ডেভিডের কথা শুরু করার আগে একটু এর স্রষ্টার কথা বলি একটু করে।মিকেল এঞ্জেলো ছিলেন তখনকার state of Firenze এর অধিবাসী,যেটি এখন ফ্লোরেন্স বলে পরিচিত।ছোটবেলা থেকেই বেশ অবহেলিত এই এঞ্জেলোই একসময় রেনেসাঁ বিপ্লবের অন্যতম প্রানপুরুষ হয়ে উঠেন।একইসাথে স্কাল্পচার,আর্কিটেক্ট আর পেইন্টার- আসলে তার মত একসাথে এতগুলো গুন নিয়ে বোধহয় খুব কম মানুষই পৃথিবীতে এসেছে।ডেভিড,Sistine Chapel,Pietà,-এই সবগুলা মাস্টারপিস ওয়ার্ক এঞ্জেলোর করা।
গলিয়াথের বিরুদ্ধে ডেভিডের জয়
এইবার আসি ডেভিডের কথায়।যে ডেভিড কে পাথরের নির্জীব ভাস্কর বানিয়ে রীতিমত বিশ্ব মাতিয়ে দিয়েছেন এঞ্জেলো আসলে কে সেই ডেভিড?হিব্রু বাইবেলের মতে ডেভিড কে মনে করা হত “the true king of israel”.গলিয়াথের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য তাকে পুরো জাতির সাহসিকতার প্রতীক বলে মনে করা হয়।গলিয়াথ ছিল যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী সে সময়ের সেরা একজন।যীশুর আগমনের আগ থেকেই গলিয়াথ কে বহুঈশ্বরবাদী একজন প্যাগান হিসেবে মনে করা হত।এক কথায় বলতে গেলে গলিয়াথের বিরুদ্ধে ডেভিডের যুদ্ধকে দেখা হয় মন্দের বিরুদ্ধে ভালোর,আর মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের যুদ্ধ হিসেবে।ইতিহাসের চোখে ডেভিড মানে রক্ষাকর্তা। এই যে ডেভিড যাকে নিয়ে এত কথা বলছি তাকে ইসলামে নবী দাউদ হিসেবে সবাই চেনে।
এইবার পাথুরে ডেভিডের কথায় আসি।এই ডেভিডের উচ্ছতা প্রায় ১৭ ফিট।পাহাড় থেকে কেটে আনা যে বিশাল পাথরের টুকরো ব্যাবহার করা হয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর।প্রায় আড়াই বছর লাগে এঞ্জেলোর এই ডেভিডকে তৈরি করতে।বর্তমানে এটি ফ্লরেন্স গ্যালারিয়াতে আছে।
ডেভিড এত বিখ্যাত কেন এর প্রশ্নের উত্তর-ই এই পোস্টের মুল উদ্দেশ্য।প্রথমেই ডেভিডের চোখ আর মুখের দিকে তাকাই।আসলে এঞ্জেলো গলিয়াথের সাথে যুদ্ধে বিজয়ী ডেভিডের পোট্রেট এঁকেছেন যেখানে ডেভিডের চোখে মুখে আমরা একজন মানুষের প্রতিচ্ছবি দেখি যে যেকোন সময় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।কিছুটা চিন্তার ছাপও পাওয়া যায় ডেভিডের চোখেমুখে।
-ডেভিডের চিরবিস্ময়কর মুখ
ডেভিডের কাঁধে যে slingshot টি রয়েছে তা প্রায় অদৃশ্য যেটা আসলে গলিয়াথের সাথে ডেভিডের বিজয়কে যতটা না শক্তির তার চেয়ে বেশি বুদ্ধিবৃত্তিক বিজয় হিসেবে বোঝায়।
ডেভিডের দাঁড়ানো ভঙ্গির দেখে ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে ডেভিডের দেহের বেশীরভাগ ভর পেছনের পায়ের উপর,আর সাম্নের পা বেশ রিলাক্সড।এটিকে contrapposto বলে যেটি আসলে তৎকালে সৈন্যদের শৌর্যের প্রতীক।এটি মানে হল যুদ্ধের লিপ্ত হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত যা আসলে conscious choice and conscious action এর মাঝের অবস্থা।ডেভিডের এই দাঁড়ানোর ভঙ্গী শুনিয়ে দেয় শত্রুদের যুদ্ধের আগে সতর্কবানী।
-ডেভিড
আসলে যখন ডেভিড তৈরি করা হয় তখন ইতালির প্রায় প্রতিটা শহর আলাদা ছিল।ফ্লরেন্সের আশেপাশে যেসব শহর ছিল সেগুলো প্রায় প্রতিটিই ফ্লরেন্সের চেয়ে শক্তিশালী ছিল,তখন যুদ্ধ আসন্ন অবস্থা ছিল যেকোন সময়।বিশেষ করে রোমের সাথে ফ্লরেন্সের বেশ টানাপোড়ন ছিল।কিন্তু এঞ্জেলো যখন এই ডেভিড প্রাসাদচত্বরে স্থাপন করলেন তখন এটি হয়ে উঠল ফ্লোরেন্সের প্রতিরোধের প্রতীক।ফ্লোরেন্সের মানুষ ডেভিডের মাঝে শক্তি খুজে নিতে শুরু করল।
সেদিন একটা ডকু দেখতে গিয়ে ওখানে দেখলাম এঞ্জেলো নাকি ডেভিড বানানোর আগে মানুষ খুন করেছিল শুধুমাত্র মানুষের শিরা উপশিরা কেমন হয় এইসব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার জন্য,এরপর মানবদেহের সব রহস্য জেনে ডেভিডকে বানাবেএকেবারে নিখুঁত করে।এটা সত্যি কি মিথ্যা ঠিক জানিনা তবে এটা ঠিক যে পৃথিবীতে যে কজন পারফেকসনিস্ট তাদের কাজের জন্য টিকে থাকবে চিরকাল তাদের মধ্যে এঞ্জেলো আর তার ডেভিড থাকবে।