somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিপুণের দিনরাত্রী- শেষ পর্ব

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সারাদিন নিপুদের বাসায় মেহমান। সকালবেলাতেই হাজির হয়েছেন দুই ফুপু আর তাদের ছেলেমেয়ে, নাতি নাতনী, জামাই সহ মোটমাট তেইশ জন। পিকনিক পিকনিক অবস্থা। কিচেন থেকে মাকে হটিয়ে দিয়ে দুই ফুপুর দুই ছেলে-বৌ আর নিপুর সমবয়সী আরো গোটা দুই ননদিনীরাও লেগে গেলো রান্না বান্নায়।
দুপুরে সবাই মিলে মেঝেতে কার্পেটের উপরে পেপার বিছিয়ে খাওয়া হলো ড্রইংরুমে। অনেক দিন পর নিপুর মনে হলো সেই ছোট্ট বেলার দিনগুলোয় ফিরে গেছে সে।
দুপরে খাবার পর হারমোনিয়াম নিয়ে গান, তাস খেলা আবার বড় ফুপুর ছোট্ট পাঁচ বছরের পিচ্চি নাতনীটাও কিযে সুন্দর করে নাচ দেখালো! দিনটা একরকম হই হই করেই কেটে গেলো।

সন্ধ্যার পর সবাই চলে যাবার পরপরই হঠাৎ বাড়িটাকে নিঝুম পূরী মনে হতে শুরু হলো যেন। ঘরবাড়ি গোছগাছে মাকে হেল্প করে, রাতের খাবার শেষ করে নিপু ফোন দিলো রেহানকে।

-কেমন আছিস?
-ভালো
-কত ভালো?
-অনেক
-হুম
-কই ছিলি সারাদিন?
-হুম
- আরে কি হইসে? হুম হুম করিস কেনো?
-তো কি বলবো? তুমি যা বলতে আসছো বলো।
-কি বলতে আসছি?
- মানে টাইম পাস আর কি?
-মানে? কিসের টাইম পাস?
-এই যে সারাদিন ড্যাং ড্যাং করার পর এখন কাজ পাইতেসোনা তাই আসছো টাইম পাস করতে?
- মানে ? আমি টাইম পাস করি তোর সাথে?
- তাছাড়া কি?
- করো করো টাইম পাসই করো। এটাই আমার ভাগ্য। সবাই তাই করে। আমার জন্ম হইসে ইউজ হবার জন্য।
- ঐ কি আবোল তাবোল শুরু করসিস?
- যাইহোক। তৃষা ফোন দেয়নাই?
- দিসে। বাট দিলে তোর কি?
- কিছুই না। চোরাই না মানে ধর্মের কাহিনী।
-তার মানে তুই কইতে চাস যেন তৃষার সাথে কোনো লাইন না মারি?
- না কিছুই কইতে চাইনা তেমন।
_ ওহ ওকে। ডোন্ট ফরগেট, আই হেট ইউ।
- ওকে। ঠিক আছে। বুঝছি । বাই।
-কই যাস?
-ঘুমাবো এখন।
-না ঘুমাবি না।
-ঘুমাবোনা মানে?
- হুম ঘুমাবিনা।
- আমার সাথে বসে থাক।

- আহা সারারাত বসে বসে তোমার ভ্যান ভ্যান শুনি না?
- একটা কথা বলবিনা। চুপ করে বসে থাক।
- পারবোনা।
-তুই যা না তারপর দেখ আমি কি করি?
-কি করবি?
- গিয়েই দেখ।
- আচ্ছা তুই কি চাস বলতো?
- আমি চাই কাল ঠিক সকাল দশটায় তোর সাথে মুখোমুখি কিছু কথা বলতে। কাল ঠিক সকাল দশটার মধ্যে কফি ওয়ার্ল্ডের সামনে তোকে দেখতে চাই।
-কেনো? কি এমন জরুরী কথা? মুখোমুখি কথা কি আমাদের হয়না ?
- বেশী প্যাচাল পাড়বিনা। যাহ এখন ঘুমা।
হাসতে থাকে নিপু। বলে
-তুই কি বলতে চাস আমি মনে হয় জানি।
- ভালো । মাতবরী কম কর। যা বললাম তাই কর, কাল ঠিক সকাল সাড়ে দশটা । রাখতেসি, বাই।

