ঢাকাটাইমস থেকে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় যাই। শুক্রবার রাত দশটার দিকে আমরা রাতের খাবার খেতে কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়ায় হোটেলে যাই। হোটেল থেকে ফেরার পথে আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মসিউর রহমান খানের নেতাকর্মী পরিচয়ে সন্ত্রাসী ও ক্যাডাররা আমাদের উপর আক্রমণ করে।
আচমকা তারা আক্রমন করলো আমাদের উপর। আমাকে খুব মারল। লাঠি, বাঁশ আর গজারি দিয়ে। আমি কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না- আমার দোষটা কি? কি অপরাধ করলাম। এসেছিলাম অফিসের কাজে। কাশিয়ানীর পোনা গ্রামের সব লোক একসাথে হয়েছে। আমার সাথে থাকা রিপোর্টার'রা চিৎকার করে বলছে- ভাই আমরা সাংবাদিক। আমরা এইখানে কাজে আসছি। ক্ষিপ্ত মেজাজে আমাকে মারল।
পোনা গ্রামের লোকজন ঠিক করলো- আমাদের সকলকে মেরে ফেলবে। আর সবাইকে বলবে- ডাকাতি করতে আসছিল- হাতে-নাতে ধরা পড়েছে। জনতা ধরে মেরে ফেলেছে। ঠিক এই সময় ফায়েকুজ্জামান নামে একজন এসে আমাদের বলল- এরা ভূয়া সাংবাদিক। নির্বাচন কমিশন থেকে দেয়া আইডি এবং অফিসের আইডি কার্ডও ওদের দেখালাম। অশিক্ষিত বর্বর লোক গুলো আমাকে খুব মারল।
মটরসাইকেল থেকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে কমপক্ষে পনের-বিশ জন আমাকে খুব মারে। এর মধ্যে একজন আমাকে বাঁশ দিয়ে মাথায় প্রচন্ড শক্তি দিয়ে আঘাত করে। আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যাই। তখন একজন দূর থেকে দৌড়ে দৌড়ে এসে আমার বুকে মুখে লাথথি দিচ্ছিল। যাই হোক, সেইখানেই মরে যাওয়ার কথা ছিল- কিন্তু আমি মরিনি। আমার সাথে থাকা সাংবাদিকরা বেশ মারের স্বীকার হয়।
আমাদের প্রধান রিপোর্টার হাবীবুল্লাল ফাহাদ (ভাই) দুইহাত উপরে তুলে আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। তিনি আর একটু দেরী করলে তারা আমাকে মেরেই ফেলত।
আমার জামা ছিড়ে গিয়েছিল। আমি খালি গায় দাঁড়িয়ে আছি। বমি পাচ্ছিল। মাথা ঘুরছিল। গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল এক গ্লাস পানি না পেলে আমি এখনই মরে যাবো। এত অসংখ্য মানুষ কার কাছে পানি চাইবো বুঝতে পারছিলাম না। আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বৃদ্ধাকে বললাম, আমাকে এক গ্লাস পানি দেন। সেই বৃদ্ধা পানি না দিয়ে বরং চিৎকার করে বললেন, চুপ হারামাজাদা। পানি চাইবি না। তুই ডাকাত। পাশের এক লোকের দিকে তাকিয়ে বললেন- ওর পকেট চেক কর পিস্তল পাবি।
প্রায় আধা ঘন্টা পরে পুলিশ এসে আমাদের উদ্বার করে কাশিয়ানী থানায় নিয়ে যান। সেখানে পুলিশ আমাদের সব কথা শুনে লকারে আটকে রাখেন। কারণ আমরা থানায় পৌঁছানোর আগেই ক্ষমতাবান একজন থানার ওসিকে ফোন করে আমাদের না ছাড়তে বলে দেন। বিনা অপরাধে সারারাত হাজতে থাকলাম। আমার ক্ষত স্থান থেকে রক্ত পড়ছিল- আমাকে ফাস্ট এইডও দেয়া হয়নি। আমার ক্ষত স্থান থেকে তখনও রক্ত পড়ছিল।
হাজতের ছোট্র একটা ঘরে- আমরা বারোজন লোক। পাশেই খোলা বাথরুম। বিকট গন্ধ আসছিল। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম। আমাদের ধম বন্ধ হয়ে আসছিল। থানার লোকদের কাছে পানি চেয়েও পাইনি। বরং ধমক দিয়েছে। কি প্রচন্ড গরম।
এদিকে আমাদের প্রিয় সম্পাদক তিন মাস আগে গাড়ি এক্সিডেন্ট করেন। তার পায়ে প্লাস্টার। তিনি সকালে আমাদের খবর পাওয়ার সাথে সাথে থানার ওসি আমাদের স্বসম্মানে ছেড়ে দেন। এবং ছেড়ে দেয়ার আগে চা নাস্তা খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যান।
পোনা গ্রামের মানুষ জন খুব হিংস্র ও নিষ্ঠুর। বিনা অপরাধে মার খেলাম। সারারাত ব্যাথায় ঘুমাতে পারছি না। ঢাকায় ফিরে এসে ডাক্তার দেখালাম। ওষুধ খাচ্ছি। আমার মা কাঁদছে।
http://www.dhakatimes24.com/2016/04/23/110349
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৭