সত্য একটা ঘটনায় আমি ১৮+ লেবেল কেন লাগালাম এটা ব্যাখ্যা করতে পারবোনা। ব্যাখ্যা করতে পারবো না কেন এসব শুধু আমাকেই দখতে যেতে হয়। ব্যাখ্যা করতে পারবো না ঈশ্বরে বিশ্বাসী আমি ঈশ্বরের এহেন কর্মে তাকে কেন দোষারোপ করতে পারবো না। ব্যাখ্যা করতে পারবো না আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা কি করে এখনোও এসব স্বীকৃতি দিয়ে আসছে।
বাবার রিটায়ার্ডের পর আমরা আমাদের আপন বাড়িতে ফিরে আসতে থাকি। এ নিয়ে আমাদের সবারই মাঝে খুশির শেষ ছিলো না বিশেষ করে আমার। রাজশাহীতে যখন থাকা শুরু করলাম আমি সদ্য কৈশর পেরোন একটা কিশোর মানসিক দিক থেকে একজন বৃদ্ধ। পাড়ার একমাত্র সিগারেট পাবার মুদির দোকানটি আমার ছোট চাচার। আমি নিজে সিগার সেবন করতাম না, তবে যাদের সাথে ঘুরতাম তারা সবাই কোয়ালিটির দিক থেকে এক একজন চেইন স্মোকারদের দাদা। তাদের ভেতরে খুবই বৈশিষ্ঠপূর্ণ এক ছেলে রাহাত (অবশ্যই ছদ্দ নাম, আমি চাই না এই ঘটান তার পরিবারে কোন বিরুপ কিছুর প্রভাব ফেলে)। চিকন-চাকন গড়নের বুদ্ধিমান একটা চেহারা তার। দুনিয়ার সব কিছু দেখলেই তার হাসি পায়। যদি দেখে দেয়ালের কোথাও একটা ইট খুলে গেছে, খুব মজা পায়, এমন কি কেউ যদি ইন করে টাই গলায় ঝুলিয়ে ডাস্টবিনের পাশ দিয়ে হেটে যায় তবেও সে খুব হাসি পায়। যেন পৃথিবীকে পদে পদে কৌতুক করার জন্যই পৃথিবীতে এসেছে।
তিন বোন এক ভাই ওরা। একমাত্র সেই ভাই বাকি সবাই বোন। অবস্থানের দিক থেকে সে মেজ। তার ছোট দুটো বোন আছে। একটা সেভেন ও সব ছোটটি ক্লাস থ্রী’তে পড়ে। বড় বোনতার বিয়ে হয়ে গেছে বছর সময় আগে (সেই সময়ের অনুপাতে)।
যেদিন আমি প্রথম রাহাতদের বাসায় ঢুকি সেদিন ওদের পরিবারের সবাই উপস্থিত ছিলো। প্রথম দেখাতেই রাহাতের তিন বোনের প্রেমে পরলাম আমি। বিশেষ করে বড় বোনটার। চঞ্চলা মহিয়সী তরুনী মাতা তার চপলা চলেনে দেবতাদের মোহিত পর্যন্ত করে রাখতে পারে আমি তো কোন ছার। তিনি মনে হয় বুঝতে পেরেছিলেন সদ্য কৈশর পেরোন এই ছেলেটি বোধহয় তাকে দেখে মুগ্ধ। তাই বারং-বার আমার শরীর ছুয়ে চলাফেরা করে আমাকে আহত করে মজায় পাচ্ছিলেন।
আমি ওদের পরিবারের সেই মেয়েটির সাথে পরিচিত হই যাকে নিয়ে এই ঘটনা। সে ক্লাস সেভেনে পড়ে আগেই বলেছি। তার পরিবারের সন্মানের দিকে খেয়াল রেখে নাম দিলাম মেঘবতী। মেঘবতী ছিলো আপন কেন্দ্রিক এক মেয়ে। রোজ রাতে কবিতা লেখে খাতা ভর্তি করে ফেলতো। পরের দিন বাবা-মায়ের ভয়ে লেখার খাতাটা জানালা দিয়ে ছুরে ফেলে দিত দীঘির কালো জলে। তাকে টিউশনি করাতে গিয়ে তার অনেকটা কাছে এসে পড়ি আমি। বার বার মনের লাগাম টেনে ধরে নিজেকে সুপুরুষ প্রমাণের চেষ্টা করেছি। সফলও হয়েছি।
প্রায় আট মাস পড়ে একদিন রাহাত আমাকে বললো মেঘবতীকে নিয়ে একটু গোয়েন্দাগিড়ি করতে হবে। আমি মনে মনে বেশ উত্তেজিত হয়ে বললাম, কি গোয়েন্দাগিড়ি?
