somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই প্রকাশের ক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা

২১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শৈশব থেকে ছড়া কাটতে পারতাম। ধীরে ধীরে যখন বড়ো হচ্ছিলাম, জানার পরিধি বাড়ছিল। সে সময় স্কুলের বাইরের বইপত্রেও মন চলে যেত। মেজো বোন যেসব উপন্যাস পড়ত, গোপনে আমিও পড়ে নিতাম। সেই যে মজা পেলাম, তখন সুযোগ খুঁজতাম কেমনে নতুন নতুন বই পাওয়া যায়। তবে দুর্ভাগ্য আমার, বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠার আগে বই পড়ার অবারিত সুযোগ ছিল না।

কলেজে উঠার পর মায়ের কাছে বায়না ধরলাম একটা কবিতার বই করব। দশ বছর বয়স থেকে এটাসেটা লিখতাম আর কী। যাহোক, একমাত্র ছেলের ইচ্ছেকে মা প্রাধান্য দিলেন। আমি বাংলাবাজারে চলে এলাম আমার বড়ো বোনজামাইকে সাথে নিয়ে। সম্ভবত সেটাই আমার প্রথম রাজধানীতে আসা। যে প্রকাশনীর সাথে মোবাইলে কথা বলে এসেছিলাম, এসে তার খোঁজ করলাম। তারপর প্রচ্ছদ করলাম। কিছু টাকা অগ্রিমও দিলাম। তারা নিশ্চয়তা দিল শিগগিরই বই হয়ে যাবে।

সময় যাচ্ছিল কিন্তু কাজ এগোচ্ছিল না। যাকে টাকা দিয়ে এসেছিলাম তার মোবাইল অফ হয়ে গেল একদিন। আমি তো দিশেহারা। পরে ঢাকায় এলাম। এসে মালিকের সাথে যোগাযোগ করলাম। উনি বললেন, আর কিছু টাকা দিলে বই করে দেবেন। করে দিলেন বটে। তবে কাগজের মান খুব খারাপ। টাইপিংশেও প্রচুর ভুল।

এই ঘটনার পাঁচ বছর পর ওই একই প্রকাশনায় গেলাম আগের বইটাকে আরেকটু সংশোধন করে প্রকাশ করা যায় কি না সেটা জানতে। ওই বছরই 'জলছবি' নামে একটা বই করছিলাম কবিতার। যাহোক, দুটো বই প্রকাশিত হলো। তবে যে পরিমাণ সাড়া পাব ভেবেছিলাম, পাইনি। কলেজে অত পরিচিতি ছিল না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে মোটামুটি নামডাক ছিল। তাও আমাকে হতাশ হতে হলো।

আমার এক বন্ধু কিছু বই বিক্রির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল বলেই রক্ষা। রক্ষা বললে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পেলেও আমার বাস্তবতা বোঝা যায় না। এমনিতে তখন টাকা-পয়সা নেই, ওই অবস্থায় বই করতে ১৫-২০ হাজার টাকা লেগে গিয়েছিল। বাড়ি থেকে ময়মনসিংহে থাকার জন্য যে খরচ দিত, সে খরচে হাত দিতে হয়েছিল। বাড়ির লোকজন জানত না, জানলেও পছন্দ করত না।

ময়মনসিংহে কিছু করার চেষ্টা করলেও হয়নি। শেষে নিরুপায় হয়ে গ্রামে চলে আসতে হয়েছিল। আর আমি ভালোভাবে উপলব্ধি করি শুভকামনা অনেকেই জানাবে কিন্তু বই কম লোকই কিনে পড়বে।

এরপর দশ বছর চলে গেছে। জীবন বাস্তবতায় চিড়েচ্যাপটা হয়ে গেলাম। সাহিত্যের সঙ্গে সব ভাগ হয়ে গেল। তবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ানোর কারণে দেখলাম ছেলেমেয়েরা আমার লেখা পড়ে। বই করতে বলে। কিন্তু সুযোগ হয়নি। তবে প্রতি বছর বারবার বইমেলায় যাওয়া হয়েছে। বইপত্র কেনা হয়েছে।

এবার পেছনের কিছু লেখা সংগ্রহ করে একটা গল্পের বই করার প্রয়াস ছিল। কয়েকজন প্রকাশকের সাথে কথাও হয়েছে। তারা সহযোগিতা করলে হয়তো হয়ে যাবে। এর বাইরে আমার বিদগ্ধ কিছু পাঠকও দরকার যারা আসলেই বইপত্র পড়ে।

কাল এক কবির সাথে কথা হলো। উনার একটা বই আসবে। এতদিনের অভিজ্ঞতা কী জানতে চাইলে বললেন, বই চলে না। এমনভাবে হয়তো কেউ বলে না। আসলেই কবিতার বই চলে না। আমার প্রথম প্রকাশক গল্প লিখতে বলেছিলেন, আমার উপলব্ধি গল্প-উপন্যাস করাই ভালো। কবিতা নিয়ে পড়ে ভাবা যাবে।

ব্লগের অনেকেরই তো বইপত্র বেরিয়েছে। তাদের অভিজ্ঞতা জানা হয়নি। সবাই কেমন এড়িয়ে যায় বিষয়টা। অবশ্য এটাও ঠিক বেশিরভাগই শখের লেখক। বই চলে কী চলে না; এটা নিয়ে মাথা ঘামায় না।


ছবি: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:০৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বই প্রকাশের ব্যাপারে লেখকদের অভিজ্ঞতা কী?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫২


শৈশব থেকে ছড়া কাটতে পারতাম। ধীরে ধীরে যখন বড়ো হচ্ছিলাম, জানার পরিধি বাড়ছিল। সে সময় স্কুলের বাইরের বইপত্রেও মন চলে যেত। মেজো বোন যেসব উপন্যাস পড়ত, গোপনে আমিও পড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। রাজু ভাস্কর্যের নারী মূর্তির কালো হিজাব

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৬




ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের নারী মূর্তিটির মাথা ঢেকে দেওয়া হয়েছিল কালো হিজাব দিয়ে। গতকাল রোববার রাতে এমনটি দেখা যায়। পরবর্তী সময় কয়েকজন সেই কাপড় নামিয়ে ফেলেন। ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত ছাড়া বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে মরবে!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:২০


আপনারা হয়তো লক্ষ্য করবেন ইদানিং ইউটিউব, ফেসবুক অথবা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে ভারতীয়রা বিভিন্ন ভাবে বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশের মানুষকে ট্রল করছে, অপমান অপদস্তমূলক কথাবার্তা বলছে। তারা বলছে যে, ওরা যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি।। হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন: আসিফ নজরুল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করেছেন- এমন মন্তব্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের।দুপুরে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে নিজ অফিসকক্ষে সাংবাদিকদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রেসিডেন্ট, সেনাপ্রধান ও ড: ইউনুস কোমলমতিদের লোকজন নন।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৩



কোমলমতিরা কি আন্দোলন করেছিলো শেখ হাসিনার আত্মীয় সেনাপ্রধান ও শেখ হাসিনার নিযুক্ত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতায় রাখতে? এই রকম বন্ধুত্ব কি উহাদের মাঝে আছে? কোমলমতিরা কি ড: ইউনুসকে স্যার ডাকতো, নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×