বেশ কিছুদিন যাবৎ বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে দেখছি নয় মাত্রার ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হবে বাংলাদেশ । গণমাধ্যমগুলোর এই খবর ভাবিয়ে তুলছে আমাদের সবাইকে। যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল স্টেকলারের তত্বাবধানে করা গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে করা খবরে বলা হয়, গত চারশ বছর ধরে শক্তি জমা হচ্ছে বাংলাদেশ নামক বদ্বীপের নীচে। এই শক্তির বিস্ফোরণে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে যেকোন সময়।
যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিবদেনে বের হয়ে এসেছে নতুন ফল্টলাইন। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যাওয়া এই ফল্টলাইনের কারণে বড় মাত্রার ভূমিকম্প কেন্দ্রস্থলই হবে বাংলাদেশ। যার ফলে ক্ষতির মুখে পড়বে প্রায় ১৪ কোটি মানুষ। তবে বিশেষজ্ঞরা জানান, নতুন এই ফল্টলাইনে ভূমিকম্পের ইতিহাস না থাকায় এনিয়ে এখনই আতংকিত হবার কিছু নেই।
এই গবেষক দলের অন্যতম সদস্য সৈয়দ হুমায়ূন আখতার এর মতে, ২০০৩ সাল থেকে প্রায় ১২ বছরের তথ্য পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতদিন সীমান্তবর্তী এলাকায় দুটি ফল্ট লাইনের কারণে ভূমিকম্প ঝুঁকি কথা জানা গেলেও এখন এই লাইন বা সাবডাকশান জোন দেশের মাঝ বরাবর অবস্থান করছে। তবে পুঞ্জীভূত এই শক্তি একবারে বড় ভূমিকম্প আকারে বের হবে, নাকি ছোট ছোট ভূমিকম্পের মাধ্যমে বের হবে সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত নয় গবেষক দল। আশার কথা হলো, নতুন করে যে ফল্ট লাইনের কথা বলা হচ্ছে সেখানে হাজার বছরেও ভূমিকম্পের ইতিহাস নেই।
এই আশঙ্কা সত্যি হলে শত প্রস্তুতি নিয়েও ক্ষতি থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই। রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হলে ঢাকায় কয়েক লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটতে পারে। ভেঙে পড়তে পারে ৫০ শতাংশ বাড়িঘর। অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দু’লাখের বেশি।
যে কোন সময় একটি বড় ভূমিকম্প আঘাত হানলে আমাদের কী হবে? আমরা কতটুকু প্রস্তুত? এখনো আমাদের দেশে ভূমিকম্প পূর্বভাষ কেন্দ্র স্থাপন করা হয় নি। আধুনিক সিসমোগ্রাফ নেটওয়ার্ক নেই।ফলে ভূমিকম্প হবার পর আমেরিকার USGS এর ওয়েব সাইটে গিয়ে নিজ দেশের ভূমিকম্পের খবর নিতে হয়। ভূগোল-ভূতত্ত্ব বিষয়ের লোকের বদলে পদার্থবিজ্ঞানী বা পরিসংখ্যানবিদ দিয়ে ভূমিকম্প মাপমাপি করলে এমনটাই হবার কথা। কাজেই ভূমিকম্পের মত প্রলয়ংকরী প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ে জাতীয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে বিষয় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের এর দায়িত্বে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া এই মূহূর্তে সবচেয়ে জরুরী কাজ।
ভূমিকম্প পূর্ব প্রস্তুতিঃ
আপনি নিজেকে, আপনার পরিবার ও আপনার সম্পদ ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করতে নিচের ভূমিকম্প করনীয় পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারেন…
১। পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে প্রথমেই কিছু জরুরি সরঞ্জমাদি তৈরি বা সংগ্রহ করুন এবং তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করুন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা করুন।
২। ঘরের ভারী আসবাবপত্রের ব্যাপারে সচেতন হোন। ঘরের আলমারি, শোকেইস, ওয়ারড্রব কিংবা এরকম ভারী আসবাবপত্র যেন সহজে ঘরের মাঝামাঝি হেলে না পরে সেই ব্যবস্থা নিন। অর্থাৎ, ভারী আসবাবপত্র দেয়ালের সঙ্গে যথাসম্ভব দৃঢ় করার পদক্ষেপ নিন। আসবাবপত্রের উপরে রাখা ভারী বস্তু (যেমন- ব্রিফকেইস ইত্যাদি) সড়িয়ে ফেলুন। আলমারি বা শেলফের ভেতরে থাকা ভারী বস্তুগুলোকে অপেক্ষকৃত নিচের ড্রয়ার বা পাল্লা বা তাকে রাখার চেষ্টা করুন।
৩। ভঙ্গুর সামগ্রী (যেমন- কাচ বা সিরামিকের বাসন, গ্লাস, প্লেট, বোতল, জার ইত্যাদি) শেলফ বা শোকেইসের নিচের দিকে অথবা বন্ধ কেবিনেটে রাখার চেষ্টা করুন। দেয়ালে ঝুলানো ভারি জিনিসপত্র (যেমন- বাঁধাই করা ছবি, আয়না) দেয়ালের সঙ্গে শক্ত করে এঁটে দিন। এগুলো এমন দূরত্বে রাখার চেষ্টা করুন, যেন বিছানা, চেয়ার বা এমন জায়গা যেখানে ঘরের মানুষ বেশি সময় অবস্থান করে, তার কাছাকাছি না থাকে। ঘরের বাল্ব, ঝাঁরবাতি, বৈদ্যুতিক পাখা বা অন্যসব ভারী ও ঝুঁকিপূর্ণ সামগ্রী শক্তভাবে আটকানো হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
৪। বাড়ির আভ্যন্তরীন বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ হলে তার সংস্কার করুন। কারণ এগুলো থেকে ভূমিকম্প পরবর্তী অগ্নিকাণ্ডের সুযোগ থাকে। যথাযথ পেশাদার ব্যক্তিদের পরামর্শ নিন। আপনি অভিজ্ঞ না হলে নিজে থেকে গ্যাস বা বৈদ্যুতিক লাইনে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকুন। বাড়ি তৈরির সময় পানি বা গ্যাসের লাইনে নমনীয় পাইপ ব্যবহার করুন। নমনীয় ফিটিংস ভাঙনের সময় সর্বোচ্চ বাঁধা প্রদান করে। বাড়ির ওয়াটার হিটার, রেফ্রিজারেটর (ফ্রিজ), চুলা নিরাপদ অবস্থানে রাখুন। পারলে এগুলোকে দেয়াল ও মেঝের সঙ্গে শক্তভাবে আটকানোর পদক্ষেপ নিন। ভূমিকম্প করনীয় সম্পর্কে নিজে সচেতন হোন, অন্যদেরও সচেতন করুন।
৫। আপনার ভবনের ঘরের ছাদ, দেয়াল বা পিলারে ফাটলের চিহ্ন থাকলে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং পেশাদার বা অভিজ্ঞদের পরামর্শ বা সহযোগীতা নিন। বাড়িতে বসবাসকারীরা ভবনের ফাউন্ডেশনের উপর আস্থাশীল কিনা তা নিশ্চিত করুন। প্রয়োজন হলে মেরামত বা পুনরায় নির্মানকাজ সম্পাদন করুন। সম্ভব হলে ঝুঁকিপূর্ণ বাড়ি-ঘর ত্যাগ করুন। কারণ ভূমিকম্প ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ ধরণের ভবনই প্রথম ক্ষতির শিকার হয়।
৬। তেলাপোকা, ইদুর, মশা মারার ঔষধ বা কীটনাশক নিরাপদ দূরত্বে বা বন্ধ কেবিনেটে রাখুন।
৭। আপনার ঘরের প্রতিটি রুমের নিরাপদ স্থান (যেমন- শক্ত টেবিল বা খাটের নিচ ইত্যাদি শনাক্ত করুন এবং চিহ্নিত স্থানগুলো পরিবারের সবাইকে জানিয়ে দিন।
