৪. মাধ্যাকর্ষণ পার্থক্য
আমাদের হোম গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ কি পৃথিবীর তুলনায় বেশি নাকি কম? সেখানে উভয় ক্ষেত্রেই যুক্তি। কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে এটি অবশ্যই পৃথিবীর থেকে আলাদা হতে হবে । অবশ্যই খুব বেশি আলাদা নয় - সম্ভবত পাঁচ শতাংশেরও কম। পৃথিবী এখনও কি আমাদের জন্য নিখুঁতভাবে বাসযোগ্য? তবে কেন এই গ্রহে কয়েকশত প্রজন্মের বসবাসের পরেও এখনো আমাদের শরীর এটাতে পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি?
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বেশি হওয়ার যুক্তি:
এটা আমাদের ক্লান্ত এবং অলস করে তোলে; আমরা অনুভব করি যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল আমাদের নীচের দিকে চেপে ধরে রেখেছে। অবশ্য এটা পৃথিবীর ঘন গ্যাসের সমন্বয়ে ভারী বায়ুমণ্ডলের কারণে হতে পারে - এর সাথে গ্র্যাভিটির কোন সম্পর্ক নেই।
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ কম হওয়ার জন্য যুক্তি (এই বিকল্পটি আমি পছন্দ করি):
মানুষ বছরের পর বছর লম্বা হচ্ছে – আমাদের শারীরিক দ্রুত বৃদ্ধির সাথে কঙ্কাল ও পেশীগুলি মানিয়ে নিতে পারছে না এবং এটি আমাদের সমস্ত খারাপ দিকগুলো পিঠের, ঘাড়ের কোমরের বা হাঁটুর ব্যথার মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। সম্ভবত আমাদের আদি গ্রহে আমাদের আকৃতি বেশ ছোট ছিল।
যেভাবেই হোক, আমরা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সাথে খারাপ-ভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছি। শরীরের মানিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় ধরে আমরা এখানে আসিনি। অন্যান্য প্রাণী যারা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পৃথিবীতে বিচরন করছে তারা এখানে বসবাসের জন্য মানিয়ে নেবার সময় পেয়েছে এবং তাদের উল্লেখযোগ্য এমন কোন সমস্যা নেই যা আমাদের বেশীরভাগ মানুষের মধ্যে আছে।
৫। ঋতুর তারতম্য
আমি আগেই আলোচনা করেছি, এখানে পৃথিবীতে আমরা শীতকালে সূর্যালোকের অভাবে বিষণ্ণতায়- ভুগছি । স্পষ্টতই আমরা পুরো বছর আরও নির-বিচ্ছিন্নভাবে আলোর স্তরের আশা করতে বিকশিত হয়েছি। পৃথিবী ২৩.৫ ডিগ্রির বেশি হেলে পড়ার কারণে ঋতুর পরিবর্তন হয়। এটা খুবই সম্ভব যে আমাদের হোম গ্রহ হয়তো সামান্য কাত হয়ে আছে কিংবা কোন ভাবেই হেলে পড়ে না। সেইজন্য ঋতুভেদে সামান্য বা কোন পরিবর্তন নেই।
এর অবশ্যই বিশাল প্রভাব রয়েছে - যদিও আমরা ইতিমধ্যে যা আলোচনা করেছি: এই সমস্ত কিছুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ;
ক) আমরা আমাদের বাড়ির গ্রহের এত বেশি উপনিবেশ করতাম না – শুধুমাত্র নাতিশীতোষ্ণ এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল ঘিরে।
