এই গল্পোটা হিমুর ছায়া অবলম্বনে লিখবো বলে ভেবেছিলাম, কিন্তু লিখার পর দেখলাম কোনোভাবেই হিমু ছাড়া এটা কম্পলিট করা সম্ভব না। তাই হিমুর নামেই লিখলাম। জনাব হুমায়ুন আহমেদ স্যার , আমি আপনার অনেক বেশী বড় ভক্ত, আমি হিমুকে বিকৃত করার জন্য নয় , বরং ভাল্লবেসি লিখেছি। দয়া করে এই গল্প না পড়লেও, কেউ বললে বা স্বপ্নে দেখলেও ক্ষমা করে দিবেন।
১)
ওয়াক থু !!!
বেইলীরোডের এই ডাস্টবিনটা সৃষ্টির আদি থেকে দেখতে দেখতে বড় হয়েও এর সাথে অভ্যস্ত হতে পারে্নি হিমু। হেল্ভেশিয়ার নীচে আজও তাই তার পেটে পাক দিয়ে উঠে পঁচা কাঠাল আর ডাল মাখানো পচা ভাতের গন্ধে । হিমু’র বাবা মৃত বলে হিমু কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেল।জাগতিক সকল কিছুর প্রতি আসক্তি দুরীকরনের জন্য হিমুকে বিশেষভাবে ট্রেনিং যেমন দেয়া হয়েছে, ঠিক তেমনি সকল ঘৃন্য বস্তুর প্রতিও কৃত্রিম তবে আবেগ্ময় ভালোবাসা ফুটিয়ে তোলার জন্য ট্রেনিং দেয়াতেন। হিমু সিউর, আজকে বাবা থাকলে তাকে এই ময়লা ও মাছি যুক্ত পঁচা কাঠাল ভাতের নলার মতো করে খেতে হতো।
পিছন থেকে কোন বলদ( বলদিনীও হতে পারে) যেনো হঠাত করে দু’ চোখে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো – “বলতো কে?” চোখে হাত দিলে কিভাবে বলবো তুই কে ! বলদ নাকি !!
- “আপনি হিমুর খালা, মাজেদা খালা“ । বলে হিমু ফিরে তাকালো।
- ও মা! এই ছেরা, তুই কে?
- আমি হিমু।
- ফাইজলামী করিস? এক চটকানা দিয়ে তোর কলিজা খুলে ফেলবো ! হিমু কই?
- আমিই হিমু !
- তাইলে আমি কে?
- আপনি হিমুর খালা !
- আমার ভাইগ্না কই?
- খালা ! আপনি ভুল করেছেন। হুমায়ুন আহমেদ স্যারের সব হিমু তো এক না ! একেক বইয়ে একেক হিমুকে নিয়ে লিখে। এটা বুঝেন না কেনো? এই বার আমাকে নিয়ে লিখেছেন।
- আমার ভাইগনাকে খুজে বের কর, নাইলে হিমুর খালুকে ডেকে তোকে হাজতে ভরবো। তুই আমার সাথে রসিকতা করিস? কোথাকার কোন হনুমান আহমেদ না কি , সে আবার কারে নিয়া কি বালের গল্প লিখে। আমারে শুনাস সেই কথা !
অবস্থা বেশী খারাপ দিকে চলে যাচ্ছে দেখে হিমু বললো – “খালা , আমি টেলিপ্যাথিক উপায়ে “হলুদ হিমু কালো র্যা ব” উপন্যাসের হিমু ভাইকে আপনার কথা বলেছি। উনি আজ সন্ধ্যায় আপনার সাথে টিএসসিতে দেখা করবেন বলেছেন।
- এত্তো কিছু বুঝিনা। তুই আগে পাঞ্জাবী খোল। এটার আমার ভাইগনার ট্রেডমার্ক করা পাঞ্জাবী।
হিমু খুলি বলেই দিলো দৌড়। এক দৌড়ে ভিকারুন্নিসার সামনে !
“এই দেখ দেখ ! ওই যে হিমু !!”
“ওয়াও !! হাউ হ্যান্ডসাম !!! পুররা রানবীর কাপুরের মতো চক্লেট বয় !”
হিমু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুঞ্ছিলো , পিছন থেকে হঠাত কদম্বুসি করা শুরু করে দিলো।
- হিমু ভাই , পা টা তুলেন , কাদা লাগছে, পইষ্কার কইরা দেই।
- হোই মিয়া ! আমার পা ধরছো, সাহস তো কম না ! জানো, আমি কে ?আমার খালুরে চেনো ?
- হিমু ভাই, আমি মইত্যা !! মইত্যা ভিডিউ !! চিঞ্ছেন?
- ও , কেমন আছো মইত্যা? তোমার ভিডিউ এর ব্যাবসা কেমন চলে?
- ওইডি বাদ দিয়া দিছি , আমি এই দিক দিয়া কলেজের মাইয়াগো ভিডিউ ক্লিপ বাইর করি, ওই দিক দিয়া আমার বৌ এর ৪টা সিডি বাইর হয়া গেসে ।
- বাহ ! তো ডিভিডি নাকি ভিসিডি ? ব্লু প্রিন্ট থাকলে দিও তো !
- হিমু ভাই, আপনেও? আমি এইসব ছাইড়া দিসি। এখন হিন্দী সিরিয়ালের ব্যাবসা করি। মাইয়ারা এইডা ভালা খায় !
- তাই নাকি? কোন দিক দিয়া খায় ?
