কোন একবার থার্টিফার্স্ট নাইটে বাধন নামের একটি মেয়ের শ্লীলতাহানী হল এবং দোষ পরল পাশ্চাত্য সভ্যতার । সেইদিন থেকে আমার ধারনা ছিল ইউরোপ আমেরিকায় থার্টিফার্স্ট নাইটে সবাই মদের বোতল নিয়ে মাতাল হয়ে দৌড়ায় , চান্স পেলে মেয়েদের শ্লীলতাহানী করে । রাস্তাঘাটে হর্ন বাজাতে বাজাতে প্রচন্ড স্পীডে ঘুরে বেড়ায় ।
আমি সিঙ্গাপুরে দুইবার থার্টিফাস্ট উৎযাপন করেছি । দেখেছি তারা কতটা শালীন , ভদ্র এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল । এখানে বেশির ভাগ ছিল ইউরোপ আমেরিকার টুরিস্ট । আমি ভেবেছিলাম অন্য দেশ দেখে ভদ্র হয়ে আছে কিন্তু নিজ দেশে থাকলে ঠিক ফাটিয়ে ফেলত।
এবার ২০১৪ এর থার্টি ফাস্টে ছিলাম সানফ্রানসিসকোতে । সন্ধ্যার সময় ইমিগ্রেশন অফিসার বলল আমেরিকায় দ্বিতীয় বৃহত্তম সেলিব্রেশন হয় এখানে । গোল্ডেন গেট ব্রিজের কাছে আতশবাজি হয় । এই অনুষ্ঠান দেখার জন্য সারা পৃথিবী থেকে পর্যটক আসে । রাত নটার সময় হাজির হলাম সানফ্রানসিসকো সেন্টারে । হাজার হাজার লোক দলে বলে ছুটে চলছে । কিন্তু কোন হৈ চৈ নেই , ধাক্কাধাক্কি নেই । বিশাল লম্বা ট্রাফিক কিন্তু কোন হর্ন বাজছে না। ছুটাছুটি করা একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম "সবাই কোথায় ছুটছে ?" তার কাছ থেকে জানলাম অধিকাংশ হোটেল এবং পার্টি সেন্টার আগে থেকেই বুকড । সবাই একটু জায়গার আশায় বিভিন্ন হোটেলে ঢু মারছে ।রাত ১২টা নাগাদ কফি হাউজ , রাস্তার পাশের রেস্টুরেন্ট সব হাউজফুল। আমরাও একটা খাবার দোকানের পাশে অবস্থান নিলাম। খুব অবাক হয়ে কিছু ব্যাপার লক্ষ করলাম। এই যে এত মানুষ কথা বলছে পাশের টেবিলে বসেও আমরা কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু আমাদের চারজনের কথা মনে হয় রেস্টুরেন্টের সব কোনা থেকে শোনা যাচ্ছিল। ঘড়ির কাটায় ঠিক বারটা । আতশবাজি শুরু হয়েছে । সবাইকে বাইরে দাড়িয়ে উপভোগ করছে হাততালি দিচ্ছে । তারপর যে যার হোটেলে ফিরে গেল ।সেখানে যে যার মত উজ্জাপন করছে । জাহাজে ফিরব এমন সময় দেখলাম সারি সারি লোক বের হয়ে আসছে। ট্যাক্সির জন্য বিশাল লাইন। কথা বলে জানলাম সরকারি ভাবে রাত ২টায় সব অনুষ্ঠান শেষ করতে বলেছে । তাই রাত দেরটার মধ্যেই হোটেল মালিকরা অনুষ্ঠান শেষ করে দিয়েছি । কোথাও কোন মাতলামি নেই , নেই হর্ন বাজিয়ে ছুটে চলা গাড়ি,কোন নারীকেও কেউ দৌড়ানি দিচ্ছে না। এবং কারো হাতেই কোন বোতল দেখলাম না। কথা বললাম আমেরিকায় বসবাস করা এক কাজিনের সাথে । সে জানাল "লাসভেগাসেও" এমন শান্তিপূর্ণ ভাবে নববর্ষ উৎযাপন হয়েছে।
এখন সুশীল সমাজের কাছে আমার প্রশ্ন "কোন পাশ্চাত্য সভ্যতাকে আমাদের তরুণরা ফলো করছে?" কেন আমরা পাশ্চাত্য সভ্যতার দোষ দেই।
আসলে দোষ আমাদের। আমরা কোন বস্ত্রহরণ/ শ্লীলতাহানী হলে একে অপরের দোষারোপ করি। মাঝদিয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। টিএসসিতে যে দুর্ঘটনা হয়েছে -সেখানে ছিল হাজার হাজার মোবাইল ক্যামেরা, লক্ষ লক্ষ DSLR এবং তিনস্তর নিরাপত্তার অনেক গুলো ছি ছি ক্যামেরা । তারপরও বলছি কেউ ধরা পরবে না। এবং এটাও আমাদের দেশের সংস্কৃতির একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়াবে । ততদিন পর্যন্ত মজা লুটবেন যতদিন পর্যন্ত নিজ বোন কিংবা স্ত্রী/ প্রেমিকা ভিক্টিম না হয়।