জীবনের ব্যস্ততা আর ঝামেলা এড়াতে গত ১৯ তারিখে অনলাইনে কোরবানীর গরুর বুকিং দিলাম। এই বুকিং এর পেছনে একটি ছোট ইতিহাস আছে। গত মাসের শেষ দিকে আমি আমার এক কলিগের সাথে তার গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে যাই। তাদের বাড়ী হলো যশোর জেলার রায়পুর গ্রামে।
সেখানে আমি ৩ দিন ছিলাম। সেই সময় বাড়ীর পাশেই সেখানে একটি গরুর ফার্ম দেখি। ফার্মের নাম ছিল "গ্রীন এগ্রো"।
হাতে কোন কাজ ছিল না বলে একদিন নিছক কৌতুল বসত তাদের ফার্মে গেলাম দেখতে তখন সেখানের কর্মচারীর সাথে কথা বলার পর আমার কাছে কয়েকটা বিষয়টা ভাল লাগে। তারা জানিয়েছিল যে, কোরবানীর জন্যই তারা গরু লালন পালন করছে, এবং ঢাকাতে নিয়ে গরু বিক্রি করবে। অতপর তাদের কর্মচারীর নিকট থেকে ফোন নং নিয়ে এসেছিলাম। পরে যোগাযোগ করে গরু কিনলাম, অনলাইনে। যাকে বলে ডিজিটাল যুগ...

তাদের অনলাইন এড্রেস হলঃ
http://webqurbani.com
কর্মচারীর ভাষ্য মতে তারা অর্গানিক পদ্ধতিতে গরু লালন পালন করে। যার মানে হল তারা গরুকে কোন প্রকার কৃত্তিম ঔষধ, ট্যাবলে, ইনজেকশন, ষ্ট্যরেয়ড বা ইউরিয়া সার খাইয়ে মোটাতাজা করে না।
শুধু মাত্র প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করে থাকে। (এই বিষয়টা আমার কাছে সবচে আর্কশনীয় লেগেছিল)
আমার কলিগকে জিগেস করে সেটা সম্পর্কে সত্য বলে জানতে পারি। কারন তারা পাশের বাড়ীর বলে সব খবরই তাদের জানা থাকার কথা।
ফার্মের কর্মচারীর সাথে কথা বলার পর আমি ফার্মটা ঘুরের দেখি তাতে তাদের কথা সত্য মনে হয়েছিল। তারা শুধু ঘাস, খর, ভূষি, খৈল আর চালের খুদ খাওয়াচ্ছিল। এর বাহির অন্য কিছু দেখি নাই।
তাদের কর্মচারী অপুর বাড়ীতেই ফার্মটা অবস্থিত। অপু জানাল যে, গত বছর তারা যে গরুগুলো বিক্রি করেছিল, কোরবানীর পর সকলেই নাকি গরুর প্রসংসা করেছে। তাদের গরুতে নাকি কোন প্রকার চর্বি ছিল না, এবং মাংশের টেষ্ট নাকি খুবই ভাল ছিল। আমাকে কিছু ক্রেতার ফোন নং দিয়ে যাচাই করতে বলল। যদিও আমি যাচাই করি নি.... আমার কলিগের ভাষ্যই আমি গুরুত্ব দিয়েছি।
আমার মত কেউ যদি আগ্রহী হন যে অনলাইনে গরু কিনতে চান। বা যাদের গরুর হাটে যতে কোন দিক দিয়ে সমস্যা আছে তারা অপুর ফার্ম থেকে গরু কিনতে পারেন।
আর যদি কেউ যশোরে থাকে তারাও ফার্মটা ভিজিট করে দেখতে পারেন।
ফার্মে যাবার ঠিকানাঃ
ঢাকা থেকে বাসে যাবার সময় যশোর শহরের থেকে ২০/২৫ কিলোমিটার আগে "খেজুরা/খাজুরা বাজার" বলে একটা স্থান আছে, এখানে "খেজুরা বাস স্ট্যান্ড বা খাজুরা পেট্রোল পাম্প নামতে হবে। অতপর সেখান থেকে ভটভটি বা রিক্সা নিয়ে আরো ২ কিলোমিটার ভেতরে "রায়পুর" গ্রামে যেতে হবে। রায়পুর বাজারে যাবার কিছু আগেই হাতের বায়ে "গ্রীন এগ্রো" ফার্ম এর সাইনবোর্ড দেখুন। এটাই গরুর ফার্ম।
