১.
সময়টা আগস্টের প্রথম সপ্তাহের কোন এক শ্রাবণ রাত। বর্ষার শেষ ভাগ চলছে। আকাশটাকে অবিরাম কাঁদিয়ে বর্ষা তার বিদায় ঘোষণায় ব্যস্ত, আর মাফলারে কান আর মুখের অর্ধেকটা জড়িয়ে রানা উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে একটা শুরুর ঘোষণা শোনার জন্য। তার সাথে আরো এক জোড়া কান উৎসুক হয়ে আছে, জাহিদ। ঝুম বৃষ্টির রাতে রানা আর জাহিদ আশ্রয় নিয়েছে পরিত্যাক্ত এক মন্দিরে। মন্দিরের ছাদ অর্ধেক ভাঙ্গা, বাকী অর্ধেক ছাদের নিচে দেয়াল ঘেষে জমাট অন্ধকারে মিশে আছে ওরা দুজন। বৃষ্টির ছাঁটে দুজনের শরীর ভিজে জবুতবু অবস্থা। অন্যসময় হলে তারা হয়ত ঠান্ডায় কাঁপত কিন্তু আজকের অবস্থা ভিন্ন। এ অবস্থায় ভেজা কাপড়ের চিন্তা তাদের মাথায় ঘুণাক্ষরেও ঠাঁই করে নিতে পারে না। হাত থাকে রাইফেলটাকে কাঁধে চড়িয়ে রেডিওটাকে কানের পাশে তুলে আনে রানা। রেডিওটাকে একটা পলিথিনে প্যাঁচিয়ে নিয়েছে সে। বৃষ্টিতে শরীর যায় যাক, রেডিওটা অক্ষত রাখা প্রয়োজন। নিজের শরীর কিংবা কাপড়ের চেয়ে এ রেডিওটার মুল্য এখন তার কাছে অনেক বেশি। পলিথিনের উপর ভেজা হাতে রেডিওর নব ঘুরায় রানা। মাথাটা হেলিয়ে কান এগিয়ে দেয় জাহিদও। স্টেশনটা ধরেই হাতের ঘড়িটার উপর এক মুহুর্তের জন্য টর্চের হালকা আলো ফেলে রানা
-“১০টা ৫০, আর দশ মিনিট”-চাপা গলায় জাহিদের কানে কথাটা তুলে দেয় রানা।
কন্ঠ শুনে রানার উত্তেজনা টের পায় জাহিদ। এ কন্ঠের উত্তেজনা তার পূর্ব পরিচিত। এর আগেও তারা দুজন আরো কয়েকটি অপারেশনে অংশ নিয়েছে। ‘এস ফোর্স’ এর যোদ্ধা হিসেবে ৩ নং সেক্টেরের অধীনে মুকুন্দপুর যুদ্ধ, কলাছড়া অপারেশন আর মনোহরদী অবরোধে দুজন একসাথে ছিল। তারও আগে বর্ডারের ওপাশে শ্রীমন্তপুরে ক্যাম্পে একসাথে ট্রেনিং নিয়েছিল তারা। সেখানেই পরিচয়। দু’সপ্তাহের সে ট্রেনিং শেষে ৩নং সেক্টরের সাব-কমান্ডার লেফট্যানেন্ট সাঈদের কাছে রিপোর্ট করেছিল তারা। শুরুর দিকে যুদ্ধ ছিল বিক্ষিপ্ত এবং গেরিলা নির্ভর। যোদ্ধাদের সুসংগঠিত করা এবং পরিকল্পিত আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে হাইকমান্ডের নির্দেশে গঠন করা হয় তিনটি ব্রিগেড। জেড ফোর্স, এস ফোর্স আর কে ফোর্স। সে সময়টাতে লেফট্যানেন্ট সাঈদ রানা আর জাহিদকে ‘এস ফোর্সে’ কমিশন দেন।
জাহিদের নিজেরও প্রচন্ড উত্তেজনা হচ্ছে। বৃষ্টির শব্দ আর বাতাসের শো শো আওয়াজকে চাপা দিয়ে হৃদপিন্ডের ধুপধুপ শব্দ ঠিকই কান অবদি পৌছে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনি হৃদপিন্ড ছিড়ে বেরিয়ে আসবে। এ অপারেশনের নাম ‘বামুটিয়া অপারেশন’।
ওরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে মিটার শ’দুয়েক দূরে বামুটিয়া স্কুল, পাকিস্তানি মিলিটারির ক্যাম্প। গাছপালা আর ঝোপঝাড়ের ফাঁক দিয়ে স্কুলের সামনের অংশটা খুব ভালভাবেই দেখা যাচ্ছে। স্কুলের বারান্দায় দুজন মিলিটারি রাইফেল হাতে এপাশ থেকে ওপাশে হেঁটে চলেছে আর দুজন সামনের গেইটের উপর তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে। এত সতর্কতার পরেও মিলিটারিরা জানেনা এ পাশে রানা এবং জাহিদ, ওপাশে স্কুলের ঠিক পেছনের অংশে ২০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল তাদের মৃত্যুর দূত হয়ে ওঁত পেতে আছে।
এমন বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে এ ধরনের অপারেশন চালানো কঠিন। অন্যসময় হলে অপারেশন দু-একদিন পিছিয়ে যেত। কিন্তু গোপন খবর আছে দু-একদিনের মধ্যে ক্যাম্প গুঁটিয়ে গ্রামের আরো ভিতরে চলে যাবে পাকিস্থানি হানাদারগুলো। তখন অপারেশন চালানো আরো কঠিন হয়ে পড়বে। তাছাড়া ওদের বিশ্বাস প্ল্যান মাফিক এগোলে আবহাওয়ার বৈরিতা তেমন একটা বাধা হতে পারবে না। ওদেরকে বলা আছে ঠিক এগারোটায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত হবে ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’।
অনেকে হয়ত এসময় গানটা শুধুমাত্র একটা গান হিসেবেই শুনবে, কিন্তু রানা আর জাহিদের জন্য এটা একটা সংকেত। সংকেত পাওয়ার সাথে সাথে তারা দুজন স্কুল লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে সামনে এগোতে থাকবে। তারপর মিলিটারিরা ওদের লক্ষ্য করে এগোলে ওরা খানিকটা পিছিয়ে যাবে। ঠিক সে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দলটি স্কুলের পেছন থেকে অতর্কিত হামলা চালিয়ে হানাদারদের বিভ্রান্ত আর ছত্রভংগ করে দিবে। তারপর বিজয় সময়ের অপেক্ষা মাত্র। রানা ভাবছে সে বিজয়ের সুর বৃষ্টি আর গুলির শব্দের চেয়ে কয়েকগুন তীব্র হবে।
টর্চের হালকা আলোয় আবারো ঘড়ি দেখে নেয় রানা। আরো মিনিট পাঁচেক বাকি। হঠাৎ করে বাড়ির কথা মনে পড়ে রানার। মায়ের কথা মনে পড়ে। শেলীর কথা মনে পড়ে। শেলী রানার ছোট বোন। বছর পাঁচেকের ছোট। মনোহরদী অপারেশন শেষ করে মা আর বোনকে দেখতে রাজবাড়ি গিয়েছিল রানা। রাজবাড়িতে মিলিটারি আসেনি তখন পর্যন্ত। বাবা বাড়িতে ছিলেন না। রানার ডাক শুনে ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে এসে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিলেন রাহেলা বানু। ভাইকে জড়িয়ে ধরে শেলীও কেঁদেছিল খুব। ছেলের শরীর-চেহারার অবস্থা দেখে রাহেলা বানু কেঁদেছিলেন সত্য কিন্তু শেলী কেঁদেছিল অন্য কারনে। তার ভাই দেশকে শত্রু মুক্ত করতে লড়াই করছে এটা ভেবে গর্বে শেলীর বুকটা ভরে যেত। মুক্তিযোদ্ধা ভাইকে দেখে শেলী আর আবেগ ধরে রাখতে পারেনি। অতি আনন্দে মানুষের হাসি গুলো কান্না হয়ে যায়, এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
মিনিট দশেক বাড়িতে ছিল রানা। মাকে সালাম করে ফিরে আসার সময় পেছন থেকে ডাক দিয়েছিল শেলী-
-ভাইয়া, কবে বাড়ি ফিরবি?
