ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট্য। একটি হলে আরো ভালো। আর যদি না হয়, তাহলে তো কথাই নেই। একেবারে সোনায় সোহাগা। অথচ এই- দুটি একটি অথবা না হওয়ার ভেতর দিয়েই মানুষ হরিয়ে ফেলছে খালা-মামা, কাকা- ফুপু’র মতো প্রাণজ সম্পর্কগুলি।
যেভাবে হারিয়ে যায়/যেতে পারে মাটিগন্ধ্যা ছড়া-কবিতাগুলি...
“ঝড়ের দিনে মামার বাড়ি আম কুড়াতে সুখ
পাকা জামে মধুর রসে রঙিন করি মুখ”
বস্তুত: মামার বাড়ি এখন শহরেই হয়ে থাকে। বাড়ি নয়, মূলত বাসা। বাসা মানে পায়রা খোপের মতই একজাতীয় কুঠুরি, যেখানে অতিরিক্ত একজন বেড়ে গেলে শ্বসকষ্ট শুরু হয়। গাছের দেখা কদাচিৎ মেলে। ঝড় হয় না (হয় না মানে, গাছ নেই বলে হলেও বোঝা যায় না)। ফলে, আমও পড়ে না। আর জাম গাছ দেখা তো ভাগ্যের ব্যাপার। গাছ বলতে যা দেখা যায়, তাকে গাছ না বলে গুন্ম বলাই সমীচীন। গাছ নেই তাই অক্সিজেন অভিমান করে চলে গেছে বনÑবাদারে। বাতাস ফেরি করে কার্বনডাই অক্সাইড। এশহরে গাছের চে’ মানুষের সংখ্যা ঢের বেশী। গাছ বলতে যা দেখা যায়, তাকে গাছ না বলে গুন্ম বলাই যথার্থ।বেলকনির টবে এমনকি ড্রয়িংরুমেও বনসাইয়ের জয়জয়কার। এ যেন গছের রাজা গালিভার !আর গ্রীলের নকশায় জড়ানো গাছে জামের চে’ আমলকি ফলানোটাই অনেক সহজ ও স্বাস্থ্যকর। কিন্তু মুশকিল হলো, বাঙলা কবিতা অধিক পুষ্টিকর আমলকির তেতো মুখের চে’ জামের রঙিন মুখই বেশী পছন্দ করে। ফলে, গ্রাম থেকে যারা শহরে মামার বাসায় ব্যাড়াতে যায় কিঙবা শহর থেকেই শহরে, তারা আমলকি চিবোতে চিবোতে এক ধরনের সস্তির ঢেকুর তুলে অনেক বেশী প্রাক্টিক্যাল হয়ে ওঠে। তখন হয়তো তারা টিউব লাইটের অত্যাজ্জ্বল আলোয় কার্পেটের ক্রিত্রিম ঘাসে গল্পের আসর বসায়। গল্পে গল্পে হয়তো তারা নস্টালজিক হয়ে পরে। তাদের মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় পড়া ছড়া-কবিতা-
“টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল স্টার
হাউ আই ওয়ান্ডার হোয়াট ইউ আর...”
এবঙ তাদের কারো কারো নাসিকা নির্গমনে শোনা যায় দীর্ঘশ্বাসের শব্দ-
আহ! কি চমৎকার কবিতা!
এতো গেলো শহুরে মামাদের গপ্পো। আর যদি দুটি সন্তানই হয় মেয়ে। মানে ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক...- এই ফর্মূলানুযায়ী। তাদের সন্তানদের কি অবস্থা দাড়াবে? তাদের তো মামাও রইলো না। তখন তাদের কতটা ছুঁতে পারবে ঝড় দিন... মামার বাড়ি... আম কুড়াবার সুখ...