বহুদিন এর অপেক্ষার পর কালকে প্রথম বারের মতন আমাদের ০৫ ব্যাচের লেভেল কমপ্লিশন হল ।এই অনুষ্ঠানটা হওয়ার কথা ছিল গত বছর। সকল আয়োজন এর শেষ এ অনুষ্ঠান এর ২/১ দিন আগে অজ্ঞাত কারণে অনুষ্ঠানটা বাতিল হয়ে গেসিল । আমাদের সবার কত প্লান ছিল এই অনুষ্ঠানটাকে ঘিরে । শাড়ি পড়ব , র্যালিতে যাব , রং খেলব , কনসার্ট দেখব । কিন্তু সকল প্লান এর পরিসমাপ্তি ঘটল অনুষ্ঠানটা বাতিল হয়ে যাওয়ায় ।
এই টার্ম এর শুরুতে প্রথম মুশফিক এর কাছে শুনলাম এবার মিডটার্ম এর আগে লেভেল কমপ্লিশন এর অনুষ্ঠানটা করার ব্যাপক তোড়জোড় চলতেসে । ওরা আরো বেশী এক্সাইটেড ছিল কারন আমাদের ব্যাচের কোন অনুষ্ঠান এ এই বার প্রথম বারের মতন ওদের ব্যান্ড আমাদের সবার সামনে পারফর্ম করবে।লেভেল কমপ্লিশন এর অনুষ্ঠান হবে এটা শুনেই আমি খালি দিন গুনতেসিলাম কবে আসবে ৭ সপ্তাহ এর শেষ বুধবার ।
অবশেষ এ বহু প্রতীক্ষার পর এল সেই দিন । সকালে ছিল একটা CT , CT শেষ এ সফটওয়ার ডেভলাপমেন্ট এর রিপোর্ট প্রিন্ট করতে গেলাম নিলক্ষেত ।আসতে আসতে সোয়া ১ টা বেজে গেল ।১ টায় টি শার্ট দেওয়ার কথা ও তারপরই র্যালি । আমি ভাবতেসিলাম মিস করে ফেলসি মনে হয় র্যালি । এসে দেখি তখনও র্যালি শুরু হয় নাই ।টি শার্ট বিতরন চলতেসে । এরপর র্যালি শুরু হবে। আমি, নন্দিনী,মুনিয়া ,অন্বিকা , তন্দ্রা, সামিরা , সানজানা , সনি ঘোড়ার গাড়িতে উঠলাম । আর ঠিক তখনই অডিটোরিয়াম এর সামনে শুরু হল রং ছোড়াছোড়ি ।ছেলেরা এক একটা রং মেখে ভূত পুরা । এরপর র্যালি আগানো শুরু করল । আমি ভাবসিলাম টিএসসিতেও যাবে মনে হয় । কিন্তু আমার আশায় পানি ঢেলে র্যালি খালি ঘুরে বুয়েট এর মাঠের পাশের গেট ঘুরে আবার ক্যাফের সামনে চলে আসল।
এরপর শুরু হল ২য় দফায় ক্যাফের সামনে রং ছোড়াছোড়ি ।আমি আর সনি জয়ন্ত এর কাছ থেকে গুড়া রং নিয়া আসলাম । তারপর এতে পানি মিশিয়ে আমরা মেয়েরা একজন আরেকজনকে রং দিলাম।আমাদের সেকশন এর এই কয়েকজন মেয়ে বাদে আর অন্য কোন ডিপার্টমেন্ট এর মেয়েরা রং খেলে নাই। আমরা বড়ই মজা পাইসি আর ঠিক করসি আজকেতো খালি প্র্যাকটিস হল , র্যাগেতো আমরা রং এর বালতিতে ডুব দিব । তারপর আমাদের দুপুরের খাবার দেওয়া হল । হাতে নখে যা রং ছিল খাবারের সাথে সব পেট এ চলে গেল আল্লাহ জানে আগামীদিনে পেট এর কি হাল হয় ।
