কামরুল আমার স্কুল লাইফের বন্ধু। ক্লাশ থ্রি থেকে একসাথে পড়েছি। স্কুলের পর একই কলেজে, একই সেকশন। কলেজে ক্লাশ তেমন একটা হইত না। আর হৈলেই বা কী! ক্লাশের সময়টাতে আমাদের খুঁজে পাওয়া যেত কমন রুমে। ক্যারম খেলেই ক্লাশের সময়টুকু পার করে দিতাম।
তবে ক্লাশ ঠিকমত না হলেও ল্যাব ঠিকই হৈত। আর সেখানে ফাঁকি দিলে ফাইনালে ধরা খাওয়ারও চান্স আছে। কারণ প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা হবে নিজের কলেজে। একজন এক্সটার্নাল বাদে ভাইভা বোর্ডেও থাকবেন নিজেদের টীচাররাই। সুতরাং স্যারদের মুখ চেনানোর ব্যাপার আছে।
প্র্যাকটিক্যাল ক্লাশে প্রায় ৩০-৪০ জনের গ্রুপ। কেমিস্ট্রি ল্যাবে একদিন লক্ষ্য করলাম এক সহপাঠিনীর দিকে কামরুল এক দৃষ্টিতে তাকাইয়া আছে। বুঝলাম কিছু একটা চলতাছে।
মাইয়াডা ভালৈ ছিল। পাতলা ছিপছিপে ধরণের। লম্বায় ৫ ফুটের কাছাকাছি। কালো ফ্রেমের চশমা পইড়া কলেজে আসত। খোলা চুল আর কালো চশমায় বেশ ভালো দেখাইত।
পরে একদিন নিউমার্কেটের সামনে কামরুলের সাথে দেখা। তারে জিগাইলাম ঘটনা কী। কিন্তু সে রীতিমত পিছলাইতাছে। শেষ পর্যন্ত স্বীকার করল মাইয়ার জন্য সে ফিদা।
ঘটনা আরো বিস্তারিত জানার জন্য কামরুলের সাথে গল্প শুরু করলাম।
- দোস্ত, মাইয়াডারে তোমার ভালো লাগে এইটাতো ভালো কথা। মাইয়ারে জানাইছো?
-নারে দোস্ত। সরাসরি বলার মত সাহস এখনো যোগাড় করতে পারি নাই। তবে বেনামে ফুন কইরা মাঝে মাঝে গ্যাজাই।
-কস কী? মাইয়ার ফুন নাম্বার পাইলি ক্যামনে? মাইয়া তোর লগে গ্যাজায়?
-সেইরকম একটা না। পরিচয় দিই না বইলা বেশিক্ষণ কথা কয় না।
-ভালো ভালো। ওক্কে দোস্ত। বেস্ট অফ লাক।
বিকাল বেলা হবিবুর রহমান স্যারের ব্যাচে পড়তে গিয়া ঘটনা জানাইলাম নজরুল আর রবীন্দ্রনাথ'রে (দুইটাই ছদ্মনাম )। আমাদের এই তিনজনের ফ্রেণ্ডশিপ অনেক ভালো। কলেজে, ব্যাচে সব জায়গায় একই সাথে পড়তাম।
-জানোস, কামরুল স'র লগে গ্যাজায়?
- ক্যামনে?
-ও কী নিজের নামে ফোন করে?
-নাহ! হালায় বেনামে গ্যাজায়।
-তাইলে এক কাজ করি আমরা মাইয়ারে ফোন কইরা কামরুলের নামে গ্যাজাই।
-এইটা ঠিক হইব না। তবে এক কাজ করা যায়, আমরা ফোনে ওরে হিন্টস দিতে পারি। যেন সে মনে করে কামরুলই ওর লগে এইভাবে গ্যাজায়।
-ওক্কে ডান!