বলেই হিমু বুঝলো কথাটা অশ্লীল হয়ে গিয়েছে। তাও আবার , মেয়েদের কলেজের সামনে দাড়ানোই এখন টাফ ব্যাপার , পুলিশ থাকে অল্টাইম। টু-পাই এক্সট্রা কামাই করনের জন্য লুঙ্গী-জাঙ্গীয়া কাছা বেধে এখন এরা ইভ-টিজিঙ্গের বিরুদ্ধে নেমেছে।
২)
মইত্যা হিমুকে নিয়ে কেএফসিতে ঢুকলো। সে কী দৃশ্য রে বাবা! হাটু প্রদর্শঙ্কারী লাল ফর্সা মেয়েগুলা কি সুন্দর করে যে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে চিকেন খাচ্ছে , এ এক অভূতপুর্ব দৃশ্য! মলয় চৌধুরী এই দৃশ্য দেখলে কি লিখতেন ভেবেই হিমু আতিপাতি করে টয়লেট খুজতে লাগ্লো !
“এই হিমু !“
- কেমন আছো তিতির?
- ভালো। তুমি , তাও এইখানে? হুমায়ুন আহমেদ কি হিমু লিখার ফরম্যাট ভুলে গেছে নাকি !! তুমি থাকবে রাস্তায় রাস্তায় , ফকিরদের সাথে কাঙ্গালী-ভোজ খাবে। এইখানে তুমি, অবিশ্বাস্য !
- আসলেই ! এইটা হইলো বড়লোকের পুলাপানদের লদ-লদকি করার যায়গা।হাড্ডি দিয়ে তো মনে হয় ডিলডো বানানো হয় এইখানে, তাইনা? তো তুমি কার সাথে লদকাইতে আসছো?
- তোমার মুখ পুরাই নাপাক হিমু।
- তোমাদের শরীরটাই নাপাক তিতির।
মইত্যা এতোক্ষন তিতিরকে দেখছিলো। তার খুব কষ্ট লাগলো, কেনো তিতিরকে নেয়ার আগে সে ভীডীউর ব্যাবসা বন্ধ করে দিলো! ইশ, “তিতির এর ঝাল মশল্লা” ভিডিওটা বের হইলে আজকে মইত্যার নাম পর্ণ ইন্ডাস্ট্রির টপ ডিরেক্টরদের সাথে থাকতো!
- হিমু ভাই।
- কি?
- তিতির আপা কি , মানে ইয়ে আর কি , মানে ……
- ইউটিউবে সার্চ দে, পাবি।
দাঁত সব বের হয়ে গেলো মইত্যার !
৩)
মাজেদা খালা ৫টায় টিএসসিতে রাজু ভাস্কর্যের নিচে বসে ভাবতে থাকেন নতুন হিমুকে নিয়ে। এই যে এইভাবে হিমু বাড়তেই আছে, এক হিমুর যন্ত্রনাতেই তার জীবন যায় যায় প্রায় , এত্তো হিমু যে প্রোডাকশন হইতেসে , এগুলার কি হবে? প্রাইমারী অবস্থায় তো এক্সপোর্টও করা যাবেনা !
- খালা , ২০টাকা দাওতো!
- তুই? তুই এইখানে কি করিস?
- বলতেসি, আগে ২০ টাকা দাও।
- ক্যান? বেন্সন খাবি?
- হুম।
২০টাকা দিয়ে সে ১টা চিমটা কিনল। খালা কয়েক হাজার বার চিমটার কথা জিজ্ঞেস করেও কিছু বুঝলোনা, শুধু বুঝলো চিমটা দিয়ে বিচি টাইপের কিছু ১টা বের করবে।
- হিমু , ওই ছেরাটা কে?
- ওই ছেরাটা হিমু।
- তুই হিমু , ওইটাও হিমু?
- জ্বি ।
- মানে কি?
- তুমি কি হিন্দু নাকি খৃষ্টান ?
- কি বলিস! আমি ঈমান-আকীদা মান্য করা মুসল্মান ! আমার নাম মোসাম্মত মাজেদা খানম। বিয়ের পর মাজেদা জোয়ার্দার হয়েছে।
- তুমিও মুসল্মান ওই চিতই পিঠা বানাইতেসে যে মহিলাটা, সেও মুসল্মান। বুঝাতে পারসি?
- হুম্ম। বাসায় চল।
- কেনো ? বাদল এর বৌ রাগ করেছে?
- বাদল বিয়ে করছে এই খবর তোকে কে দিলো?
- কেউ দেয় নাই। রাগ করেছে কেন?
- এত্তো কিছু জানিস যখন এইটাও নিশ্চই জানিস !
- জানি তো। কিন্তু ওইটা তো বাদল রাত এ অন্যদিক হয়ে ঘুমায় বলে রাগ হইসে। তোমার কাছে কি বলেছে, রাগ করেছে কেনো?
- এ মা! বাদল বৌ কে রেখে অন্য দিক হয়ে ঘুমায়?
- শুধু তাই? ওর বৌ এক সপ্তাহ ধরে কন** কিনতে বলে তাও কিনেনা। একটা মেয়ে কতোটা বাধ্য হইলে মুখ খুলে এই কথা বলতে পারে?
- (প্রচন্ড মন খারাপ করে) হিমু, তুই চলে যা। বাসায় যাওয়া লাগবেনা। আর আমার সাথে তোর এই সব কথা হয়েছে বাদল যেনো না জানে।
- আচ্ছা। খালা, দোয়া করো আমার জন্য , ১টা অপারশন এ নেমেছি। অপারেশন টর্চলাইট ! সাক্সেস্ফুল হতেই হবে।
খালা তার প্রাডো দিয়ে চলে গেলো।
চলবে..................
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:২৫