৮। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কিছুদিন পর পর দূর্যোগকালীন মহড়ার আয়োজন করুন। আপনি আরো উদ্যোমি হলে পাড়া-মহল্লায় প্রতিবেশিদের নিয়ে সচেতনতামূল মহড়ার আয়োজন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি প্রয়োজনে ‘বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস বা সিভিল ডিফেন্স’ এর সহযোগীতা নিতে পারেন। তারা কমিউনিটি লেভেলে দুর্যোগ ব্যবস্থান মহড়া বা প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকেন।
ভুমিকম্প হলে করনীয়ঃ
১। ভূমিকম্পের সময় আত্মরক্ষার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ‘ড্রপ, কাভার, হোল্ড অন’পদ্ধতি। এতে তিনটা বিষয় মাথায় রাখলেই হবে। কম্পন শুরু হলে মেঝেতে বসে পড়ুন (ড্রপ), তার পর কোনো শক্ত টেবিল, ডেস্ক বা নিচে জায়গা আছে এমন শক্ত ও দৃঢ় আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন (কাভার)। সেখানে গুটিশুটি হয়ে বসে থাকুন (হোল্ড অন)।
২। সম্ভব হলে দ্রুত ভবন থেকে বেরিয়ে পড়ুন। লিফট ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ ভূমিকম্পের পর পরই আবারও কম্পন হতে পারে, যা ‘আফটার শক’বা পরাঘাত। তাছাড়া বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটতে পারে। তখন লিফট হয়ে উঠবে মরণফাঁদ। সিঁড়ি ব্যবহার করুন বেরিয়ে আসতে। কিন্তু ভুল করেও সিঁড়িতে আশ্রয় নেবেন না। ভবন ধসে পড়লে সবার আগে সিঁড়ি ধসে পড়ার শঙ্কাই বেশি। তাড়াহুড়ো করবেন না। যথাসম্ভব মাথা ঠান্ডা রাখুন। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ভূমিকম্পের কারণে মানুষের মনে দেখা দেওয়া আতঙ্ক থেকে হুট করে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়া, তাড়াহুড়ো করতে দিয়ে পদপিষ্ট করায় আহত ও নিহতের সংখ্যা বেশ উল্লেখযোগ্য।
৩। ভবন ধসে পড়ার সময় ছাদ ধসে পড়লে সেটা যার ওপরে পড়ে, ঠিক তার পাশে একটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। উদ্ধারকর্মীরা একে বলেন ‘সেফটি জোন’বা ‘নিরাপদ অঞ্চল’। তাই ভূমিকম্পের সময় সোফা বা এ ধরনের বড় শক্তিশালী আসবাবের পাশে গুটিশুটি মেরে বসে থাকুন।
৪। এসব করা সম্ভব না হলে চেষ্টা করবেন ভবনের এমন কোনো দেয়ালের পাশে নিয়ে আশ্রয় নিতে, যে দেয়ালটি বাইরের দিকে। যেন সেই একটি দেয়াল ভেঙে আপনাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। আশ্রয় নেওয়ার সময় মাথার ওপর এক বা একাধিক বালিশ নিয়ে রাখবেন। মাথার চোট বাঁচানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৫। ঘরের কোণে এবং কলাম ও বিমের তৈরি ভবন হলে কলামের গোড়ায় আশ্রয় নিতে পারেন। ছাদের তুলনায় নির্মাণের দিক দিয়ে এগুলো তুলনামূলক বেশি দৃঢ়।
৬। আধা পাকা বা টিন দিয়ে তৈরি ঘর থেকে বের হতে না পারলে শক্ত খাট বা চৌকির নিচে আশ্রয় নিন।
৭। আপনি ভবনের উঁচু তলার দিকে থাকলে কিংবা ভূমিকম্প রাতে হলে দ্রুত বের হওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভবনের ভেতরে আশ্রয় নেওয়ার ওপরের নির্দেশনা মেনে চলুন।
৮। গাড়িতে থাকলে যথাসম্ভব নিরাপদ স্থানে থাকুন। আশপাশে বড় ভবন নেই এমন জায়গায় গাড়ি পার্ক করতে পারেন। কখনো সেতুর ওপর গাড়ি থামাবেন না।
৯। ভূমিকম্পের পর পরই গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগগুলো পরীক্ষা করে নিন। ভূমিকম্পের ফলে এসব সংযোগে সমস্যা হতে পারে। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের প্রধান সংযোগগুলো বন্ধ করে দিন। কোথাও কোনো লিক বা ক্ষতি দেখলে অভিজ্ঞ মিস্ত্রির সাহায্য নিন।
