আল্লায় দেছে। কথাটার মানে হচ্ছে- আল্লাহ দিয়েছেন।
হ্যা আল্লাহ আমাদের সব দেন। এই দুনিয়ার মালিক আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন শুধু মাত্র তার ইবাদত করার জন্য। কিন্তু মানুষ আল্লাহর ইবাদত বাদ দিয়ে- কম্পিউটার, ইন্টারনেট, উড়োজাহাজ, গাড়ি-বাস, রকেট, মোবাইল, টিভি ইত্যাদি সব কিছু আবিস্কার করে বসে আছে। মানুষের যা প্রয়োজন মানুষ তা-ই আবিস্কার করে নিয়েছে। মানুষ ইবাদত বাদ দিয়ে মহাকাশে গিয়েছে, আবার সমুদ্রের গভীরে গিয়েছে। পৃথিবী ছাড়াও মানুষের পায়ের ছাপ পড়েছে- চাঁদে এবং মঙ্গলে। আল্লাহ দুনিয়া সৃষ্টির পর যদি পৃথিবীতে ফেরেশতাদের পাঠিয়ে দিতেন, দুনিয়া সাজিয়ে গুছিয়ে দেওয়ার জন্য। তাহলে মানুষের এত পরিশ্রম করতে হতো না। মানুষ ইবাদত বন্দেগী করতো নিশ্চিন্ত মনে। দিনশেষে- যা করার মানুষ'ই করেছে, আকাশ থেকে টুপ করে ফেরেশতা নেমে সব কিছু করে দিয়ে যায়নি। মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আজকের আধুনিক পৃথিবী।
একবার কুমিল্লা যাচ্ছিলাম। দাউদকান্দি।
সায়দাবাদ থেকে বাসে উঠবো। বাস ছাড়তে দেরী হবে। আমি একটা চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছি। আমার সামনে একটা বাস। বাসটা ভৈরব যাবে। বাস ভরতি যাত্রী। তবুও হেলপার চ্যাচাচ্ছে- ভৈরব, ভৈরব, ভৈরব। লোকজন পাগলের মতো বাসে উঠছে। একটুও জায়গা নেই। তবু হেলপার চ্যাচাচ্ছে- ভৈরব, ভৈরব, ভৈরব। ঠেলেঠুলে লোকজন ভৈরবের বাসে উঠছে। বাসে আর তিল ধারনের জায়গা নেই। হেল্পার খুশি। ড্রাইভারও খুশি। হেল্পার-ড্রাইভারের খুশি দেখে আমিও খুশি। হেল্পার ড্রাইভারাকে উদ্দেশ্য করে বলছে, আল্লায় দেছে। দেছে। আল্লায় দেছে। এখান থেকেই আমি শিখেছি- আল্লায় দেছে। আমার ইচ্ছা এই শব্দটা আমি ব্যবহার করবো। শব্দটার প্রতি আমার দুর্বলতা এসে গেছে। আল্লাহ সবাইকেই মাঝে মাঝে দেয়। আমাকেও দিয়েছেন। তখন মানুষ খুশি হয়ে বলে- আল্লায় দেছে। আল্লায় দেছে। অর্থ্যাত আল্লাহপাক দিয়েছেন। মানুষ শুকরিয়া আদায় করে বলছে- আল্লায় দেছে। দেছে।
একদিন বলাকা বাসে করে গাজীপুর যাচ্ছিলাম।
পুরো বাস ফাঁকা। হেল্পারের মন খারাপ। ড্রাইভারের আরো বেশি মন খারাপ। বাস মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার অন্য সময়ের চেয়ে বেশিক্ষন দাঁড়ালো। কিন্তু যাত্রী নেই। রাগে দুঃখে হেল্পার ড্রাইভার দুজন দুজনের সাথে অযযাই রাগ তেজ দেখাচ্ছে। খালি বাসে আমারো কেমন ভয় ভয় করছে। লোকাল বাস তো এরকম খালি থাকে না। সিট তো দূরের কথা, পা রাখারা জায়গা পর্যন্ত পাওয়া যায় না। যাইহোক, বাস মহাখালি গেলো। দুনিয়ার যাত্রী। মুহুর্তের মধ্যে পুরো বাস ভরে গেলো। একদম ঠাসাঠাসি। হেল্পার হিমশিম খাচ্ছে। যাত্রীদের বলছে, চেপে দাঁড়ান। অন্যকে সুযোগ দেন। এই যে লাল শার্টআলা