সময় দুপুর ১ টা.
স্থান : কিশোরের বাসা
ঘটনা :
কিশোর ঘুমাচ্ছে. এত বেলা পর্যন্ত কারো ঘুমানোর কথানা। বাহিরে প্রচন্ড রোদ। তবে এসি রুমে সেটা বুঝার কোনো উপায় নেই। দরজা বন্ধ, জানালায় ভারী পর্দা ঝুলছে। কিছুতেই বুঝার উপায় নাই যে বেলা গড়িয়ে দুপুর হল।
গত রাতে ফোনে কথা বলতে বলতে কখন সকাল হয়ে গেছে মনে নাই। ইদানিং প্রায়ই এমন হচ্ছে তার। আগে এই স্বভাব ছিলনা। কিন্তু এখন রাত জাগাটা তার জন্য কমন ফেক্টর। ভোর ৫ টায় চোখের পাতা বন্ধ করে সেই যে ঘুম আর উঠার নাম নাই। কিশোরের মা কয়েকবার এসে দরজা ধাক্কা দিয়ে ডেকে গেছে তাকে. কিন্তু তার ঘুম ভাঙ্গে কার সাধ্য?
হঠাত করে ফোনের বিকট গর্জন। অনেক গবেষনা করে আধুনিক ইংরেজি একটা গানকে স্পেশাল একজনের জন্য রিংটোন হিসাবে সেট করেছিল সে, যা কিনা শুনলেই প্রথমে লাফ দিয়ে উঠতে হয়!!
গানের চেচামেচিতে একলাফে কিশোর ঘুম থেকে উঠল। চোখে যেন ঝাপসা দেখে সে। "মাত্র ঘুমাইলাম, আর এখনি কল... এইডার কি কোনো আক্কেল নাই নাকি?" প্রচন্ড রাগ করে সে।


হাঁই তুললে তুলতে ফোন ধরল সে।

"হেল্লো" ভয়েজের মধ্যে এখনো ঘুম ঘুম জড়িয়ে আছে তার

"এতক্ষণে তোমার হেল্লো বলার টাইম হোল? আমাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখতে অনেক মজা লাগে তাইনা?" ফোনের অপর পাশের থেকে এক নারী কন্ঠের ঝাজালো কন্ঠ ভেসে আসলও।

কিশোর যেন একটু ধাক্কার মত খেলো। এই ধরনের পরিস্থিতিত জন্য সে প্রস্তুত ছিলনা। মনে হয় স্বপ্নে দেখছে সব কিছু।
চুল চুলকাতে চুলকাতে আবার বলল, "হ্যালো"

"আর কত হেলতাম আমি? কয়টা বাজে এখন? কয়টা কল দিছি তোমার মোবাইলে খবর আছে? আজকে খালি আসো তুমি, কিভাবে হেলতে হয় আমি দেখাবো তোমারে।" নারী কন্ঠটা যেন আরো রেগে যায়।

কিশোরের চোখে আধার নেমে এলো। আজ কি বার, কয় তারিক তার কিছুই মনে পরছে না। ফোনের ঐপাশের কন্ঠ অপরিচিতর মত লাগছে. শুধু বুঝতে পারছে একটা মেয়ে!
"আপনি কে বলছেন প্লিজ ?"

"ও এখন আমাকেও চিন না তাই না? নিজের নাম মনে আছে তো? নাকি সেটাও মনে করিয়া দিতে হবে?"

"ও সরি জানু, আমি ভাবসিলাম আমাদের কাজের মেয়ে ফোন দিসে. কেমন আচ তুমি?" না বুঝে কিশোর আনমনে বলে ফেললো মুখ ফসকে।

"আমার গলা তোমার কাছে কাজের মেয়ের মত লাগে? আজকে খালি তুই আস, তোরে আমি বুঝব আমি কে?"

এইটা বলে মেয়েটি ফোনের লাইন কেটে দিল।
কিশোরের কাছে হটাৎ যেন সব কিছু অন্যরকম লাগছে। আজকে কি বার? খাটের পাশে থাকা ল্যাপটপটা টান দিয়ে নিজের কাছে আনলো সে।
হায় হায় আজকে রবিবার !! আজকে ফারিয়ার সাথে দেখা করার কথা!!! আমি কিভাবে ভুলে গেলাম!!!




