১
রাত তিনটার দিকে হঠাৎ করে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। টেবিলে রাখা গ্লাসের পানি দিয়ে দ্রুত তৃষ্ণা নিবারণ করলাম। কিন্তু ভয়ে বুকটা ধুকধুক করছে। অতি আকাঙ্খিত একটা জিনিস হারানোর ভয় তাড়া করছে। যার দরুণ ঘুমে নিয়মিত ব্যাঘাত ঘটছে। আজকাল মাঝরাতে হরহামেশা ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে। প্রায়শই একটি দুঃস্বপ্নই দেখছি। অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে একটু বেশী উত্তেজিত হয়ে পড়েছি। পাশে শায়িত আমার স্ত্রী এবং এক সন্তানের মা নবনিতার ঘুমটাও ভেঙ্গে গেল।
"এই-- এই শাহেদ! কি হয়েছে তোমার?" উৎসুক জিজ্ঞাসা তার।
"আমার-- আমার সিন্ধুকটি নিয়ে একজন পালাচ্ছে।"
"কিসের সিন্ধুক, কোথাকার সিন্ধুক?"
আমাদের বাসায় তো কোন সিন্ধুক নাই!
নাহ! থাক ঘুমিয়ে পড়।
হুমম বুঝেছি! কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছো!
ঘুমিয়ে তো পড়বো। কিন্তু তুমিতো ঘুমাতে পারছো না। গত কিছুদিন থেকে দেখছি মাঝরাতে হুটহাট ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে। আগে তুমি ঘুমাও, তারপর না হলে আমি ঘুমাবো।
২
সেকেন্ড ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার শেষ। প্রথম রাতে হলের রুমে বসে ভাবছি কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়? ক্লাসফ্রেন্ড ও রুমমেট আহসান বললো চল আমাদের বাড়ী থেকে তিন দিনের জন্য ঘুরে আসি। অফারটা লুফে নিলাম। সকাল বেলা উঠে আন্তঃনগর ট্রেনে চেপে তার বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা পার হয়ে গেল। রাতে খেয়ে দেয়ে দেরী না করে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। সকালবেলা সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। ততক্ষণে পৌষের সকালবেলার সূর্য জানালা দিয়ে উঁকি দেয়া শুরু করেছে। পৌষের সূর্যের রোদটা গায়ে মাখবো বলে জানালার ধারে গিয়ে বসলাম। দূরে আঙ্গিনার এক কোনা থেকে একটা মিষ্টি হাসির শব্দ কানে ভেসে আসলো। চেয়ে দেখি আহসানের ছোট বোন তাহমিনার সাথে আলাপে এবং খুনসুটিতে ব্যস্ত এক অষ্টাদশী। তার চেহারা লাবণ্যে পৌষের সকালের মিষ্টি রোদের মত দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ছে যেন, হাসিতে রূপমাধূর্য আরও বেড়ে গেছে ।
আহসানকে জিজ্ঞেস করলাম, মেয়েটা কে?
”তাহমিনার বান্ধবী নবনিতা” তার জবাব।
তাহমিনার সাথে, একই সাবজেক্ট এ পড়ে।
থাকে কোথায়?
”সে আমাদের কলেজের সাদেক স্যারের মেয়ে। থাকে আমাদের বাড়ির পাশের বাড়িতে।”
নাস্তার টেবিলে দেখা পাওয়া গেল তার। হয়ত তারও নতুন অতিথীর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এরপরের দুইটি দিন তাদের শহরে ঘুরে আর গ্রামের বাড়ীতে গিয়ে নদীতে মাছ ধরে কিভাবে কেটে গেল টেরই পেলাম না।
তিনদিন পর আহসানকে রেখে একা ট্রেনে করেই হলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। ট্রেনের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে পাশের সবুজ ধানক্ষেত, গাছপালা, বাড়িঘর আর খোলা নীলাকাশ দেখছিলাম। এসব মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ছাড়িয়ে একটা মুখই বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।
