somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলিম উম্মাহ্ ও পর্দা সংস্কৃতি: একটি বাস্তবিক বিশ্লেষন এবং আদালতের সাম্প্রতিক রায়

২৬ শে আগস্ট, ২০১০ সকাল ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাস ছয়েক আগের কথা। ট্যাক্সি যোগে দুবাই থেকে আমিরাতের আরেক প্রদেশ রাস আল খাইমা ফিরছিলাম। আমরা সর্বমোট চারজন। ট্যাক্সিতে নানান বিষয়ে আলাপ করছি। এর মধ্যে স্থানীয় আরবি লোকদের জীবন যাপনের স্টাইল, তাদের পরকাল ভাবনা ইত্যাদি বিষয়গুলো চলে আসল। হঠাত বজ্রপাতের মতো বাঙ্গালী ট্যাক্সি ড্রাইভারটি উঠল ''এই দেশের মানুষগুলোন যদি বেহেশতে যায় তাইলে আমগো দেশের মানুষ হেগো পাচশ বছর আগে বেহেশতে যাইব।''

আচমকা এক ট্যাক্সি ড্রাইভারের কাছ থেকে এ ধরণের দুরদর্শীমূলক কথা শুনে আমরা কেউই অবাক হইনি। বরং একটু আগ্রহই অনুভব করেছিলাম। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম ট্যাক্সি ড্রাইভারটি এখানে আসার আগে আট বছর সৌদি আরব কাটিয়েছেন। চাকরি করেছেন বাসার পার্সোনাল ড্রাইভার হিসেবে।

গত দুই বছর যাবত সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানের কারণে এখানকার সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে আমি মোটামুটি অবগত। কিন্তু পাশ্ববর্তী দেশ, মুসলিম উম্মাহ’র পূণ্যভূমি সৌদি আরব সম্পর্কে এখনো ওরকমভাবে জানিনা। তাই ওখানে দীর্ঘদিন বসবাস করা একজন মানুষের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা শুনতে একটু উদগ্রীব না হয়ে পারলাম না।
আমি তাকে বললাম, ''এই দেশটা না হয় উদার। কিন্তু আমি তো শুনেছি সৌদির নিয়ম কানুন নাকি অনেক কড়া।'' তিনি একটু হেসে নিলেন। তারপর অনেকটা ঘৃনার সাথেই বললেন, ''আরে রাখেন মিয়া নিয়ম-কানুন। কি হয় না ওইহানে হেইডা কন। সবই পাওয়া যায়। মদ, নারী, জুয়া সবই চলে। এইগুলা এহন আর গোপন কিছু না। ওপেন চলে। আর এইগুলানতো গেল রাস্তার কথা। ঘরের মধ্যে যা চলে আপনি হেগুলারে কি কইবেন।''

আমি তাকে থামিয়ে দিলাম। বুঝতে বাকী রইলো না এখানকার ও সৌদির মানুষদের জীবন ব্যবস্থার তেমন কোনো ফারাক নেই।


২.
এবার আসি কী করছেন মুসলিম উম্মাহ’র পূণ্যভূমিগুলোর জনগণেরা। আমার কাছে সবচেয়ে অবাক লেগেছে এদের যৌন-জীবন। দৈনন্দিন কাজকর্ম, ভাবনা, ভবিষ্যত পরিকল্পনা সককিছুই যেন যৌনতাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। ঘরে তিন-চারটি সুন্দরী স্ত্রী রেখে মধ্যরাতে কর্তা ছুটছেন কোনো ফাইভ স্টার হোটেলে অথবা নর্তকীদের রঙ্গশালায়। সেখানে গিয়ে রতিকর্মে মগ্ন হচ্ছেন কোনো ফিলিপাইনি অথবা রাশিয়ান নিষিদ্ধ নারীর সঙ্গে। আর যে কর্তা আলসেমির কারণে অতদূর যাননি তিনি তার শরীরের ঝাল মেটাচ্ছেন বাসার খেটে খাওয়া কাজের মেয়েটির ওপর। ওদিকে কর্তার স্ত্রী-কণ্যারাও থেমে নেই। তারাও হয়তো চলে গেছেন কোনো নিশি-ক্লাবে অথবা বাসার ড্রাইভারটিকে জোর করে নিয়ে গেছেন নিজেদের শোয়ার ঘরে। এমন কাহিনীও শুনেছি যে একজন ড্রাইভারকে পালা করে একেকদিন একেকজনের শোয়ার ঘরে দায়িত্ব পালন করতে হয়।