আমি যা জানলাম তা এরকম, বেশ কয়েকমাস ধরে রাহাতের পরিবার মেঘবতীকে নিয়ে চিন্তিত। ও খারাপ কিছু একটার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। খুবই খারাপ। ওর আচরন ঠিক মানবিক না।
সেদিনই মেঘবতীর স্কুলে যাবার পথে আমরা তাকে অনুসরন করালাম। দেখলাম সে স্কুল ছেড়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ঢুকলো। এক কর্মকর্তার বাইকে করে তার সাথে কোথাও চলে গেলো। রাহাত যে মনে মনে শক্ড তা সে আমাকে বুঝতে দিলো না। আমাদের কাছে তাদের পিছু পিছু যাবার মত কিছু ছিলো না বলে লোকটির ব্যাপারে কিছু তথ্য জোগার করে বাসায় চলে এলাম। সেদিন মেঘবতীর উপর তার পরিবার কি পরিমান শাসন নামে নির্যাতন চালিয়েছিলো তার একটু করা উচিত।
মেঘবতী বাড়িতে ঢুকতেই তাকে নিয়ে ওর মা চলে গেলো অন্য ঘরে। কি হচ্ছে আন্দাজ করাই যায়। কিছুক্ষন পর খালাম্মা বেড় হয়ে এসে খালুকে উদ্দেশ্য করে না সূচক মাথা নাড়েন। খালু এর মেঘবতীর উপরে পৈশাচিক ভাবে ঝাপিয়ে পড়লেন। নির্যাতন করে আবিষ্কার করলেন আসলে তার মেয়ে ঐ লোকের সাথে চূড়ান্ত কিছু করে বসে নাই। কিন্তু ঐ লোকের উদ্দেশ্য যে খুব ভালো একটা কিছু ছিলো না এটা স্পষ্ট।
সাতদিন পর মেঘবতী বাড়ি ছারলো কাউকে কিছু না বলে। আমি ধারনা করলাম মানসিক ও পারিবারিক চাপে সে বাড়ি ছেড়েছে।
দীর্ঘ্য দুই বছর মেঘবতীর খোঁজ ছিলো না। একদিন রাত আড়াইটাই হটাৎ করেই রাহাত এসে হাজির হল। তখন সে হাফাচ্ছিলো প্রচন্ড ভাবে। একটু শান্ত হয়ে আসতে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি হয়েছে?
সে বললো, মেঘবতীর খোঁজ পাওয়া গেছে?
সে কোথায়?
দৌলতদিয়া।
আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো আমার সেই মুহুর্তে। শরীর হটাৎ করেই অবশ হয়ে গেলো। আমার শেষ প্রশ্নটা ছিলো ‘কে বললো তোকে?’
আনিস।
ও কি করে জানলো?
এর পরের কথাটা বলতে গিয়ে রাহাতকে আমি প্রথম কাঁদতে দেখি- ও বলেছে, আমার বোন একটা জিনিস!
জানোয়ারের বাচ্চা!