এরপর সবাই ফ্রেশ হতে হলে চলে গেলাম । আমাদের অনেকেই আমরা আগের থেকে প্রিপারেশন নিয়া আসছিলাম যে রং খেলা হতে পারে তাই সবার সবচেয়ে অপছন্দের জামা পড়ে আসছিলাম যাতে রং লাগলে কিছু না হয় । কিন্তু কিছু ব্যাচারীরা বাসা থেকে রেডি হয়ে আসছিল একবারে অনুষ্ঠান এর জন্য , ওদের জন্য খারাপই লাগল ।তিহার সবচেয়ে প্রিয় জামাটা রং এ শেষ হয়ে গেসে পুরা ।
এরপর কালচারাল অনুষ্ঠান শুরু হল পৌনে ৬টায় । শুরু হল প্লাবন এর বেহালা দিয়ে । ওর বেহালা ছাড়া যে কোন অনুষ্ঠানই অসম্পূর্ন।
কালচারাল অনুষ্ঠানটা মোটামোটি ভালই ছিল কিন্তু অনেক ছোট ছিল ।সবচেয়ে জটিল ছিল পুথিঁ আর বিভিন্ন গান এর প্যারোডি ।একজনই এইটা পারফর্ম করসিল। ও কোন ডিপার্টমেন্ট এর চিনিনা কিন্তু আমার খুবই মজা লাগসিল ওর পুথিঁ আর প্যারোডি গান ।
এরপর কনসার্ট শুরু হল ৭টার একটু পর। আমি দুপুরে বাসায় ব্যাগ পাঠিয়ে দেওয়ার কারনে আমার কুপনটা আমার কাছে ছিলনা । তাই ২ বার অডিটোরিয়াম এ ঢুকতে রুশাফিকে ফোন করতে হইসে । গেট এর ছেলে গুলো আমাকে দেখে ভাবসে হয়ত আমি চাঁদা না দিয়ে ফাঊ অনুষ্ঠান দেখতে আসছি ।আমাদের ক্লাস এর হলে ওই ছেলে গুলাকে আমি গাছে ঝুলায়ে দিতাম ।খালি বেচে গেসে ওরা অন্য ডিপার্টমেন্ট এর দেখে । কনসার্ট শুরু হওয়ার পর কানে তালা লেগে যাওয়ার জোগাড় । এরপর স্টেজে উঠল "Crematic X"। ওদের পর এল সবার বহু প্রতীক্ষিত ওয়ারফেজ । কি বোর্ড যিনি বাজান ঐ ভাইয়া আবার বুয়েট এর আর্কি থেকে পাশ করা , উনি ওনার খুশি সবার সাথে শেয়ার করলেন যে ওনার শখ ছিল বুয়েট এ এসে অডিটোরিয়াম এ ওয়ারফেজকে নিয়া পারর্ফম করবেন। ওয়ারফেজ এর গান একেকটার চেয়ে একেকটা জটিল ছিল ।১০টার পর সবাই মেয়েরা একে একে চলে যেতে লাগল । আমি আর হল এর বাকি মেয়েরা সবাই সম্পুর্ন কনসার্ট দেখলাম ।বাকি যাদের বাসা দূরে তারা আগেই চলে গেল । অবশেষ এ ১১টায় কনসার্ট শেষ হল। হল এর ওদের আর রাতে খাওয়াই হল না ।
আমি ১১:৩০ এর দিকে বাসায় আসলাম ভাইয়ার সাথে । আমরা আসতে আসতে দেখলাম হল এর ছেলেরা সব চাংখারপুল এ খেতে যাচ্ছে । দারুন একটা দিন গেল । এখন অপেক্ষায় আছি আবার কবে এমন একটা অনুষ্ঠান আসবে ।
এবার আমাদের ব্যাচ এর নামকরনও হল "ঋদ্ধ" ।সবার শেষ এ একটা কথা দিয়াই শেষ করতে চাই বুয়েট ০৫ ঋদ্ধ রকস
এর পরের কাহিনীঃ
ঘাড়ের উপর থেকে অনুভূতিশূন্য!! --মুক্ত বয়ান
কিছু ছবি :
ব্যাচ এর নাম
র্যালির জন্য ঘোড়ার গাড়ি
রং মেখে ভূত সবাই
Crematic X
ওয়ারফেজ
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০০৯ রাত ৮:৪৩