উত্তর জানা ছিলনা রানার। মোচড়ে ওঠা কষ্টটাকে বুকে চাপা দেয় রানা।
-জানি না রে।
মুখ না ফিরিয়ে’ই জবাবটা দিয়ে ছুটে বেরিয়ে গিয়েছিল সে।
২.
কলেজ পাস করে ঢাকায় এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল রানা। সেদিনগুলোতে মা প্রায়ই চিঠি পাঠাতেন। মা তো আর লিখতে পারতেন না, হাইস্কুল পড়ুয়া শেলী মায়ের কথা মত চিঠি গুলো লিখে দিত। চিঠির প্রথম থেকে শেষ লাইনের আগ পর্যন্ত মায়ের কান্না শেলীর ভুল বানানে ঠিকই অনুবাদ হয়ে যেত। সে কান্না পোস্ট অফিসের ৫০ পয়সার খামে চড়ে রানার হোস্টেল রুমের দরজার নিচে গড়াগড়ি খেত। ৫০ পয়সার সে খামের দাম দিতে রানাকে সারারাত মন খারাপের সাগরে ভাসতে হত। শেষ লাইনটা থাকত শেলীর। প্রতি চিঠিতে একই প্রশ্ন।
-ভাইয়া, কবে বাড়ি ফিরবি?
রানা বুঝে যেত শত মাইল দূরে মা ছাড়াও আরো একজোড়া চোখ প্রায় রাতে তার জন্য বৃষ্টি ঝরায়। ছোট বোনটার কথা মনে করে রানাও কাঁদত। ওর মনে পড়ত হারিকেনের আলোয় ‘শিশু শিক্ষা’ পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়া শেলীর মুখ। দুষ্টামি করে শেলীর চোখেমুখে পানি চিটিয়ে দিত রানা। শেলীর পুতুল লুকিয়ে ফেলে ওকে ইচ্ছা করে কাঁদানোর দিনগুলোর স্মৃতিও রানার মনে বিউগলের সুরের মত বিঁধে যেত। ফোর্থ ইয়ারে ওঠার পর পত্রিকা অফিসে ছোট একটা কাজ পেয়েছিল রানা। প্রথম মাসের বেতন দিয়ে শেলীর জন্য লাল একটা ফ্রক কিনেছিল সে। ভোরের সূর্যের মত লাল। বাড়ি ফিরে প্যাকটটা শেলীর হাতে দিয়ে বলেছিল
-এটা তোর জন্য। দেখতো পছন্দ হয় কিনা!!!
