বর্ষা প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষের কৃষি ও জীবনধারণের জন্য আপরিহার্য এক প্রাকৃতিক উপলক্ষ। কিন্তু এ অঞ্চলে আগত ইউরোপীয়দের জন্য প্রাথমিককালে এ বর্ষা ছিল আতঙ্কের। তাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে এই বর্ষা একেবারে ভিন্ন। এককথায় বর্ষা ছিল ইউরোপীয়দের মৃত্যুদূত। ‘...এ বছর বৃষ্টি জীবনঘাতী অসুস্থতা নিয়ে এসেছে। কলকাতায় বসবাসরত বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় অধিবাসী মৃত্যুবরণ করেছে। শুধু সেপ্টেম্বরেই ৭০টি শবযাত্রা হয়েছে’— ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে কথাগুলো লিখেছিলেন এক ইউরোপীয় উইলিয়াম হিকি। সে সময় ইংল্যান্ডের বন্দর থেকে মাদ্রাজ, কলকাতা বা বোম্বাইয়ের (মুম্বাই) বন্দরে জাহাজে করে পৌঁছতে পাড়ি দিতে হতো ১৫ হাজার মাইল, সময় লাগত ছয় থেকে সাত মাস। জাহাজে জ্বরেই অনেকে মারা যেতেন। আর জ্বর থেকে বেঁচে গেলে ভারতের মাটিতে পা দিয়েই রোগ বাঁধিয়ে বসতেন। ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে ওভিংটন জানিয়েছিলেন, তার সঙ্গে বোম্বাইয়ে আসা ২৪ জন ইউরোপীয় যখন জাহাজ থেকে নামেন, ভারতে তখন বর্ষাকাল। আর এ বর্ষাকাল শেষ হওয়ার আগেই সেই ২৪ জনের ২০ জন মারা গিয়েছিলেন। সে সময় ভারতকে বলা হতো ‘শ্বেতাঙ্গদের গোরস্তান’। ইউরোপীয়দের সংগীত ও বন্দুকের গুলি ছুড়ে সমাধিস্থ করা হতো। কিন্তু মৃতদের মিছিলে এত ইউরোপীয় যুক্ত হচ্ছিল যে, ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজের এক সার্জন স্থানীয় কমান্ডারকে অনুরোধ করেন সংগীত ও গুলি ছোড়ার রীতি কিছুদিনের জন্য স্থগিত করতে। কারণ এ শব্দ ‘মৃতদের মিছিল’-কে সবার নজরে আনছে, জীবিতরাও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন। তবে এত মৃত্যুর পরেও ভারতে ইউরোপীয়দের আগমন থেমে থাকেনি। বণিক, কারিগর, নাবিক, ভাড়াটে যোদ্ধা, অভিযাত্রীরা আসতে থাকলেন। এরা এসেছিলেন পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, গ্রিস, ইতালি ও ইউরোপের প্রায় সব প্রান্ত থেকে। সে আমলে বাংলায় অবস্থান করা ইউরোপীয়দের মধ্যে প্রচলিত ছিল যে— ‘বাংলায় প্রবেশের একশ পথ আছে কিন্তু বের হওয়ার পথ মাত্র একটিই।’ সম্পদ আর দ্রুত ভাগ্য বদলানোর আশায় ইউরোপীয়রা প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করে ভারতে এসেছিলেন। এদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক ছিলেন তরুণ। ভারতে ইউরোপীয়দের সমাধিগুলো দেখলেই তরুণদের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে এরা কেউই এ অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে আসতেন না, বরং ধনী হয়ে দেশে ফিরে যাওয়াটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। পূর্ব বাংলা ছিল ইউরোপীয়দের জন্য আতঙ্কের এবং তা স্পষ্ট হয় সপ্তদশ শতকের শেষভাগে ফ্রেয়ারের লেখায়: ‘৫০০ জনের মধ্যে বেঁচে থাকতেন ১০০ জন। আর এই ১০০ জনের মধ্যে মাত্র ২৫ জন কোনো জমি-সম্পদ অর্জন করতে পারতেন না। আর জীবিতরা বেশির ভাগই ১০ বছর নিজের দেশের চেহারা দেখেননি।’ শিশুদের মৃত্যু বাদ দিলে উপনিবেশ যুগের শুরুর দিকে ভারতে ইউরোপীয়দের মত্যুকালে গড় বয়স ছিল পুরুষদের ৩০ ও নারীদের ২৫ বছর।
