জিবাজারে ১৯৯৬ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। রোববার সন্ধ্যায় সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দেশের শেয়ারবাজারের ব্যপ্তি অনেক বেড়েছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারী রয়েছে। খুব সহজেই এখানে ধস নামানো যাবে না। তবে দেশের শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল ও টেকসই করতে হলে বিনিয়োগকারীদের আরও ধৈর্যশীল হতে হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, সরকার তাদের সঙ্গে আছে। তারা যাতে টিকে থাকতে পারে, অবশ্যই সে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, শেয়ারের দর যখন বাড়ে, তখন কেউ মিষ্টি বিতরণ করে না। কিন্তু দাম কমলেই রাস্তায় নেমে ভাঙচুর করা হয়। গত কয়েক দিনে যেভাবে ভাঙচুর করা হয়েছে- তা স্বাভাবিকতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সরকার এ ধরনের আচরণ সহ্য করবে না।
শেয়ারবাজারে অস্থিতিশীলতার পেছনে কিছু প্রতিষ্ঠানের কারসাজি যুক্ত রয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, কিছু লোক ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। নিজেদের স্বার্থে বাজারে ভীতি ছড়ায়। ইউনিপে টু ইউসহ তিনটি প্রতিষ্ঠান অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে। তাদেরকে যথাযথ শিক্ষা দেয়া হবে।
পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গত বৃহস্পতিবার দরপতনের পরই পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই এসইসি মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সীমা তুলে নিয়েছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের মনোবল ফেরাতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে অর্থ যোগান দিয়েছে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার থেকে মুনাফা পেতে হলে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করতে হবে। ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে তো মুনাফা পেতে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়। তাহলে শেয়ারবাজার থেকে আজ ১০ টাকা বিনিয়োগ করে কালই কেন ১৫ টাকা পাওয়ার আশা করবেন?
তিনি বলেন, গত দু'বছরে আমরা একটা অসাধারণ অবস্থার মধ্যে আছি। শেয়ারবাজারের সূচক এ সময়ের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার পয়েন্ট বেড়ে গেছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অল্প সময়ে মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতা বেশি থাকায় বাজারে স্থিতিশীলতা আসছে না। অধিকাংশের মধ্যেই শেয়ার ধরে রাখার প্রবণতা নেই। বাজারকে স্থিতিশীল করতে হলে শেয়ার ধরে রাখতে হবে। তবে স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম বিন্যস্তকরণ (ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেশন) ছাড়া বাজার স্থিতিশীল হবে না বলেও অর্থমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
বিনিয়োগকারীদের প্রতি মৌলভিত্তি দেখে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, তাদেরকে হিসাব করতে হবে- বিনিয়োগের অর্থ কত বছরে ফেরত পাওয়া যাবে। শেয়ারের বাজার মূল্য ও প্রকৃত আয় (পিই) অনুপাত দেখে বিনিয়োগ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, দেশের শেয়ারবাজার অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। তবে সে অনুযায়ী ভালো শেয়ারের সরবরাহ নেই। সরকার শেয়ার সরবরাহ বাড়ানোর জন্য কাজ করছে।
তিনি বলেন, মূল্য সংশোধনের মাধ্যমে বাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের সাময়িকভাবে সমস্যা হলেও দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
এসইসি চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকার বলেন, সংশ্লিষ্ট সবার লক্ষ্য একটি লাগসই শেয়ারবাজার। বাজারকে যৌক্তিক ও সঙ্গতিপূর্ণ অবস্থানে রাখতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে ইতিমধ্যেই বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। একক গ্রাহকের জন্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের মার্জিন ঋণ প্রদানে ১০ কোটি টাকার সর্বোচ্চ সীমা তুলে নেয়া হয়েছে। নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য ১৫ দিনের মধ্যে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রামীণফোনের শেয়ার লেনদেনে নেটিং সুবিধা চালু করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, মুদ্রাবাজারে তারল্য সংকট রয়েছে- এ তথ্য সঠিক নয়। সিআরআর বাড়িয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকা জমা নিলেও এর বিপরীতে রেপোর মাধ্যমে প্রতিদিন ৬ হাজার কোটি টাকা যোগান দেয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারের দিকে দৃষ্টি রেখে রোববার দেয়া হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা। ফলে তারল্যের অভাব রয়েছে- এ কথা কোনোভাবেই সত্য নয়।
সরবরাহ