আজ হিন্দু সম্প্রদায়ের দীপাবলি তথা দিওয়ালী পালিত হচ্ছে। যেহেতু এটি তাদের একটি ধর্মীয় উৎসব ,তাই তাদেরকে দীপাবলির শুভেচ্ছা। সামনের পুরো লেখাটি শুধুমাত্র ধর্মপ্রান মুসলমান ভাইবোনদের জন্য। কারো মনে কোন রকমের কষ্ট লাগলে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
হুররে, দীপাবলী উৎসব, চলো সবাই মিলে প্রদীপ জ্বালাই ,আনন্দ করি। অনেক মজা হবে, জ্বি কি বলছেন এসব পালন করা যাবেনা? আরে ভাই রাখেন তো আপনার পুরানা মধ্যযুগীয় কথাবার্তা,আমরা তো জাষ্ট মজা করতে যাচ্ছি।
এটাই তো আমাদের বদ্ধমূল ধারনা তাইতো? নিজের বুকে হাত দিয়ে মনকে প্রশ্ন করুনঃ আজ পর্যন্ত কোন হিন্দু কিংবা খ্রিষ্টানকে ঈদ কিংবা শবে কদরে রাত জেগে নামাজ পড়তে দেখেছেন। ওরাও ত বলতে পারতো জাষ্ট মজা করার জন্য নামাজে আসছি,তাহলে আপনার ধর্মে কি মজার খুব অভাব?
আসুন জানি দীপাবলির পিছনের খবরঃ
দীপাবলি বেদান্তিক তথা হিন্দু এবং কিছু সংখ্যক শিখ সম্প্রদায় যুগের পর যুগ পালন করে আসছে। এটি দেওয়ালি, দীপান্বিতা, দীপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা এবং যক্ষরাত্রি নামেও অভিহিত হয়।
আলোকসজ্জা কেন করা হয় এর কতগুলো ইতিহাস পড়লে জানা যায়ঃ
১. শ্রাদ্ধগ্রহণের জন্য যমলোক ছেড়ে যে পিতৃপুরুষগণ দুনিয়ায় আগমন করেন বলে কল্পিত হয়, তাঁদের পথ প্রদর্শনার্থে উল্কা জ্বালানো হয়। এ কারণে ঐ দিন আলোকসজ্জা ও বাজি পোড়ানো হয়।
২. কার্তিকী অমাবস্যায় এই উৎসব উপলক্ষে কালীপূজা , কোন কোন স্থানে লক্ষ্মীপূজাও হয় এবং লক্ষীকে স্বাগতম ও অলক্ষীকে বিদায় করার জন্যও দ্বীপ জ্বালানো হয়।
৩. রামায়ন অনুসারে আজকের দিনে ত্রেতা যুগে শ্রী রাম রাবণ বধ করে চৌদ্দ বছরের বনবাস শেষে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেন। শ্রী রামের চৌদ্দ বছর পরের প্রত্যাবর্তনে সারা রাজ্য জুড়ে প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রজারা খুশীতে শব্দবাজি করে। অনেকে মনে করেন দীপাবলীর আলোকসজ্জা এবং শব্দবাজি ত্রেতাযুগে রাম-রাজ্যে ঘটে যাওয়া সেই অধ্যায়কে সামনে রেখেই অন্যসব অঞ্চলে প্রচলিত হয়েছে, পরিচিত হয়েছে, বিস্তৃত হয়েছে।
৪.বুদ্ধদেবের গৃহত্যাগ স্মরণে বৌদ্ধরা এ সময়ে উৎসব করে। মহাবীরের নির্বাণদিবস উপলক্ষে অমাবস্যার আগের দিন চতুর্থী তিথিতে জৈনরা আলোকসজ্জা করে।
৫.সনাতন ধর্মের ভগবান তথা ইশ্বর কৃষ্ণ কর্তৃক নরকাসুর বধের স্মারক হিসেবে একে নরকচতুর্দশী বলা হয়। সে আনন্দে আলোক উৎসব করা হয়।
৬.বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে দীপাবলিতে কালী পূজা হয়। অন্যান্য অঞ্চলে এই দিনে গণেশ পূজা এবং লক্ষ্মী পূজাও করা হয়।সনাতনদের মাঝে কেউ কেউ আজকের দিনকে বিষ্ণুদেব এবং লক্ষ্মীদেবীর বিবাহ বার্ষিকি হিসেবে পালন করেন
