সারাদিন আজকে একটা চিন্তাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে----- আচ্ছা আমার কি কোন বন্ধু নেই? আজব তো---- বন্ধু বলতে যাদের নাম সবার আগে মনে আসলো তাদের সাথে যোগাযোগটা ভীষণ অনিয়মিত। হঠাত যদি কালেভদ্রে ফোন করা হয় বা রাস্তায় দেখা হয়ে যায়....।সেই যে ক্যাম্পাসের বন্ধুরা যাদের সাথে আড্ডায় সারা সময় টা মুখরিত থাকত তাদের সাথে দেখাই হয়না। বা যাদের সাথে হোস্টেলে দিনের পর দিন থেকেছি.। একই সাথে খাওয়া দাওয়া , পড়াশোনা, আড্ডা , মন খারাপ, বৃস্টিতে ভেজা, ঘুড়ি ওড়ানো.....। সবাই ব্যাস্ত এখন......।
সেসময় বন্ধুর মন খারাপ থাকলে সেটা ভালো করার জন্য সারাদিন কত আয়োজন...। বন্ধু ডেটিং এ যাবে... তার জন্য আমাদের টেনশান, বন্ধু প্রপোজ করবে .......আমাদের সাজেশনের অভাব নেই.......। বন্ধুর চাচা অসুস্থ সবাই ছুটলাম রক্ত দিতে। প্রেমিকের সাথে ঝগড়া...... চল দেখি কি হলো??????হায়রে সে এক উত্তাল সময়...।হাত বাড়ালেই বন্ধু...মন খারাপ তো কি হয়েছে???হলের বারান্দায় বসে থেকে কিছুক্ষন কথা বললেই মন খারাপ উধাও.......। এখন কোথায় সে বন্ধুগুলো? এখন মন খারাপ করে কাউকে কথা বলার উপায় নেই। কেউ এগিয়ে এসে বলেনা..।কি লাগবে তোর বন্ধু??? মন খারাপ কেন??? চল হেটে আসি......।
নাহ এখন আর কেউ নেই.....। যারা আছে তারা কেউ বন্ধু না তাদের সাথে কথা বলার আগে চিন্তা করতে হয় ----কি বলা যাবে ? কি বলা যাবে না??? কি বললে আফটার ইফেক্ট কি হবে??? সেই উচ্ছল কথা বলার সময়টা আর নেই----- যা বলার বলসি......নো চিন্তা..... কোনদিন দ্বীতিয় বার চিন্তা করতে হয়নি যে সে কি মনে করবে? এর পরে কি হবে। সেই বন্ধুগুলো যে ক্যাম্পাস ছাড়ার সময়ে হাতছাড়া হয়ে যাবে তা ভাবিনি। আমরা মেয়েরা মনে হয় আরও বেশী ব্যাপারটা টের পাই। মেয়েরা সবাই বিয়ে করে সংসারী.....। ছেলেরা ও.........। আর ছেলে মেয়ে আড্ডা ক্যম্পাসে যতই মুখরিত হোক না কেন আসলে পরে আর তেমন জমেনা...। স্বামী কি ভাবলো, বউ কি ভাবলো... এত কিছু মাথায় নিয়ে কি আর আড্ডা দেয়া যায়? না মনের কথা বলা যায়???? নিতান্তই সমলিন্গের বন্ধুদের আড্ডা যাও বা বিয়ের পর চলে তাও আসলে বেশী দিন স্থায়ী হয় না......।
বন্ধুর কথা বললে তখন বাবা মা বলবে--- আরে এখন স্বামী বা বউ ই বন্ধু.....। আরে বন্ধু হচ্ছে বন্ধু....। সে না স্বামী ,না বউ না প্রেমিক না প্রেমিকা ,সে না ছেলে না মেয়ে... সে স্রেফ বন্ধু...নিজের মনের প্রতিচ্ছবি.......।আজকে যা হারিয়ে গেছে.....।ভার্চুয়াল জগতে আসার পরে ফেসবুকে অনেক পুরোনো স্কুলের বান্ধবীদের সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু সেই তার ছিড়ে গেছে.....। আসলে বন্ধু নামের সোনার হরিন হয়তো অধরা ই রয়ে যায়।
স্কুলে দিনে যাদের সাথে ছুটির পর বৈ চি হাডুডু খেলতাম। ভাগাভাগি করে টিফিন খেতাম। পরীক্ষায় দেখাদেখি করে উত্তর লিখতাম। মায়ের বা টিচারের বকা শুনে যাদের কাছে আসলে বকার কথা ভুলে নতুন দুস্টুমীতে মেতে উঠতাম......।কলেজে যে বান্ধবীকে মনের কথা না বললে ভালো লাগতো না...।কোন ছেলে তাকালেও যে বান্ধবীর কাছে গল্প বলতেই হতো.....। যার সাথে ভাগাভাগি করে পাল্লা দিয়ে পড়া হতো গল্পের বই...কোথায় তারা????? ফেসবুকে একটা লাইকেই আজকে সব সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। বাস্তবে আজ বড়ই নিঃসন্গতা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৫৪