ভারতে ইউরোপীয়দের মৃত্যুর বেশ কয়েক ধরনের কারণ উল্লেখ করার মতো, যার মধ্যে আছে কলেরা। এখন আমরা যে রোগকে কলেরা নামে ডাকি, সেটি এ উপমহাদেশে পরিচিত হয়েছিল ইউরোপীয়দের হাত ধরে উনিশ শতকে। তার আগে এ রোগ মর্টডে-চিয়েন নামে পরিচিত ছিল। গোয়ার এক পর্তুগিজ লেখক তার প্রত্যক্ষ দর্শন থেকে লিখেছিলেন যে, ১০০ কলেরা আক্রান্তের মধ্যে বড়জোর ১০ জন প্রাণে বাঁচতেন। এ রোগ মহামারী ও বিচ্ছিন্ন উভয় চেহারাতেই আবির্ভূত হতো। পুরো উপমহাদেশে কলেরায় মৃত্যুবরণ করা ইউরোপীয়দের শত শত সমাধি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কলকাতায় একজন নারীর সমাধি আছে, যিনি ৩৮ বছর বয়সে কলেরায় মারা গিয়েছিলেন। তার সমাধিতে লেখা আছে— ‘বাংলার প্রকৌশলী মেজর হেনরি ডেবুডের প্রাণপ্রিয় স্ত্রী জেন অ্যানি। ভারতে ফিরে আসার দুই মাস পর ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কলেরায় আক্রান্ত হন এবং একই দিন মধ্যরাতের আগেই মৃত্যুবরণ করেন।’ কলেরায় আক্রান্ত হওয়া মানে দিন ঘুরতে না ঘুরতেই মৃত্যু। ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে রলিনস তার মা-বাবার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তরুণী মিস কডরিংটনের করুণ মৃত্যুর কথা উল্লেখ করছিলেন— ‘শনিবার সকালে মিস কডরিংটন কলেরায় আক্রান্ত হন এবং সেদিনই মারা গেলেন! ভারতে জীবন ভয়ানকভাবে অনিশ্চিত।উনিশ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত ধারণা করা হতো যে, কলেরা বায়ুবাহিত রোগ। তাই কলেরা থেকে বাঁচতে ভারতে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী বিশেষ ব্যবস্থা নিত। মূল ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে নির্মল বাতাস আছে, এমন কোনো উঁচু স্থানে ক্যাম্প করা হতো। সেখানেও যদি কেউ আক্রান্ত হতেন তাহলে আবার ক্যাম্প সরিয়ে নিয়ে নতুন জায়গায় স্থাপন করা হতো।
ভারতে ইউরোপীয়দের আরেক আতঙ্ক ছিল টাইফয়েড। এ জ্বর ইংরেজ সেনাদের ভালোই ভুগিয়েছিল। বিশেষত প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অনেক ব্রিটিশ সেনা টাইফয়েডে ভুগে মারা গিয়েছিলেন। জ্বরে ভুগে মারা গিয়েছিলেন ২৩ বছরের জে. উইলসন। তিনি ছিলেন কিং’স রয়্যাল রাইফেল কর্পসের সদস্য। সহকর্মীরা এ তরুণের এপিটাফে এক মর্মস্পর্শী বাণী খোদাই করেছিলেন—
‘সে পেশোয়ার ছেড়ে যাওয়ার সময় আমরা কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি
তার জীবন প্রদীপ ফুরিয়ে এসেছে
হায় মৃত্যু তাকে ডেকে নিল
সে আবার আমাদের মাঝে ফেরার আগেই।’
ভারতবর্ষের গরম ইউরোপীয়দের ভুগিয়েছে। হিট স্ট্রোক বা সান স্ট্রোকে মারা গেছেন অনেকে। এর প্রধান কারণ ছিল— এ অঞ্চলের আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই নয় এমন পোশাক বিশেষত মাথার হ্যাট ও পর্যাপ্ত লবণ না খাওয়া। ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজের গভর্নর লর্ড পিগট হিট স্ট্রোকে মারা গিয়েছিলেন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কানপুরে সান-স্ট্রোকে মারা যান স্যার জে. পার্কার, তার সমাধিফলকে বাইবেলের একটি বাক্য লেখা রয়েছে— ‘neither shall the sun light on them nor any heat.’ প্রাথমিককালে ইংরেজ সেনাদের দৈনন্দিন প্যারেড বেশ বেলা করেই হতো, কিন্তু পরবর্তীতে রোদের তাপের বিপদ বুঝতে পেরে প্যারেড একেবারে ভোরের দিকে নিয়ে আসা হয়। এ রকম সময়সূচির পরিবর্তন অনেক পুরনো ধারার কর্মকর্তারা মেনে নিতে পারেননি। এ টানাপড়েন প্রত্যক্ষকারী ক্যারি ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের জুলাইয়ে তার মা-বাবার কাছে লিখেছিলেন, ‘পাগল কর্নেল আমাকে দুপুরবেলা প্যারেড করতে আদেশ দেয়। শুধু একটা খড়ের টুপি পরে খোলা মাঠে প্যারেড করা পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়। এই গরমে অন্য রেজিমেন্টগুলো এমনকি ভোরে চালানো প্যারেডও স্থগিত করেছে।’ স্মলপক্সও ভারতে অনেক ইউরোপীয়র প্রাণ নিয়েছে।
তত্কালের ভারতবর্ষ তথা আজকের ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানজুড়ে ছড়িয়ে আছে ঔপনিবেশিক যুগে এ অঞ্চলে আসা অসংখ্য ইউরোপীয়র সমাধি। এসব সমাধির এপিটাফে খোদাই করা বিভিন্ন চিহ্ন ইউরোপের সমাজ-রাজনীতি সম্পর্কে কৌতূহলোদ্দীপক তথ্য দেয়। এমনকি দুনিয়ার এই পূর্বভাগে ফ্রিমেসোনারিদের আবির্ভাবের ঘটনাও জানা যায় এসব এপিটাফ পরীক্ষা করে। তাছাড়া অনেক এপিটাফ তো কেবল এপিটাফ হয়েই রয়ে গেছে, এগুলোয় আবার পাওয়া যায় কবিতা, জীবন-মৃত্যু নিয়ে ইউরোপীয় চিন্তার প্রকাশ। বিষয়-ভাব অনুসারে কিছু এপিটাফের লেখা এখানে ভাষান্তর করে তুলে ধরা হলো—
বিরহ-বেদনা
জয়পুরের আবাসিক সার্জন চিকিত্সক জে. হ্যারিস (৪৩), মৃ. ১৮৪৬:
‘এই প্রস্তরফলকটি একজন বিধবা যত্ন করে স্থাপন করেছেন স্বামীর প্রতি নিজের প্রেম ও চোখের জলের হিসাব রাখতে,
তার স্বামী কত মহান ছিলেন এবং তাকে পেয়ে এই নারী কতটা ভাগ্যবান তা জানতে।’
মেজর ঈগল, তৃতীয় রেজিমেন্ট নেটিভ ইনফ্যান্ট্রি, দিল্লি ১৮১১:
‘তিনি নীরব কবরে শান্তিতে থাকুন আমি তাই চাই
এই মূল্যবান ধূলিকণা
পবিত্র সমাধিতে কবরকে নিরাপদে রাখবে
যত দিন না আমিও কোথাও আশ্রয় নিচ্ছি।’
তামিলনাড়ুর ট্রানকুবারে একটি এপিটাফে লেখা আছে: ‘এখানে শায়িত আছে একটি দেহ, যাতে একসময় মারিয়া উইলাডসের পবিত্র ও শুদ্ধ আত্মা বাস করত। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর এবং মারা যান ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর।
৯ মাস ১১ দিন গর্ভধারণের পর তিনি তার স্বামী রেভারেন্ড এইচ. জে. উইলাডসকে বেদনার সাগরে ডুবিয়ে এবং ১১ দিন বয়সী সন্তান ক্রিস্টানকে মাতৃহারা করে দুনিয়া ছেড়ে যান। আমরা আশাবাদী স্বর্গে তার সঙ্গে আমাদের আবার সাক্ষাত্ হবে।’
টিকিট কালেক্টর বদ্রি ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের অমৃতসরে ১৮ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। তার সমাধিফলকে মা-বাবা হূদয় নিংড়ানো ভালোবাসার শব্দমালা খোদাই করিয়েছিলেন:
‘ঘরে ফিরে যাও ও প্রিয়জন, চোখের জল ফেলো না
যিশু আসার আগ পর্যন্ত আমি এখানেই থাকব
আমার জীবন ছিল স্বল্প সময়ের কিন্তু এখন এই বিশ্রাম অনেক দীর্ঘ
যিশু যা পছন্দ করেছেন আমাকে সেখানেই রেখেছেন।’
স্ত্রীর জন্য কবিতা লিখে তা এপিটাফে খোদাই করিয়েছিলেন সার্জেন্ট কসটেলো। তার স্ত্রী ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে ১৬ বছর ৯ মাস বয়সে মারা গিয়েছিলেন।
‘Let the vain world engage no more
Behold the gaping tomb
It bids us seize the present hour
Tomorrow deatg may come.’