৭. জৈন ধর্মের প্রবর্তক মহাবীর ৫২৭ অব্দে আজকেই এই দিনে মোক্ষ (নির্বাণ) লাভ করেন।
৮. এই দিনে শিখ ধর্মগুরু গুরু হরগোবিন্দ জী অমৃতসরে ফিরে আসেন; সম্রাট জাহাঙ্গীরকে পরাজিত করে গোয়ালিওর দুর্গ থেকে বায়ান্ন হিন্দু রাজাকে মুক্ত করে- তাঁর এই প্রত্যাবর্তনকে শিখগণ পালন করেন; তারা এই দিনকে ‘বন্দী ছোড় দিবস’ও বলেন।
দীপাবলী মূলত পাঁচদিন ব্যাপী উৎসব।
প্রথম দিনঃ দীপাবলীর আগের দিনের চতুর্দশীকে (এই দিনকে দীপাবলি উৎসবের প্রথম দিন বলা হয়) বলা হয় ‘নরকা চতুর্দশী’; এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর স্ত্রী সত্যভামা নরকাসুরকে বধ করেছিলেন।
দ্বিতীয় দিনঃ চতুর্দশী পরের অমাবস্যা তিথি দীপাবলি উৎসবের দ্বিতীয় দিন, কিন্তু এই দিনই মূল হিসেবে উদযাপিত হয়। এই দিন রাতে শাক্ত ধর্মের অনুসারীগণ শক্তি দেবী কালীর পূজা করেন। তাছাড়া এই দিনে লক্ষীপূজাও করা হয়, কথিত আছে এই দিনে ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মী বরধাত্রী রূপে ভক্তের মনোকামনা পূর্ণ করেন।
তৃতীয় দিন- কার্তিকা শুদ্ধ; এই দিন অসুর বলি নরক থেকে বেরিয়ে পরিশুদ্ধ হয়ে বিষ্ণুর বরে পৃথিবী শাসন করে।
চতুর্থ দিন হচ্ছেঃ এই দিনকে বলা ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া; একে যম দ্বিতীয়াও বলা হয়; এই দিন বোনেরা ভাইকে নিমন্তণ করে, কপালে ফোটা দেয়, হাতে রাখী বেঁধে দেয়।
প্রিয় পাঠক কোথাও কি মুসলমানদের কোন ইতিহাস খুঁজে পেলেন, বরং একজন ধর্মপ্রান মুসলিম সম্রাট শিখদের হাতে পরাজয়ের কষ্ট জানলেন। তাহলে কেন আমরা না জেনে লক্ষীপূজা,কালীপূজায় নিজেদের নাম লিখিয়ে শিরক করছি? জেনে রাখুন শিরক হলো সবচেয়ে বড় গুনাহ,আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন কিন্তু শিরক কখনো ক্ষমা করেন না।
মক্কা যেদিন বিজয় হলো সেদিন রাসুল দঃ ক্বাবা ঘরের দরজার মুখে দাঁড়িয়ে ৩৬০টি মূর্তিকে লাঠির আঘাতে ভেঙ্গে ফেললেন আর বলতে লাগলেনঃ ওকুল জ্বা আল হাক্ক,ওজাহাকাল বাতেল ইন্নাল বাতিলা কানা জাউখা, সত্য এসেছে মিথ্যা চিরতরে ধ্বংস হয়েছে, আর মিথ্যার পরাজয় অবশ্যই হবে।
তাহলে আজ কারা আমাদের সন্তানদের হ্যালোইন উৎসবে নেয়,দ্বীপাবলি পালন করতে বলে? তাহলে কেনই বা আমাদের নবী সারাটা জীবন উম্মতের জন্য কষ্ট করে গেলেন,কেনই বা আমরা মুসলিম হলাম। এ ধর্মের প্রতি আমাদের দরদ কম কারন এ ধর্মে দিক্ষিত হতে আমাদের কোন ত্যাগ করতে হয়নি, বাপ দাদার সম্পদের মতো পেয়ে গেছি।
যারা এসব অনুষ্ঠান উদযাপন করে শিরক করলে যেনে রেখো, তোমাদের আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। সেদিন দেখবে তিনি তোমাদের দিকে মুখ তুলে তাকাবেন না, প্রস্তুত আছো তো সেই ভয়ংকর সময়ের জন্য?