বাংলাদেশ এখন আর এমন কোনো অবস্থায় নেই যে "সম্মানজনক পরাজয়" নামক শব্দটার ভিতর আত্মতৃপ্তি খুজবে ৷ কিন্তু কাল সাকিবের টসে জিতে বোলিং নেয়ার মত চরম রক্ষনাত্মক সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে যেন আবার তিন-চার বছর আগের সেই বাংলাদেশী প্লেয়ারদের মেন্টালিটি খুঁজে পেলাম ৷ যার মূলকথা হলো,আগে বড় দল ব্যাটিং করে একটা বড় স্কোর দাড় করাবে তারপর তাদের ঢিলেমীর সুযোগ নিয়ে কিছু রান করে একটা সম্মানজনক পরাজয়ের আত্মতৃপ্তি ! রাত ৩.৩০ এ ঘুম থেকে উঠে যখন ভারতকে ব্যাটিংয়ে দেখলাম তখন যতটা না কষ্ট পেয়েছিলাম তার থেকে অনেক বেশি বিস্মিত হয়েছিলাম সাকিবের টসে জিতে ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্তে ৷ সাকিবের ক্রিকেট জ্ঞান নিয়েই তখন আমার সন্দেহ হচ্ছিলো,কারণ ক্রিকেটে একটা বহুল প্রচলিত মিথ আছে আর সেটা হলো টসে জিতে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে প্রথমবার ব্যাটিং নিবে,দ্বিতীয়বারও ব্যাটিং নিবে,তৃতীয়বারও ব্যাটিং নিবে কিন্তু এর পরও যদি ডাউট থাকে কেবল তখনই বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিবে ৷ এমন না যে প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাটিং করলেই আমরা জিতে যেতাম কিন্তু যে ডীউ ফ্যাক্টরের কথা বলে সাকিব আগে ফিল্ডিং নিল তার আগে কি ভাবা উচিত ছিল না
১.দুদিন আগের প্রাকটিস ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ভারত কিভাবে তুলোধুনা করে ৩৪০ করেছিল ৷ আমাদের বোলাররা কি কিউই বোলারদের থেকেও ভালো ?
২.দুদিন আগের প্রাকটিস ম্যাচে পাকিস্তান তাদের ধ্বজভঙ্গ ব্যাটিং নিয়েই আমাদের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাটিং করে ২৯০ করেছিল,ভারতের ব্যাটিং নিশ্চই পাকিদের থেকে খারাপ সেটা সাকিব আশা করে না !
৩.উপমহাদেশের পিচে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ভারত আগে ব্যাটিং করা মানেই ৩০০ এর উপরে রান হওয়া,আমরা কি ৩০০ শতাধিক রান চেজ করার সামর্থ রাখি ?
৪.প্রাকটিস ম্যাচে পাকিদের ২৯০ চেজ করতে গিয়ে আমরা কোনরকমে ২০০ পার করি,তারপরও কোন সাহসে ভারতের সাথে চেজ করে জিতার চিন্তা করি যখন মোটামুটি ধরে নেয়া যায় ভারত ৩০০ শতাধিক রান করবেই ?
৫.পিচটা দেখে সাকিবের কখনো কি মনে হয়েছিল যে এটা বোলিং ট্রাক ছিল ফলে আগে বোলিং নিলে সিমাররা মুভমেন্ট পাবে,সেই আশায় বোলিং নেয়া যেতে পারে ৷ একটা নিস্প্রান ব্যাটিং উইকেটে কি করে ভারতের মত দলকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠানো হয় !
