ল্যুভরের ইতিহাসের দিকে যাই।আজকের ঝাঁ চকচকে ল্যুভরের ইতিহাস কিন্তু অনেক পুরনো।এটি মুলত একটি দুর্গ হিসেবে ব্যাবহার করা হত ফিলিপ II এর আমল থেকে।এরপরে রাজা লুইস XIV এটিকে রয়্যাল কালেকশন এর জন্য ছেড়ে দেন।সেটি প্রায় ১৬৮২ সালের কথা।এর পরে অবশ্য ফ্রেঞ্চ রেভুলেসনের সময় এটিকে জাদুঘর হিসেবে ওপেন করে দেওয়া হয়।মাঝখানে অবশ্য নেপেলিওনের আমলে এর কিছু পরিবর্তন হয়েছিল।অবশ্য ল্যুভরের আজকের এই বিশাল কালেকশনের জন্য নেপেলিওনের অবদান ছিল অনেকখানি।
কি আছে লুভরে??
আগে বলেন কি নাই !! পুরো ল্যুভর কে মোটামুটি কিছুভাগে ভাগ করা যায়-এর মধ্যে যেগুলো সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সেগুলোর কথা বলছি-
১।ইজিপ্সিয়ান- প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা আজকের এই আধুনিক যুগেও রহস্য বিশাল রহস্যের খোরাক। নিলনদের তীরে যে সভ্যতার সূচনা হয়েছিল মানুষের ইতিহাসে সেটির টাইমলাইন ছিল সেই খ্রিস্টেরও জন্মের হাজার বছর আগে।অথচ এত আগের প্রাচীন সভ্যতাটির অনেক নিদর্শন ই রয়েছে এই ল্যুভরে।ভাবতেই অদ্ভুত লাগে সেই মিশরীয়দের ব্যবহৃত প্যাপিরাস স্ক্রল,সেই আমলের যুদ্ধের অনেক অস্রশস্র,মিশরিয় মানুষের অনেক জুয়েলারি চাইলেই দেখতে পাওয়া যায় এই ল্যুভরে।সব চেয়ে ভাল ব্যাপার যেটা সেটা হল এইখানে গেলে আপনি মিশরের যে জিনিসটি সবার আগে দেখতে চাইবেন সেটিও পাবেন।হ্যাঁ মমির কথাই বলছি।চাইলেই খুঁটিয়ে দেখে নিতে পারবেন হাজার বছরের পুরনো প্রাচীন কোন রাজার মমি।ভাল কথা যারা সেই বিখ্যাত হাম্বুরাবির কোড দেখতে চান তারাও হতাশ হবেন না।
মিসরীয়দের হাম্বুরাবির কোড
২।ইস্টার্নঃ গ্রিক আর রোমান সভ্যতার অনেক নিদর্শন রয়েছে এখানে।ইউরোপিয়ান রেনেসাঁরও অনেক কিছুই রয়েছে এখানে।St Francis receiveing the stigmata, Pieta of Villeneuve les Avignon, Baltasar de Castiglione, The Fortune Teller ,john the Baptist সহ এইরকম আরও অনেক ইউরোপীয় মাস্টারপিছ রয়েছে ল্যুভরে।রয়েছে মাইকেল এঞ্জেলোর অনন্য সব কীর্তি।আর এইবার বলছি লিওনার্দো ডা ভিঞ্চির মোনালিসার কথা।সর্বকালের সেরা এই মাস্তারপিছ টি ল্যুভরের সবচেয়ে মুল্যবান সম্পত্তি।তবেঁ কয়েক বছরের মধ্যেই এটি চলে যেতে পারে অন্য কোথাও।কোথায়??সেটি পোস্টের শেষ দিকে বলছি।
গত শতাব্দীর শেষ দিকে ল্যুভর গ্রাউনডে একটি পিরামিড তৈরি করা হয়।কেন করা হয়েছিল এটি এখনো রহস্য প্রেমিদের কাছে বিরাট বিস্ময়ের ব্যাপার।তবে একটা বিশাল অংশ মানুষ মনে করে যে এই জায়গাটির নিচেই holy grail লুকানো আছে। holy grail এর সাথে যারা পরিচিত নন তাদের জন্য বলছি পৃথিবীর সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে এই holy grail.অনেকের মতে এটি হচ্ছে আমাদের নবী সুলায়মান অনেক কালো শক্তি আর উপাসনার নথি মাটির তলায় পুঁতে রেখেছিলেন,যেগুলোকে পৃথিবীর জন্য বিপদজনক জ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।তবে কালের বিবরতনে এগুলো নাইট টেম্পলারদের হাতে চলে যায় এবং অবশেষে এগুলোর জায়গা হয় এই ল্যুভরে।এটি নিয়ে দ্বিতীয় একটি মতবাদ ও প্রচলিত রয়েছে(ডেন ব্রাউনের ভিঞ্চি কোডের বদৌলতে এটি এখন পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত)।সেটি হচ্ছে খ্রিষ্টান ধর্মের কিছু সিক্রেট সোসাইটির মতে holy grail মানে স্বয়ং যীশুর বউ মাগদালিনের সমাধি।হ্যাঁ,চোখ কপালে উঠার মতই খবর।যেখানে আধুনিক বিশ্বে সবগুলো প্রচলিত মতবাদ আর ধর্মের মতে যীশুর বিয়ে করেনি।আর জামেলাটা ঠিক এই জায়গাই এসে।আসল ব্যাপারটা হচ্ছে যীশু বিয়ে করেছিলেন কিন্তু হাজার বছরের এই ইতিহাস কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠী নিজেদের প্রয়োজনে ইচ্ছেমত কাটাছেড়া করেছে।আর মেরি মাগদালিন কে ইতিহাসে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে একজন বেশ্যা হিসেবে।কিন্তু স্বয়ং নিউটন,বত্তিচেল্লি,ভিঞ্চি(যারা কিনা সবাই priory of sion নামে এক সিক্রেট সোসাইটির সদস্য ছিলেন) এরা তাদের বিভিন্ন কাজের মধ্যে প্রকাশ করে গিয়েছেন যে এই মাগদালিন ই যীশুর বৌ যিনি শুয়ে আছেন ল্যুভরের নিচে।ব্যাপারটা হজম করা একটু কষ্টেরই।
এইটাই সেই পিরামিড যার নিচে যীশুর বৌ মেরি মাগদালিনের সমাধি আছে বলে বিশ্বাস করা হয়।
Islamic art:খেলাফত আর ইসলামী স্বর্ণযুগের অনেক নিদর্শন ও রয়েছে ল্যুভরে। তখনকার প্রাত্যহিক জীবনের অনেক নিদর্শন,যুদ্ধের অস্ত্র সহ অনেক কিছুই রয়েছে।এমনকি ফেরদৌসির রচনা করা সাহানামার তিনটি পৃষ্ঠাও নাকি এখানে রয়েছে।অবাক করা বিষয় তো বটেই।
একটা সুখবর দিয়ে শেষ করি।ল্যুভর মিউজিয়াম করতিপক্ষ ২০০৭ সালে ঘোষণা দিয়েছিল আবু ধাবিতেও একটা ল্যুভর খোলার।২০১২ সালের মধ্যে এইটার কাজ নাকি শেষ হইয়া যাইব।তখন ল্যুভর থেকে অনেক মাস্টার পিছ ই মাঝেমধ্যেই এখানে আনা হবে।তখন মোনালিসাও নাকি ওখানে আসবে।
সবাই ভালও থাকবেন।