(১)
স্থান ধানমন্ডি লেক। সময় আনুমানিক বিকাল ৫ টা। নাইম প্রায় ১ ঘন্টা ধরে বসে আছে একা একা। এলিটার আসার কথা বিকাল ৪ টার দিকে, কিন্তু এখনো কোনো খবর নাই তার। ফোনে বারবার কল করেও পাওয়া যাচ্ছেনা তাকে। মাঝে মাঝে আবার ফোন এন্গেইজ্ড দেখায়! নাইম খুঁজে পায়না কেন এমন করছে এলিটা! সে তো এমন মেয়ে না। গত ৬ মাসের সম্পর্ক তাদের, এর মাঝের একটা দিনও নাইম এলিটার মাঝে এমন কিছুই দেখেনি। ৬ মাসের সম্পর্ক থেকে বর কথা এর আগে তাদের মাঝে ৪ বছরের বন্ধুত্ত্বের সম্পর্ক! রাসেলের সাথে যখন এলিটার সম্পর্ক ছিল, তখনো নাইম ছিল আবার যখন ওদের ব্রেকআপ হয় তখনো এলিটা ছিল নাইম এর কাছের মানুষ।
গতকালের একটা ফোনেই সব কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায় সব কিছু। নাইম মনে করার চেষ্টা করে আসলে গতকাল রাতে কি হয়েছিল।
ফিরে যাওয়া যাক গতকাল রাতের ফোনালাপে। রাত প্রায় ১ টা। নাইম অনেকক্ষণ ধরে ট্রাই করার পর এলিটার নাম্বারে কানেকশন পেলো। ট্রাই করা মানে এন্গেইজ্ড ছিল ফোন, এই আর কি!
- হ্যালো
- হ্যা বল, কি হইছে?
- কি হইছে মানে? তোমার ফোন এতক্ষণ বিজি কেন?
- কথা বলতেছিলাম তাই বিজি, এত প্রশ্ন করতেছ কেন?
- না মানে, এমন তো কোনদিন ছিল না।
- ছিলনা বলে যে থাকবেনা এমন তো না। আর তুমি আমাকে প্রশ্ন করবা কেন? তুমি কে যে আমাকে প্রশ্ন করবা?
- আমি কে মানে? আমি কেউ না? তোমার কি হইছে? রাতে কিছু খাও নাই তো আবার!
- আমার কিছু হয় নাই। আমি ঠিক আছি।
- কই ঠিক আছ, গত ১ সপ্তাহ ধরে তোমার কোনো খবর নাই। কিছু জানালাও না।
- কি জানতে চাও শুনি।
-আগে তো আমার সাথে দেখা কর। প্লিজ। দেখা করা পর সব কথা হবে।
- আমার টাইম নাই। পারব না।
- প্লিজ, একবার। ৫ মিনিটের জন্য হলেও। তুমি যেখানে আসতে বলবা আমি আসবো।
- বললাম না পারব না। এত ডিস্টার্ব কর কেন?
- আচ্ছা আর ডিস্টার্ব করব না। কাল বিকাল ৪ টায় আমি ধানমন্ডি লেকের পাশে তোমার প্রিয় জায়গায় থাকব।
- তোমার যা খুশি কর, আমি রাখলাম।
এই কথার পর এলিটা ফোন রেখে দেয়। নাইম অনেক বার চেষ্টা করে ফোনে আরো কিছু কথা বলার। শুধু সেই রাত বলেই না, গত ৫ দিন ধরেই একই রকম। অনেকক্ষণ বিজি থাকার পর ফোন বন্ধ!
গতরাতের কথাগুলো মনে করে নাইমের কেমন যেন দমবন্ধ হয়ে আসে। এমন তো হওয়ার কথা না! কি করেনি সে এলিটার জন্য! শেষমেষ নিজের রাতদিনের পরিশ্রম করে করা আমেরিকায় স্কলারশিপ এর প্রজেক্ট ও সে এলিটাকে দিয়ে দিয়েছিল। "ভালবাসার বিনিময়ে সবকিছু দিতে রাজি" এমনটা ভেবেছিল সে! তবে কি ..........
এমন সময় নাইম দেখতে পায় এলিটা আসছে। দূর থেকেই বুঝা যাচ্ছে হাই হিল পরে ফতুয়া আর জিন্স পরা ছিপছিপে গড়নের সুন্দরী একজন খোলা চুলে তার দিকে এগিয়ে আসছে ব্যস্ত ভাবে। তবে এই এলিটা সেই এলিটা না, যাকে নাইম ভালবাসে! এত পরিবর্তন কেন?
(২)
এলিটা এসে নাইমের পাশে বসলো। তবে আগেরমত ঘনিষ্ট ভাবে নয়, একটু দূরত্ব রেখে, চেহারায় বিরক্তির ছাপ।
- কি হইছে? এত আর্জেন্ট ডাকছ কেন?
- কেন আমি কি তোমাকে দেখতে চাইতে পারিনা? তুমি জানো কয়দিন তোমাকে আমি দেখি নাই? কয়দিন তুমি আমার সাথে সুন্দর করে কথা বল নাই!