খ) গ্রহের এমন বিশাল এলাকা থাকবে যেখানে কখনো বৃষ্টি হয় না (শুষ্ক মরুভূমি), এবং বড় এলাকা যেখানে বৃষ্টিপাত প্রায় বন্ধ হয় না। এমন আবহাওয়া গ্রহের অনেক অংশ অনুর্বর করে দেয় – আর্দ্র এলাকার ক্ষেত্রে অবিরাম বৃষ্টিপাত মাটির উপরের মাটিকে ধুয়ে ফেলবে এবং মাটির পুষ্টিগুণকে গভীরে ঠেলে দেবে -তাদের কাছে শিকড় পৌঁছাতে পারে না। এতদ অঞ্চলে কৃষিকাজ (এবং এইভাবে বাসস্থান) উল্লেখযোগ্য-ভাবে হ্রাস পাবে।
গ) আমাদের গ্রহে সম্ভবত কম পুষ্টিকর ফসল থাকবে - পৃথিবীতে বেশিরভাগ প্রধান ফসলের জন্য ঠাণ্ডা বা শীত প্রয়োজন।
ঘ) এটি কম জনসংখ্যার ঘনত্বের দিকে পরিচালিত করবে কারণ অল্প সংখ্যক মানুষ এবং তাদের গবাদি পশুর প্রয়োজন মেটানোর জন্য বিশাল বিস্তৃত এলাকার প্রয়োজন। আমরা সম্ভবত ছোট, বিক্ষিপ্ত জনবসতিতে বাস করেছি - কোন বড় ও ঘনবসতিপূর্ণ শহর থাকার কথা নয়।
ঙ) কোন ক্রমবর্ধমান এবং ফসল কাটার ঋতু্না থাকারই কথা সেখানে। ফসল ফলানোর জন্য জমি উর্বর বা প্রস্তুত হলেই তবে ফসল বোনা হয়। ওখানকার আবহাওয়া যেহেতু ভিন্ন সেহেতু গাছপালার আকার আকৃতি বা প্রজাতি ভিন্ন হবে বলেই ধারনা। তাদের জন্য অবশ্যই একে অপরকে নিষিক্ত করা অত্যন্ত কঠিন। অন্যদিকে, এটা অন্য কোন উপায়ে বিকশিত হতে পারে, এবং কোন উপায়ে তাদের জন্ম ও বৃদ্ধি চক্রের জন্য সিঙ্ক্রোনাইজ করার অন্য একটি উপায় খুঁজে পেয়েছে, যেমন কিছু বাছাইকৃত নির্গত গ্যাস দ্বারা বা ফেরোমন দ্বারা।
চ) রোগ একটা বড় সমস্যা (নিজেদের ও আমাদের গাছপালা এবং গবাদি পশুর জন্য)। অনেক পৃথিবীর কীটপতঙ্গ এবং রোগজীবাণু শীতকালে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। যদি সেখানে যদি কোন শীতকাল না থাকে তবে আমরা সারা বছর এই জিনিসগুলির সাথে আটকে থাকার কথা, এর ফলে ফসলের খারাপ ফলন হতেই থাকবে।
পৃথিবীতে, আমরা সম্ভবত আমাদের বাড়ির গ্রহের চেয়ে প্রযুক্তিগতভাবে আরও উন্নত। বৈশ্বিক শিল্প বিপ্লবের সময় অনেক কিছু ঘটেছিল, যেমন শীতকালে উষ্ণ রাখার নতুন এবং ভালো উপায় খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা। শীত না থাকলে তাদের দরকার নেই।
অন্যদিকে, এত বছর পরে, আমরা এখনকার মতো উন্নত হতে পারি, তবে আমরা পৃথিবীতে যা দেখি তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন উপায়ে - সম্ভবত আরও কৃষি-ভিত্তিক। উদাহরণস্বরূপ, আমরা ফসলের ফলন নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করার উপায় খুঁজে পেতে পারি, সেচযুক্ত বা শুষ্ক এলাকার উপর ছাদ তৈরি করতে পারি, কৃত্রিম ঋতু তৈরি করতে পারি, ভাসমান খামার তৈরি করতে পারি যা চলাচল করে।
কে জানে কিভাবে উচ্চ এবং নিম্ন অক্ষাংশ সারা বছর ঋতু পরিবর্তনের ছক তৈরি করে। আমরা বীজ রোপণের জন্য প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করতে পারি। আমরা চারা রোপণ, বৃদ্ধি ও ফসল কাটা, চাষাবাদ ইত্যাদিতে অনেক বেশী ও দ্রুত পারদর্শী হয়েছি।
সুতরাং, সাধারণভাবে, আমাদের হোম গ্রহ আমাদের এই পরিচিত পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে কম পুষ্টিকর ফসল, কম ফলন এবং অনেক কম জনসংখ্যা হবে। (তবে- আমরা একটি খুব বুদ্ধিমান প্রজাতি, এবং আমি মানিয়ে নেওয়ার বিভিন্ন উপায় খবই দ্রুততার সাথে বের করে ফেলেছি।)