১০। টাকা বা অলঙ্কারের মতো কোনো কিছু সঙ্গে নেওয়ার জন্য অযথা সময় নষ্ট করবেন না। মনে রাখবেন, জীবনটাই সবচেয়ে বড় সম্পদ। অধিকাংশ ভূমিকম্পই মাত্র কয়েক সেকেন্ডে ভয়ংকর সর্বনাশ ঘটিয়ে দেয়।
১১। বড় ভূমিকম্পের পর পরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প (আফটার শক) হয়। তাই একবার ভূমিকম্প থেমে গেলেই নির্ভার হবে না। সতর্ক থাকুন, সাবধান থাকুন।
১২। যদি ভবন ধসে আটকাও পড়েন, বেরিয়ে আসার কোনো পথ খুঁজে না পান, আশা হারাবেন না। সাহস রাখুন। সাহস আর আশাই আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। উদ্ধারকারী পর্যন্ত আপনার চিত্কার বা সংকেত পৌঁছানো যায় কী করে, ভাবতে থাকুন। ২০০৫ সালে পাকিস্তানে ভূমিকম্পে আটকা পড়া নকশা বিবি ৬৩ দিন ধ্বংসস্তূপের নিচে বেঁচে ছিলেন। রানা প্লাজা ধসের ১৭ দিন পর রেশমাকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে তেজগাঁওয়ে ফিনিক্স ভবন ধসের ১২০ ঘণ্টা পর নিখিল নামের একজনকে উদ্ধার করা হয়।
ভূমিকম্প পরবর্তী পদক্ষেপঃ
১। ভূমি কম্পন বন্ধ হলে চারিদিকে তাকিয়ে নিশ্চিত হোন, বের হওয়া নিরাপদ কিনা। এরপর ভবনের ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসুন। আফটারশকের (মূল ভূমিকম্পের পরে মৃদু বা তুলনামূলক কম শক্তিশালী কম্পন) জন্য প্রস্তুত থাকুন। এ ধরণের কম্পন তুলনামূলক কম শক্তিশালী হলেও ক্ষয়ক্ষতি সৃষ্টি করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী। তাছাড়া, প্রথম ভূমিকম্পে নাজুক অবকাঠামোগুলোতে হালকা বা মৃদু ঝাকুনিতেও বড় ক্ষয়ক্ষতি ঘটতে পারে। আফটারশক প্রথম ভূমিকম্পের পরের ঘন্টায়, দিনে, সপ্তাহে, এমনকি পরের মাসেও ঘটতে পারে।
২। আপনি সুস্থ্য থাকলে আটকে যাওয়া বা আহত ব্যক্তিদের সহযোগীতা করুন। আপনার আশেপাশে বসবাসরতদের মধ্যে শিশু, বৃদ্ধ ও যাদের বিশেষ সহযোগীতার প্রয়োজন তা পূরণে সাহায্য করুন। প্রয়োজন হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিন। মারাত্মকভাবে জখম হওয়া ব্যক্তিরা যেন নড়াচড়া কম করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। তবে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় থাকলে যথাশিগ্রই সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া অন্যদেরও সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
৩। ভূমিকম্পের পর অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে পারে, এমন জিনিসপত্র খুঁজে বের করুন। মনে রাখবেন, ভূমিকম্পের পর অগ্নিকাণ্ড আরেকটি বড় দুর্যাগ।
৪। জরুরি তাৎক্ষণিক তথ্য জানতে ব্যাটারি চালিত রেডিও বা টেলিভিশন সংবাদ শোনার চেষ্টা করুন।
৫। উপকূলীয় এলাকা বসবাস করলে, ভূমিকম্প পরবর্তী সুনামির জন্য বাড়তি সতকর্তা গ্রহণ করুন। তাই উপকূল বা সৈকত থেকে যথাসম্ভব দূরে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করুন।
৬। শুধুমাত্র জরুরি কল করার জন্যই মোবাইল ফোন ব্যবহার করুন। এ সময় আপনার মোবাইলের ব্যাটারি, ব্যালেন্স ও নেটওয়ার্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৭। আপনার বাড়ি বিধ্বস্ত হলে বা অনিরাপদ মনে হলে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিন। ভূমিকম্প করনীয় সম্পর্কে নিজে সচেতন হোন, অন্যদেরও সচেতন করুন।
