দুই ভাইবোন। আপন দুই ভাইবোন।
ভাই-বোন দু'জন আলাদা হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। কথাবার্তা নেই। একজন যেন আরেকজনের শত্রু। বাপের সম্পত্তির কারণে আজ দুই ভাইবোন আলাদা। বাবা মৃত্যুর সময় ঢাকায় সাতটা ফ্লাট ও উত্তরাতে চার কাঠা জমি রেখে যান। এবং ব্যাংকে কিছু টাকা। ভাই তার বোনকে দুটা ফ্লাট দিয়েছে। আর কিচ্ছু দেয় নাই। বোন বলেছে, বাবারত সম্পদ আমি চাই। ভাই বলেছে, দুটা ফ্লাট দিয়েছি, এটাই বেশি। আর কিচ্ছু পাবে না। এই ঘটনায় আজ ভাইয়ের সাথে বোনের কোনো যোগাযোগ নেই। মামলা চলছে। আপন ভাই-বোন মামলা লড়ছে। আমি কোনদিন আমার ভাইয়ের নামে মামলা করতে পারবো না। জমিজমা মানুষকে অনেক নীচে নামিয়ে দেয়। আমি কোনোদিন খোজ নেইনি- আমার বাবার কি কি সম্পত্তি আছে।
বোনের নাম সোনিয়া।
সোনিয়া সুরভির বান্ধবী। গত সপ্তাহে সোনিয়াদের বাসায় আমাদের দাওয়াত ছিলো। দাওয়াতে আমি যাইনি। সুরভি আর ফারাজা গিয়েছে। সোনিয়া অনেক খাবার রান্না করেছে। আমি যাইনি বলে, আমার খাবার পার্সেল করে দিয়েছে। সেই খাবার রাতে খেতে গিয়ে দেখি- একটা খাবারও স্বাদ হয় নাই। রোস্ট, গরুর মাংস, পোলাউ, রুই মাছ ভাজা, কাবাব যা-ই মুখে দিচ্ছি দ্বিতীয় বার আর মুখে দিতে ইচ্ছা করছে না। মানুষের রান্না এত বাজে হয় কি করে? আমার প্রচন্ড রাগ লাগছে। সুরভি বলল, সোনিয়ার জামাই এই খাবার মুখে দিয়ে মুগ্ধ হয়ে যাবে। বারবার প্রশংসা করবে। সুরভি দুঃখ করে বলল, তুমি কোনোদিন আমার রান্নার প্রশংসা করলে না! কত মানুষ আমার রান্নার প্রশংসা করে। তুমি মানুষটা জানি কেমন!
সুরভিকে বললাম, আমাকে ডিম ভেজে দাও।
সাথে একটা শুকনা মরিচও ভেজে দিও। গরম ভাতের সাথে ডিম ভাজা মন্দ নয়। আমি আরাম করে খেলাম। ফ্রিজে গতকালের চান্দা মাছ ভাজা ছিলো, সেটাও ওভেনে গরম করে দিলো। সুরভিকে বললাম, তোমার বান্ধবীর রান্না এত বাজে কেন? সুরভি বলল, সোনিয়া রান্না করতে জানে না। সে বাবা মায়ের আদরের মেয়ে ছিলো। সে প্রতিদিন অনলাইনে খাবার অর্ডার করে। তার বাসায় মাসে একদিনও রান্না হয় না। আমাদের দাওয়াতা দিয়েছে, তাই সে নিজের হাতে রান্না করেছে। আর এই রান্না খেয়েই সোনিয়ার জামাই প্রশংসা করেছে। সোনিয়া যা-ই রান্না করে তার স্বামী বলে, অসাধারন হয়েছে। খুব মজা। সমাজে কিছু কিছু নির্বোধ স্বামী আছে বলেই- স্ত্রীরা বেলাইনে চলে যাচ্ছে। অনলাইন ব্যবসা গুলো- তারাই রমরমা রেখেছে।
খাবারের ব্যাপারে আমি কোনো 'ছাড়' দেই না।
রান্না ভালো না হলে স্পষ্ট বলে দেই- রান্না ভালো হয় নাই। মা, স্ত্রী, ভাবী, আত্মীয়স্বজন যে-ই রান্না করুক, ভালো না আমি স্পষ্ট বলে দেই- রান্না ভালো হয় নাই। স্বাদ হয় নাই। এই কথা বলার কারন হচ্ছে- এই খাবার যখন সে আবার রান্না করবে, তখন যেন রান্নাটা ভালো হয়। সোনিয়ার রান্না খারাপ। কিন্তু তার রান্না খেয়ে তার স্বামী এত মুগ্ধ হয় কেন? সমস্যাটা কোথায়? নাকি সমস্যা আমার। স্ত্রীকে মিথ্যা খুশি করে লাভ কি? তাহলে স্ত্রী তার ভুল গুলো শুধরাবে কি করে? আমার ভাগ্য ভালো। আমাদের বাসার সবার হাতের রান্না ভালো। আমাদের বাসার করলা ভাজি কোনো দিনও তিতা হয় না। ঢেঁড়স ভাজি পর্যন্ত ঝরঝরা হয়। সুরভি রান্না নিয়ে রীতিমত গবেষনা করে।
সোনিয়া দুঃখী মেয়ে।
বাবা নেই, মা নেই। ভাই একটা আছে, তাও যোগাযোগ নেই। স্বামী ভালো চাকরি করে। ইনকাম ভালো। তবু সে অসুখী। সোনিয়ার খেয়েদেয়ে কোনো কাজ নেই। তাই সে বসে বসে প্রতিদিন অনলাইনে খাবার এবং জামা কাপড় অর্ডার করছে। অনলাইন পেজ গুলো তাকে বেশ খাতির করে। যাইহোক, ঘটনাচক্রে একদিন সোনিয়ার ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হয়। কথা হয়। সোনিয়ার ভাই বলল, সোনিয়া পালিয়ে বিয়ে করেছে। এজন্য তার বাবা অনেক কষ্ট পেয়েছেন। সমাজের কাছে অপমানিত হয়েছেন। তবু আমি তাকে দুটা ফ্লাট দিয়েছি। একটায় সে থাকে। আরেকটার ভাড়া পায়। ভাড়ার টাকা দিয়ে তার সুন্দর চলে যায়। তবু সে আরো সম্পত্তি চায়। ধর্মমতেও সে সম্পত্তি বেশি পাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২৮