সকাল থেকেই বেশ ফুরফুরা মেজাজে কেটে যায় নিপুর। রাতেই মাকে বলে রেখেছে আজ সকালে তার লাইব্রেরীতে কাজ আছে। মা অবশ্য চাচ্ছিলেন ওকে নিয়ে মেজোচাচুকে আজ হসপিটালে দেখতে যেতে। অনেক কষ্টে মাকে কাঁটিয়েছে নিপু। বলেছে 'বিকালে যাই না মা। এখন কাজ সেরে খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো তারপর নাহয় যাবো চাচুকে দেখতে। তুমি বরং এখন চাচুর প্রিয় ডিমের পুডিংটা বানিয়ে রাখো। চাচু তোমার হাতের পুডিং না কত পছন্দ করেন!"
এ কথা বলায় মাকে পটানো গেছে আরো ভালোমত। মনে মনে হাসে নিপু, মা টা এত লক্ষী। আসলে আজ সব কিছুই কেনো যেন খুব ভালো লাগছে ওর।

খুব যত্ন করে সেজেছে আজ নিপু। শাড়ী পরেছে। কপালে নীল টিপ। হাতে নীল চুড়ি, কানে নীলা পাথরের ছোট্ট ম্যাচ করা দুল আর ছোট্ট চৌকোনা লকেট। আয়নায় দাঁড়িয়ে হঠাৎ মনে পড়ে গেলো , কে যেন একবার তাকে নীলপরী বলেছিলো। নিজের মনে হাসলো কিছুক্ষন। সাদা ব্যাগটা হাতে নিয়ে ভাবলো একটা নীল ব্যাগ থাকলে মানাতো ভালো।
যাইহোক নাই যখন কি আর করা? সাদা ব্যাগটাই কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। রাস্তায় নেমেই ভাগ্যক্রমে রিকশা পেয়ে গেলো একটা। ভাঁড়া টাড়া না করেই উঠে বসলো তাতে। আজ কি কারণে যেন জ্যাম খুব একটা নেই। রিকসায় বসে মনে হলো ওর যেন হাওয়ায় ভেসে চলেছে সে।

বেশ দূর থেকেই দেখতে পেলো কফি ওয়ার্ল্ডের সিড়িটার সামনে দাড়িয়ে আছে রেহান। ঠিক তখনি এক গাল দাঁত দেখিয়ে রিকশাওয়ালা রিকশা থামিয়ে দিলো
-চাক্কা পাংচার হয়ে গ্যাছে আপা।
- ওকে ঠিক আছে। এই নেন ভাড়া।

রাস্তার ওপাশেই দাঁড়িয়ে আছে রেহান। নিপু আজ হাওয়ায় ভাসছে। সত্যি তার পিঠে যেন লাগানো রয়েছে দুটো পাখা। ভেসে যাচ্ছে নিপু ....


রেহান অপলক তাকিয়ে আছে। নীলশাড়ি পরা মেয়েটাকে মনে হচ্ছে স্বর্গ থেকে নেমে রাস্তা পেরিয়ে হেঁটে আসছে কোনো এক পরী। এক সেকেন্ডের মাঝে কোথায় যে হারিয়ে গেলো মনটা!
হঠাৎ তীব্র তীক্ষ্ণ গগন বিদারী এক আর্ত চিৎকার আর সাথে যান্ত্রিক ভয়াবহ গর্জনে পুরো স্বপ্নটাই চোখের নিমিষে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। রেহানের পায়ের তলে দুলে উঠলো পুরো পৃথিবীটা।
নীলপরীটা ওর চোখের সামনেই এক মুহুর্তে টকটকে লাল রক্তবর্ণের মাংসপিন্ডে পরিনত হলো। রেহান নিজেকে নির্বাক আবিষ্কার করলো নিপুর পাশে।

