somewhere in... blog

প্রসঙ্গ: জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধকরণ

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কিছু দিনের তাণ্ডবের পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

ঠিক সে সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম এক Facebook বার্তায় বলেছেন “সরকার অন্যায়ভাবে জামায়াতের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দিচ্ছে। সুকৌশলে দেশে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য সরকার বিরোধী দলকে হিংসাত্মক কর্মসূচি দিতে বাধ্য করছে।”

এই ব্যাপারে অমি রহমান পিয়ালের বক্তব্যটি নজরে পড়ার মত, “ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে যে জনমতের দরকার সেটা বিপজ্জনকরকম ভারসাম্যহীন। ” তার বক্তব্য থেকে বুঝা যাচ্ছে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এতটা সহজ হবে না।

প্রশ্ন হচ্ছে, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলে কার বেশি লাভ হবে, বিএনপির না আওয়ামী লীগের? দেশের কথা বাদই দিলাম।

২০০০-০১ সালের দিকে প্রথম যখন জামায়াত জোট বাঁধে বিএনপির সাথে তখন “কেন আপনারা নারী নেতৃত্ব মেনে নিলেন” এ ধরনের প্রশ্নের জবাবে জামায়াত নেতা-কর্মীরা বলত এটা একটা কৌশল। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এ কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। এটি ছিল বাইরের কথা।

তাহলে মূল কথা কি?

এ সম্পর্কে তিনটি পয়েন্ট উল্লেখ করা যেতে পারে:

১. এ সময় আমি জামায়াতে বেশ কিছু ঘরোয়া মিটিং ও ইফতার পার্টিতে উপস্থিত ছিলাম। এ মিটিংগুলোতে একই প্রশ্নের জবাবে বার বার বলা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ আমাদের যতখানি শত্রু, বিএনপিও ঠিক ততখানিই শত্রু। ….

তখন জামায়াত-শিবির ক্ষমতায় যাবার বিশাল একটি নীল নকশা করেই জোটবদ্ধ হয় বিএনপির সাথে। জামায়াতের প্রথম লক্ষ্য ছিল বিএনপিকে ভেঙ্গে দেয়া। এতে দেশে শুধুমাত্র দুটি দলের অস্তিত্ব থাকবে। জামায়াত ও আওয়ামী লীগ। জামায়াত একবার দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারলে তাদের ক্ষমতায় যাওয়া রোধ করার শক্তি কারো থাকবে না। তাদের বিভিন্ন আলোচনা থেকে এটা বুঝা যেত।

২. জামায়াতের দ্বিতীয় পরিকল্পনার আওতায় ছিল দেশের প্রশাসন, আইন বিভাগ, ব্যাংকিং, বাণিজ্যসহ সকল সেক্টরে জামাত-শিবিরের লোক সেট করা! করেছেও তাই। আজকের (১৫ নভেম্বর, ২০১২) প্রথম আলো পত্রিকায় “মারমুখী জামায়াত, পুলিশ কেন মার খাচ্ছে?” শিরোনামে যে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে তাতে এই ধারণাটি আরো পরিষ্কারভাবে বুঝা যাবার কথা।

একটি হতবাক হবার মতো ঘটনা উল্লেখ করলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। জামায়াত-শিবিরের অনেক কর্মী ডেসটিনি ২০০০ লি. কোম্পানিতে জয়েন করে। এসময় তাদেরকে জামায়াত-শিবির থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত এমন একজনকে একদিন বলতে শুনেছি, জামায়াত-শিবির পরিকল্পিতভাবে প্রতিটি সেকশনে নিজেদের লোক সেট করছে। একদিন যখন ডেসটিনি বাংলাদেশের অন্যতম একটি শক্তি হয়ে দাঁড়াবে তখন নেতারা বুঝতে পারবে সে ডেসটিনিতে কাজ করায় জামায়াত-শিবিরের কত বড় উপকার হয়েছে।

৩. এবার আসি পিয়াল ভাইয়ের স্ট্যাটাস প্রসঙ্গে। তিনি সত্যি কথাই বলেছেন। দেশের বৃহত্তর একটি জনগোষ্ঠী ধর্মীয় অনুভূতির কারণে জামায়াত-শিবিরের প্রতি শুধুমাত্র সহানুভূতিশীলই নন, বরং তাদেরকে অন্ধভাবে সমর্থন দিতেও রাজি।

