

বিদেশী বীরপ্রতীক ডব্লিউ. এ. এস. ওডারল্যান্ড
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে যাঁরা সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে করেছেন গৌরবান্বিত ও মহিমান্বিত, ওডারল্যান্ড তাঁদেরই অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্যে এই বিদেশী ভুষিত হয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় খেতাব "বীর প্রতীক"এ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আরো অনেক বিদেশীই অংশগ্রহন করেছেন। কিন্তু ওডারল্যান্ডই একমাত্র বিদেশী যিনি সম্মূখ যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহন করে "বীর প্রতীক" খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকার পাশেই টংগীতে বাটা সু কোম্পানীতে চাকুরীরত ছিলেন। পঁচিশে মার্চের কালো রাত্রিতে পাকিস্থানী সেনাদের বর্বরতা তাকে মর্মাহত করে তোলে। মনের ভিতর জাগিয়ে তোলে প্রতিরোধের ক্রোধ। তাই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী এই বীর একজন ভিনদেশী হয়েও জড়িয়ে পড়েন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে। ওডারল্যান্ড এর জন্ম ১৯১৭ সালের নেদারল্যন্ডের আমস্টারডামে। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিনগুলিতে ডাচ বাহিনীর পক্ষে লড়াই করে নাৎসী বাহিনীর বর্বরতার শিকার হন।

জীবদ্দশায় ওডারল্যান্ড তাঁর আত্মজীবনি কিংবা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর কোন স্মৃতিচারন লিখে যাননি। তবে তার ডায়রী ও কিছু চিঠিপত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে অনেক অজানা তথ্য পাওয়া যায়। ওডারল্যান্ডের চোখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বেদনা, রক্তাক্ত স্মৃতি আর বাংলার মুক্তিযুদ্ধ একাকার হয়ে পড়েছিল যে, তিনি উদ্বুদ্ধ হন জড়িয়ে পড়তে। তিনি লিখেছিলেন " পাকিস্থানী সেনাদের বর্বরতা দেখে আমার ইউরোপের যৌবনের অভিজ্ঞতাগুলি ফিরে পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল যা কিছু ঘটছে বিশ্ববাসীকে কারো না কারো জানানো উচিত। ব্যাক্তিগতভাবে আমার কোনও সমস্যা ছিল না। আমি চলাফেরা করতে পারছিলাম অবাধেই। নিরীহ মানুষজনের ওপর পাকিস্থানীরা যেসব ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল তুলছিলাম তার ছবিও । তারপর সে ছবিগুলি পাঠিয়ে দিতে পেরেছিলাম বিদেশী বিভিন্ন মিডিয়াতে।"

এরপর হানাদার বাহিনীর উচ্চ স্তরের সংগে ব্যক্তিগত যোগাযোগের পরিধি বাড়িয়ে নানা তথ্য গোপনে মুক্তিযুদ্ধের পরে কাজে লাগাতে থাকলেন তিনি। এই ব্যাপারে সেক্টর কমান্ডার সফিউল্লাহ এবং জিয়াউর রহমানের সাথে তার যোগাযোগ হয়। এরপর ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধের আরো গভীরে। বাটার শ্রমিকদের সংঙ্ঘবদ্ধ করে টংগীসহ সেক্টর ১ এবং ২ নন্বরে গড়ে তুলেন গেরিলা বাহিনী। নিজেই দায়িত্ব নিলেন প্রশিকের। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মৃত্যু এবং লাঞ্চনার ভয়কে তুচ্ছ করা এই বীরসেনা বলে গেছেন “সে সময় বাংগালীদের জন্য যে ভালোবাসা আর টান আমি অনুভব করেছি আমার সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ ছিল তারই বহিঃপ্রকাশ।"
তার শেষ নিবাস ক্যাংগারুর দেশ অষ্ট্রেলিয়া হলেও ওডারল্যান্ডের স্মৃতি, স্বপ্ন সবই বাংলাদেশকে ঘিরে। শেষদিন পর্যন্ত ওডারল্যান্ডের স্মৃতিতে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ডাচদের পক্ষে নাৎসীদের বিরুদ্ধে লড়াই আর যুদ্ধ জয়ে বাংলাদেশের জন্মের অহংকার ছিল চির অম্লান।
পর্ব - ১
পর্ব - ২
পর্ব - ৩
পর্ব - ৪ পর্ব - ৫
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:২১