আর যেতে হবে উলটা পথে স্রোত ঠেলে। উঠতে না উঠতেই বিপত্তি। নৌকার ছাঁদে বসেছিলেন ফটোগ্রাফার মাসুদ আনন্দ ভাই। তার নাইকন ডিএসএলআর-টা কি করে জানি ঝপাং করে সাঙ্গুর প্রেমে পাগল হয়ে পানিতে লাফিয়ে পড়লো। মাসুদ ভাই জাতিয় দৈনিকের ফটোসাংবাদিক। দারুন ছবি তুলেন। তার ক্যামেরা ট্যুর শুরুর আগেই পানিতে পড়লে কেমন লাগে কল্পনা করতেই খারাপ লাগে। পানি থেকে তুলে অনেক ঝারা মোছা করেও ক্যামেরাকে বাঁচানো গেল না। তবে মেমোরী কার্ডটা রক্ষা পেয়েছে। মনা ভাইয়েরও একটা নাইকন ডি ৪০ আছে, সেটাতে ফিট করে যায়। সারা ট্যুরেই শেয়ারিং করে ক্যামেরার কাজ হলো।
সদরঘাট (গ্যারিসন আর্মি ক্যাম্প) এ নৌকা একবারের জন্যে থামানো হলো। আর্মি ক্যাম্পে অনুমতির জন্যে। “দেশে বেড়াও দেশের মানুষ” থিওরী সব ক্ষেত্রে খাটেনা। টুটুল ভাই ছাঁদে। কেউ মাথা বের করলেই ঝারি লাগায়। তবে এরপরেও থামাতে পারলো না। সাঙ্গুর ভয়ঙ্কর স্রোত। পানিতে ঢেউ নাই। আছে প্রচন্ড রকমের টান। সামনে মেঘ ফুরে উঠে গেছে একের পরে এক পর্বত চুড়া। অতি বড় নিরস ছাড়া চুপ করে বসে থাকার নয় কেউ।
দুপাশের পাহড় গুলোর সবুজ যেন চোখ ঝলসে দেয়। পাহাড়ের খাজে খাজে জুম হচ্ছে। প্রথমেই প্রশ্ন জাগে এই বিপদজনক ঢালে চারা লাগালো কিভাবে? জুম শেষে এগুলো তুলবেই বা কিভাবে?
আমরা রুমা বাজার আসলাম। ঘাট থেকে নেমে ফ্রেস হতে গেলাম সবাই। একদল গেল আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে। মন্দিরের ওপাশে আর্মি ক্যাম্পের দিকে তাকালাম। এই ক্যাম্পটাতে আমার প্রথম কেওকারাডং টুরের খুব বাজে অভিজ্ঞতা ছিল। ঐবার কি একটা সাইক্লোন আসছিলো। গভীর রাত আকাশে একের পরে এক বাজ পড়ছে। আর টিপ টিপ বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আমরা রওনা হয়েছিলাম গাড়ির রাস্তায় পায়ে হেটে। মুংলাই পাড়া পার হবার পরেই ভয়ঙ্কর ঝর মনে হয় উড়িয়ে নিতে চায়। সে আরেক অভিজ্ঞতা। আপাতত বাদ রাখি।
আর্মি ক্যাম্পের নিয়ম অনুযায়ী সবসময় বাঙ্গালী গাইড নিতে হয়। আমরা আগে থেকেই ব্যাবস্থা করে নিয়েছিলাম। দুজন পাহাড়ি গাইড পেলাম। মুন বম (এ গাইড নয়, কিন্তু ভ্রমন বাংলাদেশের পাগলামীতে আগেও সঙ্গি হয়েছে অনেক বার) আর সিয়াম বম। বগা লেকের বিখ্যাত সিয়াম দিদির সাথে নাম মিলে যায় তাই তাকে সবাই সালমান শাহ বলে ডাকে। ওর ডাক নাম আলেক্স। বেচারাকে কি কারনে কেউ আলেক্স বা সিয়াম কোন নামেই ডাকে না। সালমান শাহ নামেই সবাই চিনে। আলেক্সের সাথে একটু কথা বলেই আমি মুগ্ধ। ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞ একজন লোক। হেন জায়গা নেই যে চিনে না। সবগুলো গ্রামের কারবারী, হেডম্যানের সাথে খাতির। পুরো পাহাড় হাতের তালুতে তার। সিপ্পি আরসুয়াং, তিনমাথা, রাইখাং ঝর্না, পুকুড়পাড়া, রনিং পাড়া, রাং তলাং, কেওকারাডং থেকে তাজিং ডং এর রাস্তা সব তার কন্ঠসস্থ।
খেয়ে দেয়ে আমরা ট্রেক শুরু করলাম। লাইরাম্পি পাড়ার পাহাড়ে উঠতেই খুব খারাপ লাগা শুরু হলো।

চলবেঃ


আমাদের পাশ থেকে গাড় মেঘ এসে বৃষ্টি হয়ে ঝরছে নিচের গ্রাম সুংসাং পাড়ার দিকে। হাত বাড়ালে মেঘ এবং বৃষ্টি ছোয় যাবে


উদ্ভিন্ন যৌবনা সাঙ্গু। কাইক্ষ্যাং ঝিরি। রুমা, বান্দারবান


জুম ঘর, রাইক্ষ্যাং ঝিরি, রুমা, বান্দারবান


অপরুপা সাঙ্গু, কাইক্ষ্যাং ঝিরি, রুমা, বান্দারবান


নৌকার খোলের ভিতরে কৌতুহলী ইশতি,


পাথুরে নদীর জলে, পাহাড়ী মেয়ে নামে...... কি স্বপন একে দিল বলা যায় না


স্বপ্নবাস


লাইরাম্পি পাড়ার পরের ঝিরি। ধুমায়া বৃষ্টি আসলো আমরা ধুম ভিজা ভিজলাম। ক্যামেরা যাচ্ছে ব্যাগের ভিতরে।


কেও-কারাডং চুড়ার দিকে গত ১৬ মাসে এটা আমার ৩য় বার যাত্রা। প্রতিবার নতুন জায়গাতে যাবার লোক আমি। কিন্তু কে জানে কেন এই পাহাড়টার মায়াজাল থেকে বেড়ুতে পারছিনা।


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:৩৫
২৪টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×