সকালে ওলি যখন ফোন দিলনা আমারও খুব একটা রাগ হচ্ছিলনা। ঘুমাতে ভালই লাগছিল। ট্যুর এর ক্ষেত্রে ওর ট্র্যাক রেকর্ড আগে থেকেই ভালনা। আজকে মনে হয় আর যাওয়া হচ্ছেনা এই ভেবে যখন আবার চোখটা বুজে এল তখনই ওর ফোন। আমার আর দশ মিনিট লাগবে , তুই বের হ। আমিও উঠে রেডি হয়ে বের হলাম। নি্উমার্কেট থেকে দুজন রওয়ানা দিলাম অক্সিজেনে খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি বাস স্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে। বেনজির ওখানে এসে যোগ দিল। শান্তি পরিবহনের টিকেট কেটে শুরু হল খাগড়াছড়ির দিকে যাত্রা।
ঈদের দিন সকালে বৃষ্টির জন্য আমাদের নিয়মিত ঈদ আয়োজন অর্ধদিনের আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ায় দুপুরের পর সব বন্ধুরা এক হয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সেখানে কই যাওয়া যায় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। শুরুতেই বিবাহিতরা কেটে পড়ল। আমি বললাম খাগড়াছড়ি (এখানে যাওয়া বাকি ছিল), ওলি বলল রাঙ্গামাটি, বেনজির বলল সে ঘুরতে যেতে চায় তবে রাঙ্গামাটি হলে ভাল হয়।
আমাদের তিন জনের মতঐক্যের কোন লক্ষনই দেখা যাচ্ছেনা। আড্ডা দিতে দিতে সবাই মিলে চলে গেলাম প্রিয় কলেজিয়েট স্কুলের মাঠে। চলল হাজারো স্মৃতি চারন। আরজু শেষে প্রস্তাব দিল নিরপেক্ষ হিসাবে সে আমাদের জন্য টস করে দিতে পারে, বলেই পকেট থেকে পাঁচ টাকার কয়েন বের করল। খাগড়াছড়ি প্রথম দফায় জিতে গেল। বেনজিরও ওলির দলে যোগ দেয়ায় সে বলল তিনবার টস করতে হবে

ফটিকছড়ির সমতল পাড়ি দিয়ে আমরা প্রবেশ করলাম পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলায়। তিনটি পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়িতে বৈচিত্র সব চেয়ে কম মনে হল। এখানে পর্যটকদের জন্য খুব বেশী আকর্ষনও নেই। আগে শুধু আলুটিলার গুহার কথায় জানতাম। ঈদের আগে এনটিভির কল্যানে জানতে পারলাম রিসাং নামের জলপ্রপাত এর কথা। সেখানে যাবার ইচ্ছা থাকলেও বাস সুপারভাইজারের লোকেশন না জানার কারনে রিসাং কে পাশ কাটিয়ে আমরা চলে আসলাম। যখন বললাম তখন আর ফিরে যাবার উপায় ছিলনা।

খাগড়াছড়ির রাস্তায় আঁকাবাঁকা অনেক কম। আলুটিলা পর্যটনে আমরা নামলাম। এখান থেকে পাহাড়ি সবুজের বুক চিড়ে গড়ে উঠা পুরো খাগড়াছড়ি শহরটিই দেখা যায়।
খাগড়াছড়ির মুল আকর্ষন আলুটিলার অন্ধকার গুহা। মশাল নিয়ে ঢুকতে হবে। সঙ্গী দুজন রাজি না হওহায় একাই ঢুকলাম এই গুহায়। সামনে পিছনে কেউ না থাকায় একটু ভয় ভয় ও লাগছিল। ঈদের রাতের হালকা ভূমিকম্পের কথা মনে হল। যদি এখন হয়


এখান থেকে খাগড়াছড়ি শহরে যাওয়া একটু ঝামেলার। লোকাল বাসে ঠেলাঠেলি করে যেতে হয়। অপেক্ষা করছি। এক জীপ ড্রাইভারের সাথে গল্প করছিলাম। খাগড়াছড়ির পথে যেতে থাকা তার পরিচিত এক মাইক্রোতে তিনি আমাদের তুলে দিলেন, সেই সাথে বাঁচালেন লোকাল বাসের ঠেলাঠেলির হাত থেকে।
তু লাল পাহাড়ের দেশে যা
রাঙামাটির দেশে যা
হিতাক তোকে মানাইছেনারে
এক্কেবারে মানাইছেনারে....
আমরাও রাঙ্গামাটির বাসের টিকেট কাটলাম। ডাইরেক্ট বাসের টিকেট না পাওয়াতে লোকালই ভরসা, এতেও টিকেট কাটতে হয়। এক সহযাত্রী বলল রাস্তা ভয়ংকর দুর্গম। এই দুর্গমতা উপভোগের জন্য আমরা আলাদা বসার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনটা টিকেট ই নিলাম তিন জানালার পাশে। পরে রাস্তা শেষে বুঝলাম ঐ লোক গত পাঁচবছরেও ঐ পথে যায়নি। দুর্গমতার কোন লক্ষনই দেখলামনা। আঁকাবাঁকা এই যা। বান্দরবনের গহীনে যাবার রাস্তায় সবচেয়ে বেশি দুর্গম।
বাস ড্রাইভার বলল বরাবর তিন ঘন্টা বিশ মিনিট লাগবে। যাত্রা শেষে বোঝা গেল তিনি তার অযথা থেমে থাকার সময় গুলো বাদ দিয়ে বলেছেন, তিন ঘন্টা বিশ মিনিট হচ্ছে তার ড্রাইভিং টাইম

পথ পরিক্রমা: