বিবর্তন-প্রক্রিয়ায় স্বার্থপর মানুষ ও প্রাণীরা কোনো প্রশ্রয় পায় না। কিন্তু সহযোগিতামূলক মনোভাবসম্পন্ন মানুষেরা বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে। নতুন এক গবেষণার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানিয়েছেন। নেচার কমিউনিকেশনস সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, সহযোগিতামূলক একটি পরিবেশে স্বার্থপর প্রাণীদের সুষ্ঠু বিকাশ সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্বার্থপরতা মানুষকে পিছিয়ে দেয়।
কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি দল গবেষণা চালায়। ওই গবেষকেরা মানুষের পারস্পরিক দ্বন্দ্বমূলক এবং সহযোগিতার পরিস্থিতির মধ্যে ছলনা শনাক্ত করার জন্য ‘একজন কয়েদির উভয় সংকট’ নামের একটি নমুনা তত্ত্ব প্রয়োগ করেন। এতে ব্যক্তির নির্দিষ্ট ধরনের আচরণের কারণ বেরিয়ে আসে। এই পরীক্ষায় দুজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে পৃথক কারাকক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একটি বিশেষ শর্তে তাঁদের প্রত্যেককে মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়। শর্তটি হলো অপর সন্দেহভাজন ব্যক্তির ব্যাপারে তথ্য দিতে হবে। ফলে ওই ব্যক্তিটির ছয় মাসের কারাদণ্ড হবে। এ ক্ষেত্রে যদি উভয় ব্যক্তি পরস্পরের গোপনীয় তথ্য প্রকাশ করেন (স্বার্থপর অবস্থান) দেন, তাহলে প্রত্যেকের তিন মাসের সাজা হবে। আর যদি উভয়ে পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন বা তথ্য প্রকাশে বিরত (সহযোগিতামূলক অবস্থান) থাকেন, তাহলে প্রত্যেকের এক মাস করে কারাদণ্ড হবে। গণিতবিদ ও বিশেষজ্ঞ জন ন্যাশ হিসাব করে দেখিয়েছেন, এই নমুনা তত্ত্বের প্রয়োগকালে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ পরস্পর সহযোগিতামূলক অবস্থান থেকে বিরত থাকে।
সংশ্লিষ্ট গবেষক ক্রিস্টোফ অ্যাডামি বলেন, ন্যাশের বক্তব্যের যথার্থতা নিয়ে বহু বছর ধরে মানুষের মধ্যে সংশয় ছিল। কারণ, প্রাণীজগতে মানুষ থেকে শুরু করে অণুজীব পর্যন্ত সবার মধ্যে সহযোগিতার প্রকাশই বেশি দেখা যায়। তবে মজার ব্যাপার হলো পারস্পরিক যোগাযোগের বিষয়টি আগে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি। সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তি যদি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারতেন, তাহলে উভয়ে নীরব থেকে সর্বনিম্ন সাজা ভোগ করার সুযোগ নিতে পারতেন। কিন্তু ‘খারাপ ও স্বার্থপর’ অবস্থান গ্রহণের ফলে তাঁদের বেশি শাস্তি পেতে হয়। এভাবে প্রাণীজগতে স্বার্থপরদের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়।
এই গবেষণার ফলাফলের কারণে বিজ্ঞানীদের পুরোনো একটি তত্ত্ব এখন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে যাতে নিজেকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছিল। যুক্তরাজ্যের লিচেস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যান্ড্রু কোলম্যান বলেন, প্রকৃতিতে প্রাণীকুলের মধ্যে সহযোগিতামূলক অবস্থানের ব্যাপারটি বিবর্তনবাদের প্রবক্তা চার্লস ডারউইনকেও বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছিল। প্রতিটি প্রাণীকে আলাদাভাবে নিজ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে যেতে হয় না, ব্যাপারটা ঘটে জিনগত পর্যায়ে। বিবিসি।
বাংলাদেশে এ নিয়ম প্রজোয্য নয়। এখানে যে যতবেশী স্বার্থপর সে তত সফল।
সূত্র:
প্রথম আলো ডেস্ক | আপডেট: ০৩:৪৭, আগস্ট ০৪, ২০১৩