
নিজের একটি গাড়ির স্বপ্ন
একটি ছোটখাটো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে পাবলিক রিলেশনস অফিসার পদে আবির দীর্ঘদিন চাকরি করছেন। বেতন খুব বেশি নয়, তবে যা পান তা দিয়ে নিজে এবং পরিবার চালিয়ে প্রতিমাসে হাতে কিছু টাকা থাকে । এই অল্প কয়েকটি টাকার বদৌলতেই আবির স্বপ্ন দেখে নিজের একটি গাড়ির নিজের প্রয়োজনে এবং পরিবারের কাজে গাড়িটি ব্যবহার করবে। তাছাড়া অফিসের কাজে তাকে মাঝে মাঝে বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিসে যেতে হয়। তাই নিজের গাড়ি হলে সেক্ষেত্রেও ভালো হয়। অবসর পেলে নিজের গাড়িটি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে প্রকৃতির অপরূপ অবদানে ঘুরে আসতে পারে। এমন অনেক সুবিধার কথা মাথায় রেখে স্বপ্ন দেখছে সাধ্যের মধ্যে একটি গাড়ি কেনার।
কর্মব্যস্ত এই নগরে মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চ মধ্যবিত্তের সবাই স্বপ্ন দেখে একটি গাড়ি কেনার। কিন্তু ক’জনেরইবা সেই স্বপ্ন পূরণ হয়। সাধ এবং সাধ্যের মেলবন্ধন ঘটিয়ে আপনি হয়তো ঠিক করলেন একটি গাড়ি কিনেই ফেলবেন। যেহেতু আর্থিক অবস্থা খুব বেশি শক্তিশালী নয়, তবুও কিনতে চান ভালো গাড়ি। কিন্তু কোন গাড়ি কিনবেন? কত সিসির গাড়ি কিনবেন। দাম কত। ইত্যাদি নানা প্রশ্ন আপনার মনের মধ্যে উঁকিঝুঁকি মারছে। এমন অবস্থায় নিশ্চয় ভাবছেন আপনার করণীয় কি?
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্রেতার গাড়ির স্বপ্ন পূরণে আছে রিকন্ডিশন গাড়ির বাজার। মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব গাড়ি ক্রেতা মনে করেন, আমি এই খেলায় জিততে চাই। সেজন্য গাড়ি কেনার আগে নিতে চাই যথেষ্ট প্রস্তুতি। যেহেতু মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্তদের অনেক বিষয় মাথায় রেখে গাড়ি কিনতে হয়, তাই দেখেশুনে যাচাই করেই কেনা উচিত। আর যারা এসবের ধার ধারেন না, তারা কোনো কিছু না জেনেই ডিলারের ওপর নির্ভর করে বসেন। এতে কখনও তিনি সফল হন, আবার কখনও সফল হন না। তাই গাড়ি কেনার আগে অবশ্যই কয়েকটি ধাপ বা পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত জরুরি।
নিতে হবে পুরোপুরি প্রস্তুতি
মন নামক মহাশয়ের লালিত স্বপ্ন পূরণ করতে নিতে হবে পুরোপুরি প্রস্তুতি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘ভালো গাড়ি কেনার পুরো ব্যাপারটি নির্ভর করে ক্রেতার প্রস্তুতি ও মানসিকতার ওপর। আর্থিক অবস্থার দিকে খেয়াল রেখে গাড়ি পছন্দ করতে হবে।’ গাড়ি কিনলেই অনেক বাড়তি খরচ যুক্ত হবে মাস শেষে। জ্বালানি, গ্যারেজ, ড্রাইভারের বেতন, পার্কিংসহ আরও অনেক কিছু। তাই গাড়ির মেনটেনেন্স খরচ, নিজের আয়-ব্যয়, ব্যাংক ক্রেডিট, সামর্থ্য আর রুচির কথা ভেবে নিয়ে একটি বাজেট ঠিক করে ফেলুন। তবে আবেগতাড়িত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন না। বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নিজের সচ্ছলতার বিষয়টি মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিবেন। তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত আপনার জন্য বিরাট সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
এরপর ঠিক করুন কোন ধরনের গাড়ি কিনবেন। আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা কত। তাদের জন্য কি সিডান নাকি ফ্যামিলি কার দরকার? ছোট পরিবার হলে হ্যাচব্যাক গাড়ি কিনতে পারেন। আর সব সময় যদি বাড়তি মালামাল বহনের প্রয়োজন হয় তাহলে বেছে নিতে পারেন স্টেশনওয়াগন। আর আপনি যদি অফট্র্যাক গাড়ি চান তাহলে নিতে পারেন এসইউভি। সব ধরনের গাড়িই পাবেন রিকন্ডিশন গাড়ির শোরুমে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে বুঝে নিন আপনার চাহিদা।
