জীবনে যত বিয়ের দাওয়াতে গেছি এমন কোনদিন দেখি নাই দুই তিনটা পিচ্চি বাচ্চা বিয়ের স্টেজকে বানরের খাঁচা বানায় নাই। স্টেজের মাঝখানে কি হচ্ছে না হচ্ছে, কে আসছে কে নামছে, কারা ছবি তুলছে কারা তুলছে না- কোন বিকার নাই। মিনিমাম দুই বা ততোধিক পিচ্চি পুরোটা সময় স্টেজের একপাশ থেকে আরেকপাশে ছোটাছুটি করবে, স্টেজের সামনের পিছনের ফুল ছিঁড়বে, ডেকোরেশনের জিনিসপত্র নিয়ে টানাটানি করবে, যেমন খুশি তেমন লাফাবে, ক্যামেরার তার টানবে- এগুলো ‘সূর্য পূর্বদিকে উঠে, পশ্চিম দিকে অস্ত যায়’ এর মতই সত্য। ধরুন, আপনি একটা কাজ করতে গেলেন, বাঁধা দিতে দশজন হাজির। বাচ্চাদের এই প্রবলেম নাই। একজন ফুল ছিঁড়ছে মানে ঐখানে যত পিচ্ছি আছে সবাই ফুল ছিঁড়বে। দশে মিলে ছিড়ি ফুল, হারি জিতি নাহি ভুল।
ঐদিন গেলাম এক বিয়ের দাওয়াতে। দেখি স্টেজের বিপরীতমুখী করে এক কোণায় প্রজেক্টর স্ক্রীন বসানো। ‘স্টেজের মাঝখানে বসা কনেকে সেই স্ক্রীনে দেখা যাচ্ছে’- ব্যাপারটা খেয়াল করা মাত্রই এক পিচ্চি দৌড়ে সোজা স্টেজের উপর। কনের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে পিচ্ছি প্রজেক্টরের কিছু পরীক্ষা নিল। হাত নাড়ালে স্ক্রীনে নড়ে কিনা, মুখ ভেংচালে স্ক্রীনে ভেংচায় কিনা, সে লাফালে স্ক্রীনেও লাফায় কিনা এধরনের সৃজনশীল কিছু প্রশ্নের উত্তর পেয়ে পিচ্চি স্টেজ থেকে আর নামেই না। হলের সাউন্ড সিস্টেমের সাথে এক প্রস্থ ‘শিলা কি জাওয়ানি’র নাচও হল।
আরেক বিয়েতে দেখলাম দুইটা পিচ্চি স্টেজের দুইটা বেলুন খুলে নিল। এর মধ্যে একজনের বেলুন গেল ফুটে। আরেকটা নিয়ে লাগল কঠিন মারামারি। বড়দের মারামারি শুরু হয় কিল ঘুষি দিয়ে, পিচ্চিদের হয় খামচি, না হয় কামড়।। খামচা খামচি কামড়া কামড়ির এক পর্যায়ে বাংলা সিনেমার পাহাড় থেকে পড়তে থাকা নায়ক নায়িকার মত স্টেজের উপর গড়াগড়ি দিতে লাগল দুইটা। যে বাচ্চাগুলা স্টেজে বাঁদরামি করে তাদের মা-বাপ কে কেন জানি ঐসময় খুঁজে পাওয়া যায় না। এই বাচ্চার মা বাপেরও হদিস নাই। অন্যরা মিলে যতক্ষনে দুইটাকে থামাল ততক্ষনে দুইটার গাল পুরোপুরি টমেটো।



বাচ্চাদের এই উৎপাত নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে কথা ছিল। অনেক সময় তা সীমার বাইরে চলে যায়। যেমন ধরেন- কিছুক্ষন পর শুরু হবে বহু আরাধ্য, বহু প্ল্যান প্রোগ্রামের ফুলসজ্জার রাত। বর কনের মনে তুফান চলছে সিডরের গতিতে। এর মধ্যে বরের বড় ভাইয়ের পিচ্চি এসে হাজির।
-“আমি আজকে নতুন মামনির সাথে থাকব”।
এটি একটি সত্য ঘটনা। বর কনের চেহারার দিকে যদি বেশিক্ষণ তাকাইতে পারি নাই, অসহায় মুখ দেখলে মায়া লাগে।






এই দিনের কাহিনী আরো মারাত্মক। বন্ধুর বাসর রাতের আয়োজন করা হয়েছে এক ফাইভ স্টার হোটেলে। কমিউনিটি সেন্টারের সব ঝামেলা শেষ করে বর কনেকে হোটেল রমে পৌছে দিতে গেলাম বন্ধু কয়েকজন, কনের ভাই-ভাবী আর ভাবীর পিচ্চি। রুমে ঢুকে সুসজ্জিত বিছানা দেখে পিচ্চি জুতা সহ সেটার উপর কিছুক্ষন ডব্লিউডব্লিউই প্র্যাকটিস করল। সবার যাওয়ার পালা এমন সময় বেঁকে বসল পিচ্ছি। সে বাসায় যাবে না।
-‘উমা, এই বিছানা কি নরম, এই বিছানায় ঘুমাইতে অনেক আরাম হবে। আমি এখানে থাকব’।
একী মুসিবত। মা পটানোর চেষ্টা করেন।
-“এইখানে হালুম আছে, ভূত আছে, উ বাবা আছে”।
-“তাহলে ফুফি কিভাবে থাকবে?”
এদিকে নতুন দম্পতির মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। বাংলা বিহার উড়িষ্যার মেঘ আর আকাশে নাই। তবুও মুখে যতটা সম্ভব হাসি রেখে কনে বলে উঠল
-“ভাবী, সিয়াম না হয় থাক”।
বন্ধুর দিকে তাকালাম। বেচারা পারলে পিচ্চি কে এখনি জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে। বুঝলাম বন্ধুর ভেতরটা ভেংগে খান খান হয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিক।





পিচ্চির সাথে অনেকবার সংলাপ হল, চকলেট-চিপসের লোভ দেখানো হল। কোন সমাধান হয়না। তাইলে আর কি!! ওর সর্বরোগের মহৌষধ দরকার। পিচ্চির মা দিল দুইটা ঠাস ঠাস। শুরু হল বিনা টিকেটে পিচ্চির একক ‘ভ্যা’ ‘ভ্যা’ সঙ্গীত। এক পর্যায়ে শিল্পী ঘুমিয়ে পড়লেন। শ্রোতারা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। ততক্ষনে ঘন্টা খানেক মার্ডার। বৃষ্টির কারণে টার্গেট ঠিক রেখে ৫০ ওভারের ম্যাচ ৪০ ওভারে নেমে এলে ব্যাটসম্যানের চেহারা যেরকম হয় বন্ধুর চেহারা তখন তেমন। না আর বৃষ্টি নয়, আমরা যে যার মত বাসার পথ ধরলাম এদিকে।
ঐদিকে কি হল জানেন?



বন্ধু আমারে পরে সব বলছে। একদম ডিটেইলে।








সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:১৮