দীর্ঘদিন বিভিন্ন কারণে কোন পোস্ট দেয়া হয়নি। সাভার ট্রাজেডি নিয়ে দীর্ঘ বিরতির পর আবার শুরু করার চেষ্টা করছি।
২৪ এপ্রিল ২০১৩ । বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মর্মান্তিক ইতিহাস রচিত হয়েছে। সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটানায় হতাহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। টেলিভিশনে লাইভ , অনলাইন পত্রিকায় নিয়মিত আপডেড, ফেসবুকে প্রতি মুহুর্তে আপলোড, দৈনিক পত্রিকার নিউজ, ব্লগে নিয়মিত পোস্টের মাধ্যমে সাভারের ঘটনা বাংলাদেশ সহ সারা পৃথিবী অবগত।
এ মর্মান্তিকতা ডেকে নিয়ে এসেছে মানবিক বিপর্যয়। ঘটনার পর থেকে প্রশিক্ষিত বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূত সহায়তায় শুরু হয় উদ্ধার তৎপরতা। নেমে আসে লাশের মিছিল, আহতের বিশাল সাড়ি।
স্বজনের খোঁজে ছুটে আসে স্বজনেরা, চলে শোকের মাতম, গগন বিদারী আহাজারি, ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা প্রহর।
রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপ, ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়া মানবতা, বাহিনী ও সাধারণ জনতার উদ্ধার তৎপরতা, হতাহতের অবস্থা, শ্রমিক আন্দোলনসহ সবকিছু নিয়মিত আপডেড দিয়ে যাচ্ছে টিভি, ফেবু, পত্রিকা, ব্লগ সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা ছবিগুলোকে একত্রিত করে এ মেগা ছবি ব্লগ। আজকে তার প্রথম পর্বঃ
ধারাবাহিক ভাবে সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছে..................
অভিশপ্ত রানা প্লাজাঃ

অভিশপ্ত রানা প্লাজা, ধসের আগের দিনের ছবি

ভবন ধসের পরে সাইনবোর্ডটি অক্ষত রয়েছে কালের সাক্ষী হিসেবে

ধ্বংসস্তুপের পাশে উৎসূক জনতা

ধসে পড়া ভবনের পেছনের অংশ

রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপ

কিছুক্ষন আগেও যা ছিলো বিশাল ভবন তা এখন শুধুই ধ্বংশস্তুপ

ভেঙ্গে পড়া ভবন

ভাঙ্গা পিলারগুলোর উপরে দাড়িয়ে আছে ধসে পড়া ভবন

এটা কোন যুদ্ধাক্ষেত্র নয়, অবহেলায় ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তুপ
ধ্বংসস্তুপের নিচেঃ

তার পা ছাড়া পুরোটাই চাপা পড়ে আছে

পিলারের নিচে পুরো শরীর

দেয়াল ভেঙ্গে বের করার চেষ্টা চলছে,

চিরদিনের জন্য বুজে গিয়েছে আখি দুটি, এ হাত আর কখনো সুই সুতা ধরবে না

হয়তো সিড়ি দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না


শুধু একটি পা দেখা যাচ্ছে, আর কখনো এ পা দিয়ে হেটে বাড়ী যাবে না

বাঁচার আশায় হয়তো সিড়ি বেয়ে উঠছিলেন কিন্তু সেখানেই সলিল সমাধি

বাঁচার আশায় দুই হাত তুলে জানিয়ে দিচ্ছেন তিনি এখনো বেচে আছেন, বাঁচতে চান

হয়তো প্রিয় কেউ দিয়েছিলো নুপুর টি , নুপুর দেখানো পা দেখিয়েই বিদায় জানিয়ে গেলো

ঐ হাতটি দিয়ে কি লিখেছিলো........বিদায় বিশ্ববাসি?

চির নিদ্রায় ঘুমিয়ে গিয়েছে চোখদ্বয়

একটি পা দেখা যাচ্ছে বাকী শরীর চাপা পড়েছে ধ্বংসস্তুপের নিচে

শরীরের বাকী অংশ কোথায়?

কতক্ষন আগেও যারা ছিলো সরব, ধ্বংসস্তুপের নিচে তারা সকলে এখন নিরব

এ পা গুলো দিয়ে আর কখনো ফিরে আসবেনা কারখানায়

তার নিয়তি কি এভাবেই ছিলো?

হে বিশ্ব , হাত দিয়ে বিদায় দেয়ার অবস্থা নেই

পাশের সঙ্গীটি ইতিমধ্যে চিরবিদায় নিয়েছেন, কিন্তু তিনি আছে এখনো

সে তো কারো মমতাময়ী মা অথবা বোন.... কিন্তু তারা কি এ বিদায় চেয়েছিলো?

