বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য যেমন প্রয়োজন তেমনি সুস্থ্ সবল নিরোগ দেহের জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যের বিকল্প নেই। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে আমরা ফাস্টফুড কালচারের
সঙ্গে পরিচিত হয়েছি অনেক আগেই। দিন দিন এ ফাস্টফুডের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে, যা আমাদের
স্বাস্থ্যের জন্য মানাত্মক ক্ষতিকর। দিনভর গরম বাতাস
আবার সন্ধ্যায় ঝড়ো হাওয়া প্রকৃতির এমন
লীলাখেলাই জানিয়ে দিচ্ছে গ্রীষ্মকাল আসন্ন
অর্থাৎ মধুমাস।
এ সময়টায় বাজারে তরমুজ, বেল,ডাব, বাঙ্গিসহ বিভিন্নরকম মৌসুমী ফলমূল পাওয়া যায় এগুলো খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিসমৃদ্ধ।
একটি পরিবারে বিভিন্ন বয়সের মানুষ থাকে একেবারে ছোট্ট সোনামণি থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত। তাই এমন খাবার নির্বাচন করতে হবে যা সবাই গ্রহণ করতে পারে। এ সময় আমরা যেসব সমস্যার
সম্মুখীন হই তার মধ্যে শরীরে পানিস্বল্পতা অন্যতম। খাবার
বিষয়ে আমাদের একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
বর্তমানে বাজারে নানারকম গ্রীষ্মকালীন ফল যেমন তরমুজ, ডাব, বেল, বাংগী, লেবু পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলো পানির ঘাটতি মেটানোর পাশাপাশি খনিজ লবণের অভাব পূরণ করবে। এ গরমে লেবুর শরবত অনেক উপকারী। লেবুর শরবতে প্রচুর
পরিমাণে শর্করা থাকে, যা আমাদের অবসন্নতা দূর
করে। বাজারের বিভিন্ন ধরনের পানীয় শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এতে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট, থাকে যা আমাদের মুটিয়ে ফেলে। আবার আজকাল রাস্তার পাশে উন্মুক্ত অবস্থায় বিভিন্ন রকম রঙিন শরবত বিক্রি করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে পানির
উৎস ও বরফটা যদি পরিষ্কার না হয় এতে হয়তো প্রচণ্ড তাপদাহে মানবমন তৃপ্ত হবে। পাশাপাশি নানাবিধ রোগকে বিশেষ
করে আমাশয়-জন্ডিস ও বিভিন্ন রকম পেটের অসুখকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
এ সময়ের মৌসুমী ফলের মধ্যে রয়েছে বেল ও বাংগী।
বেলে প্রচুর পরিমাণে শর্করা রয়েছে এবং এটা কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর
করে। বাংগীর শরবত পানির পিপাসা না মেটালেও এতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা ও খনিজ লবণ রয়েছে এবং পানির উৎস নিরাপদ হলে এটিও নিরাপদ।
এতো গেল গ্রীষ্মকালীন ফলের কথা। আর খাদ্য তালিকার কথা চিন্তা করলে আমাদের অবশ্যই শিশুদের এবং বয়স্কদের কথা আলাদাভাবে চিন্তা করতে হবে।
শিশুদের খাবারঃ
গরমকালে শিশুদের খাবারের ব্যাপারে খুবই সচেতন হতে হবে। তা না হলে ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক বাবা-মায়ের ধারণা শুধু মাছ-মাংস খাওয়ালেই শিশুর পুষ্টি চাহিদা মিটে যায়। অনেক সময়ই মাছ-মাংস কেনা সম্ভব হয় না। শিশুরা রঙ্গিন খাবার পছন্দ করে। তাদের বিশেষ কোনও রঙের ওপর দুর্বলতা থাকলে মায়েদের সেটা শনাক্ত করতে হবে। এ মৌসুমে মিষ্টি কুমড়া, পুঁইশাক, সজনে, গাজর, টমেটো এসব সবজি নরম করে খাওয়ানো যেতে পারে। যেসব শিশু স্কুলপড়ুয়া তাদের সঙ্গে গ্লুকোজের শরবত দেওয়া যেতে পারে, এতে পানিশূন্যতা রোধ হবে। একেবারে ছোট অর্থাৎ ছয়মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধই সর্বোৎকৃষ্ট খাবার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুধসহ অন্যান্য নরম খাবার দিতে হবে। ছোটবেলা থেকেই সব ধরনের খাবারে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
বয়স্কদের খাবারঃ
সব মানুষেরই প্রিয় কিছু খাবার থাকে। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর খাবারের ওপর নানা ধরনের বিধি নিষেধ তৈরি হয়। খাবার রুচিও আগের মতো থাকে না, তাই যারা একটু বয়স্ক তাদের খাবারের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। কেননা বৃদ্ধ বয়সে শরীরে নানারকম রোগ বাসা বাঁধে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ
অনুযায়ী খাবার তালিকা তৈরি করুন। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সবধরনের ভিটামিন রাখার চেষ্টা করুন। আমিষ, শর্করা, চর্বির পরিমাণ কমিয়ে সুষম খাবার হিসেবে মৌসুমী ফল, শাকসবজি ফলের র খেতে দিন। সময়মতো খেতে দিন।
মাঝে মধ্যে তাদের পছন্দের খাবার দিন।
অনেকের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তাদের খাবার দিন বুঝেশুনে। তাদের ডায়াবেটিস মিষ্টি বা বিস্কুট খেতে দিন। যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের কোলেস্টেরলমুক্ত খাবার দিন।
বিশ্বায়ন ও নগরায়নের এ যুগে উন্নয়নশীল বিশ্ব, বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুষ্টিহীনতা একটি বড় সমস্যা।
আমাদের দেশের জনগণের মধ্যে ভিটামিনের অভাবে রক্তস্বল্পতা, প্রোটিনের অভাবে কর্মশক্তির অপচয়, আয়োডিন ও আয়রনের
অভাবে আইকিউ কম হয়ে থাকে। তাই এসব সমস্যা সমাধানে আমাদের সচেতন হতে হবে। সর্বোপরি আমাদের প্রয়োজন পুষ্টি সচেতনতা।
সাবধানতাঃ
বাজারে যেসব ফল পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর গুনগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। আজকাল বেশকিছু অসাধু ব্যবসায়ি দেশীয় এসব ফলের সাথে ফরমালিন- প্রিজারভেটিভ মিশিয়ে সেগুলোকে খাওয়ার অযোগ্য করে তুলছেন। কাজেই সাবধানতার
সাথে দেখেশুনে ফল কিনতে হবে।
(সংকলিত পোস্টঃ তথ্যসূত্র -ইন্টারনেট)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:০৫