কাহিনী জানা যাক। সুপার হিরোর বাপে বিরাট বিজ্ঞানী। প্রথম দৃশ্যে মারামারি দেখে তো মনে হয় সুপার হিরোর বাপ তো “বাপরে বাপ”। এরপর শহরে গুন্ডাগুলি খালি ভেজাল করে। সুপার হিরো সব জায়গাতে গিয়া তাংফাং কইরা খেলা শেষ। তারপর একজনের শরীর খারাপ হয়। এক মাত্র হিরোর রক্তই পারবে শহরের সবাইকে বাঁচাইতে। ভয়ানক শক্তিশালী ভিলেন, তারপর একটা প্লেনের সমস্যা, একটা ব্যাটার বিরাট জিহবা বাইর কইরা কি যেন করে। ঐ মিঞা খাড়ান! আমি কী “কৃষ-৩” এর কাহিনী বলতেসি নাকী? আরে তাইতো! কাহিনীতে তো ব্যাপক মিল!
দাড়ান আসল কাহিনী বলি। আরে খাইসেরে ভাই। এই মুভিতে তো ১০০ কাহিনী। কোনটা ছাইড়া কোনটা কমু?
কাহিনী ১: স্পাইডার-ম্যান তথা পিটার পার্কার ( Andrew Garfield ) এর জীবন ভালোই চলছে। সব গুন্ডাদের সাইজ করতে ব্যাপক মজা। কিন্তু সামনে আসছে আসল ভিলেন।
কাহিনী ২: পিটার এর নায়িকা Gwen ( Emma Stone) অক্সফোর্ডের বৃত্তি পেয়েছে। একটুর জন্য ম্যান-সিস্টর ইউনিভার্সিটিতে পায়নি। নায়িকা বিলেত গেলে নায়কের হবে কী?
কাহিনী ৩: নায়কের বাপ রিচার্ড ( Campbell Scott) চাকরী করতো OsCorp এ। কিন্তু ঐখানে কিছু অবৈধ ঘটনা ঘটার কারণে সেখান সে পালায় আসে এবং পিটারের কাছে দিয়ে যায় এক ব্যাগ। যেখানে লেখা : “ আমার কাছে তথ্য আছে”।
কাহিনী ৪: OsCorp এর সাধারণ ইলেক্ট্রিক্যাল ইন্জিনিয়ার Max Dillon ( Jamie Foxx) , স্পাইডার ম্যানের বিরাট ভক্ত। কিন্তু কী হবে এই বেকুবরে দিয়া?
কাহিনী ৫: পিটার এর বন্ধু Harry Osborn ( Dane DeHaan) এখন বিরাট ব্যক্তিত্য। কিন্তু ভিতরে সে অনেক একা।
...
কাহিনী ১০০: ( এই মুভির সমস্যাটা কী? এত কাহিনী কেন? কয়জন মিলা লেখসস এই মুভি?)
মুভির ভালো দিক গুলি বলার আগে খারাপ দিকগুলি বলে নেই। মুভিতে ১০০ কাহিনী হলেও সব কাহিনীর সমাপ্তি দেয়া হয়নি। দর্শকদের মনে কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। সব মিলিয়ে সম্পূর্ণরূপে গাঁজাখুড়ি। এক দৃশ্যে মনে হয়: “ ও ও ... তাহলে শেষ হলো মুভি। আরে?? এখনো শেষ হয় নাই? ধুর মিয়া ... ”
অভিনয়ের দিক দিয়ে অসাধারণ Gwen চরিত্রে Emma Stone এবং Aunt May চরিত্রে Sally Field। প্রধান চরিত্রে Andrew Garfield ভাল করেছেন শুধুমাত্র Spider Man হিসেবে, পিটার পার্কার হিসেবে নন। পিটার পার্কার চরিত্রে Tobey Maguire এখনো এগিয়ে আছেন। তবে সেই দোষ আমার মতে চিত্রনাট্যেরই বেশি। এই মুভিগুলিতে পিটারকে ঠিকমত ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে না। Electro চরিত্রে Jamie Foxx কে দেখে বিশ্বাসই হয়নি কীভাবে এত বড় মাপের অভিনেতা হয়ে এই চরিত্র তিনি করলেন। Harry চরিত্রে Dane DeHaan বেশ ভালো করেছেন। মুভিতে কেন জানি ভিলেনগুলার জন্য বেশ মায়াই লাগে। সবার ভাগ্যে কী আর সুপার হিরো হওয়া জুটে?
এবার বলা যাক ভালো দিকগুলি। মুভিটির দৃশ্যায়ন, একশান, গ্রাফিক্স এক কথায় অসাআআআধারণ। স্পাইডার এইখান থেকে ঐখানে যাচ্ছে , এই জাল মারছে , এই মাইর লাগাচ্ছে। একেবারে দুর্দান্ত। ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তির অন্যতম সেরা ব্যবহার হয়েছে মুভিটিতে। মুভিটি সুযোগ পেলে অবশ্যই IMAX 3D অথবা Real-D 3D তে দেখা উচিত। এক কালে সুপার হিরো মুভি দেখতে বসলে সবাই অপেক্ষা করতো কখন হিরো আসবে এবং তারপর তার তেলেসমাতি দেখবো। এই মুভিতে সেই তেলেসমাতির আনন্দ পুরাপুরি ভাবে পাওয়া যায়।
এছাড়া মুভিতে Peter-Gwen এর আসলেই বেশ রোমান্টিক কিছু দৃশ্য আছে যেগুলি বেশ দারুন। Aunt May এর কিছু দৃশ্যে তো চোখে পানিও চলে আসে।
কিন্তু The Dark Knight Trilogy এবং Spider Man Trilogy এরপর সবাই সুপার হিরো মুভিগুলো থেকে একটু বেশি আশা করে আরকি। যাই হোক সব মিলিয়ে আবার আগের কথাটাই বলবো:
“ এক দারুন ভুয়া ছবি”
রেটিং: ৩ / ৫