বেঁচে থাকার আশায় লোহার রড ধরে রেখেছিলো শক্ত করে

ভবনের নিচে চাপা পড়ে সে কি বেঁচেছিলো?

মর্মান্তিক..........

হাতের বালা দুটি এখন পরিবারের সম্বল

সখি সাথে সিলাই করা আর হবেনা কখনো

শুধু দুটি পা, বাকী মানুষটা কোথায়?

শক্ত করে পিলারটি ধরে রেখে চেষ্টা করছেন বেঁচে থাকার


প্রিয়জন চিরতরে বঞ্চিত হলো এ হাতের সোহাগ থেকে

কাজে যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু আর কর্মস্থলেই শেষ ঠিকানা

এ পিলার থেকে আর বের হওয়া সম্ভব হয়নি


আমরা ক্ষমাপ্রার্থী


হে মানুষেরা , আমি এখনো বেচে থাকতে চাই


শরীর চাপা পড়ে ঝুলে আছে পা দুটি

কারো মাথা উপরে, কারো নিচে

হাত দুটি

লাঞ্চ আর করা হলো না

পৃথিবীর জন্য কি চিঠি রেখে যাচ্ছে সে?



কতটা করুণ...........


মাটিকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা


কারো শরীরে কারো পা


শেষ মুহুর্তেও আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা
পরিচয় বহনকারী কার্ডটি তুলে ধরার শেষ চেষ্টা







নির্লিপ্ত নিথর দেহ


শেষ নিঃশ্বাস হয়তো এখানেই ত্যাগ করেছে

বাড়িয়ে দেয়া হাতটিতে কি আর প্রান ছিলো?

মানুষ মানুষের জন্য( উদ্ধার তৎপরতায় সাধারণ জনগন)ঃ

উদ্ধার কাজে নেমে এসেছে সাধারণ জনগন

ধ্বংসস্তুপ থেকে নামিয়ে আনা হচ্ছে একজনকে

কাদা পানির মধ্যেই চলছে উদ্ধার

মানবতার টানে সাধারন জনগনের স্বঃস্ফুত অংশগ্রহন

পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝে উদ্ধার চলছে

বের করে আনা হচ্ছে একজন নারী শ্রমিককে

একটি একটি ইটকে সড়িয়ে ফেলা হচ্ছে হাতে হাতে

প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর সহায়তা চেয়ে কাগজে লিখে আহবান

আহত, নিহতদের নিয়ে এভাবে ছুটে চলে উদ্ধারকর্মীরা

ধ্বংসস্তুপ থেকে বের হয়ে যেন নতুন জীবন

স্ট্রেচার সংকট, তাই কোলে করেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিরাপদে

ছাত্র, যুবক, শ্রমিক সবাই ছুটে এসেছে স্বেচ্ছায়

প্রশিক্ষিত বাহিনীর সাথে সাথে সহায়তা করে যাচ্ছে প্রানপণ

কে আপন, কে পর..... সবাই তো মানুষ

জীবন বাজি রেখে চলছে উদ্ধার

সকলেই আজ একই কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে

এখানে নেই কোন ভেদাভেদ, শুধুই উদ্ধার

উৎকন্ঠিত জনগন

পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই কিন্তু মানবতাই যেন শক্তি

উদ্ধার তৎপরতায় অভিনব পদ্ধতি

প্রতি মুহুর্তে জীবনের ঝুঁকি তবুও থেমে নেই উদ্ধার


সকল কিছুকে তুচ্ছ করে নামিয়ে আনছেন একেক জনকে
একেক পর এক সুরঙ্গ কেটে ভিতরে প্রবেশ করছেন উদ্ধারকর্মীরা
কোন ঘন্টা হিসেব করে নয় , চলছে অবিরাম

উদ্ধার তৎপরতায় অসুস্থ হয়ে নিজেই চিকিৎসাধীন

উদ্ধার কাজে নেমে এসেছে নারীরাও
এখানে কোন দল,মত নেই । সকল কিছুর উর্ধ্বে উঠে সাধারণ মানুষ নেমে এসে উদ্ধার কাজে। ছাত্র, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, নারী সকলেরই একটা পরিচয়............ আমরা মানুষ , মানুষ মানুষের জন্য।
বিঃদ্রঃ পোষ্টে ছবি বেশী হওয়ায় আগামী পর্বের জন্য কিছু ছবি উঠিয়ে নিলাম।
পরবর্তী পর্বে থাকবে আরো অনেক ছবি , আপনাদের কাছে এছাড়াও ছবি থাকলে দেয়ার অনুরোধ রইল। এক সাথে সংরক্ষনে থাকুক এ মর্মান্তিক সাভাব ট্রাজেডি

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৩ রাত ১১:১০