বর্ণনাগুলো আমাদের কাছে কুরূচিপূর্ণ মনে হচ্ছে। কিন্তু এটাই এদের যৌন জীবন। পূণ্যভূমির নিষ্পাপ লোকদের কাছে এটাই স্বাভাবিক আচরণ।

ও হ্যা। একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না। পোশাক-আশাকের ব্যাপারে কিংবা পর্দার ব্যাপারে কিন্তু এরা খুবই সচেতন। ওই যে কর্তা যিনি মধ্যরাতে হোটেলে ছুটেছিলেন। তিনি কিন্তু কান্দুরা (যেটাকে আমরা বাঙ্গালীরা সুন্নতী পোশাক বলে থাকি), টুপি, মাথার রুমাল ছাড়া রাস্তায় বের হন না। আর তার পত্নীগণ কিংবা কন্যাগণ। বোরকাতো আছেই। গাড়ির গ্লাসটাও কালো করতে ভুল করেন না। পর্দা বলে কথা। এগুলো কেন বললাম তা একটু পরে অবতারণা করছি।

এবার আসি এদের ধর্মীয় কাজ-কর্ম সম্পর্কে। মুখে ধর্মীয় বাণী আওড়াতে এরা আমাদের দেশের কাঠমোল্লাদের মতোই পটু। নামাজ-কালামের ধারে-কাছেও নেই। অথচ আপনাকে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করলে আপনি যদি শুধু ভালো আছি বলেন তাহলে এরা প্রচন্ড রেগে যাবে। উল্টো আপনাকে প্রশ্ন করবে, ''তুমি মুসলমান না? তাহলে আলহামদুলিল্লাহ বলো নি কেন?'' এছাড়া কথায় কথায় সুবহানাল্লাহ-মাশাল্লাহ-ইনশাল্লাহ তো আছেই। এমনকি রাস্তায় কোনো উচু বক্ষ কিংবা ভরাট নিতম্ব ওয়ালা ভিনদেশী মেয়ে দেখলেও এরা বলে ‘মাশাল্লাহ’। এখানে বলে রাখা ভালো শুধু আরবী নয়, আমাদের কাঠমোল্লাদের প্রিয় স্বদেশভূমি পাকিস্তানের মানুষদেরও আমি একই কারণে ‘মাশাল্লাহ’ শব্দটি ব্যবহার করতে দেখেছি।

এই হলো আমাদের মুসলিম উম্মাহ। যাদেরকে কেন্দ্র করে মৌলবাদীরা এখনো খেলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে। অভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করে। আমি বছর তিনেক আগে এরকম এক মৌলবাদী বন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলাম, মুখে আল্লাহ আল্লাহ করলেই কি অন্তরে আল্লাহর আসন বসে? তাই যদি হতো বায়তুল হেরেমের খেদমতকারী সৌদি বাদশাহ পথে-ঘাটে জেনা করে বেড়াতে পারতেন না। যার সন্তান সংখ্যা কত তা উইকিপিডিয়ার মতো বিশ্বকোষেরও অজানা।

বন্ধুটি কি উত্তর দিয়েছিল আমার মনে নেই। কিন্তু ওই প্রশ্নের পর সে অনেকদিন আমার সাথে কথা বন্ধ রেখেছিল।


৩.
নারীদের বোরকা পরিধান করা অনেক আরব দেশে বাধ্যতামূলকই বলা চলে। বোরকা ছাড়া কোনো আরবী নারীকে রাস্তঘাটে দেখতে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু শুধুমাত্র পর্দার জন্যই কি এরা বোরকা পড়ছে?

পর্দা যে কোনো চাপিয়ে দেওয়ার জিনিস নয় তা পানির মতো পরিষ্কার। যার মনে পর্দা নেই তার বাহ্যিক অঙ্গ পর্দা দিয়ে ঢাকলেও ভেতরে কি ঘটে তা তো আমরা আরবী রমনীদের ড্রাইভার থেরাপী থেকেই অনেকটা অবগত হয়েছি। আর যার মনে পর্দা রয়েছে তার বোরকা পড়ার প্রয়োজন পড়েনা। অন্তত নিজেকে সংযত রাখতে। কেউ ধর্মীয় কারণে পরলে সেটার প্রেক্ষিত ভিন্ন। এখানে মৌলবাদীরা হয়তো যুক্তি দেখান, বেপর্দা নারীকে দেখে যদি কোনো মুমিনের কামোত্তেজনা জাগে তাহলেতো ওই নারীটিই দায়ী হবে। অতএব নারীটির পর্দা করা বাধ্যতামূলক।