আমি বাবু ভাইয়ের সহযোগীতায় সেরাতেই আনিসের বাড়িতে গেলাম। পাঁচ-ছ’জন গুন্ডা দর্শন ছেলে এসে আনিসকে রাত তিনটায় বাড়ির বাহিরে ডাকছে, এটা আনিসের পরিবারের কাছে স্বাভাবিক কোন ব্যাপার না। স্বভাবতই তারা আমাদের আনিসের সাথে দেখা করতে দেয়া হল না। ভোর চারটা নাগাদ রাহাতের বাবা-মা এসে হাজির হলেন। এরপর আনিস আমাদের সামনে এলো। আনিসের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি দৌলতদিয়া পতিতা পল্লীর ঠিক কোন ঘরটায় মেঘবতী আছে।
পরদিন সকালে আমি, খালু আর রাহাত রওনা দিলাম দৌলতদিয়াতে। বিকেল দুপুর নাগাদ পৌছেও গেলাম সেখানে। বলতে খারাপ লাগলেও তখন মেয়েরা সেজে গুঁজে বাহিরে বেরোতে শুরু করেছে। কমদামী কসমেটিক্সের গন্ধে বাতাস ভারি হয়ে আছে দৌলতদিয়ার। জিজ্ঞাসা করে করে মেঘবতীকে বের খুজে করলাম আমরা। খালু ভেতরে আসেন নাই। উনি বাহিরেই ছিলেন।
মেঘবতী ঘড়ে ছিলো না। পানি আর বিস্কিট আনতে গেছে। শুনলাম তার রোজকার খদ্দেররা এলে চা-নাস্তা না খেয়ে এখান থেকে যায়না।
ঠোঁটে লাল টকটকে লিপিস্টিক আর রুজের পালিশে প্রথমে তাকে চিনতে পারি নাই আমি। আমাদের দেখে সে অনেক্ষন চুপ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকলো। আমি প্রথম নীরবতা ভাংলাম।
বাড়ি যাবে চলো।
আপনার কৌতুক করার স্বভাব আজো যায়নি না?
আব্বু বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাগ গুছিয়ে নে বাড়ি যাবি এক্ষুনি। রাহাতের চোখের দিকে তাকালাম আমি। চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে তার।
এখান থেকে চলে যান আপনারা।
আমি রাহাতকে শান্ত থাকতে বলে বললাম ওর সাথে আমি একা কথা বলি।
মেঘবতীর সাথে একান্তে যে কথা গুলো আমি বলেছিলাম তার সব মনে নেই আমার। শেষ পর্যন্ত সে আমাদের সাথে আসতে রাজি হয়নি। তাকে শেষ যে কথাটা আমি তাকে বলেছিলাম ‘...আমার জন্যও কি তোমার আসা জাবেনা? তখন কোন সুযোগ আমি চাই নাই। আজ চাইছি। আমাকে একতা সুযোগ দাও। তোমাকে সারা জীবন আমি খুশি রাখব।’
সে এলো না। আমরা বাহিরে একা আসাতে খালু মেঘবতীর সাথে কথা বলতে গেলেন। ওখানকার স্থানীয় কয়েক জন ব্যাক্তি তাকে শাসালো তিনি যদি এক ঘন্টার মধ্যে এই এলাকা না ছারেন তবে তার ক্ষয়-ক্ষতির কোন দ্বায়ীত্ব তারা নেবেনা।
এরপর কোনদিন মেঘবতীর মুখোমুখি আমি হইনি। হবও না। কারন ওর এই অবস্থার জন্য আমিও কিছুটা দ্বায়ী। সেদিন যদি আমাকে রাহাতের সাথে না থাকতে হত। তাহলে বোধহয় মেঘবতীর ব্যাপারে তার মা রেগে গিয়ে নগ্ন করে তাকে পরীক্ষা করতেন না। তার মেয়ে সতী নাকি অসতী। এই চরম বেদনাদায়ক ঘটনা কোমলমতি মেঘবতীর কাছে ছিলো অনাকাঙ্খীত। এর পরিনিতিতে তাকে হতে হয়েছে কিশোরী প্রমোদ বালাতে।