হলে ফিরে এসে বেশ মনোকষ্টে পড়লাম। প্রিয় জিনিস হারিয়ে যাওয়ার মত ব্যথায় ভূগছি যেন। পরীক্ষা শেষ, তাই আপাতত কোন কাম কাজ নাই। সময়টা কাটানো কষ্টকর হয়ে গেল। কষ্ট ভোলার জন্য সুনীলের পূর্ব-পশ্চিম বইটা খুলে বসলাম। অল্প কয়েকদিনেই প্রথম পর্বটা শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্ব শুরু করবো পরের দিন রবিবার। ঠিক সকাল দশটার দিকে বেনামী একটা চিঠি আমাকে অবাক করে দিল।
পূর্ব-পশ্চিম দ্বিতীয় পর্বের সমাপ্তির পরের দিনই এক রবিবারে নবনিতার সাথে আমার বিবাহ জাকজমকের সঙ্গে পারিবারিকভাবেই সম্পন্ন হলো।
৩
বিয়ের ঠিক ছয় মাস আগে একটা কোম্পানীর চাকুরীতে জয়েন করেছিলাম। যা বেতন পাই বাড়ী ভাড়া আর খেয়ে দেয়ে কোন রকমে মাস পার করা যায়। বাড়ীতে বৃদ্ধা মাকে কোন টাকা পয়সা পাঠাতে পারছিনা।
বিয়ের দু’বছরের মাথায় আমাদের ছোট্ট ঘর আলোকিত করে জারা’র আগমন ঘটলো ধরায়। জারাই যেন আমাদের ধ্যান জ্ঞান হয়ে গেল। সারাদিনের কর্পোরেট জীবন শেষ করে বাসায় ফিরে ফুটফুটে পরীর মত মেয়েটির মুখ দেখে যেন সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যেত। এদিকে সংসারের বোঝাও যেন দিন’কে দিন বেড়ে যেতে লাগলো।
চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় হাত দিলাম। নবনিতার বাবার পেনশনের টাকার বড় একটা অংশ ব্যবসায় পুঁজি হিসেবে খাটালাম। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মূলধন উঠে আসলো। সেইসঙ্গে লভ্যাংশ বাড়তে বাড়তে এক বছরের মাথায় শহরের বুকে একটি ফ্লাটের মালিক হয়ে গেলাম আর সংসারে যোগ হলো চার চাকার বাহন।
এখন সংসারে আগের মত অভাব অভিযোগ নাই। কিন্তু সুখের দেখা পেলাম না। কারণ জারা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়া শুরু করলো। সেইসঙ্গে নবনিতার কোমড়ের ব্যথাটা বাড়তে শুরু করলো। শুরু হলো পানির মত টাকা নিস্কাশন। যেমন আয়, সেই অনুপাতে ব্যয় চরম পর্যায়ে পৌঁছালো।
৪
এরপর বিখ্যাত এক চিত্রকরকে দিয়ে বাসার ড্রয়িং রুমের দেয়ালে মায়ের একটা ছবি আঁকিয়ে নিলাম। ছবিটার বিশেষত্ব হলো এটি ঠিক মায়ের শরীরের সমান মাপের। মা’কে ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ আঁকিয়ে নিয়েছি।
শোনা যায় ঐদিকে আমার চাইতে দুই বছরের বড় ভাই শাকিব তার বাসার ড্রয়িং রুমে কিছুদিন আগে মায়ের শরীরের সমান একটা ছবি আঁকিয়েছি। তার চাইতে আমার ভালবাসা কোন মতে কম হবে কেন? তাই আমিও আর এক বিখ্যাত চিত্রকরকে দিয়ে আঁকিয়েছি। আমার বাসার ছবিটা আকার সময় বিভিন্ন রকমের দামী আর রঙীন রং ব্যবহার করা হয়েছে। এত কিছুর পিছনে মাকে খুশী করাই মূখ্য উদ্দেশ্য।
জারা’র তিন বছর বয়সে মা'কে অনেক বুঝিয়ে নিয়ে আসলাম আমার বাসায়। মা জারাকে দেখেই কাঁন্না শুরু করলেন। ঠিক ছোট বাচ্চার মত অঝর ধারায় চোখের পানি বয়ে যেতে লাগলো। দুইদিন ছিলেন বাসায়, এই দুইদিন মোটামুটি কাঁন্নার উপরেই ছিলেন। তৃতীয় দিনে বললেন, "বাবা শাহেদ আর থাকতে পারছি না তোর বাসায়। আমাকে বাড়িতে রেখে আয়।"
৫
জারা’র এখন পাঁচ বছর বয়স। বেশ চঞ্চল হয়েছে। সারাদিন বিভিন্ন খেলায় মশগুল থাকে। মাঝেমাঝে এই পিচ্চি পরীটাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। যখন দেখি, পত্রিকার পাতা বা টিভিতে শিশু পাচার, শিশু ধর্ষনের মত পৌশাচিক অপরাধের খবর। অথবা মাকড়শার জালের মত প্রসারিত ইভটিজিংয়ের মত কদর্যকর নোঙড়ামী। যার ফলে জীবনও দিতে হচ্ছে নিরীহ জনমানবকে।
