২০ সেপ্টেম্বরঃ দোয়ারাবাজার সীমান্তে ভারতের পাচারের সময়ে ৮৮৫ কেজি ইলিশ জব্দ করেছে বিজিবি।
এদিকে বাংলাদেশে গতবারের সমপরিমাণ ইলিশ ধরা পড়লেও দাম তো কমেই নি বরং বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
ইলিশপ্রেমী বাংলাদেশীদের চাহিদা ছিল ভারতে যেন ইলিশ রপ্তানি না হয়- তাহলে আমরা সস্তায় দু চার টুকরে ইলিশ পাত পেড়ে খাব।
গতবার দূর্গা পূজার আগে বেশ কয়েক হাজার টন ইলিশ ওপারে রপ্তানি হয়- পাচার য় প্রচুর। এই নিয়ে এদেশের ইলিশ খেকোদের হা হুতাশ ছিল চোখে পড়ার মতো।
কিন্তু এবার ইলিশের মৌসুমে ওপারে ইলিশ রপ্তানী বন্ধ হয়ে গেল- তবুও ইলিশের দাম তো কমলই না উল্টো বেড়ে গেল!! কেন?
গত সরকারের সমর্থকেরা বেজায় ট্রল করছেন এই নিয়ে- যারা ভারতে মাছ রপ্তানী নিয়ে হা-হুতাশ করতেন মাছ রপ্তানীর বিপক্ষে বেজায় সরব ছিলেন তারা বাংলা পাঁচের মত মুখ করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এই সরকারের উচ্চমহল কোন কুল-কিনারা পাচ্ছে না; শুভঙ্করের ফাঁক টা কোথায়? পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদকেরা তালকানা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কোন দিশা পাচ্ছে না ...
ওদিকে ফেসবুকে চলছে পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালী বনাম বাংলাদেশীদের সেইরকম ডিজিটাল যুদ্ধ।
বাংলা ট্রিবিউনে 'একটা নিউজ দেখলাম। নদীতে ইলিশ ধরা বাদ দিয়ে অনেক জেলেই চলে যাচ্ছে সুমুদ্রে ইলুশ আহরনের জন্য। নদীতে মাছ ধরে মহাজন ফরিয়া দাদন ব্যাবসায়ী আর সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে যায় তারা। আসলে ঘাটে যেই দামে ডাক ওঠে সেটা কোনভাবেই জেলেদের দাম নয়জেলেরা আগে থেকেই দাদন বা লোন নিয়ে রাখায় আর সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি থাকায় তাদের দাম বেঁধে দেয়া থাকে- তাছাড়া বাকিতে মাছ নেয় অনেকে। তারা কোনভাবেই বাইরে মাছ বিক্রি করতে পারে না। সেজন্য নদী মোহনার কাছ থেকে মাছ ধরে অনেকে গোপনে নিয়ে যায় বাংলাদেশ ভারতের সুমুদ্র সীমানায় কিংবা তারা সরাসরি সুমুদ্রেই মাছ ধরে সেই সুমুদ্র সীমানায় অপেক্ষারত ভারতীয় ব্যবসায়ী বা জেলেদের কাছে মাছ বিক্রি করে দেয়। মুলত ওরা কোন দরদাম করে না - এবং নগদ টাকায় মাছ কিনে নেয়।
কিন্তু সাতচল্লিশের দেশভাগের আগে পরের পদ্মা যমুনা মেঘনা সহ ফরিদপুর বরিশাল বৃহত্তর নারায়ঙ্গঞ্জ ও বিক্রম পুরের যেসব হিন্দু বাঙ্গাল ওপারে ঘাটি গেড়েছে তাদের নাকে এখনো লেগে আছে পদ্মা আর মেঘনার ইলিশের গন্ধ। এই ইলিশের এক টুকরো মাছ মুখে নিলেই যেন পুব বাংলার বাপ-দাদার সব স্মৃতি ঝাঁপি খুলে যেন বেরিয়ে আসে।
'গতবার ঠিক এই ২২ শে সেপ্টেম্বর আমার পোস্ট 'এপারের ইলিশ ওপারে' তে -পশ্চিমবঙ্গের পদাতিক ভাই বলেছিলেন,
'আমি গতকাল বাজারে গেছিলাম ওপারের ইলিশের খোঁজে। দেখলাম ভালোই আমদানি আছে পদ্মার ইলিশের( স্থানীয় ভাষায় বাংলা ইলিশ) সঙ্গে এপারের ডায়মন্ডহারবারের ইলিশের। এক কেজি সাইজের বাংলার দাম১৭০০ টাকা যেটা ডায়মন্ডহারবারের দাম ১৩০০ টাকা।আমি বাজার থেকে গন্ধ নিয়ে ফিরে এলাম।'
পোস্ট রেফারেন্স;
