মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুন!!!পাচ বছরে চিফ ইঞ্জিনিয়ার / ক্যাপ্টেন হয়ে হাজার হাজার ডলার উপার্জন করুণ ।
২/৩ বছর পূর্বে আমার এক পরিচিত লোকের মাধ্যমে একজন ভদ্রলক দেখা করতে চাইলেন। তাকে বললাম আপনি ইচ্চে করলে ফোনেই কথা বার্তা বলতে পারেন। কিন্তু একপ্রকার জোর করেই দেখা করলেন।পড়ে বুঝলাম কেন তিনি এত উতলা।একটি পত্রিকার এড দেখালেন আমাকে। যেখানে বেশ হাই লাইট করে উপরের কথা গুলো লেখা ছিল। তিনি তার ছেলেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চান। এবং এই জন্য ফি মাত্র ১০ লাখ টাকা।যেহেতু টাকার অংকটা একটু বেশি তাই তিনি আমার সাথে একটু আলাপ করতে এসেছিলেন।
মেরিন পড়ার জন্য বাংলাদেশে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা “মেরিন একাডেমী” নামে পরিচিত। প্রতি বছরই এখানে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ক্যাডেট নেয়া হয়। এবং এটাই এখন পর্যন্ত মেরিনার হয়ার সবচেয়ে বৈধ এবং সম্মানজনক প্রতিষ্ঠান।বাংলাদেশের মেরিন একাডেমী থেকে পাশ করা ক্যাডেটগণ সারা বিশ্বে অত্যান্ত সুনামের সাথে কাজ করছে । আর একারনেই আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের মেরিনারদের অনেক চাহিদা। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যাবসায়ি এটাকে পুজি করে নামে / বেনামে প্রতারণা করে আসছে।
গত পাচ ছয় বছরে অনেক গুলো প্রতিষ্ঠান ক্যাডেট ট্রেনিং এবং চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেক পরিবার ফতুর করে ছেড়েছে । তাই সবারি উচিত একটু জেনে শুনে তাদের সন্তানদের ভর্তি করানো।
আসুন কিছু বেসিক জেনে নেই।
মেরিন ও অন্যান্য পড়াশুনার বিস্তর ফারাক । নামে এবং সরকারি অনুমোদন নিয়ে যারা মেরিন পড়াচ্ছে তারা অনেকেই বিদেশী ব্যাচেলার ডিগ্রী দিয়ে থাকে। এগুলোর আসল বা নকল যাই হোক মেরিনের চাকরীর ক্ষেত্রে মুল্যহিন।আমাদের অনেকেই মজা করে বলে থাকে ডিগ্রিটা বিয়ের সময় কাজে লাগে আর কোথাও না। মেরিনের চাকরীর জন্য প্রথমেই আপনার দরকার হবে একটি পাসপোর্ট সদৃশ বই যা সিডিসি নামে পরিচিত।এই সিডিসি টি ইস্যু করে সরকার। মেরিন একাডেমী থেকে যারা পাশ করে বের হয় তাদেরকে সরকারি ভাবে সিডিসি দেয়া হয়। কিন্তু এর বাইরে যারা মেরিনে চাকরি করতে ইচ্ছুক সবাইকে নিজ উদ্যোগে সিডিসি বের করে নিতে হয়।এবং এটা যে কত কষ্ট সাধ্য তা একমাত্র যারা কাজটি করেছেন তারাই ভাল বলতে পারবেন। তাই কোথাও ভর্তির আগে জেনে নিবেন তারা সিডিসি করে দিবে কিনা বা কি পরিমাণ সহযোগিতা করবে।
সিডিসি বের হয়ে গেলেই যে আপনার সব কাজ শেষ , আপনি মেরিনার হয়ে গেলেন তা কিন্তু না। এর পর আপনাকে শিক্ষানবিস বা ক্যাডেট হিসাবে জাহাজে চাকরি করতে হবে। এবং ক্ষেত্র বিশেষ ২৪ মাস থেকে ৩৬ মাস সী টাইম করতে হবে। মানে ২৪ থকে ৩৬ মাস জাহাজে চাকরি করতে হবে শিক্ষানবিস বা ক্যাডেট হিসাবে। তারপর আপনাকে একটা কোর্স করে অনেক গুলো পরিক্ষা দিতে হবে। এসব পরীক্ষা পাশ করলে আপনি একটি সার্টিফিকেট পাবেন যাকে লাইসেন্স বা সিওসি ( সার্টিফিকেট অফ কম্পিটেন্সি )বলা হয়। এবার আপনি জুনিয়ার অফিসার বা ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে জাহাজে সত্যিকার অর্থে চাকরি করতে পারবেন। তবে এই সিওসি পাওয়ার সব ফর্মালিটি শেষ করতে কমপক্ষে এক বছর লাগবেই। যারা ইঞ্জিন ক্যাডেট থেকে পরীক্ষা দিবে তাদের ৬ মাস ওয়ার্কশপ করতে হয়।