- দেখ এইসব ইমোশনাল বাকোয়াস বন্ধ কর তোমার। এইসব শুনার টাইম আমার নাই। কি বলতে চাও সরাসরি বল। আমার অনেক কাজ বাকি, বাসায় যাব।
- তুমি এমন করে কথা বলছ কেন জান? তোমার এত চেঞ্জ কেন? এই তোমার সাথে তো সেই তোমাকে মিলানো যাচ্ছে না! কি বলছ এইসব?
- আমি এমনই। আচ্ছা তোমার আর কথা না থাকলে আমি গেলাম। এখনো শপিং পুরোটা বাকি রয়ে গেছে ফ্লাইট ৩ সপ্তাহ পরে আর আমার আসল কাজই বাকি! কি যে হবে!
- ফ্লাইট মানে? তুমি কই যাচ্ছ আবার? কই আমাকেতো কিছুই জানাও নাই!
- কই যাচ্ছি মানে? আমেরিকা, আবার কোথায়! তোমাকে জানাইছি না?
- কই জানায়ছ? কবে? আমি তো কিছুই জানিনা।
- মনে করে দেখ, আর তোমাকে জানাতেই হবে এমন কথা আছে নাকি?
- আমি তোমার কেউ না? আমাকে জানাইতে হবে না?
এমন সময় এলিটার ফোনে কল আসে। এলিটা ফোন নিয়ে একটু ইতস্তত করতে থাকে। তারপর নাইমের পাশে থেকে উঠে একটু দুরে চলে যায়।
"হ্যালো, ফাহাদ ভাইয়া কেমন আছ?"
(ফোনের ঐ পাশের কথা নাইম শুনতে পাচ্ছে না।)
"জি ভাইয়া, একটু বাহিরে।"
"না না, সেইরকম কিছু না। ফ্রেন্ডদের সাথে একটু দেখা করতে আসছি আর কি। সময় তো আর বেশি বাকি নাই।"
"আরে না না, পার্টি না। এমনিই।''
"কি সব বল না তুমি! আমার আবার স্পেশাল কেউ! না না, এমনিই''
"হুম মোটামুটি সব ফাইনাল, শুধু আমার শপিংটা বাকি আছে!"
"কি! শাড়ি! কি যে বলনা তুমি! আমেরিকাতে গিয়ে কি আমি শাড়ি পরব নাকি? এই টি শার্ট, ফতুয়া আর কিছু জিন্স।"
" আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক আছে একটা শাড়িও নিয়ে এসব।"
"ওকে। তাহলে পরে কথা হবে। টেইক কেয়ার।"
ফোন রাখার সাথে সাথেই নাইম উঠে এলিটার কাছে এলো। - কে ফোন করেছিল?
- আমার কাজিন।
- আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমারে একটু বুঝাইয়া বলবা প্লিজ।
- বুঝানোর কি আছে? আমার স্কলারশিপ হয়ে গেছে। সামনের মাসে ফ্লাইট। একটু আগে যাচ্ছি সবকিছু গুছাতে।
- স্কলারশিপ! আমার প্যাপার তুমি নিজের নাম জমা দিয়ে স্কলারশিপ নিলা, আর আমারেই কিছু জানাইলানা!
- তোমার প্যাপার মানে? এই কি উল্টা পাল্টা বলতেছ? মাথা ঠিক আছে তো? একদম উল্টা-পাল্টা কথা বলবা না।
নাইম বাকরুদ্ধ এখন। কি বলবে সে কিছুই বুঝতে পারছেনা। নিজের পায়ে কুড়াল মারলেও মনে হয় এত ব্যথা লাগে না।
দুইজনই মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে। এলিটা এবার একটু নরম সুরে কথা শুরু করল।
- প্লিজ মাইন্ড করোনা। তোমার সাথে আমার যা ছিল সব ভুলে যাও। আমরা আগের মত ফ্রেন্ড ছিলাম, তেমনি থাকব।
- সব ভুলে যাবো মানে?
- ভুলে যাবা মানে ভুলে যাবা আর কি! অনলি ফ্রেন্ড হিসাবে চাইলে মাঝে মাঝে কল দিতে পারো।
(নাইম চুপ করে আছে)
- আচ্ছা আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। গেলাম। যাওয়ার আগে কল দিব।
শেষ বারের মত এলিটা নাইমএর হাত ছুয়ে গেল। নাইম তাকিয়ে আছে এলিটার দিকে। এলিটার চোখে আজ কোনো আবেগ নেই, কোনো দুঃখ নেই।
এলিটা হেটে যাচ্ছে। নাইম তাকিয়ে আছে এলিটার দিকে। একবারের জন্যও এলিটা ফিরে তাকায়নি নাইম এর দিকে। সন্ধার আলোয় নাইমএর গালে দুই ফোটা পানি তখন চকচক করছিল।
সেই পানিটা কষ্টের নাকি ঘৃণার সেটা নাইম জানে না। শুধু জানে এলিটা নামের কেউ আর তার জীবনে নেই। কখনো আসবে না, কখনো না।