এতো গেল টসের ব্যাপার,তারপরে খেলা চলাকালীন সময়ে কি দেখি দেখা যাক ৷ আমি আমাদের বোলারদের কোনোই দোষ দেব না কারণ ক্যাপ্টেন নিজেই একটা সুইসাইডল ডিসিশানের মাধ্যমে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং প্রাকটিস করার সুযোগ করে দেয়,এই মরা উইকেটে যে কোনো বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধেই ভারত ৩০০ রান করত ৷ হয়ত প্রথমে দু একটা উইকেট পরলে রান ২০-৩০ কম হত এই যা,সুতরাং বোলাররা খারাপ কিছুই করেনি বরং রাজ্জাক-সাকিব পাওয়ার প্লে এর মধ্যে যা বোলিং করেছে সেটার প্রসংশা করতে হয় ৷ ব্যাটিংয়ে প্রথম দিকে কিছুই বলার নেই,কিন্তু আমাদের রক্ষনাত্মক মানসিকতা আবার ফুটে উঠে
১.যখন তামিম আউট হয় তারপর মুশফিককে পাঠানোর মধ্য দিয়ে ৷ এই ম্যাচে ওই অবস্থায় কি করে মুশফিককে পাঠানো হয় ভেবে পাই না, তখন অবশ্যই উচিত ছিল রিয়াদকে পাঠানো ৷ রিয়াদের সাম্প্রতিক ফর্ম হয়ত ভালো নয় কিন্তু ওই অবস্থায় খেলায় থাকতে হলে এমন ব্যাটসম্যানকে পাঠানো উচিত যে একটু সেট হলে হাত খুলে খেলার সামর্থ্য রাখে ৷ রিয়াদ,
নায়িমদের সেই ক্ষমতাটুকু যা আছে মুশফিক বা রাকিবুলদের নেই ৷ মুশফিক বা রকিবুল একটা ভালো স্কোর দাড় করাতে সাহায্য করতে পারে কিন্তু এই ধরনের ম্যাচে ২০ ওভারে যখন ২০০ এর মত রান দরকার তখন সেটাকে চ্যালেঞ্জ করার সামর্থ্য রাখে না ৷
২.শেষ পাওয়ার প্লে নেয়া হলো ৪৩ ওভারে,কেন ?ওয়ানডে ক্রিকেটে সেই প্রাচীন কাল থেকেই শেষ দশ ওভারে যেখানে এমনিতেই স্লগ করা হয় সেখানে এত বড় রান তাড়া করার ম্যাচে কেন ৪০ এর আগে শেষ পাওয়ার প্লে না নিয়ে ৪৩ ওভারে নেয়া হলো ?সাকিবকি তখন নিজে এই পাওয়ার প্লেটা ইউটিলাইজ করতে পারত না ? একজন চতুর,বিচক্ষণ ক্যাপ্টেনকে সময়ের সাথে সাথে অনেক সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হয় যা কাল সাকিবের ভিতর পুরো মাত্রায় অনপস্থিত ছিল,সাকিব বরঞ্চ সম্মান রক্ষার্থেই বেশি মনোযোগী ছিল !
সব কিছু মিলিয়ে আমার মনে হয়েছে এই ম্যাচে বাংলাদেশ আগে থেকেই হারার মানষিকতা নিয়ে বসে ছিল,শুধু চেয়েছিলো হারটা যেন তথাকথিত "সম্মানজনকভাবে" হয় এই যা ৷ এই ধরনের রক্ষনাত্মক মানষিকতা এই দলের কাছে প্রত্যাশিত ছিল না অন্তত আমার কাছে ! যাইহোক যা হবার তা হয়ে গেছে,সেটা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় ৷ আশাকরি পরের ম্যাচগুলোতে হারি-জিতি কোনো সমস্যা নেই কিন্তু একটা আক্রমনাত্মক বাংলাদেশ টিমকে দেখব ! আর নাইম-রিয়াদের বোলিং একদমই সাধারণমানের মনে হয়েছে,কোনো ভ্যারিয়েশন নেই উইকেট টু উইকেট বোলিং;এখানে একটা পরিবর্তনের কথা ভেবে দেখা যেতে পারে ৷ শুভকামনা থাকলো টাইগারদের প্রতি !