ঠিক সে সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম এক Facebook বার্তায় বলেছেন “সরকার অন্যায়ভাবে জামায়াতের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দিচ্ছে। সুকৌশলে দেশে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য সরকার বিরোধী দলকে হিংসাত্মক কর্মসূচি দিতে বাধ্য করছে।”
এই ব্যাপারে অমি রহমান পিয়ালের বক্তব্যটি নজরে পড়ার মত, “ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে যে জনমতের দরকার সেটা বিপজ্জনকরকম ভারসাম্যহীন। ” তার বক্তব্য থেকে বুঝা যাচ্ছে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এতটা সহজ হবে না।
প্রশ্ন হচ্ছে, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলে কার বেশি লাভ হবে, বিএনপির না আওয়ামী লীগের? দেশের কথা বাদই দিলাম।
২০০০-০১ সালের দিকে প্রথম যখন জামায়াত জোট বাঁধে বিএনপির সাথে তখন “কেন আপনারা নারী নেতৃত্ব মেনে নিলেন” এ ধরনের প্রশ্নের জবাবে জামায়াত নেতা-কর্মীরা বলত এটা একটা কৌশল। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এ কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। এটি ছিল বাইরের কথা।
তাহলে মূল কথা কি?
এ সম্পর্কে তিনটি পয়েন্ট উল্লেখ করা যেতে পারে:
১. এ সময় আমি জামায়াতে বেশ কিছু ঘরোয়া মিটিং ও ইফতার পার্টিতে উপস্থিত ছিলাম। এ মিটিংগুলোতে একই প্রশ্নের জবাবে বার বার বলা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ আমাদের যতখানি শত্রু, বিএনপিও ঠিক ততখানিই শত্রু। ….
তখন জামায়াত-শিবির ক্ষমতায় যাবার বিশাল একটি নীল নকশা করেই জোটবদ্ধ হয় বিএনপির সাথে। জামায়াতের প্রথম লক্ষ্য ছিল বিএনপিকে ভেঙ্গে দেয়া। এতে দেশে শুধুমাত্র দুটি দলের অস্তিত্ব থাকবে। জামায়াত ও আওয়ামী লীগ। জামায়াত একবার দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারলে তাদের ক্ষমতায় যাওয়া রোধ করার শক্তি কারো থাকবে না। তাদের বিভিন্ন আলোচনা থেকে এটা বুঝা যেত।
২. জামায়াতের দ্বিতীয় পরিকল্পনার আওতায় ছিল দেশের প্রশাসন, আইন বিভাগ, ব্যাংকিং, বাণিজ্যসহ সকল সেক্টরে জামাত-শিবিরের লোক সেট করা! করেছেও তাই। আজকের (১৫ নভেম্বর, ২০১২) প্রথম আলো পত্রিকায় “মারমুখী জামায়াত, পুলিশ কেন মার খাচ্ছে?” শিরোনামে যে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে তাতে এই ধারণাটি আরো পরিষ্কারভাবে বুঝা যাবার কথা।
একটি হতবাক হবার মতো ঘটনা উল্লেখ করলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। জামায়াত-শিবিরের অনেক কর্মী ডেসটিনি ২০০০ লি. কোম্পানিতে জয়েন করে। এসময় তাদেরকে জামায়াত-শিবির থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত এমন একজনকে একদিন বলতে শুনেছি, জামায়াত-শিবির পরিকল্পিতভাবে প্রতিটি সেকশনে নিজেদের লোক সেট করছে। একদিন যখন ডেসটিনি বাংলাদেশের অন্যতম একটি শক্তি হয়ে দাঁড়াবে তখন নেতারা বুঝতে পারবে সে ডেসটিনিতে কাজ করায় জামায়াত-শিবিরের কত বড় উপকার হয়েছে।
৩. এবার আসি পিয়াল ভাইয়ের স্ট্যাটাস প্রসঙ্গে। তিনি সত্যি কথাই বলেছেন। দেশের বৃহত্তর একটি জনগোষ্ঠী ধর্মীয় অনুভূতির কারণে জামায়াত-শিবিরের প্রতি শুধুমাত্র সহানুভূতিশীলই নন, বরং তাদেরকে অন্ধভাবে সমর্থন দিতেও রাজি।
এ ব্যাপারেও একটি প্রমাণ দিতে পারি। ছোট বেলায় স্কুলে যাবার পথে গ্রামের কোনও এক অর্ধশিক্ষিত ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি, আমি জামায়াত ইসলাম বুঝি না, আওয়ামী লীগ বুঝি না। আমি বুঝি কোরান। জামায়াত কোরানের কথা বলে, আমি তাদেরকেই সমর্থন করি। এবার আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা করার প্রয়োজন হলে তারাই করবে। আমি আমি তো আল্লাহর কাছে মুক্ত। আমি বলব আমি কোরআনকে সাপোর্ট করেছি। তখন এটি আমার কাছেও অনেক যুক্তিযুক্ত কথা বলে মনে হয়েছিল। এখনো বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ এই যুক্তিতেই বিশ্বাস করে।
সাধারণ মানুষের অনেকে আছে যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকেও আওয়ামী দুঃশাসন মনে করছে। সেটি প্রমাণ করতে চাইলে সাধারণ মানুষের সাথে মিশে যেতে হবে একদম আপন হয়ে। তখন এসব প্রসঙ্গ টানলেই বুঝা যাবে তারা ধর্মীয় রাজনীতির ব্যাপারে কতখানি অন্ধ।
আমার বক্তব্য:
১. জামায়াত-শিবির বিএনপির অস্তিত্বকে ধ্বংস করবে এটি একটি অমূলক ধারণা হলেও তারা কিছুটা হলেও সফল হয়েছে এটা বলা চলে। কারণ এরই মধ্যে আমরা দেখেছি একসময় বিএনপিতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছিল। সেখানে জামায়াতের কোনও হাত ছিল কিনা তা ভেবে দেখার সময় এসেছে এখন। আর আমরা শুধু অপেক্ষায় আছি, বিএনপি কি শেষ পর্যন্ত জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আসবে না কি তাদেরকে সমর্থন দিয়েই যাবে।
২. যারা জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার পক্ষে, তাদেরকে অবশ্যই জামায়াতের সকল পরিকল্পনাকে মাথায় রেখে আরো সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নিতে হবে। শক্তি দিয়ে নয়, পরিকল্পনা করেই সামনের দিকে এগুতে হবে। এখনই সময় সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলার। নইলে দিন যত যাবে জামায়াত-শিবির তত শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তখন দেশে চরম একটি অরাজকতা সৃষ্টি হবার পর শুধু মাত্র চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।
(১৫ নভেম্বর ২০১২ তারিখে উন্মোচনডটকমে প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:০২