৬. দীর্ঘ দিন
আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক (সার্কেডিয়ান) ছন্দ পৃথিবীর ২৪ ঘন্টা ঘড়ির সাথে মেলে না। এটি সহজেই একজন ব্যক্তিকে বাহ্যিক উদ্দীপনা থেকে বঞ্চিত করে এবং আমরা যখনই চাই তখন জেগে উঠি এবং ঘুমাই।মানবশিশু জন্মের প্রায় দুই সপ্তাহ পরে এরকম প্রাকৃতিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আমি আদি গ্রহের একটি দিন কমবেশি ২৫ ঘন্টা স্থায়ী হয়।
এখানে পৃথিবীতে আমাদের এ ব্যাপারটার সাথে সামঞ্জস্য করতে সমস্যা হয়েছে এবং আমাদের অনেকেরই আছে প্রচন্ড ঘুম জনিত বা অনিদ্রাজনিত সমস্যা আছে, যার ফলে আমারা বেশিরভাগ সময় ক্লান্ত এবং বিষণ্ণ বোধ করি। অন্য সমস্ত প্রভাবের সাথে মিলিয়ে পৃথিবীর জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। সেজন্য এখানে জীবনকে মাঝে মাঝে বেশ অসহনীয় বোধ হতে পারে।
আমাদের এখানে তিনটি বিকল্প বিবেচনা করতে হবে:
১। আমাদের হোম গ্রহ পৃথিবীর চেয়ে বড় কিন্তু একই হারে ঘোরে
২। এটি মোটামুটি একই আকারের কিন্তু একটু বেশি ধীরে ঘোরে
৩। এটি বড় এবং ধীরে ধীরে ঘোরে
আমাদের হোম গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ বিষয়ে আলোচনা থেকে বেশ নিশ্চিত হতে পারি সেই গ্রহের আকার পৃথিবীর সমান নয়। আমার মতে সম্ভবত (ক): আমাদের হোম গ্রহটি পৃথিবীর থেকে সামান্য বড় এবং এর ঘূর্ণনের গতি বিস্তৃতভাবে একই (একটু বেশী বা কম)।
যাইহোক, এর মানে এই নয় যে আমাদের বাড়ির গ্রহেও মাধ্যাকর্ষণ বেশী বা উচ্চতর থাকতে হবে, যেহেতু এটি এর কোরের আকার এবং ঘনত্বের উপর নির্ভর করে। সম্ভবত আমাদের বাড়ির গ্রহের থেকে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ প্রায় পাঁচ শতাংশের মত বেশি হওয়ার কারণে আমরা হয়তো মোটা হওয়ার দিকে ঝুঁকছি। সেই গ্রহের কোরটা পৃথিবীর থেকে বড় হলেই মানানসই হবে –কোর বড় মানে চৌম্বকক্ষেত্রও শক্তিশালী হবার যুক্তিটিও ধোপে টেকে।
আমাদের পরীক্ষামূলক প্রমাণও বিবেচনা করতে হবে ( আপনি প্রশ্নটা নিজেকে করেও দেখতে পারেন): একদিনে প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত ঘন্টা নেই। অবশ্যই! আমরা প্রতি দিন প্রায় ২৫ ঘন্টা আশা করে বিবর্তিত হয়েছি। পৃথিবীতে একদিনে মাত্র ২৪ ঘন্টা আছে। আশ্চর্য হবার কিছু নেই- আমরা প্রতারিত বোধ করছি।
প্রথম দশ পর্বঃ
আমরা কোথা থেকে এসেছি
আমরা কিভাবে পৃথিবীতে বেঁচে/টিকে আছি
আমরা আমাদের প্রয়োজনে বিকশিত হইনি
মানব-বিজাতীয় সংকরায়ন ও মিসিং লিঙ্ক
আমাদের শরীরের চুলের অভাব
খড় জ্বর,হাঁপানি ও ডায়েট
অত্যধিক প্রজনন ও প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতার অভাব
আমরা পৃথিবীর প্রকৃতি পাল্টে দিচ্ছি!
প্রযুক্তিগত উল্লম্ফন ও দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা!
তাহলে আমরা কোথা থেকে এসেছি-১?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:০৯