অদ্ভুত ও মজার এপিটাফ
পাকিস্তানের পেশোয়ারে এক ইংরেজ ক্যাপ্টেনের এপিটাফে লেখা আছে:
‘এখানে শায়িত আছেন
ক্যাপ্টেন আর্নেস্ট ব্লুমফিল্ড
দুর্ঘটনাবশত আর্দালির গুলিতে নিহত হয়েছিলেন
২ মার্চ ১৮৭৯।
ভালো করেছ, চমত্কার ও বিশ্বস্ত চাকর!’
কলকাতার এক সমাধিফলকে লেখা আছে:
‘এখানে সমাধিস্থ হয়েছেন একজন পাপে নিমজ্জিত অসুখী ও হতভাগ্য পাদ্রি।’
গৌরব ও বিনয়
জন কারভালহো মাদ্রাজের সেন্ট জর্জ দুর্গে সমাহিত হয়েছিলেন ১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে। ভারতে যে গুটিকয় খ্রিস্টানের এপিটাফে পেগান ভাবনার অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়, তার মধ্যে কারভালহোরটি অন্যতম। তার এপিটাফে খোদিত আছে রোমান গীতিকবি হোরাসের কাব্যের কিছু লাইন। আরেকজন বণিক জন রসের এপিটাফেও একই রকম খোদাই দেখা যায়।
পাকিস্তানের মুরিতে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে সমাহিত হন সার্জেন্ট এইচ অর্চার্ড। ২৬ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন এ সৈনিক। তার এপিটাফে পাওয়া যায় সামরিক গৌরবের মেজাজ—
“বিদায়, প্রিয় কমরেডগণ, সবাইকে বিদায়,
দুনিয়াতে আমার জীবন ছিল সংক্ষিপ্ত, ঈশ্বরই ভালো জানেন কেন
কিং’স রেজিমেন্ট থেকে তিনি আমাকে তার কাছে ডেকে নিলেন—
কেন সেটা তিনিই জানেন। আমি মনে করি মৃত্যুর জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম।”
আঠারো শতকে মাদ্রাজের একটি সেটেলমেন্ট প্রধানের এপিটাফ—
‘গভর্নরের সম্পদ ছাড়াও তিনি মনুষ্যত্বের প্রকৃত সম্পদে ধনী।’
উপদেশনামা
ভারতের ঝাঁসিতে আছে সার্জেন্ট এ. ইচিসনের সমাধি। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ৩১ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তার সমাধিতে পাওয়া যাবে মৃত্যুর জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকার বার্তা—
‘অচেনা পথিক কিংবা আমার বন্ধুরা, যেই আমার কবর দেখছেন
আজ আপনারা যেখানে, একসময় আমিও সে রকম প্রাণচঞ্চল ছিলাম
কিন্তু এখন আমি যেখানে আপনাদেরও এখানে আসতে হবে একদিন
আমাকে অনুসরণ করতে প্রস্তুত হোন।’
১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ক্যাপ্টেন সি. স্যান্ডফোর্ডের এপিটাফ—
‘পথিক, একজন সাহসী মানুষের এই নির্জন বিশ্রামঘরকে সম্মান প্রদর্শন করো।’
সংক্ষিপ্ত এপিটাফ
ছোট একটি বাক্যে রচিত হয়েছে অনেক এপিটাফ। কিন্তু এই দু-একটি শব্দেই ফুটে উঠেছে মৃতের প্রতি বেদনা, ভালোবাসা প্রশংসা।
বিহারের পুর্ণিয়া জেলায় কোলাসি ফ্যাক্টরির কাছে একটি সমাধিতে শুধু লেখা আছে—
‘আমাদের অ্যালিস’
খুব সম্ভবত সন্তান অ্যালিসের জন্য তারা মা-বাবা এ শব্দদ্বয় উত্কীর্ণ করেছিলেন।
মিরাটে ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে ২৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছিলেন লে. ম্যাক্সওয়েল—
‘হায়! বেচারা ম্যাক্সওয়েল!!!’