সেদিন রাতে আমার প্রিয় জারাকে নিয়ে একটা দুঃস্বপ্ন দেখে হঠাৎ করে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। একটা অন্ধকার গহবরে অনেকগুলো শিশু এক সঙ্গে কাঁদছে। সেখান থেকে জারা’র কন্ঠটাই আমার কানে ভেসে আসছে। কিন্তু ধারে কাছে কোথাও তাকে খুঁজে পাচ্ছিনা। এই সময় বিশালাকার একটা ঢাকনা দ্বারা গহবরের মুখটা ঢেকে গেল।
৬
প্রানপ্রিয় শাহেদ,
যতদিন পৃথিবীতে বাঁচিস তোদের দুই ভাইয়ের সাথে আমার মঙ্গলকামনা রবে ততদিন। তোরা জানিস, শায়লা নামের তোদের একটি বোন ছিল। যেন সৃষ্টিকর্তা আমাকে তার স্বর্গরাজ্য থেকে একটি পরী উপহার দিয়েছিলেন। সে যথেষ্ট মেধাবী এবং চটপটে ছিল। ছোটকাল থেকেই তোর বাবা আর আমাকে আনন্দে মাতিয়ে রাখতো সব সময়।
আমাদের সংসারে অভাব অভিযোগ তেমন একটা ছিলনা। তোর বাবা স্বর্ণকার ছিলেন। তাছাড়া কয়েক বিঘা জমি ছিল। জমি আবাদ করে যে ফসল আসতো তা দিয়ে একটা মৌসুম দিব্যি চলে যেত।
শায়লার জন্মের দশ বছর পর নাহিদ আসলো আমার কোল জুড়ে। কিন্তু এক বছরের মাথায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেল। এর চার বছরের মাথায় শাকিব এবং তার দুই বছরের মাথায় আমার কোল আলোকিত করে তুই আসলি ধরায়।
এদিকে দেখতে দেখতে শায়লা বেশ সাফল্যের সঙ্গেই মেট্টিক পাশ করলো। ধারে কাছে কোন কলেজ না থাকায় শহরের মহিলা কলেজে ভর্তি করানো হলো তাকে। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সেখানে মেয়েদের হোষ্টেলে থেকেই পড়াশুনা শুরু করলো।
কয়েক মাসের মধ্যে দেশে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হলো। পাকিস্থানের হানাদার বাহিনী ঝাপিয়ে পড়লো নিরীহ জনগনের উপর। তারা নির্দয়ভাবে দেশের জনগণকে হত্যা করা শুরু করলো। আমাদের মেয়েদের ইজ্জত হরণ, লুন্ঠন, রাহাজানি শুরু করলো নির্বিচারে। গ্রামকে গ্রাম বিরান ভূমিতে পরিণত হওয়া শুরু করলো।
আমাদের গ্রামে তখনও বর্বরতা শুরু হয়নি। কিন্তু শহরে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়াতে তোর বাবা শহরমূখী হতে পারছেনা, তাই শায়লা কে নিয়ে আসতে পারছেনা। আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লাম। ডিসেম্বর মাসের সাত তারিখে গভীর রাতে শায়লার ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যায়, যদিও এক প্রকার জাগ্রতই ছিলাম। সে শহর থেকে একা একাই পালিয়ে এসেছে। পায়ে কাটা বিধে পা রক্তাক্ত, সারা শরীরে জখমের দাগ। সে জানায়, রাতে পাক মিলিটারী বাহিনী হোস্টেলে আক্রমন চালিয়ে অনেক ছাত্রীকে ধরে নিয়ে গেছে। সে এবং আরও অনেকে যে দিকে পেরেছে পালিয়ে গেছে।
এরপর আর তোর বাবা ঘরে টিকতে পারেনি। সেই রাতেই মুক্তিবাহীনিতে নাম লেখায় আর যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। আমি, শায়লা আর তোদের দুই ভাইকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে রাত্রিযাপন করি। যাওয়ার আগে গোয়ালঘরে মাটির নিচে ছোট্ট একটা কুঠুরী বানিয়ে দিয়ে যায়। বলে যায় পাক বাহিনী আক্রমন করলে এর নিচে লুকিয়ে থাকতে।