ফ্রকটা পরেছিল শেলী। অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছিল মেয়েটাকে। যেন কৃষ্ণচুড়া ফুল।
-ভাইয়া, তোর জন্যও একটা জিনিস আছে।
হাতে করে একটা সবুজ মাফলার নিয়ে ফিরে এসেছিল শেলী।
-ভাইয়া, জানিস; মা আমাকে সেলাইয়ের অনেক কাজ শিখিয়েছে।
এক গভীর ভাললাগায় আচ্ছন্ন হয়েছিল রানা। শেলীর হাত থেকে মাফলারটা নিয়ে ছোট বোনটাকে জড়িয়ে ধরেছিল সে। বছর চারেক আগেও এদের মারামারি, বিচার, নালিশ সামলাতে গলদঘর্ম হতেন রাহেলা বানু। আজ ভাই-বোনের গভীরের শূন্যতা উপলব্ধি করে রাহেলা বানুর চোখে দ্বিতীয়বারের মত জল নামে।
রাহেলা বানুর অনেক দিন আগের কথা মনে পড়ে। রানা-শেলী দুজনেই তখন ছোট। এক বিকেলে খেলাচ্ছলে শেলীকে গাছ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল রানা । খুব বেশি আঘাত না পেলেও শেলী এমনভাবে কেঁদে মাকে নালিশ দিয়েছিল, রাগের চোটে রাহেলা বানু রানাকে খুব মেরেছিলেন। কৈশোরের অহংবাদী মনে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল রানা। রাহেলা বানুও আর ডাকেননি তাকে। বিপত্তি লাগল রাতের খাওয়ার সময়। খাওয়ার পাতে শেলীর সে কি কান্না। ভাইয়াকে ছাড়া সে কখনো কিছু খায় নি, আজকেও খাবে না সে। রাহেলা বানু তিনবার গিয়েও রানাকে বিছানা থেকে তুলে আনতে পারেননি। শেলী একবারেই পেরেছিল। ভাইবোনের একে অপরের প্রতি ভালবাসা দেখে রাহেলা বানুর চোখ বেয়ে জল নেমে ছিল, সেবারই রানা-শেলীর জন্য প্রথম কেঁদেছিলেন তিনি।
বামুটিয়া অপারেশন শেষ করে আবারো মাকে আর শেলীকে দেখতে যাবে রানা। শেলী এখন আর সে ছোট্টটি নাই। আগামী বছর সে কলেজে উঠবে। লাল রঙে শেলীকে খুব মানায়। সে কারনে ওর দেয়া ফ্রকটা শেলী প্রায়ই পড়ত। রানা ঠিক করে রেখেছে এবার সে বোনের জন্য একটা লাল শাড়ি নিয়ে যাবে। আর একজোড়া চুলের ফিতা। সেটাও লাল। দেশ একসময় স্বাধীন হবে, স্বাধীন দেশের সবুজ মাঠের আইল ধরে সে শাড়ি পড়ে চুলের বেণীতে ফিতা বেঁধে ফড়িং এর মত ছুটে বেড়াবে শেলী। পাখির চোখে সবুজ মাঠ আর লাল শাড়ির শেলীকে এক টুকরো পতাকা মনে হবে। ডান হাতটা শার্টের পকেটের উপর রেখে কিছুর অস্তিত্ব যাচাই করে নেয় রানা। কয়েকদিন আগে এখানকার এক বাজার থেকে ফিতাগুলো কিনে রেখেছে সে।
৩.
ঘড়িতে ঠিক এগারোটা। রেডিওতে বাজতে শুরু হয় ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি, মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি’।
সাথে সাথে গর্জে উঠে দুটি ত্রি-নট-ত্রি রাইফেল। বৃষ্টির মধ্যে গুলি ছুড়তে ছুড়তে মন্দির থেকে বেরিয়ে অনেকটা সামনে এগিয়ে যায় রানা আর জাহিদ। অপ্রস্তুত মিলিটারির হকচকিয়ে যায়। এর মধ্যে স্কুলের সামনের অংশে থাকা হানাদাররা লুঠিয়ে পড়েছে। স্কুলের আরো কাছে গিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে রানা আর জাহিদ। ক্রলিং করে সামনে এগুতে থাকে। অল্পসময় পরে অস্ত্র হাতে একে একে বেরিয়ে আসতে শুরু করে তারা স্কুলরুমের ভিতরে থাকা শত্রুর দল। এবার পরিকল্পনা মাফিক পিছনে সরে আসে রানা আর জাহিদ। ঠিক এসময়ই অন্য দলটার পেছন থেকে আক্রমণ করার কথা। কিন্তু অন্য দলটার কোন সাড়া শব্দ নাই। ওরা এত দেরী করছে কেন?