বোম্বাইয়ে ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে মারা যান বিচারক সেক্সটাস ফিলপটস—
‘দুপুরেই তার সূর্যাস্ত হয়েছিল’
ফতেহগড়ে মারা গিয়েছিলেন কর্নেল জে. গাথরি। ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে তার এপিটাফে লেখা হয়েছিল—
‘মোগল সাম্রাজ্যের মতো’
১৮৪০ খ্রিস্টাব্দের একটি সংক্ষিপ্ত এপিটাফ লেখা যথেষ্ট অর্থপূর্ণ। মনে হয় যেন মৃতের কাজে অসন্তুষ্ট হয়ে নিকটজনরা এ এপিটাফ স্থাপন করেছিলেন—
‘পাপের উপার্জন শুধু মৃত্যু’
শিশু ও শতবর্ষী
১৮১০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেছিল টমাস ডব্লিউ অ্যাডামস। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১ বছর ১১ মাস ১৯ দিন। এ শিশুর এপিটাফে লেখা আছে—
‘Beneath dear sleeping Tommy lies
To earth his body lent
More glorious he’ll hereafter rise
Though not more innocent
When the arch-angel’s trump shall blow
And soul to body join
Millions will wish their life below
Had been as short as thine.’
দেড় বছরেই মারা গিয়েছিলেন রালফ এডওয়ার্ড ক্রাফোর্ড ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে। তার এপিটাফের বক্তব্য চিত্তাকর্ষক—
‘আমি ছিলাম বোবা
আমি মুখ খুলতে পারিনি’
১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে মারা গিয়েছিল নবজাতক জন ব্লিথ। তার মা-বাবা তাদের সন্তানের এপিটাফে যে মর্মস্পর্শী অনুভূতি খোদাই করেছিলেন তা এ রকম—
তুমি ভাগ্যবান ছিলে, ভাগ্যের সহায়তায়
স্বল্প সময়ে যথেষ্ট ওজন নিয়ে তুমি জন্মেছিলে
গতকালই তুমি জন্মেছিলে
পরের দিনই পেলে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ।’
কানপুরে সতেরো শতকে মারা গিয়েছিল অ্যান ও’ব্রিয়েন। মৃত্যুকালে এ শিশুর বয়স ছিল ১৮ মাস ৯ দিন। মা-বাবা অত্যন্ত কাব্যিক ভাষায় নিজেদের এ সন্তানের জন্য এপিটাফ লিখেছিলেন—
‘ওহ, ঝড় ছিল দারুণ নির্দয়
বৃষ্টিও ছিল তীব্র
বাতাসও ছিল ক্রূর
সবাই মিষ্টি, সুন্দর ফুলকে ছিঁড়ে নিয়ে গেল।’
পাঞ্জাবের গভর্নর ইভান জেনকিনসের চাচাতো ভাই ছিলেন এলিনর জেনকিন। এলিনর ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ২০ বছর বয়সে মারা যান। তার নিজের লেখা কবিতার অংশই এপিটাফে স্থান করে নিয়েছে—
‘Father, forget not, now that we must go,
A little one in alien earth low laid;
send some kind angel when thy trumpets blow
Lets he should wake alone, and be afraid.’
সন্তানদের হারানোর পাশাপাশি পারিবারিক বিচ্ছেদের করুণ সুর শোনা যায় একটি এপিটাফে। চার বছর বয়সী জে. জে. হেরিটেজ ও আট বছর বয়সী সিএমএ হেরিটেজ একই সঙ্গে সমাহিত হয়েছিলেন। তাদের পিতা নিজের দুই সন্তানের মৃত্যুতে একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন। সন্তানদের মৃত্যুর জন্য তিনি নিজের বিবাহ বিচ্ছেদকে দায়ী করেছেন। সন্তানদের এপিটাফে তিনি লিখেছেন—
‘এই পাথরের তলায় দুটি শিশু শুয়ে আছে
যাদের জন্য তাদের পিতার চোখ জলে ভেসে যাচ্ছে
তারা শিশু বয়সেই তাদের মাতা-পিতাকে বিচ্ছিন্ন হতে দেখেছে
নিশ্চয়ই এটা তাদের হূদয় ভেঙে দিয়েছিল।
বাড়ি যাও মা-বাবা, চোখের জল ফেলো না
যিশু আসার আগ পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকব।’
সুরাটে আঠারো শতকের একটি এপিটাফে শুধু মৃতদের পরিচয়টুকুই কী বেদনার গাথা লুকিয়ে ছিল, তা আর বিস্তারিত জানা যায়নি, তবে শুধু পরিচয়টুকুই দুনিয়ার কোনো সেরা মর্মস্পর্শী গল্পকে হার মানাবে—
‘অ্যানেসলি, লে. কর্নেল টমাস ব্রাউনিরিগের পুত্র, বয়স দুই মাস এবং তার মা, যিনি পুত্রশোকে দুনিয়াকে বিদায় জানিয়েছেন।’
নবজাতক বা এই শিশুদের সমাধির পাশাপাশি পাওয়া যায় শতবর্ষী ইউরোপীয়দের সমাধি। এ রকম একজন ছিলেন সার্জেন্ট জে উইলিয়ামস। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০১ বছর ১ দিন—
‘Life is the time to serve the Lord
The time to win the great reward
And while the lamp holds out to burn
The last sinner may return.
