ব্লগের নিয়মিত পাঠক হলেও লেখা-লেখি প্রায় ছেড়ে দেয়ার মতই অবস্থা। এখানে আমি মূলত শেয়ার বাজার ও নিজের সাম্প্রতিক ভাবনা (রাজনীতি, চলমান ঘটনা, ইত্যাদি) নিয়েই লিখি। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও শেয়ার বাজার - দুটোরই যে করুন অবস্থা তাতে বেশ হতাশ হয়েই লেখা-লেখিতে ভাটা পড়েছে। আমি ও আমার মত অনেকেই প্রতিনিয়ত লিখেছি ...এখনও নিখছে কিন্তু কোন কাজে কী লাগছে ? ভেতর থেকে যখন উত্তরে 'না' শুনতে পাই তখন লেখার ইচ্ছেটাই মড়ে যায়, সময়ের অপচয় ছাড়া কী হবে এসবে হাবিযাবি লিখে .........।
আজ অনেক দিন পর শেয়ার বাজার নিয়ে লেখার তাগিদ অনুভব করছি। বিগত পৌনে দুই বছরের টানা পতনে (মার্চ-এপ্রিল ২০১২ ছাড়া) আমার মত ক্ষুদ্র বিনিয়োকারীদের বৃহদাংশই ইতি মধ্যে বাজার থেকে ইলিনিনেট হয়ে গেছেন। কেউ হয়ত পূজির দুই-তৃতিয়াংশ অথবা পুরোটাই খুইয়েছেন।
আমার মত ছাড়পোকা শ্রেণীর কিছু মানুষ যারা মহা-পতনেও টিকে আছেন, তারাও যে খুব ভাল আছেন এমন নয়। নিজের অবস্থা দেখেই তাদের অবস্থা টের পাচ্ছি। ২০১০ এর বিনিয়োগে লাভের পরিমান ছিল ৮৫%, ২০১১ তে [মূলধন ও ২০১০ এর ৮৫% লাভ] বিনিয়োগে লস হল ৫০% আর ২০১২ এর মে পর্যন্ত ৫০% লস কমে ২০% এ দাড়িয়েছে।
অর্থাৎ মূলধন বাচাতে পারলেও বিগত আড়াই বছরে (জানুয়ারী ২০১০- মে ২০১২) সব মিলিয়ে লাভ মাত্র ৪৮% এর মত। অর্থাৎ ২০১১ ও ১২ তে কোন লাভতো হয়ই নি বরং ২০১০ এর ৮৫% লাভ এখন নেমে এসেছে ৪৮% এ !
সার্ভাইবালদের টিকে থাকার মূলেই রয়েছে পরিস্তির সাথে খাপ খাওয়ানো তথা সোজা বাংলায় অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে পারার উপর। তাই ২০১১ এর শুরুতেই কিছু টেকটিকস ঠিক করেছিলাম, যা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। টেকটিকস গুলো আমাদের বাজারের বিচারে প্রুভেন বলতে পারেন কারন এগুল ফলো করেই লস ৫০% থেকে ২০% এ নামিয়ে এনেছি।
২০১১ এ স্ট্রটেজি ছিল একটাই - 'বাজার যত নিচেই নামুক লস দিয়ে কোন শেয়ার হাত ছাড়া করব না। স্টক/কেশ ডিভিডেন্ড আকারে যা-ই দিক সব গ্রহন করব।'
২০১১ তে ডিভিডেন্ড নেয়ার বেশ কিছু শেয়ারের এভারেজ বাই ভ্যালু বেশ কমে আসে। এই রকম শেয়ারগুলতে ২০১১ তে নতুন করে ইনভেস্ট করায় ২০১২ এর শুরুতেই অনেকের চেয়ে সুবিধা যনক অবস্থায় চলে আসি।
২০১২ তে যা করেছি এবং করব :
১। ডিভিডেন্ড রেকর্ড ডেটের পূর্ব মুহূর্তে দাম বৃদ্ধির সুযোগে যে শেয়ারগুলতে কিন্চিত লাভ বা কোন লোকসান হবেনা (ব্রেক ইভেন) এমন পরিস্হিতি পেলেই তা সেল করেছি।
২। যতটা সম্ভব কম লস (৫-১০%) দিয়ে তুলনামূলক খারাপ শেয়ের বেচে ভাল শেয়ার পোর্টফলিও তে যোগ করেছি।
৩। পোর্টফলিও তে থাকা বাকি শেয়ারগুলোর জন্য এ বছর ঘোষিত স্টক/কেশ ডিভিডেন্ড গ্রহন করব। রেকর্ড ডেটের ২-৩ দিন পরেই স্টক ডিভিডেন্ডগুল বাজার দরে ছেরে দেব।
৪। ১ ও ৩ নং স্টেপ থেকে পাওয়া কেশ টাকায় আগামী আগস্ট-অক্টবরে ভাল কিছু স্টক বেশ কম দামে কিনব। ঐতিহ্য গত ভাবেই এই ডিভিডেন্ড ঘোষনা পরবর্তি সময়ে বাজার পরতির দিকে থাকে। তার সাথে যোগ হয় দুই ঈদের জন্য শেয়ার বিক্রির চাপ। আবার ২০১২ এর শুরু থেকেই দেখছি ১-২ সপ্তাহের জন্য বাজারে ছোট আকারের পতন ঘটতে (ইন্ডেক্স ২০০ থেকে ৫০০ পড়ে আবার মেকাম হচ্ছে)। তাই 'ঝোপ বুঝে কোপ' মানে কম দামে ভাল কিছু শেয়ার কিনব। আর ঈদ বোনাসের কিছু অংশও বাজারে ইনভেস্ট করব।
সবকিছু ঠিক ভাবে করতে পারলেই ২০১১ ও ১২ এর খড়া কাটিয়ে ২০১৩ এর মার্চ-এপ্রিলেই নূন্যতম ২০% লাভ (এখনকার ২০% লস মেকাপ করেই ২০% লাভ) করা অসম্ভব কিছু হবে না ইনশাল্লাহ। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী যারা এখনও টিকে আছেন তারা আমার এই টেকনিকগুল ট্রাই করতে পারেন। আর নতুন করে কোন স্টক কেনার সময় অবশ্বই সর্বনিম্ন মূল্যের কাছা-কাছি দামে কিনুন। কারন নিম্ন-গতির বাজারে বিক্রীর সময় নয় কেনার সমই আপনাকে লাভ নিশ্চিত করতে হবে।
** শেয়ার বাজার নিয়ে আমার লেখা সব পোস্ট একত্রে পেতে ভিজিট করুন http://dse-amateurs.blogspot.com
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১১