তাদের ফার্মের কিছু ছবি আমি মোবাইলে তুলেছিলাম। সেটা নিচে দিলাম।
এটা ফার্ম অফিস।
এটা গরু পালনের ঘর। এই রকম দুটি বড় বড় ঘর আছে। প্রতিটি ঘরে কম পক্ষে ৬০ টি গরু থাকে।
ফার্মের ভেতরের অবস্থা।
এটা আমার বন্ধু।

ফার্মের ভেতরের অবস্থা আধুনিক বলেই মনে হয়েছে।
আমার মত যদি কেউ অনলাইনে গরু কিনতে আগ্রহী হন তা হলে তার জন্য কিছু পরামর্শ।
অনলাইনে ওয়েব সাইটে গরুর ছবি উপর মাউস ক্লিক করলে ৩ টি তথ্য পাওয়া যাবে।
যা নিন্ম রুপ।
১. মূল্যা (এটা ফিক্সট)
২. গরুর ওজন। ( এখানে ওজন বলতে শুধু মাত্র গরুর মাংশের ওজন বোঝানে হয়েছে। গরুর চামড়া, হাড়, মাথা, খুর, ভূরি ইত্যাদি যা আমারা সাধারনত খাই না সেগুলো বাদ দিয়ে গরুর ওজন হিসাব করা হয়েছে।)
৩. উচ্চতা ( এটা ছবিতে গরুর সাইজ অনুমান করতে বোঝানো হয়েছে)
৪. গরু নম্বর। যাতে করে কেনার সময় আপনি নম্বর ও ছবি মিলিয়ে নিতে পারেন। ভূল হবার সম্ভবনা নেই।
ওয়েব সাইটে প্রতিটি গরুর ছবি ও নম্বর সহ দেয়া আছে।
আপনি যে গরু বুকিং দিবেন সেটা ডেলিভারীর সময় গরু নম্বর ও ছবি সহ মিলিয়ে নিতে পারবেন। এতে করে প্রতারিত হবার সম্ভবনা নেই।
গতকাল আমাকে ফার্মের কর্মচারী অপু আরেকটি তথ্য জানাল যে, গরুর যে ওজন দেয়া আছে সেটা গত ২০ দিন আগের হিসেবের ওজন। এবং এই ২০ দিনে গরুর ওজন আরে কমপক্ষে ১৫ কেজি বাড়বে বলে তারা আশা করে। সেই হিসাবে গরুর ওজন ওয়েব সাইটের ওজন থেকে বেশী বৈ কম হবে না।
অপু আরো জানালো যে, যারা গরু মোটাতাজা করতে ইনজেকশন দেয় তাদের গরু নাকি ১ মাসে প্রায় দ্বিগুন হয়ে যায়। এতে করে গরুর ওজন বেশী হওয়াতে গরুতে তাদের লাভের পরিমান বেশী হয়। অথচ এই ইনজেকশন মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এবং এই গরুগুলোতে চর্বির পরিমান বেশী থাকে। যাতের হার্টের সমস্য আছে তাদের জন্য আরো বেশী ক্ষতিকর।
তাই তার কোন প্রকার মেডিসিন প্রয়োগ করে না।
ডেলিভারী স্থানঃ
বর্তমানে তারা নাকি শুধু মাত্র ঢাকার ধানমন্ডিতে ২৭ নং রোডে এনে ডেলিভারী দিবে। যশোর থেকে ধানমন্ডি ২৭পর্যন্ত আনার সম্পূর্ন খরচ উক্ত ফার্মের।
ধানমন্ডি ২৭ থেকে আপনার বাড়ী পর্যন্ত নিজ দায়িত্বে নিতে হবে।
===========================================
যেহেতু ফার্মটি আমি নিজে দেখে এসেছি, এবং এদের কাজ কর্মে অত্যন্ত সৎ বলে মনে হয়েছে তাই আমি এটা সম্পর্কে লিখলাম। এতে এমার নিজের কোন ব্যক্তিগত লাভ নেই।
আমি মনে করি আমার মত অনেকরই অনেক রকম সমস্য থাকে যাতে করে গরুর হাটে যেতে পারেন না। অথচ কোবানী দিতেই হবে। এটা তাদের জন্য উপকারে আসতে পারে।
সেই উদ্দেশ্যেই আামর এই পোষ্ট লেখা।