হায়রে দুনিয়া!সর্দি হলে নাক কেটে ফেলা আরকি। সর্দিতো আমার জন্য হয়েছে। নাকের কি দোষ? যে মুমিনটির কামোত্তেজনা এতো বেশি তার ঈমান নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলবো না। সেটি সৃষ্টিকর্তার হাতে। তবে আমার মতে, তার নিয়মিত নিষিদ্ধ পল্লী ভ্রমনে যাওয়া উচিত। নতুবা তিনি শুধু বেপর্দা নারীটিকে দেখে নয়। বোরকা পড়া নারীর নিতম্ব দেখেও যে কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারেন।

বোরকা নিয়ে আমাদের দেশের আদালতের একটি রায় নিয়ে ইদানিং বিভিন্ন জায়গায় মাতামাতি হচ্ছে। মৌলবাদীরা তাদের যুক্তি দেখিয়ে যাচ্ছেন। তাদের উত্তর বোধ করি আমার উপরের আলোচনা থেকেই বেরিয়ে এসেছে। তারপরও আবার বলি। আমাদের দেশ কোনো গোষ্ঠীর নিজস্ব সম্পত্তি নয়। রাষ্ট্র সবার। এখানে কাউকে জোর করে পর্দা করানো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ন বরখেলাফ। কেউ বোরকা পড়তে চাইলে অবশ্যই পড়বে। রাষ্ট্র সে স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে। কোনো মৌলবাদীর কামচেতনার জন্য কোনো নারীকে বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভন্ডামি দেখিয়ে দেশকে কোনো আরব্য মুলুক কিংবা পাকিস্তান বানাতে চায়না। তারা উদারতা দেখিয়েই ওইসব ভন্ডদের চেয়ে পাচ’শ বছর আগে বেহেশতে যেতে চায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:০৩
১৬টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরাইল ধ্বংসের পথ ‼️

লিখেছেন সরকার পায়েল, ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৩:০১

এক ইরান নিয়ে আমেরিকা ইসরাইলের ঘুম হারাম কে জানে আরবে আরও কত ইরান অপেক্ষা করছে পশ্চিমাদের জন্য ‼️ আগামী নয় তারিখ ইরান তার পারমানবিক সর্বশেষ অর্জনের ঘোষণা দিবে l... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন মানুষের মূল্য কত?

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:২২

একজন মানুষের মূল্য কত?
প্রশ্নটি ব্যঙ্গার্থে হলেও, বৈজ্ঞানিকের চোখে এ প্রশ্নটির একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ আছে- সেই প্রসঙ্গে না যাই।

মাথাপিছু আয় বাড়ে, দ্রব্যমূল্য বাড়ে, মূদ্রাস্ফীতি বাড়ে। কিন্তু এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাধু সাবধান! দেশে অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে পলাতক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী অপশক্তি!

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:০৬

সাধু সাবধান! দেশে অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে পলাতক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী অপশক্তি!

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ কর্মসূচির মিছিল, প্রথম আলো অনলাইন থেকে সংগৃহিত।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, লুটপাট, ভাংচুর এবং বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের কেটে কুচিকুচি-নিরাপত্তা চায় ভারত

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


বর্তমানে ভারতে ওয়াকফ সম্পত্তির পরিমাণ ৮৭০,০০০টি যার আয়তন ৯৪০,০০০ একর বা ৩,৮০৮ বর্গ কিমি জমি জুড়ে বিস্তৃত এবং এস সম্পত্তির মোট মূল্য ১,০০,০০০ কোটি রুপি বা ১২ বিলিয়ন মার্কিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিডনী রোগ নিয়ে ব্লগার গণ নিজেদের অভিজ্ঞতা ও সাজেশনস জানাবেন।

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৩২






আমার খুব কাছের (রক্তের), বয়স ৪৭, একজনের কিডনী সমস্যা ধরা পড়ে গত বছর জুলাইয়ে,তখন ক্রিয়েটিনিন ছিলো ৪.৩৩ ; পরে শরীর খারাপ হওয়ায় মেডিকেল ভর্তি থেকে ঔষধ সেবন করে ক্রিয়েটিনিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×