পরীক্ষার জন্য যে কোর্স করতে হয় তা মুলতঃ ইংল্যান্ড , সিঙ্গাপুর , অস্ট্রেলিয়া অথবা আমাদের দেশে হয়। বাংলাদেশ ছাড়া যে কোন দেশে করতে গেলেই প্রচুর টাকা লাগে এবং অনেক সময় কোর্স অগ্রিম বুকিং হয়ে থাকে।সিঙ্গাপুরে এক বছর পর্যন্ত বুকিং হয়ে থাকে।বাংলাদেশে অনেক সিস্টেম লস হয়। তাই সবাই সাধারণত বিদেশেই যায় ।দুই বছর কোন ইন্সটিটিউটে ট্রেনিং এর পর দুই বছর ক্যাডেট হিসাবে চাকরি এবং তার পর পরীক্ষা মানে কমপক্ষে ৫/৬ বছর লাগবে জুনিয়ার অফিসার বা ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে জাহাজে চাকরি করার জন্য।যারা প্রাইভেটে মেরিন পড়াশুনা করবেন এই কথাটা মাথায় রাখলে পড়ে সুবিধা হবে।
ক্যাডেট হিসাবে চাকরি পাওয়াটাও এত সহজ না। বিশ্ব শিপিং ব্যাবসায় মন্দার কারনে অনেক কোম্পানি এখন আর ক্যাডেট নিতে চায় না।আর একজন নতুন ক্যাডেটকে জাহাজে উঠান কত টাফ তা যে কোন মেরিন ম্যানিং এজেন্টের কাছে গেলেই জানতে পারবেন। অনেক এজেন্ট একজন ক্যাডেট উঠানোর জন্য প্রচুর টাকা নিয়ে থাকে। আর যদি কমপক্ষে ২৪ মাস সী টাইমও করতে হলে একজন ক্যাডেটকে দুই বার এই ঝামেলায় পড়তে হবে।কারন এক জাহাজে একবছরের বেশি থাকা যায় না।
মেরিন একাডেমীর ক্যাডেটরা সী টাইম ও পরীক্ষায় অনেক ছাড় পেয়ে থাকে। তাই কোন মতেই তাদের সাথে তুলনা করা ঠিক হবে না।
আমার এই লেখার উদ্দেশ্য কাউকে নিরুৎসাহিত করা না। শুধু কোথাও ভর্তির আগে একটু খোঁজ খবর নিয়ে নিবেন। প্রতিষ্ঠানটি ডিজি শিপিং থেকে অনুমতি প্রাপ্ত কিনা খবর নিন। দরকার হলে ডিজি শিপিং থেকে খোঁজ খবর নিন। সিডিসি বের করার ব্যাপারে কি ধরনের সহযোগিতা করবে তা কনফার্ম করুণ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডেট হিসাবে চাকরীর ব্যাবস্থা করবে কিনা না করলে আপনি তার ব্যাবস্থা করতে পারবেন কিনা তা যাচাই করুণ.
অনেকেই দাবি করে তাদের ইন্সটিটিউটের ক্যাডেটদের মেরিন একাডেমীর ক্যাডেটদের মত পরীক্ষায় এবং সী টাইমে ছাড় আছে।আমার জানা মতে এটা এখনও কোন প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয় নি।দরকার হলে এটাও ডিজি শিপিং থেকে জেনে নিন।আর ক্যাডেটদের কত মাস হলে পরীক্ষা দিতে পারবে তা সঠিক ভাবে শুধু ডিজি শিপিং এ পাবেন।
অনেক অভিভাবক সন্তানদের প্রাইভেট মেরিন ইন্সটিটিউটে ভর্তি করেই স্বপ্ন দেখেন ছেলে দুই বছরে মেরনি অফিসার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হবে।কারিকারি ডলার আয় করবে।যা পড়ে সবাইকে হতাশ করে।সঠিক ধারনা আপনাকে ঠিকমত গাইড করতে সাহায্য করবে।
পোস্ট টা আরও আপডেট হবে।ব্লগের অন্যান্য মেরিনার/এ বিষয় জানেন এমন কেউ কোন তথ্য দিলে তা আপডেট করে দেয়া হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:১৪