ডিসেম্বরের দশ তারিখ রাতে, তোর গাজী মামা আমাদেরকে নিয়ে যেতে আসে। শেষ রাতে ফজরের আযানের ঘন্টাদুয়েক আগে আগে সবাই মিলে বের হই। গন্তব্য তোর নানা বাড়ী। তুই জানিস তোর নানা বাড়ি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে। ঐদিকে মিলিটারী বাহিনী এখনও আক্রমন চালায়নি। পথে দ্রুত চলছি, হঠাৎ একটা টর্চ লাইটের আলো এসে আমাদের গায়ে পড়লো। ঠিক একটু পরেই দুম করে বন্দুকের শব্দ হলো। গাজী ডান পা চিপে ধরে মাটিতে ধপাস করে পরে গেল। শায়লা আমার পিছনে লুকিয়ে পড়েছিল। কিন্তু জমশেদ মিয়ার চোখ ইশারায় তাদের নজর এড়ালো না। জমশেদ মিয়া আমার চুলের মুষ্ঠি ধরে পার্শ্ববর্তী ধানক্ষেতে ফেলে দিল। তুই আর শাকিব রাস্তায় বসে কাঁন্না শুরু করেছিস। এর মধ্যেই তারা শায়লা’কে টেনে হিচড়ে নিয়ে গেল। আমি জ্ঞান হারিয়ে পরে রইলাম। সকালবেলা বুকের মধ্যে তোর চঞ্চলতায় যেন ঘুম ভাঙ্গলো।
সেই রাতেই জমশেদ মিয়ার ইশারায় গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে পাকবাহিনী আক্রমন চালায়। তারা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাড়খার করে আমাদের গ্রাম। যুবতী মেয়ে, গৃহবধূদের ধরে নিয়ে যায়, তাদের আস্তানায়।
কয়েকদিন পর দেশ স্বাধীন হলো। বিজয়ের পতাকা উড়াল দিল আমাদের আকাশে।
যুদ্ধ শেষে তোদের বাবাকে আর খুঁজে পাওয়া গেলনা। শায়লার মৃতদেহ পাওয়া গেল পাকবাহিনীর রেখে যাওয়া আস্তানায়। শায়লার শেষ পরিধেয়, প্রিয় নীল রঙের জামাটা আমার সিন্ধুকাবদ্ধ হলো। কিছুদিন আগে তোদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু, সিন্ধুকে তোর বাবার রাখা যেসব স্বর্ণ আর স্বর্ণালংকার ছিল সব বিক্রি করে বিজয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রদান করেছি।
তোদের বড় হওয়ার পেছনে আমার স্কুলশিক্ষক বাবার অবদানের কথা মনে রাখিস। তোর আর শাকিবের মধ্যে যে সম্পদ আসক্তি এসেছে তা পারলে কমায় ফেলিস। শাকিবের বাসায় যাইনা, কারণ তার উপর যেন দেশবাসীর অভিসম্পাত বর্ষিত হচ্ছে। সরকারী আমলা হয়ে যেন দেশবাসীর রক্ত চুষছে। শহরে কয়েকটা দামী বাড়ির মালিক সে। আর তুই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কালোবাজারীতে জড়িয়ে পড়েছিস। এই স্বার্থপরতার জন্যই কি তোর বাপ দাদারা দেশ স্বাধীন করেছে।
তোদেরকে বঞ্চিত করার জন্য আমাকে ইতিহাসের ঘৃণ্য মা হিসেবে আখ্যা দিতে পারিস। আর পারলে তোদের দেয়ালে অঙ্কিত আমার প্রতিকৃতি মুছে ফেলিস। তার চাইতে তোদের হৃদয়ের কোঠরে একটু ঠাঁই দিলেই হবে। মা হিসেবে এর বেশী কিছু চাইনা।
তোর মেয়ে জারাকে দেখে আমার শায়লার ছোট্টবেলার মূখটা মনে পড়েছিল। ঠিক শায়লার মত সুন্দর পরীর মত একটা মেয়ে। মেয়েটাকে আগলে রাখিস। মানুষের মত মানুষ করিস।
জীবনের বিশাল একটা সময় মানসিক বৈকল্যের দরুণ জমে থাকা অব্যক্ত কথাগুলো তোদেরকে জানালাম। এখন যেন শান্তিতে নিঃশ্বাসটা ত্যাগ করতে পারলেই বেঁচে যাই!
তোদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক! এই মঙ্গলকামনায়!
"তোদের জনম দুখিনী মা"
৭
গত রবিবার মা না ফিরে আসার দেশে চলে গেছেন। সিন্ধুক ভেঙ্গে এই চিঠিখানা আর শায়লা আপুর নীল জামাটা পেয়েছি। জামাটা এত বছরে যেন আরও নীলাভ রঙ ধারণ করেছে।
সকাল থেকে মুষলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। এক হাতে চিঠিখানা নিয়ে বসে আছি বারান্দায়। বৃষ্টির কাঁন্নার সাথে আমার অশ্রু মিলেমিশে একাকার। এ সময় জারা এক দৌঁড়ে এসে আমার কোলের উপর বসে পড়লো। তার মাথায় আমার দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। দু’হাতে আঁকড়ে ধরলাম তাকে। মনে মনে বললাম, "মা" তোকে রক্ষা করতে পারবো তো?