"পার্ফেক্ট ক্রাইম।" শাহরুখ খানের 'ডন২' মুভির ফিনিশিং ডায়লগটা কার না ভাল লাগে। কিন্তু বাস্তবে কি পার্ফেক্ট ক্রাইম করা সম্ভব?? আসুন দেখে নেই এমন কিছু পার্ফেক্ট ক্রাইমের কেস যা গল্পকেও হার মানায়।
১) Twin Jewel Thieves Create Perfect Alibi–
গল্পের শুরু ২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি। এই দিন সকালে তিনজন মুখোশধারী ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম ডিপার্টমেন্ট স্টোর কউফহাফ ডেস ওয়েসটার্নে। আমরা যেভাবে মুভিতে দেখি যে দড়ি বেয়ে ঘরের এপাশ থেকে ওপাশ যায় ফ্লোরে লাগানো সেন্সরকে ফাঁকি দিয়া সেভাবে এই তিন চোর ডিপার্টমেন্ট স্টোরের ভল্টে প্রবেশ করে। এই চোরদের একজন আবার রিত্তিক রোশোনের মহা ভক্ত। সে দোকানের সব খালি করে তার হাতের গ্লাভসটা ফেলে রেখে যায়। এখন পুলিশরে চ্যালেন্জ করবা আবার ভাববা ধরা খাবা না, তা তো হয় না, তাই না?? পুলিশও গ্লাভসের ভিতর থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে খুজে বের করে 'হাসান ও' ও 'আব্বাস ও' নামের দুই টুইনকে। ধরে আনলো তাদের দুজনকে। কিন্তু ধরে এনে পুলিশ পরলো মহা ফাঁপরে। গ্লাভস ছিল একটা কিন্তু টুইন দ্বয়ের ডিএনএ এতোটাই কাছাকাছি ছিল যে পুলিশ প্রমান করতে ব্যর্থ হয় কোন জনের গ্লাভস ছিল এটা। এই দুই ভাই হায়ার করছিল দুইজন ল'ইয়ার। তারা প্রত্যেককে নির্দোষ প্রমান করে ফলে আদালত তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। তৃতীয় ব্যক্তি আজও ধরা পরেনি বা লুটকৃত মালও উদ্ধার হয় নি। তারা কত টাকার ডাকাতি করেছিল??? মাএ ৫৩,৬২,৯৯,১০৮ টাকা। ছাচড়া চোর বলা যাবে না কি বলেন???


২) Dan “DB” Cooper -
বলা হয়ে থাকে আমেরিকায় এভিয়েশন ক্রাইম কেসের সব গুলোর জট সে দেশের ফেডারেল এজেন্সী গুলো সলভ করেছে এই একটা ছাড়া। ১৯৭১ সালের ২৪শে নভেম্বর ডন কুপার নামের এই যাএীবেশী হাইয্যাকার পোর্টল্যান্ড থেকে একটি এয়ারবাসে উঠে। কালো ডার্ক সানগ্লাস, রেইনকোর্ট ও এটা ব্রিফকেস ভন রছিল সে। বিমানের এখদম পিছন দিকে বসে সে ইশারায় ডাকলো সুন্দরী বিমানবালাকে। বিমানবালাকে এটা চিড়কুট দেয়, লিখা ছিল, 'I HAVE A BOMB IN MY BRIEFCASE. I WILL USE IT IF NECESSARY. I WANT YOU TO SIT NEXT TO ME. YOU ARE BEING HIJACKED.'। সে নগত ২লাক্ষ ডলার ও ৪টা প্যারাসুট ডিমান্ড করে। তার ডিমান্ড পুরা করা হলে সে সকল যাএীদের ছেড়ে দেয় এবং সে পাইলটকে ম্যাক্সিকোর দিকে বিমান নিয়ে যেতে বলে। বিমান যখন ১০০০০ মিটার উপরে তখন সে বিমান থেকে লাফ দেয়। নয় বছর পর, ১৯৮০ সালে একটা সমুদ্র তীরে ৬০০০ ডলারের একটা বান্ডিল পাওয়া যায় যা ঐ দুই লাক্ষের অংশ ছিল। তাকে আর কোন দিনই দেখা যায় নি। কেস এখনও ওপেন আছে। চুরা টাকা লইয়া পাগার পাড়। পুলিশ এই কেসের সুরাহা এখনো করতে পারে নাই, এমন কি সে কে ছিল তাও না।


