নায়ক দারুণ লেভেলের সৎ। এক কথায়, দশে দশ। কারও অনিষ্ট করে না, নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে মানুষের উপকার করে। একবার নায়কের বাবা ভয়ঙ্কর অসুখে পড়লেন। অপারেশন করতে হবে। অনেক টাকা দরকার। নায়ক জনে জনে সাহায্য চাইল, দ্বারে দ্বারে চাকরি খুঁজল; কিন্তু কোনো সদ্গতি হলো না। সারাদিন হেঁটে ক্লান্ত। খাওয়ার টাকা নেই। তাই নলকূপ চেপে একটু পানি পান করল।
এমন সময় এক বড় গুণ্ডার চ্যালার সাথে নায়কের পরিচয় হলো। চ্যালা নায়ককে বড় গুণ্ডার কাছে নিয়ে গেল। বড় গুণ্ডা দয়াপরবশ হয়ে তাকে একটা চাকরি দিল বটে, তবে সেটা গুণ্ডামি করা, খুন করা বা যাবতীয় মন্দ কাজ করা। সৎ নায়ক প্রস্তাব নাকচ করে চলে এলো বাবার কাছে। এসে যখন দেখল বাবা মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, তখন নায়কের বোধোদয় হলো। বুঝতে পারল, রূপকথার নায়কেরাই সৎ। এ যুগের নায়কদের সৎ থাকার উপায় নেই।
নায়ক আবার চলে এলো বড় গুণ্ডার কাছে এবং যাবতীয় মন্দ কাজে লিপ্ত হলো।
২
একজন বড় কবি সারাজীবন বাম মতাদর্শের ছিলেন। লিখেছেন প্রগতিশীল কবিতা। এর বাইরে প্রকৃতি, দেশ, সমাজ নিয়ে সব ধরনের কবিতাই লিখেছেন। বলতে গেলে দেশের প্রথম সারির কবি বনে গেলেন তিনি।
ওই কবি একসময় পুরোপুরি পাল্টে গেলেন। বাম থেকে ডানে মোড় নিলেন। দেশে তার নামে নিন্দা রটে গেল। তিনি প্রগতিশীল লেখক সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। মৃত্যুও হলো অনাদরে।
জীবদ্দশায় একবার উনার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কেন এভাবে বদলে গেলেন? ধর্মীয় ব্যাপার তো ছিলই; এর বাইরে তিনি জানিয়েছিলেন, বেঁচে থাকা প্রয়োজন ছিল। আর ওই সময় ওই ডানপন্থীরাই তাকে সহযোগিতা করেছিল।
৩
এক স্যেকুলার কবি ইসলামি সংগীত লেখা শুরু করলেন। মুসলিম সমাজ তাকে সাদরে গ্রহণ করল। এমনকি ইসলামি কবি হিসেবে ঘোষণাও দিল। অথচ তাকে কাফেরও ঘোষণা করা হয়েছিল একসময়। তিনি হঠাৎ সবার অনুসরণীয় ব্যক্তি হয়ে উঠলেন।
আসলে তিনি পেটের দায়েই ইসলামি সংগীত লিখেছিলেন। কবিতায় ভাত নেই। তাই ইসলামি সংগীত লিখে একটা ভক্তশ্রেণি তৈরি জরুরি ছিল।
একসময় তিনি শ্যামা সংগীতও লেখা শুরু করলেন। তার শ্যামা সংগীতের এতই আবেদন যে, হিন্দুদের উৎসবে অহরহ সেসব শ্যামা সংগীত গাওয়া হয়। এসব লিখতে লিখতে তিনি হিন্দুদেরও প্রিয়জন হয়ে উঠলেন।
৪
জনৈক অধ্যাপক বলেছিলেন, ‘দুঃসময়ে টিকে থাকা বিপ্লবের সমান’। কেউ যদি নিজের জীবন এবং সংসার টেনে নিতে না পারে, তার পক্ষে তো রাষ্ট্র উদ্ধার সম্ভব নয়। অনেক বড় বড় প্রতিভা ঝরে গেছে শুধু পেটের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে। যারা পেট এবং পরিবার বিসর্জন দিয়েছে, তারা বিনা চিকিৎসায় খেয়ে না খেয়ে মরেছে। এ তালিকায় শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী বা অন্য মনীষীরাও রয়েছেন।
সমাজের অবস্থান এখন এমন পর্যায়ে যে, একজন ভালো লোক বিপদে পড়লে তাকে উদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসে না। কিন্তু একজন খারাপ লোক বিপদে পড়লে ঠিকই সগোত্রীয় লোকজন এগিয়ে আসে। যদিও অন্যরা খারাপ লোকের নিন্দা করবে আর ভালো লোককে বাহবা দেবে; কিন্তু ওই বাহবায় তো পেট ভরবে না। জীবন অতটাও ছোট না যে, হাওয়া খেয়ে বা বাহবা পেয়ে কেটে যাবে।
অন্তবিহীন পথে চলাই জীবন।