৮। ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। তবে ঐ এলাকায় আপনার সহযোগিতার প্রয়োজন হলে, অবশ্যয়ই নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, ত্রান ও উদ্ধারকারী সংস্থার সহযোগীতা নিন, তাদেরকেও সহযোগীতা করুন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরাপদ বলে ঘোষণা করার আগ পর্যন্ত ঘরে না ফেরাই উত্তম।
৯। ভূমিকম্পের পরে গাড়ি চালানোর সময়ও অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন।
১০। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরাপদ বলে ঘোষণা করলে ঘরে ফিরে আসুন। সেক্ষেত্রে বাড়ির ভারী আসবাবপত্রগুলোর প্রতি আবারো সতর্কতা অবলম্বন করুন। কারণ, ভূমিকম্পনের ঝাঁকুনিতে সেগুলোর ভিত নড়ে যেতে পারে। তাই যেকোন মুহূর্তেই সেগুলো দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
১১। বাসাবাড়ি পরিষ্কারের সময় নিরাপত্তা গ্লাভস ব্যবহার করুন।
১২। মেঝেতে কোথাও দাহ্য পদার্থ পড়ে আছে কিনা তা খুঁজে দেখুন। একটু অসাবধানতায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।
১৩। গ্যাস লাইনে কোথাও লিক আছে কিনা খুঁজে দেখুন। গন্ধ শুঁকে, শিসশিস শব্দ শুনে আপনি তা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। এমন কিছুর অস্তিত্ব বুঝতে পারলে রান্নাঘরের জানালা খুলে দিন এবং ভবন থেকে বেড়িয়ে আসুন। বাড়ির নিচের গ্যাসের মেইন সুইচ বন্ধ করে দিন। এরপর গ্যাস সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। গ্যাসের লাইন চালু করার পেশাদার ব্যক্তির সাহায্য নিন।
১৪। বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ঠিক আছে কিনা তাও পরীক্ষা করুন। এক্ষেত্রে স্পার্ক বা আগুনের ফুলকি, ছেঁড়া তার, পোঁড়া গন্ধ পেলে বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দিন। মেঝেতে পানি থাকলে তা এড়িয়ে চলুন এবং পেশাদার ব্যক্তির সাহায্য নিন।
১৫। একই সঙ্গে পানির লাইনের ক্ষয়ক্ষতিও নিরূপন করুন। এক্ষেত্রেও পেশাদারদের সাহায্য নিন।
ভূমিকম্পে ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়লে করনীয়:
১। ম্যাচ বা দিয়াশেলাই ধরানো থেকে বিরত থাকুন।
২। ভেতরের ধ্বংসস্তুপ ধাক্কাধাক্কি করা থেকে বিরত থাকুন।
৩। মুখে কাপড় বা রুমাল দিয়ে ধুলা বালি থেকে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুন।
৪। হাতের কাছে পাইপ বা লাঠি বা রড থাকলে দেয়ালে আঘাত করে শব্দ করুন। এতে করে উদ্ধারকারী দল কাছাকাছি থাকলে আপনার অবস্থান বুঝতে পারবে এবং আপনাকে উদ্ধার করতে পারবে। চিৎকার চেচামেচি করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে ধুলা আপনার শ্বাসনালীতে প্রবেশ করতে পারে। তবে উদ্ধারকারী প্রশ্ন করলে যথাযথভাবে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করুন। ভূমিকম্প করনীয় সম্পর্কে মানুষের কমন সেন্স সবচেয়ে সেরা কৌশল হতে পারে। তাই মাথা ঠাণ্ডা রাখার মানসিকতা তৈরি করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৮