ছোটবেলায় আমি থাকতাম চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায়।বাসার সামনেই বিশাল জাম্বুরী ফিল্ড।এদিক থেকে ওদিক দেখা যায়না।সকালে ঘুম থেকে উঠে বাবা আর বোনের সাথে হাঁটতে যেতাম।কখনো বা ফুটবল খেলতাম।দেখতাম অনেক মানুষ প্রাতঃভ্রমণে বের হয়েছে।তাজা বাতাসে বুক ভরে নিতাম নিঃশ্বাস।
একসময় মাঠ দু ভাগ হলো।একভাগে গড়ে উঠলো অবৈধ বস্তি।তবুও যা বাকী ছিলো তাও কম না।
একদিন মাঠের চারপাশে দেওয়াল উঠল।ছোট একটা অংশ ছাড়া পুরো মাঠ ঘিরে ফেলা হলো।এখানে নাকি শিশুপার্ক তৈরী হবে।আমি খুশীতে আটখানা।ঘরের সামনে শিশুপার্ক!অনেকদিন পর চালু হলো শিশুপার্ক।সবাই মজা করে ঘুরে আসলাম।
কিন্তু এই আনন্দ বেশীদিন টিকলোনা।কারণ মাঠের যে জায়গা বাকী ছিলো তা এতবড় এলাকার জন্য যথেষ্ট ছিলোনা।প্রতিদিন তো আর শিশুপার্কে যাওয়া সম্ভব না।খেলতে গিয়ে দেখি জায়গা নেই।প্রাতঃভ্রমণকারীদের হাঁটার জায়গা নেই।এলাকার ছেলেপেলেরা খেলাধুলা বাদ দিয়ে চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়া শুরু করলো।
কিন্তু লোভী পার্ক ব্যবসায়ীদের তাতেও পেট ভরলোনা।তারা পুরোমাঠটি দখলকরে ফেলল।ততদিনে আমার আনন্দের অবসান হয়েছে।তার জায়গায় একটা আক্রোশ ভর করেছে।এককালের বিখ্যাত এই মাঠটি পরিণত হলো কিছু লোলুপ মানুষের অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে।
বহদ্দারহাটে এখন যেখানে জিয়া স্মৃতি পার্ক,আগে এটা ছিলো রেডিও কলোনীর পেছনের খোলা জায়গা।চাচার চাকরীর সূত্রে সেখানে প্রায়ই যাওয়া হতো।চাচাতো ভাইবোনদের সাথে ঘুরতাম সেখানে।হু হু করে হাওয়া আসতো।প্রাণ জুড়িয়ে যেতো।
চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসলো।কোনোপ্রকার প্রতিশ্রুতি ছাড়া,চট্টগ্রামের অনেক সমস্যা সমাধান না করে তারা ওখানে জিয়া পার্ক বানাতে শুরু করলো।অসম্ভব দ্রুততায়,অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ দিয়ে কাজ শেষ করলো।দেশের একমাত্র ঘূর্ণায়মান রেস্তোরাবিশিষ্ট এই পার্কটি ধণিক শ্রেণীর আনন্দের ব্যবস্থা করলেও।নিম্নবিত্তের আয়ত্বের বাইরে থেকে গেল।
কিন্তু এর আগেই করপোরেট রাক্ষসের হাতে চলে গেছে অন্য একটি নৈসর্গিক স্থান।
ফয়স লেক।ছোটবেলায় কতোবার বেড়াতে গেছি।চোখ বুজলে এখনো দেখতে পাই টলটলে স্বচ্ছ পানি।তার উপর নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো,পাহাড়...পাশেই চিড়িয়াখানা।মাত্র পাঁচ টাকা খরচ করে দারুণ কিছু সময় কাটাতে সব শ্রেণীর মানুষ আসতো।
কিন্তু অর্থের লোভে এটা তুলে দেওয়া হলো কনকর্ড এর হাতে।তারা পাহাড় কেটে তৈরী করলো পার্ক,ওয়াটার ওয়ার্ল্ড।লেকের পানি দূষিত হলো।তিন টাকার টিকিটের দাম হলো ১০০-৩০০ টাকা।সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার বন্ধ হয়ে গেল।ব্যবসার জন্য ওখানে খাবার এবং পানি নিয়ে ঢোকা নিষিদ্ধ করলো।ওখানে নিয়মিত কনসার্ট হয়।হইচই হয়।যাদের সামর্থ নেই,তারা ভেতরের বিপুল আনন্দের আয়োজন কল্পনা করার চেষ্টা করে বাইরে থেকে।