এপারের ইলিশ ওপারে ( ওপারে যাচ্ছি ... দোয়া রাইখেন)
৩০০০ টন অর্থ টনে ১০০০ পিস মাছ ধরলে ৩০ লক্ষ পিস মাছ। এগুলো সব নদীর মাছ-মানে বরিশাল 'লোকাল মাছ'। ( আজ সরকারের পক্ষ থেকে বলে হয়েছে, এটা লোকাল আহরিত মাছের মাত্র ১ দিনের মাছ।)
বাংলা ট্রিবিউনের খবর যদি পক্কা হয় তবে এত ইলিশ ওদেশের ব্যাবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাবার পরেও কেন চোরাই পথে ইলিশ যাচ্ছে। আমাদের দেশেই একটা বড় সাইজের (এক কেজির উপরে) মাছ ১৭০০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে, কখনো সেটা পাইকারি দরে। খুচরা পর্যায়ে দাম আরো বেশী। যদি আমি ধরে নিই প্রতিদিনের আহরিত লোকাল ৩০০০ টন মাছের ১০০০ টন বড় শ্রেণীর- তাহলে ১০০ টন পাচার হলেও ৯০০ টন মাছ তো স্থানীয়ভাবে বিক্রি হচ্ছে? না হলে মাছের দর নিশ্চিতভাবে কমত।
তাহলে কিসের লোভে এই মাছগুলো ককশিটে ভালমত বরফজাত করে, পলি প্যাকিং, প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে সিলগালা করে, গোপনে বর্ডারে নিয়ে বিএসেফ বিজেবি কে পয়সা কড়ি দিয়ে হাত করে- স্থানীয় চোরাকারবারির যোগসাজসে-ধরা পরার পর পুরো মাল বাজেয়াপ্ত হবার মত পরিপূর্ণ রিস্ক নিয়ে কেন ওপারে নিয়ে যায়? এরপর সেটা যায় কয়েক হাত ঘুরে শহরের বাজারে। (এখানে কেজি প্রতি কত টাকা খরচ হয় কারো ধারনা আছে?)
কত টাকা বেশী দামে ওপারে এ মাছ বিক্রি হয়?
নিশ্চয়ই বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ(আদপে বরিশালের লোকাল) ইলিশ খাবার জন্য ওপারের এলিট কিছু শ্রেণী আছে যারা তিনগুন চারগুন দামে এই মাছ কিনে নাহলে যে মাছ আমাদের নিজেদের বাজারেই খুব সহজে ভালদামে বিক্রি করা যায় সেটা কিভাবে কেচ্ছা কাহিনী করে রিস্ক নিয়ে ওপারে যাবে?
আজকে আরেকটা বিষয় জানলাম; (সোর্স সন্মন্ধে শতভাগ নিশ্চিত নই) ইলিশ মাসের এই মৌসুমে দুর্গা পুজাকে সামনে রেখে ভারতীয় কিছু মাছ ব্যাবসায়ী বরিশালে আসে। তারা ও বরিশালের একটা সিণ্ডিকেট মিলে সবচেয়ে সেরা জাতের মাছগুলো যে কোন মুল্যে এই সময়ে স্টোর করে। এরপর যেভাবেই হোক সরকারকে মানিয়ে গুছিয়ে কিংবা বাধ্য করে এই মাছগুলোই রপ্তানী করে। সম্ভবত এই মাছ ওপারের সাধারন ক্রেতারা কখনো বাজারে পায় না (এগুলো দেড় কেজির উপরে। এমন কিছু মাছ আমি দেখেছিলাম, জুলাইয়ে গণআন্দোলনের কার্ফিউয়ের সময়ে। এক মাছ ব্যাবসায়ীর কাছে তারা বলছিল, এগুলো আড়ত থেকে বাকিতে এনেছে সন্ধ্যেয় টাকা দিবে। এই মাছ কোনভাবেই বাইরে পাঠানো যাচ্ছে না তাই বাধ্য হয়ে লোকালি বিক্রি করছে, তাচ্ছিল্য করে এও বলছিল, বড়জোর এই সাইজ মাছ কোল্ড স্টোরেজের পাবেন টাটকা মাছ চোখেও দেখবেন না। বেশ সরেস সেই মাছ গুলোর এভারেজ সাইজ ছিল ১ কেজি ৬০০ গ্রাম। দাম ছিল ২৫০০ থেকে ২৮০০ টাকা * ডিসকাউন্ট প্রাইস।) । তাদের কাছে কিছু পদ্মার মাছ যায় যদিও সেগুলো চোরাই পথে যাওয়া কিংবা সামুদ্রিক বর্ডারে ওই ব্যাবসায়ীদের কেনা মোহনার মাছ। তবে সেগুলো তুলনামূলকভাবে পশ্চিমবঙ্গের মোহনা ও লোকাল মাছের থেকে স্বুসাদু।
কলকাতায় একটা অনলাইন মার্টে ২০০০ রূপিতে নাকি অরিজিনাল পদ্মার ইলিশ বিক্রি করছে!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২১