৩) Gardner Museum Art Theft
১৯৯০ সালের ১৮ মার্চ একদল পুলিশ কার বোস্টনের ইসাবেলে স্টুয়ার্ট গার্ডনার মিউজিয়ামের সামনে থামে। মিউজিয়ামের ভিতর থেকে ইলিগাল এন্ট্রির এলাম বেজেছে বলে তারা মিউজিয়ামের গার্ডের অবহিত করে। এবং একজন মিউজিয়ামের গার্ডকে এরেষ্ট করবে বলে ওয়ারেন্ট দেখায়। যে গার্ডকে তারা এসব দেখায় সে সব চেক করে এসে দরজা খুলে দেয়। মাথায় বাড়ি খেয়ে বেহুশ হবার আগে সে বুঝতে পারে যে এরা পুলিশ না। যা হোক, চোরের দল মিউজিয়াম থেকে ১৩ টা দেয়ালচিএ তুলে নিয়ে যায় আসল পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে। এই চিএ গুলোর দাম ৩০০ মিলিয়ন ডলার।




৪) Japan's Robbery
১৯৬৮ সালের ১০ ডিসেম্বর। জাপানের একটি ব্যাংক টাকা ট্রান্সফার করছিল। খুব বেশি না, ৮১৭,০০০ ডলার।



৫) World's Largest Diamond Heis
বলা হয়ে থাকে পুরো ব্যপারটাই নাকি ছিল সাজানো। মানে কম্পানী নাকি ইনসুরেন্সের টাকা খাওয়ার জন্য এই ডাকাতিটা করাইছিল। কেন? আগে জেনে নিন এই ভল্টের সম্বন্ধে। এই ভল্টটি ব্যালজিয়ামের ডায়মন্ড সেন্টার বিল্ডিং এর দুই তালা নিচে, এর লক এর সঠিক কম্বিনেশন কি হতে পারে ১০০,০০,০০,০০০ এর ভিতর যে কোন একটা, ভল্টের ভিতরে ও বাইরে ছিল হিট ও মোশোন সেন্সর, রাডার, ম্যাগনেটিক ফিল্ড ও নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী।




৬) The First National Vault Robbery
এইটা পুরাই ভুতুরে ব্যপার সেপার। যেন যাদুকরের যাদু। কাহিনী হলো, ১৯৭৭ সালের ১০ই অক্টোবর এই ব্যংকের একজন কর্মচারী গুনে গুনে ৪ মিলিয়ন ডলার ব্যাংকের ভল্টে রাখে বাড়ি গেল, সকালে এসে দেখলো ৩ মিলিয়ন ডলার আছে কিন্তু ১ মিলিয়ন ডলার গায়েব হয়ে গেছে। পরে এক ড্রাগ রুট রাইডের সময় ২৩০০ ডলার পাওয়া যায় যা ঐ ১ মিলিয়ন ডলার বিলের মধ্যে ছিল। কিন্তু চোর বা বাকি টাকা আর পাওয়া যায় নাই। কিন্তু বন্ধ ভল্ট থেকে টাকা বের করলো কেমনে, এই প্রশ্নের জবাব এখনো মিলে নাই ????
৭) The Harry Winston Heist
যারা "পিংক প্যানথার" মুভি টা বা কার্টুন টা দেখেছেন তারা জেনে অবাক হবেন যে "পিংক প্যানথার" একটি সংগবদ্ধ চোর দল যারা সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৩২ মিলিয়ন ডলার মুল্যের সম্পদ চুরির সাথে জরিত। আরে ভাই মুভিতে না বাস্তবেই। সার্বিয়ান কুখ্যাত অপরাধমূলক গ্যাং টি ২০০৮ সালের ৪ই ডিসেম্বর প্যারিসের এই বিখ্যাত জুয়েলারি দোকান "হ্যারি উইনস্টন"এ ডাকাতি করে। চার জন লোক যার ভিতর তিন জন সোনালী লম্বা উইগ পরে মেয়ে সেজে খদ্দের বেশে দোকান বন্ধের ঠিক আগে দোকানে প্রবেশ করে। সাথে ছিল একটি .৩৫৭ বন্দুক ও একটি গ্রেনেড। ১৫ মিলিট পর তারা চলে যায়। সাথে নিয়ে যায় ১০৮ মিলিয়ন ডলারের বহুমূল্যের হীরা, মনি, মুক্তা। আজও কেও জানে না সেগুলো কোথায় আছে। যদি আমার হাতে এসব তাহলে ব্লগের সবাইরে দাওয়াত খাওয়াবো, প্রমিস।
৮) The Tucker Cross Heist
এ এক কথায় গুপ্তধন ছিল। 'ছিল' কেন বলছি তা পরে বলবো এখন এটুকুই বলি এর অস্তিত্ব এখন আর নাই। তো যা হোক, ১৫৯৪ সালে সান পেদ্রো নামের একটি জাহাজ ঢুবি হয়, সে জাহাজে ছিল এই ক্রস টি। ১৯৫৫ সালে 'টেডি টুকার' নামের একজন ভাগ্যবান ডুবুরি এটি পায়। ২২ ক্যারেট সোনার সাথে সবুজ পান্নার এই ক্রসটির মুল্য তখন নির্ধারন করা যায় নি। টুকার এটি বারমুদা সরকারের কাছে বিক্রি করে দেয় যার বিনিময় মুল্য প্রকাশ কারা হয় নি। ১৯৭৫-এ রানী এলিযাবেথ-২ কে দেখানোর জন্য এটি বারমুদা মিউজিয়াম অফ আর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। এই নিয়ে যাওয়ার সময় এক অতি চালাক কিন্তু ছেচড়া চোর এটি চুরি করে ২ ডলারের একটি প্লাসটিকের রিপলিকা প্লান্ট করে রেখে যায়। ছেচড়া এই জন্য বললাম যে এই গর্ধভ টা এই ক্রস টা গলিয়ে সোনা ও পান্না আলাদা করে কালো বাজারে বিক্রি করে দেয়। সে নাকি এর মুল্য যানতো না।