এ ব্যাপারেও একটি প্রমাণ দিতে পারি। ছোট বেলায় স্কুলে যাবার পথে গ্রামের কোনও এক অর্ধশিক্ষিত ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি, আমি জামায়াত ইসলাম বুঝি না, আওয়ামী লীগ বুঝি না। আমি বুঝি কোরান। জামায়াত কোরানের কথা বলে, আমি তাদেরকেই সমর্থন করি। এবার আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা করার প্রয়োজন হলে তারাই করবে। আমি আমি তো আল্লাহর কাছে মুক্ত। আমি বলব আমি কোরআনকে সাপোর্ট করেছি। তখন এটি আমার কাছেও অনেক যুক্তিযুক্ত কথা বলে মনে হয়েছিল। এখনো বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ এই যুক্তিতেই বিশ্বাস করে।

সাধারণ মানুষের অনেকে আছে যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকেও আওয়ামী দুঃশাসন মনে করছে। সেটি প্রমাণ করতে চাইলে সাধারণ মানুষের সাথে মিশে যেতে হবে একদম আপন হয়ে। তখন এসব প্রসঙ্গ টানলেই বুঝা যাবে তারা ধর্মীয় রাজনীতির ব্যাপারে কতখানি অন্ধ।

আমার বক্তব্য:

১. জামায়াত-শিবির বিএনপির অস্তিত্বকে ধ্বংস করবে এটি একটি অমূলক ধারণা হলেও তারা কিছুটা হলেও সফল হয়েছে এটা বলা চলে। কারণ এরই মধ্যে আমরা দেখেছি একসময় বিএনপিতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছিল। সেখানে জামায়াতের কোনও হাত ছিল কিনা তা ভেবে দেখার সময় এসেছে এখন। আর আমরা শুধু অপেক্ষায় আছি, বিএনপি কি শেষ পর্যন্ত জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আসবে না কি তাদেরকে সমর্থন দিয়েই যাবে।

২. যারা জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার পক্ষে, তাদেরকে অবশ্যই জামায়াতের সকল পরিকল্পনাকে মাথায় রেখে আরো সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নিতে হবে। শক্তি দিয়ে নয়, পরিকল্পনা করেই সামনের দিকে এগুতে হবে। এখনই সময় সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলার। নইলে দিন যত যাবে জামায়াত-শিবির তত শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তখন দেশে চরম একটি অরাজকতা সৃষ্টি হবার পর শুধু মাত্র চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

(১৫ নভেম্বর ২০১২ তারিখে উন্মোচনডটকমে প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:০২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনূস বিদেশে দেশকে করছেন অপমান-অপদস্থ

লিখেছেন sabbir2cool, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৪৬


দুর্নীতির কারণে তার যাওয়ার কথা ছিল জেলে, গেছেন তিনি বঙ্গভবনে প্রধান উপদেষ্টার শপথ নিতে। এটা খোদ মুহাম্মদ ইউনূসের স্বীকারোক্তি ছিল। তার দেশশাসনের আট মাসে বিদেশে যখন গেছেন তিনি, তখন স্বীকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদের বাড়ি

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:২৭


রোজার ঈদে মাকে খুঁজতে যাব
পাঁচ হাজার টাকা রেখে দিয়েছি-
সিঁলিকের শাড়ি কিনবে বলে;
বাবা আর বিড়ি খাওয়া দায়ে
আমাকে নাক সেছুর দিবে না
কোন কোরবানী ঈদে-কোন
পথে যাবো- কোন ঈদ আসবে!
আর অপেক্ষা করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এখানে আর নিরাপত্তা কই!=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:১৩


কোন সে উন্নয়নের পথে হাঁটছি বলো
এই গিঞ্জি শহর কি বাসের অযোগ্য নয়?
শূন্যে ভাসমান রাস্তা-নিচে রাজপথ
তবু কি থেমে আছে যানজট কিংবা দুর্ঘটনা?

দৌঁড়ের জীবন-
টেক্কা দিতে গিয়ে ওরা কেড়ে নেয় রোজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই শহর আমার নয়

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:০২




এই শহর আমার নয়
ধুলিমলিন, পোড়া ধোঁয়ায় ঘেরা
ধূসর এক স্বপ্নহীন চেহারা।
এই শহর, আমার নয়।

ঘোলাটে চোখে জমে হাহাকার,
চেনা মুখেও অচেনার ছাপ।
পথে পথে স্বপ্নরা পোড়ে,
আলোর ছায়ায় খেলে আঁধার।

এই শহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

টিউবওয়েলটির গল্প

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৪



এটা একটি টিউবওয়েল।

২০০৯ সালে, যখন আমি নানী বাড়ি থেকে লেখাপড়া করতাম, তখন প্রতিদিন এই টিউবওয়েল দিয়েই গোসল করতাম। স্কুল শেষে ক্লান্ত, ঘামাক্ত শরীর নিয়ে যখন ঠান্ডা পানির ঝাপটায় নিজেকে স্নান... ...বাকিটুকু পড়ুন

×