কল্পকাহিনির নায়ক রবিন হুড ধনী ব্যক্তিদের সম্পদ লুট করে গরিবদের বিলিয়ে দিত। বাস্তবের ‘রবিন হুড’ তার মতো লুটেরা-দস্যু নন; রীতিমতো আইনের লোক। তিনি জোর করে মুদিসামগ্রী নিয়ে আসছেন অভিজাত বিপণিবিতান থেকে; আর তা বিলিয়ে দিচ্ছেন গরিবদের মধ্যে।
এই ‘রবিন হুড’ হলেন স্পেনের আঞ্চলিক আইনপ্রণেতা ও মারিনালেদা শহরের মেয়র হুয়ান ম্যানুয়েল সানচেজ। এ ঘটনায় এরই মধ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে সরকার। আজ বুধবার রয়টার্সের এক খবরে এ কথা জানানো হয়।
খবরে বলা হয়, মেয়র হুয়ান সানচেজ বিভিন্ন বিপণিবিতান থেকে মুদিসামগ্রী একরকম জোর করে নিয়ে আসেন। এতে তিনি ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের কারণ হলেও গরিবদের মধ্যে ‘রবিন হুড’ ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। অর্থনৈতিক মন্দার বিরূপ প্রভাবে নিদারুণ কষ্টে থাকা লোকজন এসব জিনিস পেয়ে উপকৃত হচ্ছে।
স্পেনের আন্দালুসিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের ওই শহরে দুই হাজার ৬৪৫ জন লোকের বাস। এরই মধ্যে ছিনিয়ে নেওয়া খাদ্যসামগ্রী গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত চুরির জন্য দুটি অভিযানে যাওয়া সাত ব্যক্তি আটক হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শ্রমিক সংঘের কয়েকজন সদস্যও আছেন। তাঁরা বিপণিকেন্দ্রে ঢুকে দুই চাকার গাড়ি ভর্তি করে খাবার নিয়ে মূল্য না দিয়েই বেরিয়ে আসেন। দোকানের বাইরে মেয়র দাঁড়িয়ে ছিলেন।
সানচেজ বলেন, আন্দালুসিয়ার আঞ্চলিক আইনপ্রণেতা হিসেবে অপরাধ থেকে পার পাওয়ার সুযোগ আছে তাঁর। তবে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে বিচার করলে তিনি খুশি হবেন। এখানে অনেক গরিব মানুষ আছে, যাদের কোনো খাবার নেই। স্পেনের বিশৃঙ্খল ও বিষম অর্থনীতির দিকে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চান তিনি, যার জন্য বেছে নিয়েছেন এই পথ।
২০০৭ সাল থেকে স্পেনে গরিব মানুষের সংখ্যা ১৫ শতাংশ বেড়েছে। চার ভাগের এক ভাগ শ্রমিকের এখন কোনো কাজ নেই এবং লাখ লাখ মানুষকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। অন্যদিকে স্পেনের রক্ষণশীল সরকার বলেছে, একজন কর্মকর্তা এভাবে আইন অবজ্ঞা করতে পারেন না।
স্পেনের ক্ষমতাসীন পিপলস পার্টির (পিপি) মুখপাত্র আলফনসো আলনসো সানচেজের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি চাইলেই রবিন হুড হতে পারেন না। এই মানুষটি স্রেফ প্রচার পাওয়ার জন্যই এসব করছেন।’
স্পেনে অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত প্রদেশগুলোর মধ্যে আন্দালুসিয়া অন্যতম। বর্তমানে সেখানকার প্রতি তিনজনের একজন শ্রমিক বেকার।