নিপূ বিস্ফারিত চেয়ে আছে ওর দিকে। ওকে দেখে ঠোট দুটো একটু নড়ে উঠলো, হাসতে চাইলো হয়তোবা একটু, পরিচিত সেই হাসি। ঠোঁটের কোনে জমে থাকা সেই পরিচিত অভিমানটুকুও রয়েছে তাতে। বার দুয়েক ঠোঁটদুটো আবারও কেঁপে কেঁপে গেলো। হয়তো জানতে চাইলো কি বলতে চেয়েছিলি রেহান? কেনো আমাকে ডেকেছিলি ? তারপর চোখদুটো বুজে ফেললো খুব ধীরে। মুখে লেগে রইলো রহস্যময় অজানা এক হাসি। নিপু কাল বলেছিলো, তুই কি বলতে চাস আমি মনে হয় জানি।



সাতটা বছর ! শুনতে অনেকটা সময়। অনেকগুলো দিন। অনেকগুলো মাস। অথচ রেহানের মনে হয় এইতো সেদিন। নিপুর ব্যাবহারের সেই ছোট্ট লালরঙের ফুলফুল সেলটার ফুলগুলো অস্পষ্ট হতে চলেছে প্রায়। এই সাত বছরের প্রতিটা দিন আর রাতে রেহান কল দেয় নিপুকে। নিপুর ফোন ক্লান্ত গেয়ে চলে ....
http://www.youtube.com/watch?v=-whp15J2n_M
নিপুর সেই চিরাচরিত অভ্যাস রেহান যখন কল দেবে জীবনে উনার কানে যাবেনা। একঘন্টা পরে এসে হে হে করে বলবে, ফোনটা না ব্যাগে ছিলোরে। শুনতে পাইনি? হয়েছে কি....
রেহান আধা শুনেই চিল্লাতে শুরু করবে ... তা কানে যাবে কেনো? নবাবজাদী...আচ্ছা মানুষ ফোন রাখে কেন বলতো? ব্যাগে সাজাই রাখার জন্যে.... .....


হা হা হা নিজের মনে হাসতে থাকে রেহান। নিপু আর কখনও ফোন ধরেনা। ভুল করেও ওর আর মনে পড়েনা ভুল করে ফোনটা ফেলে গেছে সে এই মাটির ধরিত্রীতে।
আকাশের তারাগুলো মনে হয় এই সাত বছরে সবগুলো গুণে ফেলেছে রেহান। তবুও খুঁজে পায়নি ঠিক কোন তারাটার মাঝে লুকিয়ে আড়াল থেকে ওকে দেখছে পাগলী দস্যি মেয়েটা।

প্রচন্ড রাগ লাগে রেহানের। নিস্ফল এক আক্রোশ ! ঠিক কার উপর বুঝতে পারেনা সে। আর তাই সবশেষে নিপুকেই দোষ দেয় ।
-আই হেট ইউ, আই হেট ইউ নিপু।
আই হেট ইউ আই হেট ইউ আই হেট ইউ আই হেট ইউ আই হেট ইউ আই হেট ইউ ..........নিসঙ্গ রাতের আকাশে প্রতিধ্বণী হয়ে ফেরে সেই ধিক্কার।

প্রতি রাতে ওর রাত জাগার সঙ্গী হয় একমাত্র পুরনো বন্ধু গান ......
বেওয়াফা ও বেওয়াফা.....
ক্যায়সে হো তুম.......
জিয়া যায়না.......
http://www.youtube.com/watch?v=UWbtPUGgPOE


শেষ।
নিপুণের দিনরাত্রী-১

নিপুণের দিনরাত্রী-২

নিপুণের দিনরাত্রী-৩ ও ৪


সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৫১
১৭৬টি মন্তব্য ১৮০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×