আর অল্পদুরেই ভাঙ্গা মন্দিরটা। ওখানে পৌছাতে পারলেই মোটামুটি নিরাপদ। পেছন ফিরে গুলি ছুড়তে ছুড়তে মন্দির লক্ষ্য করে প্রাণপণে ছুটতে থাকে রানা আর জাহিদ। ইটের সাথে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় রানা। এক হাতে ভর দিয়ে অন্য হাতে রাইফেল ধরে উঠে দাঁড়িয়ে আবার ছুটতে শুরু করে রানা। জাহিদও সামনে কয়েক কদম ব্যবধানে ছুটছে। ঠিক এই সময় স্কুলের পিছন থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে রানা। কিন্তু সে জানেনা অন্য দলটির কয়েক মুহূর্ত দেরীর কারণে তার আর জাহিদের অলক্ষ্যে পাকিস্তানি মিলিটারীর একজন ছুটতে ছুটতে ওদের খুব কাছে চলে এসেছে।
হঠাৎ মুখ থুবড়ে পড়ে যায় রানা। বুকের ভিতর এক চিনচিনে ব্যাথায় ওর দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। সম্বিত ফিরে পেয়ে রানা বুঝতে পারে ওর শার্টের নিচে একটা তরল স্রোত বয়ে চলছে। একটা বুলেট পিঠ দিয়ে ঢুকে ঠিক বুক পকেটের উপর দিয়ে বেরিয়ে গেছে। আলগোছে পকেটটা চেক করে রানা। না, রক্তে ভিজে যাওয়া ছাড়া ফিতাটার কিছুই হয়নি। ওর দু’চোখ বেয়ে জল নামে। বৃষ্টির মধ্যে সে জলের পরিচয় উদঘাটন করা অসম্ভব।
৪.
বামুটিয়ার পরিত্যাক্ত মন্দিরের অদূরে যেদিন সকালে সবুজ মাফলার প্যাঁচানো একজন যুবক প্রাণহীন শরীরে অসাড় হয়ে পড়েছিল ঠিক সেদিন রাজবাড়ি গ্রামেও একজনের লাশ নিহতদের মিছিলে ভিড়ে গিয়েছিল। ছিন্নভিন্ন লাল ফ্রক পরিহিতা এক কিশোরীর লাশ।
রাজবাড়ি গ্রামে আর কখনোই সবুজ মাফলারে গলা জড়ানো রানা ফিরেনি। লাল ফ্রক পড়া শেলীকেও দেখা যায়নি আর। গ্রামে শুধু ১০:৬ অনুপাতের একটা কাপড় ফিরেছিল। সবুজ জমিনের মাঝে ভোরের সূর্যের মত লাল বৃত্ত দেয়া একটা পতাকা। লাল-সবুজের সে পতাকাটি মুক্ত পাখির মত রাজবাড়ির বাতাসকে মাতিয়ে রেখেছিল। পতাকাটি দেখে সবাই এতই বিভোর ছিল যে সে বাতাসে কান পাতার সুযোগ হয়নি কারো। কান পাতলে ঠিকই শুনতে পেত এক কিশোরীর কন্ঠ-
-ভাইয়া, কবে বাড়ি ফিরবি?
পৃথিবীর শুদ্ধতম একটি সম্পর্ককে এভাবে ইতি টেনে দেয়ার অপরাধে স্রষ্টার গায়ে কখনো এক ফোঁটা দাগও পড়বে না।
* ফেসবুকে 'মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের গল্প' ইভেন্টের জন্য গল্পটি লিখেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গল্প লেখার অনেক দিনের ইচ্ছার একটা প্রয়াস মাত্র। গল্পটি ইভেন্টে মনোনীত সেরা বিশ গল্পের একটি।