মজার ব্যাপার হলো জেনারেশন গ্যাপ কথা টা আমার লাইফে দুইভাবে ধরা দিয়েছে। আমার বড় চাচাত ভাই যখন নিজের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করলো তখন বাবা -চাচা রা বলল- আমাদের বংশে কখনও কেউ এমন করেনি ...। এই হলো নিউ জেনারেশন । তখন আমরা বেশ ইন্সপায়ার হলাম আমাদের মাঝে তখন সেই চাচাত ভাই হিরো........ মুরুব্বি রা তো ওমন করবেই। এটা হলো জেনারেশন গ্যাপ। আর একটা এখন ------নিজেকে কেমন পুরোনো ধ্যান- ধারনার মনে হয়। এ হলো আরেক জেনারেশন গ্যাপ।
বলছিলাম ৯০ দশকের কথা।'৮৬-৮৭ সাল হবে...। সে সময় বয়স কত ৭-৮। ঈদ তখন সেই রকম মজার । আবার দাদা -নানার বাড়ী ঢাকায়, বাবার সাথে আমরা থাকতাম তখন খুলনায়,বাবার চাকরীসূত্রে...।সারা দেশের মানুষ যখন রাজধানী ছেড়ে মফস্বলের দিকে ছোটে আমরা ছুটি উল্টা রথে.......বাসে করে বা কখনও ট্রেনে করে বাড়ী ফেরা।নানার বাড়ী ছিলো অনেকটা আরাধ্য স্হান।নানা সকাল বেলা কায়দা পড়াতে বসাতো। সব ভাই বোনেরা চিৎকার করে পড়তাম আলিফ জবর আ, আলিফ জের ই, আলিফ পেশ উ। সে বাড়ীতে গেলেই বাবা মায়ের আর কোন শাষন থাকত না।সারা দিন কিভাবে জানি কেটে যেত।মনে আছে সে সময় চাদ দেখার জন্য ছাদে প্রতিযোগীতা হতো।সজনে গাছের ফাকে , ঐ বিল্ডিং এর মাথায় বা ঐ যে কালো মেঘের পাশে এক চিলতে চিকন চাদ খুজে বের করার প্রচেস্ঠা। আর তার পরপরই মাইকে ঈদ মোবারক আর ওমন রমজানের ঐ রোজার শেষে গানটার বিটিভি ভারশন । চাদ রাতে এর পর চলতো পটকা বা বোমা ফোটানোর হিরিক। ছোট ছোট লাল স্ট্রিপে পটকা পাওয়া যেত হাত দিয়ে মেঝেতে ঘসে ফোটাতে হতো।টেপ রেকর্ডারে বাজতো-এ মেরি হামসাফার, এক জারা ইন্তেজার......। সে দিন রাতেও বের হতো লেইজ ফিতা ওয়ালা সুর করে ডাকতো-----লেইইজ ফিতাআআআ । ওদের কে ডাকতেই হতো কিছু কেনার থাক আর না থাক কাচের চুড়ি , চুলের ক্লীপ এটাই ছিলো মুল আকর্ষন। তার পর ছিলো চাদ রাতের মুল আকর্ষন---মেহেদি দেয়া। কোনের মেহেদী তখনও আসেনি..।পাতা মেহেদী বেটে একটা গওল বাটিতে রাখা হতো সেখান থেকে ম্যাচের কাঠি দিয়ে দিয়ে হাতে নানা ধরনের নকশা করা হত ------নকশা মানে হাতের পাচ আন্গুলের কড়ে আর মাঝখানে তালুতে গোল , বা ফুল বা রেল গাড়ী বা চাদ ইত্যাদি ইত্যাদি। খালা ফুপিরা তখন মিল্কভিটা দুধের খালি প্যাকেটে মেহেদি ভরে পিন দিয়ে ফুটা করে হাতে নকশা করতোএরপর চলতো মা খালা দের রান্নার আসর। বাবা -মামা -নানা রা বের হতো শেষ মুহুর্তের বাজারে। গরুর মাংস,সেমাই,দই এসব টুকিটাকি। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময়ও শুনতাম শিলপাটার শব্দ। মা আগে থেকেই বলতো ঈদের দিন সকাল পাচটায় ঘুম থেকে উঠতে হবে। কেন এত সকালে উঠতে হবে... কেন এত সকালে গোসল করতে হবে... এখনও জানি না । কিন্তু অভ্যাসটা রয়ে গেছে।ভোরে উঠে কাপতে কাপতে গোসল করে জামা জুতা পড়ে বাড়ীর সবাইকে দেখানো। বাবা-মামারা আসলে সালামী ..।ইস তখন কচকচে ১০ টাকার নোটগুলা যে কত্ত প্রিয় ছিলো।মনে আছে টাকা গুলো খরচ করতাম না,জমিয়ে রাখতাম। এর পর বাচচা পার্টি বের হতাম এ ওর বাড়ীতে খেলা ধুলা ঘুড়া ফিরা , কার বাড়ীতে নাসতা আর কার বাড়ীতে দুপুরের খাবার তা নিজেরাও জানতাম না । বিকাল তিনটায় থাকতো বিটিভিতে পুর্নদৈর্ঘ্য বাংলা চলচিত্র (এত কস্ঠ করে পুর্নদৈর্ঘ্য কেন যে বলত????).....।নায়ক নায়িকার গান আর রওশন জামিলের চিৎকার শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যেতাম।বিকালে উঠে আবার আরেকটা জামা পরে এবার মামার সাথে ঘুরতে যাবার পালা.....শিশুপার্ক না হয় চিড়িয়া খানা .. আর জায়গা ছিলো না তখন।শিশুপার্কের গেটে তখন বড়ইওয়ালা বসতো সাথে হাওয়াই মিঠাই এখনকার ক্যান্ডিফ্লস মার্কা হাওয়াই মিঠাই না। এক্কেবারে দেশি । কাচের বাক্সতে গোলাপী বলের মতো। আর থাকত লাল-সবুজ ছোট ছোট বাটিতে আচার।কাচের বাক্সে তিন কোনা প্যাটিসও থাকতো। বাড়ী থেকে বের হবার সময় মা পইপই করে বলে দিত'' বাইরে কিছু খাবা না ।ঝুটি দুলিয়ে লক্ষী মেয়ের মত বলতাম 'আচ্ছা'।মামার কাছে বায়না করলে মামা আচার কিনে দিয়ে বলত----এই দিলাম ।খবরদার মাকে বলিস না কিন্তু, তখনও ঝুটি দুলিয়ে বলতাম----' আচ্ছা'।বেচারা মামা এতগুলো ভাগনা ভাগনি কিভাবে যে সামলাতো সে ই জানে । একেকটা যা বিচ্ছু ছিলাম। রাতে বাসায় ফিরে হয়তো দেখতাম নানা -বাবা-খালু রা মিলে চা আর গুটলিখানের দোকানের ডালপুরি খাচ্ছে। আমাদের একেক জনের চেহারা তখন ভুতের মতো। ঘেমে নেয়ে একাকার।কিন্তু মনটা ফুরফুরে। রাতে থাকতো মা-খালার হাতের বিরানী। তার পর কখন যে ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসতো টের পেতাম না।