There are no acts of pardon graced
In the cold grave to which he haste
But darkness, death and long despair
Reign in eternal silence there.’
ভ্রাতৃত্ববোধ
অনেক এপিটাফে ভ্রাতৃত্ববোধেরও দেখা মেলে। এ রকমটা দেখা যায় বিশেষত ইংরেজ সেনাদের ক্ষেত্রে। কানপুরের একটি এপিটাফে তিনজনের জন্য একটি যৌথ শোকগাথা খোদিত হয়েছিল—
‘জন ম্যারো, মৃত্যু: ১৫ জুন, ১৮২৩, ৩৫ বছর বয়সে।
ডব্লিউএম অ্যাসটন, মৃত্যু: ১৭ জুন, ১৮২৩, ২৮ বছর বয়সে।
ডব্লিউএম ফার্গুসন, মৃত্যু: ১৩ জানুয়ারি, ১৮২৪, ২৭ বছর বয়সে।
Here, our mutual joys are o’er
Earthly converse social bliss
Our three Brothers are no more
Till we meet in Worlds of peace.’
ঔপনিবেশিক মতাদর্শের চিহ্ন
অনেক সময়ই ব্রিটিশদের সমাধি ছিল ভারতবর্ষে তাদের ক্ষমতা আর গৌরবের চিহ্ন। কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের সেমিট্রি নিয়ে রুডইয়ার্ড কিপলিং তার সিটি অব ড্রেডফুল নাইটে লিখেছেন যে, সমাধিগুলো ছোট ছোট বাড়ির মতো। মনে হচ্ছিল আমরা যেন কোনো শহরের রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছি। একজন ব্রিটিশ রাজস্ব কর্মকর্তার দীর্ঘ এপিটাফে লেখা ছিল—
‘...তিনি পর্বতবাসী একটি অসভ্য জাতিকে সভ্য করেছেন
যারা বহু বছর ধরে বর্বর যুগে পড়ে ছিল।’
এ এপিটাফ থেকে ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক মানসিকতা খুব সহজেই বোঝা যায়। সমাধি, এপিটাফ কীভাবে ঔপনিবেশিক ভাবাদর্শ ও ক্ষমতার প্রতীক হয়ে ওঠে, সেটা এখানে স্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়েছে।
এপিটাফগুলো অনেক সময় যতটুকু প্রকাশ করে, তার চেয়ে বেশি হয়তো লুকিয়ে রাখে। হায়দরাবাদে স্যার আলেকজান্ডার ফ্লিটউড পিনহের সমাধিটি মার্বেল পাথর দিয়ে মোগল রীতিতে চমত্কারভাবে বাঁধাই করা। কিন্তু এ পাথর দেখে বোঝার উপায় নেই যে, তার শবযাত্রায় মৌমাছির আক্রমণে কী বিশৃঙ্খলা হয়েছিল! তার শবযাত্রার আগে ব্যান্ড পার্টি নির্দিষ্ট করুণ সুর বাজানো শুরু করলে আশপাশের মৌমাছিগুলো হঠাত্ সমবেত মানুষ ও ঘোড়ার ওপর আক্রমণ করে।
আরেকজন সিভিল সার্ভেন্টসের মৃত্যুর পর একটি কুসংস্কারের প্রবর্তন হয়েছিল। স্যার রবার্ট গ্রান্ট ১৮৩৪ থেকে ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বোম্বাইয়ের গভর্নর ছিলেন। তিনি গভর্নমেন্ট হাউজে বাস করতেন। প্রতি সন্ধ্যায় তিনি গভর্নমেন্ট হাউজ প্রাঙ্গণে একটি নির্দিষ্ট পথে হাঁটাহাঁটি করতেন। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর দিন সন্ধ্যায় বাড়ির প্রহরীরা দেখেন একটি বিড়াল সামনের দরজা দিয়ে বের হয়ে স্যার রবার্ট যে পথে হাঁটতেন, সে পথে হেঁটে গেল। এ দৃশ্য হিন্দু প্রহরীদের মধ্যে একটি ধারণা ঢুকিয়ে দেয় যে, স্যার রবার্টের আত্মাই বিড়াল হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। এজন্য গার্ডদের প্রধান নির্দেশ দেন যে, ওই বিড়ালটিকে গভর্নরের মতোই সম্মান দিতে হবে। সন্ধ্যার পর বাড়ির সদর দরজা দিয়ে বের হওয়া যেকোনো বিড়ালকেই স্যালুট দেয়া হতো। কারণ বাড়িতে একই রকম দেখতে অনেক বিড়াল ছিল। এ রীতি প্রায় ২০ বছর বজায় ছিল।