ঘড়ি দেখে ১.৩০ বাজে!! দেখা করার কথা ১১.০০ টায় ধানমন্ডি লেকের পাশে। বাসা থেকে যদি এখনো বের হয়, তবুও মিনিমাম সময় লাগবে ১ ঘন্টা সেখানে পৌছাতে।
নিজের ভাগ্যকে দোষ দিয়ে সকাল শুরু করলো সে।
মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে কল করার চেস্টা করলো ফারিয়াকে।
কিন্তু দিন যার দুঃস্বপ্ন দিয়ে শুরু, তার কি আর ভালো কিছু হয়! আবার গন্ডগোল পাকিয়ে ফেলল সে।
মনের ভুলে ডায়াল লিস্ট থেকে কল করল ফারজানা কে। ফারজানা হল কিশোরের ২ নম্বর বান্ধবী। আজকাল একই মোবাইলে ২ টা বা ৩ টা সিমের মত প্রেমের বাজারেও সেটা চালু হয়েছে। একে বলে নতুন ট্রেন্ড। আর কিশোরের কন্যা রাশি, সবসময়ই যেন মেয়েরা ওর কাছে চলে আসে আঠার মত। এখন ব্যাচারা কিভাবে না করবে এত সুন্দরী নারীদের?
দুইটা নামই "ফামি ১" আর "ফামি ২" দিয়ে সেইভ করা মোবাইলে যেন কেউ না বুঝে। ফামি হল কিশোরের বন্ধু, এটা সবাই জানে। কিশোরের ভাগ্যে সব "ফ" এর খেলা চলছে যেন!
"হেল্লো ফারিয়া, সরি জানু, আমি ঘুমের মাঝে তোমাকে চিনি নাই। গতকাল রাতে ঘুমাতে পারি নাই। তাই এই অবস্থা। আর তুমিতো জানো, আমি ঘুমালে কোনো খবর থাকেনা। মাফ করে দাও জানু।"

"তুমি কাকে ফোন করছ? এই ফারিয়াটা কে?? তাইত বলি, সারা রাত নোট করার নাম দিয়ে তুমি কি কর? মোবাইল বিজি থাকে, আর আমাকে বল বন্ধুর সাথে ডিস্কাশান? খালি আসো টি এস সি তে. তোমার হাত পা আমি যদি লুলা না করছি তাহলে আমার নাম ফারজানা না."

ফোনের লাইন কেটে গেল. কিশোরের মাথায় কিছু ঢুকছে না. কি হতে কি হলো! ডায়াল লিস্ট দেখে সে নিজেই ভেবাচেকা খেয়ে গেল। "ফামি ১" এর জায়গায় "ফামি ২" কে কল দিয়ে দিছে সে!


"হায় হায় আমি কি করলাম!! ফারিয়া কে কল না দিয়ে ফারজানা কে কল দিলাম! আজকে আমার কপালে কি আছে? শনির দশা, নাকি রবির দশা! " নিজের অজান্তেই কিশোর "মাম্মি..." বলে ডাক শুরু করল।
কিশোরের মা পাশের রুমেই ছিলেন।
দৌড়ে এসে বলে, "কি হইসে বাবা? খারাপ স্বপ্ন দেখসিস নাকি? সারা রাত লেখাপড়া করলে আর দেরিতে ঘুম থেকে উঠলে কেমনে হবে বাবা? নিজের শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে না? কি দেখেছিস স্বপ্নে আমাকে বল"
কিশোর কি বলবে বুঝতে পারল না। মা কে কেন ডেকেছে এটাও তার মাথায় আসছেনা।
"না মা, আজকে একটা পরীক্ষা ছিল, কিন্তু দেরিতে ঘুম থেকে উঠার কারনে মিস করলাম. " কোনো মতে ফিস ফিস করে জবাব দিল কিশোর।

"আমাকে আগে বলিস নাই কেন? আমি তোকে জাগিয়ে দিতাম. থাক মন খারাপ করিস না, পরের বার দিস. এখন হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করতে আস " কিশোরের মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন।
কিশোর লক্ষ্মী ছেলের মত মায়ের কথা শুনে বিছানা উঠতে গেল, ঠিক এমন সময় টু টু করে একটা মেসেজ আসলো, "তোর জন্য হকি স্টিক রেডি করসি, খালি সামনে আস. প্রেম করার মজা তরে বুঝামু আমি "


দরজা দিয়ে বের হতে হতে কিশোরের মা আওয়াজ পেলেন ফোনের।
" কে রে খোকা?" কিশোরের মায়ের প্রশ্ন।
"না মা, আমার বন্ধু ফামি। আজকে নাকি পরীক্ষা হয় নাই। কালকে হবে।"

"যাক তাহলে তো বাচা গেল. আয় হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করে নে।"
কিশোর নাস্তা শেষ করে পাশের দোকানে গিয়ে আরেকটা নতুন সিম কিনে আনে। কয়েকদিন এই নতুন সিম চালাতে হবে তাকে। পরে একটা অজুহাত দিয়া ফারিয়া আর ফারজানা ২ জনকেই মানিয়া নেয়া যাবে। এই কনফিডেন্স কিশোরের আবার অনেক আগের থেকেই!
(সম্পূর্ণ ঘটনা কাল্পনিক. কারো সাথে মিল খুজা পাগলামির নামান্তর মাত্র।)
গল্পটা আমার এক অনেক প্রিয় ছোট ভাইকে উৎসর্গ করলাম। এই ব্লগে সম্ভবত সে "ধুসর শুভ্র" নামে লিখে
