নিখোঁজ বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলীকে খুঁজতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ আশ্বাস দেন। এ সময় ইলিয়াসের দুই ছেলে ও মেয়ে রুশদিরের সঙ্গে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক (মিডিয়া) সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন রাজনীতির অনেক উর্ধ্বে মানবতা। এ মানবতার কারণেই দেশের যেকোনো নাগরিককে খুঁজে বের করা আমাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে খুঁজতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের পরিবারের কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা দিয়ে সহায়তার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
তাহসিনা রুশদীর প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে দেখা শেষে সাংবাদিকদের জানান, ‘স্বজন হারানোর বেদনা প্রধানমন্ত্রী জানেন ও বোঝেন। তিনি ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পেতে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’
গত ১৭ এপ্রিল মঙ্গলবার মধ্যরাতে রাজধানী থেকে নিখোঁজ হন সাবেক সাংসদ ও সিলেট জেলা বিএনপির ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালক আনসার। ওই রাতে বনানীর রাস্তা থেকে পুলিশ ইলিয়াসের খালি গাড়ি উদ্ধার করে। এরপর ১৭ দিন বেশি সময় পার হলেও সরকার ইলিয়াস আলীর কোনো হদিস করতে পারেনি।
আজ বিকেল পাঁচটার দিকে গণভবনে পৌঁছেন রুশদীর। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত্ হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাহসিনা রুশদীরের প্রায় ৫০ মিনিট আলাপ হয়।
এর আগে গত সোমবার রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তাহসিনা রুশদীর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ চান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ তাঁকে সাক্ষাতের সময় দেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান।
সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে তাহসিনা রুশদীর বলেছিলেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে মিনতি করে বলছি, দয়া করে আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্য একটু সময় ও সুযোগ দিন। যেকোনো মূল্যে ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার করে দিন।’ তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীকে ফেরত দিলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন।
গত ১৭ এপ্রিল মঙ্গলবার মধ্যরাতে রাজধানী থেকে নিখোঁজ হন সাবেক সাংসদ ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালক আনসার। ওই রাতে বনানীর রাস্তা থেকে পুলিশ ইলিয়াস আলীর খালি গাড়ি উদ্ধার করে। এরপর দুই সপ্তাহের বেশি সময় পার হলেও সরকার ইলিয়াস আলীর কোনো হদিস করতে পারেনি।
এ ঘটনার পর গত ২৪ এপ্রিল বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, সরকারের ‘এজেন্সি ও র্যাবের লোকেরা’ ইলিয়াসকে তুলে নিয়ে গেছে। এর আগে ১৯ এপ্রিল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইলিয়াস আলী বিরোধীদলীয় নেতার নির্দেশে লুকিয়ে থাকতে পারেন।
ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে ২২, ২৩ ও ২৪ এপ্রিল সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে বিএনপি। এরপর দলটি ইলিয়াসকে জীবিত ফেরত দিতে সরকারকে চার দিন সময় বেঁধে দেয়। এই সময় গত ২৮ এপ্রিল শেষ হয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে নিখোঁজ ইলিয়াস আলীকে না পাওয়ায় ২৯ ও ৩০ এপ্রিল সারা দেশে আবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের জোট।
গত ২৬ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ইলিয়াসকে জীবিত উদ্ধার করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। অবশ্য পরদিন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, ইলিয়াস আলীকে জঙ্গিগোষ্ঠী লুকিয়ে রেখেছে কি না, সরকার তা খতিয়ে দেখছে।
গত ৩০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে বিরোধী দলের হরতাল, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে সৈয়দ আশরাফ দাবি করেন, ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে এক হাজার ২০০ অভিযান চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তাঁকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত অভিযান চলতে থাকবে। সরকার তাঁকে উদ্ধার করতে বদ্ধপরিকর। আমাদের দায়িত্ব ইলিয়াসকে খুঁজে বের করা। আমরা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিইনি।’
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১২ রাত ৯:১৬