
মা, তোমার কথা মনে হলেই মনে পড়ে তোমার কষ্টের কথা। ছোট থেকে বড় হয়েছি, যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, দেখেছি কোন না কোন ঝামেলা জড়িয়ে আছো তুমি। ছোট বেলাতে তোমার ঝামেলা গুলো মনে তেমন প্রভাব ফেলতোনা। অনেক ছোট ছিলাম মা, অনেক অবুঝ ছিলাম। তাই বিনা কারণেই অনেক ভাবে কষ্ট দিয়েছি তোমাকে। পড়াশুনা করতামনা, স্কুলে যেতে চাইতামনা, সাইকেন নিয়ে সারা দিন রোদে রোদে ঘুরতাম। আরো অনেক কিছু করেছি, যে গুলো এখন সবার সামনে বলা যাবেনা। যানিনা সবকিছু তোমার মনে আছে, না ভুলে গেছ অনেক কিছু। আমার কিন্তু সবই মনে আছে মা। কিছুই ভুলিনি আমি।
সময় কত দ্রুত চলে যায় মা। তোমার সেই দুষ্টু ছেলেটা এখন ৩০ পেড়িয়েছে, আর তুমিও পেড়িয়েছ ৫০টি বসন্ত। কোনদিন কি তোমাকে এক টুকরো সূখ দিতে পেরেছিলাম মা? কেবলই মনে পড়ে তোমার সাথে বিনা কারনে রাগ করে কথা বলার মুহুর্ত গুলোর কথা। মা, ছোট আমি, অবুঝ আমি তোমার কাছে, আমি তোমার সন্তান, মা। তোমার কাছে ক্ষমা চাইবার মতো যোগ্যতাটুকুও আমার নেই।
মা, বড় হবার পড়ে একটা সময় আমি বুঝতাম আমার ভুল গুলোর কথা। প্রতিবার বাসায় যাবার সময় নিজেকে অনেক করে বুঝাতাম, যেন এইবার আমি তোমার সাথে কোন খারাপ ব্যাবহার না করি। যে কয়টা দিন থাকতাম, কোন কোন বার পারতাম, কোন সময় পারতামনা। পরে খুব কষ্ট হতো। সে সব কিছুই এখন অর্থহীন লাগে মা। সব কিছু ছেড়ে দিয়ে তোমার কাছে চলে যেতে ইচ্ছে করে। এক সময় তো যাব দেশে, আবার হয়তো অবুঝের মত রাগ করবো তোমার সাথে। অনেক কথা বলে ফেলবো, যে গুলো আমার বলার কথা না। মা'গো, আমার এই ব্লগে আমি তোমাকে যে ভাবে বলতে পারি, সামনাসামনি কোন দিন এভাবে কথা বলতে পারবোনা। মা, আমি আমার সমস্থ কিছুর জন্য ক্ষমা চাই তোমার কাছে। যা করেছি তোমার সাথে, তার জন্য, যা হয়তো ভবিস্যতে করতে পারি, তার জন্যও।
আমার ছেলেটা একা একা বড় হচ্ছে মা, তার বাবা নেই, দাদা দাদীর ছায়া নেই মাথার উপরে। তবুও ছেলেটা আমার অনেক ভাল। দুষ্টুমি করে, কিন্তু সে অনেক কিছুই বোঝে। ব্যাথা পেলে কান্না করার মাঝেই নিজে নিজে স্যাভলন ক্রিম খুজে বের করে লাগিয়ে দেয়, অথবা পানি দেয় ব্যাথা পাওয়া যায়গায়। বাইরের খাবার খেতে অনেক অনেক পছন্দ করে, ঠিক তোমার ছেলের মতই। সুন্দর করে গান গায়, কবিতা বলে, এক দুই করে গুনতে পাড়ে এখন। মা, আমার ছেলেটাকে নিয়ে আসো মা তোমার কাছে। ওর মাথার ওপর দাদা দাদীর ছায়াটা অনেক বেশি দরকার। দাদা দাদীর দোয়াটা অনেক বেশী দরকার। মা, যা হবার হয়ে গেছে। অনেক ভূল আমার ছিলো, আমাদের ছিলো। কিন্তু আমার সন্তান তো কোন দোষ করেনি মা। আমাদের ভূলের শাস্থি সে কেন পাবে মা? মা, সে তোমার নাতী, তোমার সন্তানের সন্তান। তুমি তোমার রক্তের দাবীতে তাকে তোমার কাছে এনে রাখো।
মা, দেখ, আজকে তোমার জন্মদিনের জন্য কিছু লিখবো বলে কি সব লিখে যাচ্ছি। এখন ৪টা বাজে। ৫টা বাজলে বাংলাদেশে বাজবে রাত ১২টা, তোমার জন্মদিন শুরু হবে। আমি কাল ফোন দেবোই মা, যত ব্যাস্থতাই থাকুকনা কেন। আমি কিন্তু এমন করে কথা বলতে পারবোনা। তাই যা বলার, আমি ব্লগে লিখে দিচ্ছি। জানিনা তুমি কোনদিন দেখবে কি না, কিন্তু আমি লিখবো মা। শুনেছি মা আর ছেলের মাঝে অজানা একটা বাঁধন থাকে। যে বাঁধনের কারনে মা তার ছেলের কথা কোন মাধ্যম ছাড়াই শুনতে পায়। তূমিও কি আমার হৃদয় থেকে বলা কথা গুলো শুনতে পারছো মা?
শুভ জন্মদিন মা
মা'র জন্মদিন ছিলো ২৬শে নভেম্বর। ভেবেছিলাম কোনদিন ফেরা হবেনা এখানে। তবুও ব্লগটা লিখে রেখেছিলাম। আজ পোষ্ট করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০০৯ রাত ৮:১৩