ভারতে পশুপাখিকে কেন্দ্র করে অনেক ধরনের বিশ্বাস, কুসংস্কার প্রচলিত ছিল। তার মধ্যে একটি ছিল— ইংরেজ সেনারা মৃত্যুর পরে কাকে পরিণত হয়। কারণ কাক যেমন চতুর, ইংরেজরাও তা-ই। এ ধারণার বিস্তারিত পাওয়া যায় ফ্রাংক রিচার্ডের বর্ণনা থেকে। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে বর্ষাকালে কলেরায় একটি ইংরেজ ব্যাটালিয়নের বেশ কয়েকজন সেনা মারা গিয়েছিলেন। ফ্রাংক রিচার্ডস এ ব্যাটালিয়নের সঙ্গে কাকের এক অদ্ভুত সম্পর্কের বিবরণ দিয়েছেন। কলেরায় আক্রান্ত একজন সেনার মরদেহ যখন কবরে নামানো হচ্ছিল, তখন সেখানে একটি কাককে দেখা যায়, যেটা কা কা করে চিত্কার করছিল। সৈনিককে সমাধিস্থ করে সবাই কবরস্থান থেকে বেরিয়ে যাওয়া অবধি কাকটি চিত্কার করছিল। আর সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পরে কাকটি চুপ হয়ে যায়। এরপর আবার যখন আরো সেনাকে কবর দেয়ার জন্য আনা হয়েছিল তখনো একই ঘটনা ঘটে। সবাই নিশ্চিত হয়ে বলতে থাকে সেই একটি কাকই বারবার ফিরে এসে এমনটা করছে। পুরো ব্যাটালিয়নের মধ্যে ঘটনাটি দারুণ মানসিক চাপের সৃষ্টি করে। সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, কাকটি যত দিন এভাবে দেখা দেবে তত দিন কলেরায় মৃত্যুর মিছিল থামবে না। অদ্ভুতভাবে এ ধারণাটিই সত্য হয়ে দেখা দেয়। ত্রয়োদশ সেনাকে কবরস্থ করার সময় কাকটিকে দেখা গেল না এবং সেবার বর্ষায় ব্যাটালিয়নের আর কোনো সেনা মারা যায়নি। মৃত্যু, সমাধি নিয়ে ইংরেজদের আরো অনেক কুসংস্কারের কাহিনী জানা যায়। নিজেদের রেজিমেন্টের মাসকট নিয়ে তাদের প্রবল কুসংস্কার ছিল। একটি ব্যাটালিয়নের ছিল একটি ছাগল। এ ছাগলটি সেনাদের সঙ্গে মাল্টা, ক্রিট হয়ে ভারতে এসেছিল। প্রায় আট বছর ছাগলটি এ ব্যাটালিয়নের সঙ্গে ছিল। বয়স হয়ে ছাগলটি মিরাটে মারা যায়। সেখানে একটি গাছের তলায় ছাগলটিকে সমাধিস্থ করা হয়। এ গাছে সিপাহী বিদ্রোহের কয়েকজন বিদ্রোহীকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। ছাগলটির কবরের ওপর একটি ক্রস বসানো হয় এবং তাতে তার বিস্তারিত ভূমিকার কথা খোদাই করা হয়। একজন সিনিয়র সৈনিক নিজের মৃত্যুর পর একই গাছের নিচে সমাধিস্থ হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ভারতীয় আত্মার দেহ পরিবর্তনের ধারণা এ অঞ্চলে আগত ইউরোপীয়দের প্রভাবিত করেছিল।
ঔপনিবেশিক আমলে ইউরোপীয়দের আগমন ঘটেছিল এই পূর্ববঙ্গেও, যা বর্তমানের বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকায় ইউরোপীয়দের দুটি উল্লেখযোগ্য কবরস্থান আছে। একটি নারিন্দায়, অন্যটি আর্মেনিয়ান গির্জাসংলগ্ন।
নারিন্দার কবরস্থানটি স্থানীয়ভাবে বলধা গার্ডেনসংলগ্ন খ্রিস্টান কবরস্থান নামে পরিচিত। সপ্তদশ শতকে এ সমাধিক্ষেত্রটি গড়ে ওঠে। ঢাকায় আগত পর্তুগিজ, ইংরেজসহ অন্য ইউরোপীয় খ্রিস্টানদের জন্যই তৈরি হয়েছিল এ কবরস্থান। এখানে ভাস্কর্যযুক্ত সমাধি যেমন আছে, তেমনি দ্বিতল সমাধিও আছে। এখানেও সমাধিগুলোয় এপিটাফ আছে কিন্তু লেখাগুলো ক্ষয়ে গিয়ে অনেক স্থানেই পড়ার অযোগ্য হয়ে গেছে। আর এ সমাধিস্থলে স্থাপিত এপিটাফগুলো মূলত কলকাতা থেকে আনানো হয়েছিল। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে বিশপ হেবার এ গোরস্তানের পবিত্রকরণ সম্পন্ন করেন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে লালবাগ কেল্লার লড়াইয়ে নিহত ব্রিটিশ সেনার কবর আছে এখানে। অনেক কবরেই এপিটাফ আছে আবার অনেক এপিটাফের সন্ধান পাওয়া যায় না। কালক্রমে সেগুলো হারিয়ে গেছে। বিখ্যাত ভূগোলবিদ জেমস রেনেলের শিশুকন্যার সমাধির এপিটাফ এখানেই পাওয়া যায়। সে আমলে ঢাকার বিচারক শেরম্যান বার্ডের এপিটাফে লেখা আছে—
‘একজন পুত্র, ভাই, স্বামী, পিতা ও বন্ধু হিসেবে কর্তব্য, স্নেহবত্সল, নীতিবোধ ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে তিনি অনুকরণীয় উদাহরণ। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তিনি ন্যায়পরায়ণ ও সত্। তার হূদয় শুভবোধে পূর্ণ, যা নিয়ন্ত্রণ করে একটি দৃঢ় ও শিক্ষিত মন।’
অভিজাত পরিবারের একজন নারী এন্টোনিয়া ফ্যালকনারের সমাধিতেও এপিটাফ দেখা যায়। এ এপিটাফে এন্টোনিয়া সম্পর্কে প্রশংসামূলক কথা দেখা যায়—
‘A lady who possessed the highest endowments of mind, and the sweetest charm of manners, and every elegant accomplishment of art & task & genius; but who was above all inestimable for the benevolence of her heart, and the exuberant tenderness & purity of her affections.’
এন্টোনিয়ার এ সমাধি এক বেদনার ইতিহাস বহন করে চলেছে। ১৮২১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ মার্চ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার সঙ্গে তার সেই নবজাতককেও সমাধিস্থ করা হয়েছিল। এ নবজাতকের জন্য এই হূদয়স্পর্শী এপিটাফ দেখা যায়, যেখানে লেখা আছে— ‘দুনিয়াতে কোনো মানুষ এত ভালোবাসা নিয়ে আর শোকাহত করে দুনিয়াকে বিদায় জানায়নি।’ শিশুর এপিটাফের গল্প বর্তমান লেখায় আগেই উল্লেখ করা ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা শিশুদের সমাধি, এপিটাফ আর শোকগাথাকেই আবার মনে করিয়ে দেয়।
ঢাকায় ইউরোপীয়দের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কবরস্থান আর্মেনীয় গির্জাসংলগ্ন সমাধিক্ষেত্রটি। এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল অষ্টাদশ শতকে। ঢাকার কিছু প্রসিদ্ধ আর্মেনীয় পরিবার যেমন— পগোজ, মানুক, সার্কিসের সদস্যদের অনেকেই এখানে সমাধিস্থ হয়েছেন। এছাড়া তেজগাঁও গির্জাসংলগ্ন সমাধিক্ষেত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গ্রিক সমাধির অস্তিত্ব রয়েছে। চট্টগ্রামে আছে কমনওয়েলথ ওয়ার সেমিট্রি, যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সেনাদের সমাধি রয়েছে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এ সমাধিক্ষেত্রটি প্রতিষ্ঠা করেছিল।
সূত্র
টু মুনসুনস: দ্য লাইফ অ্যান্ড ডেথ অব ইউরোপিয়ানস ইন ইন্ডিয়া, থিওন উইলকিনসন, ডাকওর্থ
(লেখাটির পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ ১১ অাগস্ট ২০১৭ 'দৈনিক বণিক বার্তা'র বিশেষ সাময়িকী 'সিল্করুট'-এ প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:০০