বিস্তারিত পরিকল্পনা করা হইল। এক সহপাঠিনীর মাধ্যমে মাইয়ার ফোন নাম্বার ও সংগ্রহ করা হল। পরিকল্পনার প্রথম অংশ অনুযায়ী রাত বারোটা বাজতেই আমি মাইয়ারে ফোন দিলাম।
-হ্যালো।
-হ্যালো, কে "স"?
-জ্বী। আপনি কে বলছেন?
-কেমন আছ?
-আগে বলুন, আপনি কে?
-আমি তোমার ক্লাশমেট। আমরা একই সাথে ল্যাব করি। বলতাছো না কেমন আছ?
-ভালো আছি। নাম বলতে কোন প্রবলেম আছে?
- আচ্ছা তোমারে একটা ক্লু দেই। পরীক্ষার সময় তোমার খুব কাছেই আমার সিট পড়ে। আমি তো ভাবতাম তোমার মাথায় অনেক বুদ্ধি। দেখি তুমি এইবার বুঝতে পারো কিনা।
পরীক্ষার সময় ওদের দুইজনে একই বেঞ্চে বইসা পরীক্ষা দিত। মাইয়া বোধ হয় বুইঝা ফালাইছে। কিন্তু তারপরও ধরা দিতাছে না।
- না আমার মাথায় সবার মত অত বুদ্ধি নাই। আপনি নাম না বললে আমি ফোন রেখে দিব।
-আরে বাবা, এত ফোন রাখি রাখি কর কেন? আমি কি তোমারে ফাউল কোন কথা কইছি? তারপর, তোমার পড়ালিখা কেমুন হইতাছে?
-আপনি আপনার নাম বলবেন! (একটু ধমকের সুর)
-আমার নাম আমরুল।
এইভাবে প্রায় মিনিট তিনেক মাইয়ার লগে কথা কইলাম। প্ল্যান অনুযায়ী আমার অংশের কাজটুকু ততক্ষণে আমি করে ফেলেছি। মাইয়া তখন কিছুটা কনফিউজড আমার পরিচয় নিয়ে।
কথা বলা শেষ হইলে ফোন দিলাম নজরুলরে। ওরে গ্রীন সিগন্যাল দিলাম। এবার ওর পালা। সে কথা বলার পর রবীন্দ্রনাথের পালা।
পরের দিন কলেজে নজরুল, রবীন্দ্রনাথ ওদের সাথে দেখা। তিনজনই মুচকি মুচকি হাসতাছি। বুঝলাম মিশন একোম্পলিশড। ক্লাশের পর করিডরে দাড়াইয়া প্রত্যেকেই জানাইল মাইয়া কার সাথে ক্যামনে কথা কইছে।
দেখি, মাইয়া দুই বান্ধবীরে নিয়া করিডোর দিয়া যাইতাছে। আমরা হাসি চাপতে পারি না এমন অবস্থা।
এইবার আসল পরিচয় দেবার পালা। মাইয়ারে ডাকলাম, "এই "স" শুইনা যাও"।
একটু অবাক হইয়া মাইয়া কাছে আসল।
-হুম, বল।
-গতকাল রাতে আমরা তিনজন তোমার লগে একটু ফান করছি। কিছু মনে কইরো না।
"আমি আমরুল"- মুচকি হেসে বললাম।
"আমি জামরুল"- নজরুল বলল।
"আর আমি শামরুল"- রবীন্দ্রনাথ'র উত্তর।
পাঠক, বুঝতেই পারতাছেন মাইয়ার অবস্থা তখন কেমুন।
সেই মাইয়া এখন রাবিতে পড়ে শুনেছি। এইচএসসির পর প্রায় বছর তিনেক হইল মাইয়ার সাথে দেখা হয় নাই। তবে এই মাইয়ার কথা আমরা তিনজনই বোধ হয় ভুলতে পারব না।
কামরুলের কানেও কথাটা গিয়েছিল। তবে হালায় ব্যাপারটা ফান হিসাবেই নিছে। তাই বাইচাঁ গেছি। তাছেড়া মনে হয় কামরুলের কিল ঘুষি একটাও মাটিতে পড়ত না।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১০ রাত ১:১০