৯) Baghdad Bank Robbery
হি হি হি ... দাড়ান হাইসা নেই আগে ... হা হা হা ... এই টাকা ছিল সাদ্দাম হোসেনের। সাদ্দাম হোসেন পালানোর সময় এই টাকাটা সাথে নিয়ে যাচ্ছিলো। যে ব্যাংকে এই টাকা রাখা ছিল তার পাহাড়াদার ছিল তিন জন। তারা যখন শুনলো যে সাদ্দাম ধরা খাইছে তখন তারা টাকাটা গাড়িতে তুলে চম্পট দেয়। পরে তাদের আর খুজে পাওয়া যায় নাই। ব্যাংকও আর হাউকাউ করে নাই, করলে যে তাদের জবাব দিতে হতো এতো টাকা আসলো কোথা থেকে। তা কত টাকা ??? ৩৫০ মিলিয়ন ডলার !!! হজম হচ্ছে না


১০) The French “Vacuum Gang”
নাম দেখে যায় চেনা। একটা কম্পানী বেশ কিছু টাকা একটা প্রতিযোগিতায় জিতে। তারা তাদের এই টাকা একটা স্টিলের সেফে রেখে দেয়। এই 'ভ্যাকুয়াম গ্যাং' একটা ছোট্ট ভ্যাকুয়াম মেশিনের সাহায্যে টাকা টা সেফ থেকে নিয়ে চম্পট দেয়। আরে রাখেন শেষ হয় নাই, তারা ছোট্ট একটা ফুটা করেছিল সেফের নিচে দিয়ে। কি চালাক তাই না ???


সবাইকে শুভকামনা , আজ এ পর্যন্তই ...
আমার "কত অজানা রে" সিরিজ:
পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-উৎসব (কত অজানা রে পার্ট-১)
পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-কম্পিউটার মাউস (কত অজানা রে পার্ট-২)
পৃথিবীর যত কিছু আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-প্রাকৃতিক গরম পানির লেক (কত অজানা রে পার্ট-৩)
পৃথিবীর যত কিছু আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়- জাপানের কিছু পুকুর যাকে তারা 'হেল' বা নরক বা জিগোকু বলে (কত অজানা রে পার্ট-৪)
পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-দুবাই ওয়াল্ড (দেখলেও পস্তাইবেন না দেখলেও পস্তাইবেন) (কত অজানা রে পার্ট-৫)
পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-ক্রেজিয়েষ্ট ম্যানমেইড ফাউনটে (কত অজানা রে পার্ট-৬)
পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয় - জিওলজিকাল বিশ্ময় (এর অনেক গুলো আজ প্রথম দেখবেন) (কত অজানা রে পার্ট-৭)
পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-এক্সট্রিম বডিবিল্ডার (কত অজানা রে পার্ট-৮)