ভাই আপনি পেছনে যান। একজন যাত্রী বিরক্ত হয়ে বলল, আজ বাসে এত লোক কেন? হেল্পার বলল- সায়দাবাদ থেকে বাস খালি নিয়ে এসেছি। এখন আল্লায় দেছে। দেছে। আল্লায় দেছে। হেল্পার খুশি। এতই খুশি যে এক যাত্রী পাচ টাকা ভাড়া কম দিলো। তবু হেল্পার কিছু বলল না। কিন্তু অন্য সময় হলে ঝগড়া লেগে যেতো। আল্লা দিলে এরকমই দেয়। বেশি বেশি। ঝড় হোক, বৃষ্টি হোক। আগুন হোক, ভুমিকম্প হোক। অভাব হোক। আল্লার সবই বেশি বেশি। আল্লাহ দরিদ্রদের বেশি ভালোবাসেন। এজন্য চারিদিকে এত এত দরিদ্র মানুষ।
ঢাকার একটা হাসপাতাল।
শীতকাল। চারিদিকে করোনা। লকডাউন চলছে। রাস্তাঘাট খালি। অপারেশন থিয়েটারের সামনে একলোক হতাশ মুখে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে মাঝে সে পায়চারি করছে। সকাল থেকে সে এক কাপ চা-ও খায়নি। তার মুখ শুকিয়ে আছে। বুঝা যাচ্ছে- লোকটা চিন্তিত। এই লোকের স্ত্রীর বাচ্চা হবে। অপারেশন থিয়েটার থেকে একজন নার্স এসে খবর দিলো- আপনার সন্তান হয়েছে। সে সুস্থ আছে। ভদ্রলোক বললেন, আমার স্ত্রীর কি খবর? নার্স বললেন, সে-ও ভালো আছেন। সুস্থ আছেন। আধা ঘন্টা পর নার্স একটা শিশুকে নিয়ে দৌড়ে এলেন। নার্স বললেন, এই যে আপনার কন্যা। ভদ্রলোক নিজের কন্যার মুখ দেখলেন। কিন্তু কন্যাকে কোলে নিতে পারলেন না। কারন, নবজাতককে কোলে নেওয়ার আগে তাকে ভালো করে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুতে হবে। চারিদিকে করোনা। তাদের কন্যা হয়েছে। ভদ্রলোক খুশিতে আত্মহারা। বারবার মনে মনে বলছেন, আল্লায় দেছে। আল্লায় দেছে। আল্লায় আমারে দেছে। এই ভদ্রলোকের নাম রাজীব নূর। সে সামুর একজন ব্লগার। কন্যার নাম- ফারাজা।
আল্লাহ সবাইকে দিক।
আর সবাই বলুক- আল্লা দেছে। দেছে। আল্লা দেছে। যাইহোক, আর ১/২ দিন পর ইদ। সবাইকে ইদ মোবারক। রোজার ইদ মানেই নজরুলের সেই বিখ্যাত গান- ''ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে, এলো খুশির ঈদ। তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন্ আসমানি তাগিদ। আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমণ, হাত মেলাও হাতে, তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ''। আমি ঢাকায় ইদ করবো। আপনি? যাকাত দিয়েছেন তো? ঢাকা ফাঁকা হয়ে গেছে। রাস্তায় কোনো যানজট নেই। তবে শপিংমল গুলোতে প্রচুর ভিড়। এমনকি ফুটপাতের দোকান গুলোতেও মারাত্মক ভিড়। সবার হাতেই কম বেশি টাকা আছে। লোকজন কেনাকাটা করেছেন। এ বছর আমরা শেখ হাসিনাকে ছাড়া ইদ করবো। দেশে খালেদা জিয়াও নেই। তাকে ছাড়াও আমাদের ইদ করতে হবে। এদের অভাব মিটিয়ে দেবেন জামাতের চুমু শফিক হুজুর। সবাই ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। জয় বাংলা।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:০৯