রিকন্ডিশন গাড়ির দরদাম
এরপরই আসে গাড়ির দরদামের প্রসঙ্গ। রিকন্ডিশন গাড়ির বাজার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের গাড়ি অ্যাভেইলেবল। যাদের পছন্দ টয়োটা ব্র্যান্ডের প্রোবক্স ও আইএসটি মডেলের ১৩০০ সিসি এবং ১৫০ সিসি। তারা ২০০৪ সালের মডেলের এই গাড়িটি কিনতে পারবেন ১৫ লাখ টাকার মধ্যে। এলিয়ন, প্রিমিও এবং ফিল্ডার ১৫০০ সিসির দাম পড়বে ২৩ লাখ থেকে ৩৬ লাখ টাকার মধ্যে। এছাড়া এক্স-করলা ১৩০০ সিসি এবং ১৫০০ সিসির দাম পড়বে ২০ লাখ থেকে ২২ লাখ টাকা পর্যন্ত। নির্মাণ সালভেদে প্রত্যেক মডেলের দাম কিছুটা ভিন্ন হবে। তাই কেনার সময় নির্মাণ সাল এবং দামের সামঞ্জস্য দেখে কিনুন।
ব্রান্ডেড গাড়ি
বাংলাদেশে ব্রান্ডের গাড়ির মধ্যে টয়োটা, মিৎসুবিশি, নিশান, হুন্দাই, সুবারু, বিএম ডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, ফোর্ড, সুজুকি, হোন্ডা ইত্যাদি গাড়ি আমদানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে টয়োটা বাজারজাত করে নাভানা লিমিটেড, মিৎসবিশি-র্যাংগস মোটরস, নিশান-প্যাসিফিক মোটরস, হুন্দাই-হুন্দাই মোটরস বাংলাদেশও সুবারু-আরইএল মটরস, বিএম ডব্লিউ-এক্সিটিউটিভ মটরস, মার্সিডিজ বেঞ্জ-র্যানকন মোটরস, ফোর্ড-আনোয়ার অটোমোবাইলস সুজুকি-উত্তরা মোটরস, হোন্ডা-ডিওএইএস মোটরস আমদানি ও বাজারজাত করে। এসব ব্রান্ডের গাড়ি পাওয়া যাবে দেশীয় পরিবেশকের নিজস্ব শো-রুমে।
কিছু বিষয়ে যাচাই করুন
আপনি হয়তো মনস্থির করে ফেলেছেন কোন গাড়ি কিনবেন। ছোট হয়ে এসেছে আপনার গাড়ির দুনিয়া। এখন আপনার প্রয়োজন যাচাই-বাছাই করা। হাজার হাজার গাড়ির মধ্য থেকে নিজের স্বপ্নের গাড়িটি আপনাকে বেছে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার কাজ হবে বিভিন্ন উৎপাদনকারী গাড়ির বিভিন্ন মডেল যাচাই করা এবং শোরুমের দামে ভিন্নতাও যাচাই করা। এছাড়া কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বিভিন্ন মডেলের গাড়ির পার্থক্য, গাড়ির দামের পার্থক্য, স্পেসিফিকেশন ডিটেইলস, পার্টসের অ্যাভেইলেবলিটি, এক্সেসরিজ, পারফরম্যান্স ইত্যাদি।
রিকন্ডিশন গাড়ির ক্ষেত্রে ওয়ারেন্টি
রিকন্ডিশন গাড়ির ওয়ারেন্টির ক্ষেত্রে অনেক কোম্পানি নির্দিষ্ট একটি সময় কিংবা মাইলেজ ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে। গাড়ির ক্রেতা হিসেবে যে বিষয়ে আপনার জানা জরুরি সেগুলো হল গাড়ি কেনার পর বিক্রয়োত্তর সেবা কত দিন পাওয়া যাবে। কিছু প্রতিষ্ঠান যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে আবার অনেক প্রতিষ্ঠান শুধু সেবা দিয়ে থাকে। তা ভালো করে জেনে নিতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সুনামের ওপর নির্ভর করে ওয়ারেন্টি ভিন্ন হতে পারে।
গাড়ি ডেলিভারি
গাড়ি কেনার পরে আসে গাড়ি ডেলিভারির ব্যাপারটি। কিছু কিছু আমদানিকারক শোরুম থেকেই ডেলিভারি দেন। আবার অনেক আমদানিকারক চট্টগ্রাম পোর্ট থেকেও ডেলিভারি দিয়ে থাকেন। তাই যেখান থেকেই বুঝে নিন না কেন গাড়ি ডেলিভারির আগে কয়েকটি জিনিস দেখে নেওয়া একান্ত জরুরি-
গাড়ি আমদানির সব কাগজপত্র, ইউজার ম্যানুয়াল, ওয়ারেন্টি বুক দেওয়া হয়েছে কি না।
গাড়ির ইন্টেরিয়র, ফেব্রিক, কার্পেটিং ঠিক আছে কি না।
গাড়ির সব কিছু ঠিকঠাকমতো কাজ করছে কিনা।
গাড়িতে কোনো ধাক্কা, স্ক্যাচ বা কোথাও রং উঠেছে কি না।